নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুভূতি প্রকাশক!

এিভুবন

আপনার পাশের সীটে বসা অথবা পাশের বাড়ীতে থাকা লোকটার মতই সাধারন।

এিভুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি দূর থেকে দেখছি তোমায় -২

১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১১

নরসিংদী জেলার বেলাবো এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর এলাকার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ব্রিজের মাঝামাঝি রেলিং এর উপর বসে আছে কিশোর। উপরে বিশাল খোলা আকাশ, নিচে আড়িয়াল খাঁ নদী, চারপাশে ঘন সবুজ- এক কথায় মনোমুগ্ধকর ও অদ্ভুত প্রশান্তিময় পরিবেশ। অস্তায়মান সূর্যকে নাকি কেউ স্যালুট দেয় না, সে মন থেকে আজকের অস্তায়মান সূর্যকে অভিবাদন জানাল।



কিশোর গভীর ভাবনায় ডুব দিল। স্কুলে গণতন্ত্রের দোষ, গুন, বৈশিষ্ট্য পড়েছিল। এখন সব মনে করতে পারছে না। তবে একটা ব্যাপার মনে করতে পারছে পরিবারতন্ত্র যে গণতন্ত্রের একটি প্রমাণিত বৈশিষ্ট্য এ কথা কোথাও লেখা নাই। গণতন্ত্র বিক্রেতা দেশ আমেরিকাতেও এটা প্রমাণিত সত্য। ঐতিহাসিকভাবে পরিবারতন্ত্র হচ্ছে রাজতন্ত্রের এক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। তার মানে অনেক চলার পরও আমরা আসলে একি জায়গায় থেকে যাচ্ছি!!!



কিশোর ভাবছে। আমাদের দেশে প্রাইভেট ব্যাংক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, এখন অনেকটা ব্যাংকে চাকুরী করার মত হয়ে গেছে!!! এত বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক তো দরকার ছাত্র পড়ানোর জন্য, তাই শুধু মোটামুটি কনসিসটেন্ট একাডেমিক রেজাল্ট আর ভাল রাজনৈতিক/পারিবারিক লবিং থাকলেই কেল্লাফতে!!! কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ,এমবিএ পাশ করা একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে কাজ করে এ ব্যাপারে তার ধারনা আরো বদ্ধমূল হলো!!!



গাড়ির হর্নের শব্দে তার ভাবনা বাধাগ্রস্ত হল। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে গাড়ি থামিয়ে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভদ্রলোক বাংলার মাঝে ইংরেজি টান দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, আক্তার উদ্দিন শাহ কলন্দর এর মাজার কোন দিকে? ভদ্রলোক তাকে ঐ এলাকার লোক বলে মনে করেছে। সেদিন দুপুরে কিশোর তার বন্ধু পল্লবকে নিয়ে শাহ কলন্দর এর মাজারে গিয়েছিল। তাই ভদ্রলোককে ঠিকানাটা ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে পারল। হঠাৎ ভদ্রমহিলা চিৎকার করে বলল, এই তুমি কিশোর না? তুমি এখানে কি কর? তুমি খালি পায়ে কেন? সে তার স্বামীকে বলল, আমি এখানে থাকব, তুমি মাজার থেকে ঘুরে আস। আমার মাজারে যেতে ভাল লাগে না। ঘটনার আকস্মিকতায় ভদ্রলোক এতই বিস্মিত হল যে কোন কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।



প্রিয়া: কথা বলো না কেন? আমার কথা কানে যায় নাই।

কিশোর: আমি বিশ্বাস করি স্রষ্টার ইচ্ছানুযায়ী আমার যখন যেখানে উপস্থিত থাকা দরকার আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকি। আর খালি পায়ে কারণ স্যান্ডেল চুরি হয়ে গেছে।

প্রিয়া: তোমার ভাব ধইরা কথা বলার অভ্যাস এখনো যায় নাই। তুমি যে আসলে কিছুই না এটা কি তুমি বোঝ?

কিশোর স্মিত হেসে বলল, ব্রিজের রেলিং এ উঠে বস। প্রকৃতিকে মন দিয়ে উপভোগ করো, প্রশান্ত হয়ে যাবে।

প্রিয়া: আমি সাঁতার জানিনা । ব্রিজ থেকে পড়ে গেলে মৃত্যু ছাড়া পথ নাই।



কিশোর জোরে করে হেসে উঠে বলল, আমাদের জীবনের সবকিছুর মত মৃত্যুও পূর্বনির্ধারিত। মৃত্যু যখন আসার তখন আসবেই, এটা নিয়ে এত ভাবনার কিছু নাই। এখানে বসো, ভাল লাগবে। প্রিয়া কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে ব্রিজের রেলিং এ উঠে বসল। সন্ধ্যা নামার আগে আগে আকাশ জুড়ে ঘনমেঘের আনা গোনা বেড়ে গেল।



প্রিয়া: তোমার মা কেমন আছে?

কিশোর: খুব ভাল আছে।

প্রিয়া: আজ আমার মনটা খুব খারাপ।

কিশোর: তোমার মন খারাপের কারণ আমাকে খুব সংক্ষেপে বল।



প্রিয়া তার অনুভূতি ব্যক্ত করছে আর কিশোর চোখ বন্ধ করে শুনছে। বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। কিশোর প্রিয়াকে বলল, ব্রিজের উপর নেমে দাঁড়াও আর আমার ডান হাত ধরো এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার চাওয়ার কথা স্রষ্টাকে জানাও। প্রিয়া তাই করল।



গাড়ির হেডলাইটের আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিল। তাদের কাছে এসে গাড়িটি ব্রেক করল। প্রিয়া বিদায় নিল।



কিশোর হাঁটতে শুরু করল। হেলাল হাফিজের একটি কবিতা মনে পড়ে গেল:

“এক জীবনের সব হাহাকার বুকে নিয়ে

অভিশাপ তোমাকে দিলাম,

তুমি সুখী হবে,

ব্রহ্মপুত্রের মেয়ে, দেখে নিও, খুব সুখী হবে।”

(চলবে)



কিশোর

১০/০৬/২০১৩ ইং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.