নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Omar1971

এখনও তেমন আহামরি কিছু হতে পারিনি !

Omar1971 › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামাযে ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরা সুন্নত (জিরার উপর জিরা রাখা বেদায়াত)

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২০

নামাযের মধ্যে কিছু ভাইকে দেখা যায় তারা বাম হাতের কনুই পর্যন্ত ডান হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে।অর্থাৎ বাম হাতের সম্পূর্ণ জিরার উপর ডান হাতের সম্পূর্ণ জিরা রাখে। এটা একটা বেদায়াত পদ্ধতি। এখানেও বুখারীর হাদীসের নাম দিয়ে বেদায়াত চালুর চেষ্টা করা হয়েছে। এমন আমল তৌরি করা হয়েছে যার সাথে না নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম , না সাহাবা রাযিঃ আর না সালাফদের আমলের কোন মিল আছে। নামাযে হাত ধরার সুন্নত আমল হল ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরা। এবার দালিলিক আলোচনায় আসি। বুখারির যে হাদীস দিয়ে বেদায়াতকে সুন্নত বানাতে চায়ঃ """""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""" حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُونَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلاَةِ হযরত সাহল বিন সা’দ রা. বলেন: লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হতো যে, নামাযে প্রত্যেকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে। (বুখারী: ৭০৪, পৃষ্ঠা: ১/১০২) এ হাদীসটি মুওয়াত্তা মালেকেও বর্ণিত হয়েছে। সাহল বিন সাদ রাযি এর হাদীসের ব্যাপারে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন – “বাহুর কোন জায়গায় রাখতেন সেটা এই হাদীসে অস্পষ্ট।আবূ দাউদ ও নাসাঈ বর্ণিত ওয়াইল রাযিঃ এর হাদীসে বলা হয়েছে- ‘অতঃপর তিনি তাঁর ডানহাত বাম হাতের তালুর পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন।’ইবনে খুজাইমা রহঃ প্রমুখ এটিকে সহিহ বলেছেন। সালাত অধ্যায়ের শেষে দিকে হযরত আলীরাযিঃ এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ আসছে। (ফতহুল বারী২/২৭৫)। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এ বিষয়ে মূলমর্ম বর্ণনার ক্ষেত্রে বললেন – “সালাত অধ্যায়ের শেষে দিকে হযরত আলী রাযিঃ এর অনুরূপ আছার (হাদীস) এর উল্লেখ আসছে।” (ফতহুল বারী২/২৭৫) তাহলে এবার আমরা আলী রাযিঃ এর আমালটি বুখারি শরিফ থেকে দেখি- “আলী রাযিঃ (সালাতে) সাধারণত তার (ডান হাতের) পাঞ্জাবাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন।” (বুখারী ১/১৫৯,ইফা ২/৩৩০) সাহল বিন সাদ রাযিঃ এর হাদীসে ডান হাতকে বাম হাতের ‘জিরা’র উপর রাখতে বলা হয়েছে। হাতের কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত অথবা বাহুকে ‘জিরা’ বলা হয়। এ হাদীসে ডান হাত বাম ‘জিরা’র উপর রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে পূর্ণ ‘জিরা’ বা তার অংশবিশেষের উপর রাখতে হবে এমন কোন কথা বলা হয়নি। আর সাধারণভাবে কোন একটি অঙ্গের নাম উল্লেখ করে যেমনিভাবে পূর্ণ অঙ্গ বুঝানো হয়ে থাকে, তেমনিভাবে উক্ত অঙ্গের অংশবিশেষকেও বুঝানো হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ: يجعلون أصابعهم فى اذانهم “তারা কানের মধ্যে আঙ্গুল দেয়”। (বাকারা-১৯) এটা অত্যন্ত স্পষ্ট কথা যে, কানের পূর্ণ ছিদ্রের মধ্যে পূর্ণ আঙ্গুল কোনক্রমেই দেয়া সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে পূর্ণ বা আংশিক কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই কানে আঙ্গুল দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। উক্ত আয়াতে শব্দের ব্যবহার থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, কোন অঙ্গের কথা উল্লেখ করে তার অংশবিশেষ উদ্দেশ্য নেয়ার প্রচলন কুরআনেও বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং উল্লিখিত হাদীসে পূর্ণ-অপূর্ণের ব্যাখ্যা বিহীন সাধারণভাবে