![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব ছোট বেলা থেকেই আমাদের শিক্ষা দেয়া হয় যে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন হয় তদ্রূপ মানুষের বেঁচে থাকার অনুকূল পরিবেশ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন এর। আর এই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমরা পাই বৃক্ষ থেকে। সহজ কথায় পরিবেশ বা বনায়ন ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা পরিবেশ রক্ষা বা বনায়নের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছি, তার উপর আমরা কম বেশী সবাই পরিবেশ নিয়ে সচেতন না। তার উপর আবার মড়ার উপর খরার ঘা হিসেবে আছে আমাদের বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যক্তিগত গাড়ির বহর, সর্বোপরি অসচেতন মানুষ মানে আমরা। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য কলকারখানার বা ইনফ্রাসস্ত্রাকচার যেমন দরকার তদ্রূপ সেটা তেমনি পরিবেশ বান্ধব কিনা তাও যাচাই করা দরকার।
যেমন উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের কথা ধরা যাক। সীতাকুণ্ডের মোট জাহাজ ভাঙ্গা ঘাট আছে ১৮০ টি যার মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ৭০ টির মত। জাতিসংঘের নৌযান সংক্রান্ত চুক্তি “ ভেসেল কনভেনশন” অনুযায়ী, পুরনো জাহাজ আমদানি করতে চাইলে অবশ্যই রপ্তানিকারক দেশ থেকে তা বর্জ্যমুক্ত করে আনতে হবে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। আর এই সব পুরনো জাহাজ বর্জ্যমুক্ত করে আমদানি না করার ফলে ঘটছে নানা বিধ বিপর্যয়।
যেমন- এই সব পুরনো জাহাজে থাকে অনেক দিনের বন্ধ থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড, বিষাক্ত কার্বন মনো অক্সাইড, বিষাক্ত কেমিক্যাল, গ্যাস, অব্যবহৃত তেল, এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান যা পরিবেশ এবং মানুষ উভয়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাছাড়া এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প স্থাপন করার জন্য অনেক “কোস্টাল প্ল্যানটেশন” ধ্বংস করা হচ্ছে যা পরিবেশে জন্য অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ কেননা এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের জন্য অনেক বন উজাড় করে ফেলতে হচ্ছে যা কিছুটা হলে পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে পরিবেষের ভারসম্ম্য রক্ষা করতো। আর এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প যে শুধু পরিবেশে জন্য ক্ষতিকর তা নয় বরং এই শিল্প জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ। পাশাপাশি এই শিল্প নদী তথা সমুদ্রের মাছের মৃত্যুর প্রধান কারণ যা স্থানীয় পেশাজীবী জেলেদের জীবন ধারণের প্রধান অন্তরায়।
উপরের এত কথা ছিল শুধু সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প নিয়ে এখন আসি মূল বিষয়ে আর সেটা হল বরগুনার পাথরঘাটার সুন্দরবনের কাছে দ্বিতীয় জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। অথচ বন আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং জাতিসংঘের রামসার কনভেনশন অনুযায়ী সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনও শিল্পকারখানা, ভারি ইমারত ও স্থাপনা নির্মাণ নিষেধ। কিন্তু ৫২.২৪ একর জমির উপর প্রস্তাবিত এই নতুন জাহাজ ভাঙ্গার ঘাট স্থাপনের জায়গাটি থেকে সুন্দরবনের দুরুত্ত মাত্র ৬ কিলোমিটার!!! তাহলে কি করে সরকারের উচ্চপদস্থ নেতা কর্মীরা বলেন যে এই নতুন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প পরিবেশের জন্য কোনও ক্ষতির কারণ হবে না !
পরিসংখ্যান এ দেখা গেছে যে, আশির দশক থেকে সীতাকুণ্ডে উপকূলে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প স্থাপিত হওয়ায় সেখানকার কয়েক কিলোমিটার এলাকার প্রায় পাঁচ লক্ষ্য গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই শিল্পের কারণে সীতাকুণ্ডের মাটি, পানি, গাছ ও সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে ২০১০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর জাতীয় জীববৈচিত্র্য মূল্যায়ন ও কর্মপরিকল্পনা ২০২০ তৈরি করেছে যেখানে মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য এর আধার হিসেবে বলেশ্বর নদের মহনা কে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তদুপরি শিল্পমন্ত্রণালয় থেকে কি করে এই জায়গায় জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের সমর্থন দেয়া হয়???
যদিও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কিন্তু এর কিছু ভালো দিক ও আছে যেমন এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে এই শিল্প থেকে। শুধু রাজস্ব আয় ই নয় বাংলাদেশের যত ষ্টীল রিরোলিং মিল আছে তার সিংহভাগ কাচা মাল আসে এই শিল্প থেকে। এ ছাড়া ও ফার্নিচার, বিভিন্ন রকমের ঘর সাজানোর জিনিসপত্র অথবা ইলেকট্রিকাল যন্ত্রপাতি প্রায় সবই আসে এই শিল্প থেকে।
যদিও এই শিল্প পরিবেশ বান্ধব নয় মোটেই কিন্তু দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের কিছুটা হলে ও ছার দিয়ে হবে। যেমন জাহাজ আমদানি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই রপ্তানিকারক দেশ থেকে তা বর্জ্যমুক্ত করে আনতে হবে, অন্যথায় আইন অমান্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হবে। পাশা পাশী প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। তাছাড়া । গ্যাস কাটার হিসেবে কম কার্বন ইমিশন করা সিলিন্ডারর নির্বাচন একটি সহজ পন্থা ।এক্ষেত্রে,আর্থিক লাভ কম হবে মালিক পক্ষের । কিন্তু,পরিবেশের ক্ষতি কিছুটা কমানো যায়। সরকার পক্ষের ও যথেষ্ট ভূমিকা গ্রহন করতে হবে এই শিল্প রক্ষার জন্য তবে তা হতে হবে অতি অবশ্যয় পরিবেশ বান্ধব। যেমন প্রতি বছর জাহাজ আমদানির সংখ্যা সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারে। পাশা পাশী একটি রেগুলেটরি টীম গঠন করে দিতে পারে যার মূল কাজ হবে যে সঠিক সঙ্খায় জাহাজ আমদানি করা হচ্ছে কি না আর আমদানিকৃত জাহাজ গুলু অতি অবশ্যয় বর্জ্যমুক্ত কিনা। আর তাছাড়া এই বিষয়টা ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে এই জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের সাথে অনেক গরীব আর দিনমজুরের জীবিকা জড়িত। তাই এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেয়া মানে এই সব গরীব মেহনতি মানুষের পেটে লাথি মারা। তাই বিষয়টি সামগ্রিক ভাবে আমাদের সবাইকেই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা হতে হবে অতি অবশ্যয় পরিবেশ বান্ধব, দেশের অর্থনীতির জন্য সুফলপ্রদ এবং সমাজ তথা দেশের জন্য উপকারী।
©somewhere in net ltd.