নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুভূতি প্রকাশক!

এিভুবন

আপনার পাশের সীটে বসা অথবা পাশের বাড়ীতে থাকা লোকটার মতই সাধারন।

এিভুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপসী

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১০

২২ শে জুলাই, ২০১৩। গভীর রাত। টুকরো টুকরো এলোমেলো সব ভাবনা আজ মনের আকাশে ভিড় করছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসের হোসেন মিয়ার ‘ময়না দ্বীপের’ কথা মনে পড়ছে। উক্ত উপন্যাসে বঞ্চিত-নিপীড়িতরা বাধ্য হয়ে শেষ আশ্রয় হিসাবে ময়না দ্বীপে যেতো। আর আমাদের বর্তমান সময়ের সুবিধাভোগী, অত্যাচারী, শোষক শ্রেণী এসময়ের ‘ময়না দ্বীপগুলোতে’ পাড়ি জমানোর (পালানোর) অগ্রিম ব্যবস্থা করে রেখেছে এবং এখনো করছে । মাঝে মাঝে তাদের আত্মীয়রা ময়না দ্বীপ থেকে দেশে বেড়াতে এসে জ্যোতিষের মত কথা বলে!!!



হঠাৎ গুরুর কিছু কথা মনে পড়ে গেল.. একজন বৃত্তবন্দী মানুষকে জিজ্ঞেস করুন। দেখবেন সে ঈশ্বর সম্পর্কে এক হাজারটা প্রশ্ন করছে। তাকে জিজ্ঞেস করুন-শয়তান সম্পর্কে আপনার কোনো প্রশ্ন আছে? দেখবেন তার মুখে কোনো কথা নেই। ঈশ্বরের ব্যাপারে এদের মনে প্রশ্ন আছে। শয়তানের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। ধর্মের ব্যাপারে এদের প্রশ্ন আছে। অধর্মের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। সত্যের ব্যাপারে এদের প্রশ্ন আছে। কিন্তু প্রচলিত মূর্খতা বা অবিদ্যার ব্যাপারে এদের কোনো প্রশ্ন নেই।



বুক ভরা কিছু অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে অন্ধকার ঘরে বসে কিশোর ভাবছে। সব কিছুই কেমন যেন মূল্যহীন মনে হচ্ছে। একের পর এক প্রিয় মুখ গুলো চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে, অকাল মৃত্যুর যেন হিড়িক পড়েছে!!! আগে মৃত্যুর কথা মনে হলে খুব ভয় লাগত, ভাবত ওখানে কিভাবে একা একা থাকবে। এখন আর ভয় লাগে না । কারন অনেক কাছের মানুষ এখন ওখানে থাকে। কিশোর ভাবছে। ভয় লাগুক আর না লাগুক, আমরা কেউই মরতে চাই না , বেঁচে থাকতে চাই অনন্তকাল।



একটি অদ্ভুত নাম্বার থেকে ফোন এসে কিশোরের চিন্তায় বাধ সাধল। ফোন রিসিভ করতেই বলল, কিশোর কেমন আছো? চিনতে পারছো ? আমি রূপসী।

কিশোরঃ ভাল আছি, রূপসী। তুমি কেমন আছ?

রূপসীঃ আমার খুব একা একা লাগছে । তাই ফোন করলাম । অনেকদিন তোমাকে দেখি না। এখন আসব তোমার সাথে দেখা করতে?

কিশোরঃ এত রাতে তুমি কার সাথে আসবে? আর তুমি আমার নাম্বার পেলে কার কাছ থেকে?

রূপসী হাসতে হাসতে বলল, তোমার এত কিছু ভাবার বা জানার দরকার নাই । আসব কিনা বলো ?

কিশোর কোন উত্তর দিল না ।

রূপসী গান শুরু করলঃ

তোমার চন্দনা মরে গেছে ...... ও প্রিয়, আর কেঁদে কি হবে?

তার জন্য হৃদয়টা শূন্য রেখে কি হবে ... কি হবে ... হাসতে লাগল রূপসী...।।

কিশোরঃ তোমার হাসিটা এখনও আগের মতই আছে ......

রূপসীঃ কিশোর, আমি তোমার বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি। দ্রুত নীচে নামো। আমি তোমার প্রিয় বকুল ফুলের মালা পড়ে এসেছি। তাড়াতাড়ি নামো।



চাঁদের আলো রাতকে প্রায় দিন বানিয়ে দিয়েছে। কিশোর ঘোরের মধ্যে তৈরি হচ্ছে নিচে নামার জন্য। হঠাৎ তার মনে পড়ল ২০০৩ সালের ২২শে জুলাই রূপসী মারা গেছে। মনে পড়তেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসতে লাগল। সে কি ভয় পাচ্ছে? এই ফোন কলটা কি তার মনের ভুল ছিল? কিশোর ভাবছে।



বাইরের বারান্দায় দাঁড়াল কিশোর। দূরে তাকিয়ে দেখে রূপসী আসছে। বকুল ফুলের গন্ধ পাচ্ছে সে। কিশোর দ্রুত নীচে নেমে গেল। কয়েক গজ দূরত্বে থেকে রূপসী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে চিৎকার করে হাত নেড়ে ডাকল, কিশোর ...... আমি আবার এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে ...



মৃত মানুষের বয়স বাড়ে না। ১৯ বছর বয়সী যুবতী রূপসী উচ্ছ্বসিতভাবে এগিয়ে আসছে তার দিকে। দশ বছর আগের ... চিরচেনা সেই রূপসী ......



কিশোর

২৫/০৭/২০১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.