ব্যবহৃত ‘জিরা’ শব্দের দ্বারা যদি ‘জিরা’র অংশবিশেষ অর্থাৎ হাতের কব্জি উদ্দেশ্য নেয়া হয় তাহলে কুরআন-হাদীসের কোন নিয়ম লংঘন হবে না। সাহাবীদের আমলঃ """""""""""""""""" আবু বকর রাযিঃ এর আমলঃ """"""""""""""""""""""""""""" وَقَالَ مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى ثنا ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ عَنْ أَبِي زِيَادٍ مَوْلَى آلِ دَرَّاجٍ قَالَ " مَا رَأَيْتُ فَنَسِيتُ فَإِنِّي لَمْ أَنْسَ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا قَامَ فِي الصَّلَاةِ قَامَ هَكَذَا وَأَخَذَ بِكَفِّهِ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى لَازِقًا بِالْكُوعِ আবু যিয়াদ বলেন: আমি আর যা-ই কিছু ভুলি, তবে এটা ভুলিনি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন এভাবে দাঁড়াতেন। একথা বলে, ডান হাতের তালু দ্বারা কব্জির সাথে মিলিত গিরা ধরতেন। (আল মাতালিবুল আলিয়া: ৪৬০) আবু যিয়াদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর আবু যিয়াদের ব্যাপারে হযরত ইবনে হাজার রহ. বলেন: له إدراك. ذكر ابن أبي حاتم عن أبيه أنه روى عن أبي بكر الصّديق، وعنه خالد بن معدان “তিনি রসূলুল্লাহ স. কে পেয়েছেন। ইবনে আবী হাতেম তাঁর পিতা থেকে বলেন: আবু যিয়াদ হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণনা করেন এবং তার থেকে খালিদ বিন মা’দান বর্ণনা করেন। (আল ইসাবা: রাবী নং- ৩০০১) সুতরাং হাদীসটি সহীহ। আলী রাযিঃ এর আমলঃ """"""""""""""""""""""" উপরন্তু, হযরত আলী রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বাম হাতের কব্জির উপর ডান হাতের তালু রাখতেন; যে পদ্ধতির বর্ণনা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। হযরত আলী রা. বর্ণিত হাদীসটি নিম্নরূপ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حدَّثَنَا عَبْدُ السَّلاَمِ بْنُ شَدَّادٍ الْجُرَيري أَبُو طَالُوتَ ، عَنْ غَزْوَان بْنُ جَرِيرٍ الضَّبِّيُّ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : كَانَ عَلِيٌّ إذَا قَامَ فِي الصَّلاَةِ وَضَعَ يَمِينَهُ عَلَى رُسْغِهِ ، فَلاَ يُزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يَرْكَعَ مَتَى مَا رَكَعَ ، إِلاَّ أَنْ يُصْلِحَ ثَوْبَهُ ، أَوْ يَحُكَّ جَسَدَهُ. হযরত জারীর আযযব্বী রহ. থেকে বর্ণিত: হযরত আলী রা. নামাযে দাঁড়ালে ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন। রুকুতে যাওয়ার র্প্বূ পর্যন্ত তিনি হাত এভাবেই রাখতেন। তবে কাপড় ঠিক করতে বা শরীর চুলকানোর জন্য সরাতে হলে ভিন্ন কথা। (ইবনে আবী শাইবা: ৩৯৬১, পৃষ্ঠা: ৩/৩২২)
এ হাদীসের রাবীগণের মধ্যে হযরত ওয়াকী’ রহ. বুখারী-মুসলিমেরমাশহুর রাবী। আব্দুস সালাম ثقةٌ (নির্ভরযোগ্য)। (তাকরীব: ৪৫৫৬), গযওয়ান বিন জারীর مقبول (গ্রহণযোগ্য)। (তাকরীব: ৬০১৯) এবং জারীরও مقبول (গ্রহণযোগ্য)। (তাকরীব: ১০১৮)। সুতরাং হাদীসটি হাসান। ইমাম বুখারী রহ. এ হাদীসটিকে সনদবিহীন এভাবে বর্ণনা করেছেন যে,ووضع على رضى الله عنه كفه على رسغه الايسر الا ان يحك جلدا او يصلح ثوبا “আর হযরত আলী রা. আপন বাম হাতের কব্জির উপর (ডান) হাতের তালু রাখতেন। তবে শরীর চুলকাতে হলে বা কাপড় ঠিক করতে হলে ভিন্ন কথা”। (বুখারী: ১/১৫৯) হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত এ হাসান হাদীস, আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হাসান হাদীস, ইবনে আবী শাইবাতে বর্ণিত সহীহ হাদীস এবং বুখারী শরীফে বর্ণিত মুআল্লাক হাদীস দ্বারা নিঃসন্দেহে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, বুখারী শরীফে হযরত সাহল বিন সাআদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীসেيد ও ذراع-এর ব্যাখ্যা ডান হাতের পাতা ও বাম হাতের কব্জি। এ ব্যাখ্যা গ্রহণ না করা হলে হযরত আলী রা. বর্ণিত হাদীসটিকে বিনা দলীলে প্রত্যাখ্যান করতে হয়। সর্বোপরি কথা হলো: হাদীস থেকে দলীল দেয়ার জন্য শুধু হাদীসের শব্দার্থই যথেষ্ট নয়; বরং এ হাদীসের অর্থ সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিঈন এবং পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসগণ কীভাবে নিয়েছেন তা দেখাও আবশ্যক। বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের মতে পূর্ববর্তী কোন মুহাদ্দিস হযরত সাহল বিন সাআদ রা.