নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অশরীরি

অদেখা অশরীরি

কবি,শব্দই আমার হাতিয়ার

অদেখা অশরীরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

এত বড় চিঠি আজ কাল কএ লেখে নাকি? তবু সমসের লিখল। চিঠিটা অবশ্য শুধু তার বউকে উদ্দশেও করে লেখা না। সে চিঠিতে আছে অনেক অব্যক্ত অনুভতির কথা। আছে বাবা মার কথা, গ্রামের কথা, অনাগত সন্তানের কথা, নতুন ফসলাদির কথা, আরও কত কি ! সমসরের চিঠিটা অবশ্য অনেক গুছিয়ে লেখা। তবে গ্রাম্য ভাষার ব্যবহারের ঘাটতি নেই কোনও।

প্রিয় বউ

কেমন আছ? আব্বা আম্মা কেমন আছে? উনাদেরকে আমার সালাম দিও। আম্মার প্রতি একটু বিশেষ যত্ন নিও। আসার আগে দেখে আসলাম আম্মার হাঁপানির ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। আর তুমি নিজের প্রতি ও বিশেষ যত্ন নিও। কারণ তোমার প্যাডে যে আমার কইলজার টুকরাডা ঘমাইতাসে! জানো আমি প্রতিদিন সপ্নে ওর লগে কথা কই। ওর একটা নাম ও আমি ঠিক কইরা ফালাইসি। জানো কি নাম? ওর নাম দিলাম আমি নিশা। এর অর্থ জানো কি? এর অর্থ হইল রাইত। এই নাম আমি কেন ঠিক করলাম জানো? আমার মনে হয় আমাগো মাইয়া হইব, ফুটফুটে ভরা চান্দের মত। তাই এই নাম দিলাম। চোখ, নাক, মুখ সব দেখতে হইব তোমার মত আর হাসব ঠিক আমার মত কইরা। তুমি না সবসময় কইতা আমার হাঁসি কত সুন্দর!

বউ জানো, কইডা দিন ধইরা খুব কষ্ট জাইতাসে। খাওনের কষ্টডা বেশী। কষ্টে রাইতে ঘুমাইতে পারি না। খালি পানি খাইয়া থাকতে হয়। মেলা দিন হইয়া গেল তোমার হাতের খাওন খাই না! বউ আমাদের বাড়ির পিছনে যে পুকুর টা আছে তাতে কি আব্বা আবার মাছ ছারে নাই? বাড়িতে আইলে আমি পুকুর থেইকা কাতল মাছ ধইরা আনুম আর তুমি মুড়িঘণ্ট কইরা আমারে নিজ হাতে খাওইবা। যদি পার চিঠির উত্তর দিও নাসরিন ভাবী রে দিয়া। চিন্তা মুক্ত হমু।

সামিম ভাইয়ের কথা তোমার মনে আছে? তমারে যে কইছিলাম । আমারে মেলা আদর করেন। ঠিক মার পেটের ভাই এর মতন দেখেন আমারে। জানো, উনার জন্য ও আমার খুব মায়া হয়। রাইতের আন্ধারে উনিও ও যে গাছতলায় বইয়া কান্দেন তা কেও না জানলেও আমি ঠিকই কইতে পারি। এত বড় একটা মানুষ, এমুন মনের জোর, কিন্তু রাইতের আন্ধারে উনি ঠিক যেন একটা বাচ্চা পোলা!

আবার বাড়িত আসতে পারলে ঘরটা ঠিক করামু। বাড়িত নতুন মানুশ্ন আইব নতুন ঘর লাগব না?

আমার লাগি চিন্তা লইও না বউ। আল্লাহ্‌ আছে না আমার জন্য। ভালো থাইক আর নিজের যত্ন নিও। আব্বা আম্মারে দেইখা রাইখ।

বেঁচে থাকলে ইনশাল্লাহ দেখা হবে।

খোদা হাফিয।

চিঠির উপরের তারিখ টা লেখা ০৩,১১,৭১

আজ নভেম্বরের ৯ তারিখ। কুয়াশা আর শীতে জীর্ণ প্রায় সবকিছু। তবে নীরবতার শোক মিছিল যেন নেমে এসেছে দিগন্তের প্রান্তরে। মুন্সিগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্দালয়ের পুকুর পারে পড়ে আছে সমসরের নিথর দেহ। চোখ দুটি খুবলিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। গায়ে অসংখ্য বেয়নটের খোঁচা। পাশেই পড়ে আছে তার কালচে হয়ে আসা শার্টটা। আজ ছয় দিন হয়ে তার লাশ টা এখানেই পড়ে আছে। গোর, কাফন করানোর মত ও কেও নেই! পাকিস্তানীদের অত্যাচারে এই গ্রাম এখন প্রায় জনমানবহীন। এখানে রাজত্ব এখন কাক আর শকুনের। সমসরের শরীরের ঊর্ধ্বাংশ খুবলিয়ে নিয়েছে কাক আর শকুন মিলে। সমসের শহীদ হয়ে গেছে কিন্তু তার জাগ্রত অবস্থার সমস্ত ভালো বাসা রেখে গেছে রক্ত কালচে হয়ে জমে উঠা সেই শার্ট এর বুক পকেটের চিঠিতে। সমসরের অব্যস্ত ভালোবাসার কথা বন্ধী হয়ে গেল তার বুক পকেটে। কাগজ ও কলমের জাগতিক ছোঁয়ায় আটকা পড়ে গেল চিরতরে।

( ঘটনা ও চরিত্র সব কাল্পনিক)।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০

শায়মা বলেছেন: + দেওয়া যাচ্ছে না।

গেলে অনেকগুলো দিতাম ভাইয়া।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৬

মাক্স বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.