![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০১ সাল। রাত ৩টা। রুম নং ২১৪,সাউথ হোস্টেল,ঢাকা কলেজ। রুমি, নিয়াজ, রিপন, লিমনদের সাথে আড্ডা দিয়ে কিছুক্ষণ আগে রুমে ফিরেছে কিশোর। তার রুমমেটদ্বয় ইসহাক ভাই আর মামুন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে প্রতিদিন দেরী করে রুমে ফিরে, তাই দরজার নীচের ছিটকিনি এমন একটা বিশেষ পদ্ধতিতে লাগানো হয়েছে ছিটকিনি লাগানো থাকলেও বাইরেথেকে দড়িতে টান দিলে ছিটকিনি খুলে যেত। অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে এভাবেই প্রতিদিন রুমে ঢুকত কিশোর।
সিগারেট ধরাল কিশোর। অক্সিজেন ও সিগারেটের ধোঁয়া দুটোই তার জীবনের জন্য অপরিহার্য। মশারী টানানোই ছিল, মশারীর ভিতর বসে সিগারেট টানছে কিশোর। সব কিছু কেমন যেন স্থির হয়ে আছে!!! কিশোর ভাবছে ... এইচ এস সি পরীক্ষার আর তিন মাস বাকী ...পড়াশোনা শুরু করতে হবে! বেশিক্ষণ এই চিন্তা করতে তার ভাল লাগল না । মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে একটা মেসেজ লিখা শুরু করল, কিছুক্ষণ লিখার পর ভাবল এত রাতে মেসেজ পাঠানো ঠিক হবে না। এটাও বাদ। দেয়ালে বালিশ ঠেকিয়ে সেখানে পিঠ দিয়ে বসে ভাবছে কিশোর ...
এমন সময় নারী কণ্ঠের অদ্ভুত বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পেল এবং সাথে সাথেই শুনতে পেল ২১১নং রমে থাকা সংগ্রাম ভাইয়ের চিৎকার। নারী কণ্ঠের সেই অদ্ভুত আওয়াজ এগিয়ে আসছে । বন্ধ দরজা ধাক্কা দেয়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ২১২ তে থাকে অপু, রাকিমত ও সাইদ আর ২১৩ তে আরিফ, তৌহিদ ও কামরুল। কামরুল ২১৩ তে তখন একা কারন আরিফ- তৌহিদ বাড়ীতে গেছে। ওই দরজাগুলো খুলতে পারেনি সেই নারী।কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার রুমের সামনে এসে দাঁড়াল সে। আমি ভাবছি হয়ত দরজা বন্ধ ভেবে চলে যাবে। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন স্বল্প বসনা নারী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিল এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে দড়ি ধরে টান দিয়ে ঘরে প্রবেশ করল।
ঘরে ঢুকেই স্বল্প আলোয় আমার চোখে চোখ রাখল। আমার মুখে হাসি দেখে সে কিছুটা দমে গেল। আমার ধারণা সে আমার ভয়ার্ত মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আমি তখন ভয় পাওয়ার মত অবস্থায় ছিলাম না!! কিছুটা নিরাশ হয়ে সে ঘরের ভিতরের দিকে এগিয়ে গেল। ইসহাক ভাইয়ের বিছানার সামনে গিয়ে তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকল, “ওই”। ইসহাক ভাই প্রথমে চোখ মেলেই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। অদ্ভুত নারী আবার ডাকল “ওই”। এবার ইসহাক ভাই সাহস সঞ্চয় করে দুই হাত মুষ্টি করে উঠে বসে জোরে চিৎকার করে বলল, “তোর গুষ্টি মারি”। আমি জোরে করে হেসে উঠলাম। সেই নারীর কাছে এই পরিবেশ কাম্য ছিল না । দ্রুত বেগে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাওসারের চিৎকার শোনা গেল ২১৬ নং রুম থেকে।
অতঃপর ঘুমন্ত ছাত্ররা জেগে উঠে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটিকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধোর করে সাউথ হোস্টেল এরিয়া থেকে বের করে দেয়। ইসহাক ভাই, কাওসার রুমে এসে দেখে কিশোর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
ঐদিন কিশোর শিখল ... ভয়, নিরপত্তার অভাববোধ থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে মানুষ নৃশংস হয়ে ওঠে। স্রস্টা যে কত ভাবে মানুষকে শিক্ষা দেয় !!!
কিশোর
২৭/০৫/২০১৩
©somewhere in net ltd.