![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৃহস্পতি বার সন্ধ্যা। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি নিয়ে আকাশ দেখবে বলে সংসদ ভবনের সামনে এসে বসল কিশোর। আজকের বারটা বৃহস্পতি হলেও দিনটা হলো শনিতে ভরা! মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, অনেকেই “ইভনিং ওয়াক” করছে, কেউ পরিবারসহ বেড়াতে এসেছে, কেউ এসেছে প্রিয়ার হাত ধরে বসে থাকার জন্য, কেউ এসেছে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিতে ... সে একা বসে আছে কিন্তু নিঃসঙ্গবোধ করছে না। নিঃসঙ্গতা দারিদ্রতার চাইতেও ভয়াবহ । মন কিছুটা হালকা লাগছে। কলেজ জীবনের কিছু ভাল আড্ডার আর দাম দিয়ে যন্ত্রণা কেনার স্মৃতির সাথে মিশে আছে সংসদ ভবন সংলগ্ন এই এলাকা। কিশোর পুরনো স্মৃতি রোমান্থন করতে করতে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল।
“স্যার পানি নিবেন, ঠান্ডা পানি?” – এই ডাকে কিশোরের ভাবনায় ছেদ পড়ল। সে পানি নিয়ে টাকা দিয়ে দিল, ছেলেটি চলে গেল। পৃথিবীর সর্বত্র “স্যার” বলার একটা অদ্ভুত কালচার আছে। “স্যার” ডাকের মাধ্যমে নাকি সম্মান প্রদর্শিত হয়! আমাদের দেশে সরকারি কর্মকর্তা সবাই “স্যার”, শিক্ষক সমাজ-সবাই “স্যার”, কোন কল সেন্টারে ফোন করুন- যে কেউ “স্যার” হয়ে যাবেন ...... আমি যতদূর জানি শুধু মাত্র “নাইট” উপাধী প্রাপ্তদের “স্যার” বলতে হয়। আমার মতে “স্যার” শব্দটার মাধ্যমে একটা অনতিক্রম্য দূরত্ব তৈরী হয়, যা কোন সম্মিলিত কাজে মুক্ত আলোচনার জন্য ক্ষতিকর। কাউকে সম্মান দিতে চাইলে যেকোন সম্বোধনের মাধ্যমেই দেয়া যায়।
গত কয়েকদিন যাবৎ অনেকেই তাকে “পণ্য” হওয়ার ফালতু উপদেশ দিচ্ছে : “নিজেকে সেল করতে শিখো ..., কেউ মুখ দেখে তোমাকে কাজ দেবে না... সুযোগ তৈরী করে নিতে হয়... নিজের চাহিদা নিজেকেই তৈরী করতে হবে...”……. হঠাৎ একা দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ে চোখে পড়ল তার। নচিকেতার একটি গানের লাইন মনে পড়ে গেল “যে মেয়েটা রোজ রাতে, বদলায় হাতে হাতে – তার অভিশাপ নিয়ে চলাই জীবন। ” মেয়েটির চোখে চোখ পড়তেই হাতের ইশারায় তাকে ডাকল কিশোর।
মেয়েটি এসেই বললো আজ সে কোথাও যাবো না।
কিশোরঃ ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল, কোথাও যেতে হবে না , আপনার সাথে কিছুক্ষন কথা বলব।
মেয়েঃ আমি খারাপ মেয়ে মানুষ। আমাকে টাকা দিয়ে কেনা যায়। আমার সাথে আপনার কিসের কথা?
মেয়েটির কথার মাঝের গভীর বেদনাবোধ বুঝতে পেরে কিশোর বলল, পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষকেই টাকা দিয়ে কেনা যায়। এই ভাবে ভাবলে আমরা সবাই পণ্য। আমরা সবাই আমাদের শ্রম, মেধা, সময়কে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আপনার নিজেকে ছোট ভাবার কোন কারণ নাই। আমার দৃষ্টিতে আপনি একটি মহান কাজ করেছেন সমাজের জন্য। আপনারা পুরুষ মানুষের পশুত্বকে শোষন করছেন। যার জন্য আমাদের সমাজে অনাচার অনেক কম।
মেয়েঃ আমার জীবনে এত সম্মান দিয়ে কেউ কখনো আমার সাথে কথা বলেনি। আপনি আসলে কে? আপনার কাছে একটা প্রশ্ন করি, আমাদের পেশার সাথে যারা জড়িত তারা সবাই নাকি দোজখে যাবে?
কিশোরঃ আমি আপনার মতই একজন সাধারন মানুষ। কে বেহেশতে যাবে আর কে দোজখে যাবে, এই সিন্ধান্তের মালিক আল্লাহ। এটা কোন মানুষের পক্ষেই বলা সম্ভব না।
মেয়েঃ আমরাই কি দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ পেশায় জড়িত, আমরা কি সবচেয়ে খারাপ? এই বলে মেয়েটি কাঁদতে লাগল।
কিশোরঃ পেশা খারাপ ভাল হয় তার কর্মকান্ডের উপর। আমাদের দেশের অনেক মানুষ আছে যাদের অনেক টাকা থাকার পরও টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে। অনেক মানুষ আছে টাকার জন্য নিজের দেশকে বিক্রি করে ...... অনেক মানুষ আছে ... আমি হলফ করে বলতে পারি আপনারা তাদের চেয়ে অনেক ভাল।
মেয়েঃ আপনি ভাই আমাকে তুমি করে বলেন। আমি আজ এখানে একটা বিশেষ কাজে আসছি । একজন আসবে আজকে আমাকে নিতে ...।।
কিশোর মেয়েটিকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলল, “শোন মেয়ে, যে ছেলেটা তোমার কাছে আসছে সে হবে তোমার স্বামী। ছেলেটা বেশ ভাল। তুমি তোমার জমানো টাকা নিয়ে আজকেই গ্রামে চলে যাবে ছেলেটাকে নিয়ে। আগামীকাল তোমার বিয়ে হবে। বিয়ের আগে মন থেকে তওবা করবে যে জীবনে জেনেশুনে আর কোন পাপ করবে না। ছেলেটা তোমাকে খুঁজছে। তার কাছে যাও। আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুক । আমিন । আমিন ।আমিন। ”
কিশোর হাঁটতে শুরু করল। নচিকেতার গানটা আবার মনে পড়লঃ
অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন
শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন
জীবন প্রসব করে চলাই জীবন
শুধু যোগ-বিয়োগের খেলাই জীবন .........
কিশোর
৩১/০৫/২০১৩
©somewhere in net ltd.