![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমগ্র দেশ যখন নিজ মাতা-পিতা হত্যার ঘটনায় এক সন্তানের গল্পে বিভোর ...... সেখানে আমি আজ আরেকটি সন্তানের কথা বলব ...।
ছেলেটির বয়স হয়ত ২১ বা ২২ হবে। উত্তর বাড্ডা বাজারের সামনে সে ভেলপুরি বিক্রি করে। তার সাথে আমার পরিচয় এই ভেলপুরির কারণেই। মাঝে মাঝেই খাই তার কাছ থেকে, কিছুটা অন্তরঙ্গতাও হয়েছে। দীর্ঘ রোজা, তারপর ঈদের ছুটি গেলো। বহুদিন পর আজ তার সাথে দেখা। আমাকে দেখে সে খুশীতে বাক বাকুম। নিজ হাতে ইস্পেশাল পুরি বানিয়ে খাওয়ালো। টাকাও নিলো না। আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, " কি হইল তোমার ? লটারি পাইছ নাকি?? "
"না মামা, লটারী না। তার থেকেও বেশী কিছু। আব্বা ছাড়া পাইছে "
তার বাবার বিষয়ে আমি শুনেছিলাম তার কাছে। কোনও একটা মিথ্যা কেসে সে জেলে আছে। আজ ডিটেইলস শুনলাম।
তার বাবা সিএনজি চালাতেন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তারা যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেই বাড়িওয়ালা তাকে আসামী করে মামলা করে। এটেম্পট টু রেপ কেস। অনেক প্যাঁচালো কাহিনী, ডিটেইলস এ গেলাম না। আসল কথায় আসি। ছেলেটির বাবা কে পুলিশ জেলে ভরেছে প্রায় ২ বছর হল। বৃদ্ধের নিজের আপন ভাই বোন তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে যে নির্দোষ ... এটা তারা বিশ্বাস করেনি । কিন্তু সন্তান পিতার প্রতি বিশ্বাস হারায়নি। দীর্ঘ ২ বছর ধরে বাবার হয়ে কেস লড়ে যাচ্ছে। সংসারের হাল নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে । সি এন জি চালিয়েছে দীর্ঘদিন। খরচে কুলাইতে না পেরে সেটাও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। জায়গা জমি অল্প যা ছিল, তা তো আগেই শেষ। কিছুদিন রিকশা, ভ্যান চালিয়েছে। কিন্তু কোর্ট এ দৌড়াদৌড়ির কারণে রেগুলার গাড়ি চালাতে পারত না, তাই মহাজনেরা তাকে সে পথ থেকেও বিমুখ করেছে। অতঃপর বাধ্য হয়ে সে এই ব্যাবসায় নামে। কিন্তু এই যখন অবস্থা এর মাঝে একদিন তার উকিল তাকে ফোন দিয়ে ২ লাখ টাকা চায়। নাহলে এই কেস সে আর আগাতে পারবেনা বলে জানায়। সেই ফোন কানে নিয়ে ঐ অবস্থায় হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে, রাস্তার মাঝেই বসে পড়ে। ঐ সময় বেশ কয়েকজন আবার ওখানে দাঁড়িয়ে ভেলপুরি খাচ্ছিলেন। তো তেমনই একজন তাকে এগিয়ে এসে সান্ত্বনা দেয়। তার কাছ থেকে ডিটেইলস শুনে, তার একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলে পরদিন সকালে তার সাথে কোর্টে দেখা করতে। তিনিও পেশায় একজন উকিল।
ঐ ভদ্রলোকই ছেলেটির বাবাকে ছাড়িয়ে এনে দিয়েছেন, কোনও টাকা পয়সাও নেন নি। এমন কি কোর্টের ফী টাও উনি নিজ পকেট থেকে দিয়েছেন। যার কেউ নাই তার আল্লাহ্ আছে , কথাটা মিথ্যা না।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাকে কেন তাহলে সে এসব বলল বা খাতির করল ???
কারন রোজার আগে শেষ যেদিন আমি ভেলপুরি খাচ্ছিলাম, তখন আসার সময় তাকে বলেছিলাম ... " ইনশাল্লাহ ... এবার ঈদ তোমার বাবার সাথেই করবা "
এক জন ঐশীর ঘটনা এই দেশে বিরল। কিন্তু ভেলপুরি ওয়ালার মত এমন হাজারও কাহিনী অহরহ ঘটছে। কিন্তু খুব সাধারণ বলে আমরা আমলে নেই না।
একজন অশিক্ষিত সিএনজি চালক কি এমন শিক্ষা দিয়েছিলেন তার সন্তান কে , যে সেই সন্তান তার বাবার জন্য সারা দুনিয়ার সাথে লড়তে পারে??? যা কিনা একজন শিক্ষিত বাবা তার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া মেয়েকে দিতে পারেন নি।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর নাকি সাগর পাড়ি দিয়েছিলেন মাকে দেখার জন্য। হযরত বায়েজীদ বোস্তামি (রঃ) এর মায়ের প্রতি ভালোবাসাও আমরা বই তে পড়েছি। কিন্তু তা কত টুকু আমাদের কে নাড়া দিয়েছে ???
কারন তারা ছিলেন মহান, আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে এগুলি গল্পই থেকে যাবে। কিন্তু এই ভেলপুরি ওয়ালাদের পিতৃ প্রেমের রচনা গুলি যদি আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায় , তাহলে মনে হয় আমাদের বাবা মায়ের প্রতি আমাদের যে ভালবাসা আছে তা বাড়বে বই কমবে না ...
কারন ঐশী একজন। আর আমরা অগনিত ... যারা এই বুড়ো বয়সেও দুঃস্বপ্ন দেখলে জেগে উঠে পানি পরে খাই ... জানি গভীর রাত... তবু মা কে জাগিয়ে তুলি ...... দূরে থাকলে ফোনে ...
" হ্যালো...... মা, জেগে আছো ?? "
" কি হইছে বাবা ?? এত রাতে.....?? " (অস্থির কন্ঠে)
" মাগো, বড্ড অস্থির লাগছে মা... "
কিছুক্ষন কথা বলে, আমরা হয়ত এক গ্লাস পানি খেয়ে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ি...
কিন্তু মা আমার হয়ত সারা রাত জায়নামাজেই কাটিয়ে দেন ...।
লিখাটি ভালো লাগলো বলে ফেইসবুক থেকে নেয়া।
Click This Link
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৫০
আমিনুর রহমান বলেছেন:
উকিল ভদ্রলোকের প্রতি শ্রদ্ধা। ছেলেটির পিতা ছেলেটিকে আর কিছু দিতে না পারুক মানুষ বানিয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:১০
খেয়া ঘাট বলেছেন: ঐ ভদ্রলোকই ছেলেটির বাবাকে ছাড়িয়ে এনে দিয়েছেন, কোনও টাকা পয়সাও নেন নি। এমন কি কোর্টের ফী টাও উনি নিজ পকেট থেকে দিয়েছেন। যার কেউ নাই তার আল্লাহ্ আছে , কথাটা মিথ্যা না। - উনার জন্য বুকের গহীন থেকে রইলো শ্রদ্ধা।
আর এরকম পিতৃভক্ত ছেলের জন্য রইলো অনেক অনেক মমতাভরা ভালোবাসা আর আশীর্বাদ।