-এর উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে বাম হাতের পূর্ণ জিরার উপর পূর্ণ ডান হাত রাখার আমল করেননি। এটা নবসৃষ্ট পদ্ধতি যা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। পূর্ববর্তী মুহাদ্দিস এবং ফকীহগণের মন্তব্য ও আমল *************************************************** আল্লামা ইবনে কুদামা তাঁর মুগনী কিতাবে বলেন: وَيُسْتَحَبُّ أنْ يَّضَعَهَا عَلى كُوْعِهِ وَمَا يُقَارِبُه মুস্তাহাব হলো ডান হাত বাম হাতের কব্জি এবং তার নিকটবর্তী অংশে রাখবে। (আল মুগনী: ‘নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত রাখার স্থান’ নামক মাসআলায়) আল্লামা ইবনে হাযাম তাঁর ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বলেন: مَسْأَلَةٌ: وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يَضَعَ الْمُصَلِّي يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى كُوعِ يَدِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ، فِي وُقُوفِهِ كُلِّهِ فِيهَا.... وَرُوِّينَا فِعْلَ ذَلِكَ عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ، وَإِبْرَاهِيمَ النَّخَعِيِّ، وَسَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، وَعَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ، وَمُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، وَأَيُّوبَ السِّخْتِيَانِيُّ، وَحَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ: أَنَّهُمْ كَانُوا يَفْعَلُونَ ذَلِكَ وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ، وَالشَّافِعِيِّ، وَأَحْمَدَ، وَدَاوُد মুস্তাহাব হলো মুসল্লী নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। (একটু পরে গিয়ে তিনি বলেনইবরাহীম নাখঈ, সাঈদ বিন যুবায়ের, আমর বিন মাইমূন, মুহাম্মাদ বিন সীরীন, আইয়ূব সিখতিয়ানী ও হাম্মাদ বিন সালামা থেকে আমাদের নিকট অনুরূপ আমল বর্ণিত হয়েছে । আর এটা আবু হানীফা, শাফিঈ, আহমাদ এবং দাউদ জাহেরী রহ.-এরও মত। (আল মুহাল্লা: মাসআলা নম্বর- ৪৪৮) আল্লামা শাওকানী তাঁর ‘নাইলুল আওতার’ কিতাবে বলেন: وَالَحَدِيْثُ يَدُلُّ عَلى مَشْرُوْعِيَّةِوَضْعِ الْكَفِّ عَلى الْكَفِّ وَإلَيْهَ ذَهَبَ الْجَمْهُوْرُ এ সংক্রান্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, পাঞ্জার উপর পাঞ্জা রাখা শরীআত সম্মত এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ এ মত গ্রহণ করেছেন। (নাইলুল আওতার: বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা অধ্যায়) আবুল ওয়ালিদ আল বাজী বলেন: قَوْلُهُ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى يُرِيدُ أَنْ يَضَعَهَا عَلَى رَسْغِهِ لِأَنَّ يَدَهُ الْيُمْنَى لَا يَضَعُهَا عَلَى كَفِّ يَدِهِ الْيُسْرَى হাদীসের ভাষ্য ‘ডান হাত বাম জেরার উপর রাখবে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখা। যেহেতু (পূর্ণ) ডান হাত বাম হাতের পাঞ্জার উপর রাখা যায় না। (আল মুনতাকা শরহে মুয়াত্তা: ২/১৬৪) অনুরূপ মন্তব্য আল্লাম ইবনে তাইমিয়া থেকেও বর্ণিত রয়েছে। তাহলে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের কেউ হযরত সাহল বিন সাআদ রা.-এর হাদীসে বর্ণিত জেরা শব্দের ওই ব্যাখ্যা করেননি। অতএব, জেরা শব্দকে পুঁজি করে সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিঈন এবং পূর্ববর্তী মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের ব্যাখ্যার প্রতি না তাকিয়ে বাম হাতের পূর্ণ জেরার উপর ডান হাতের পূর্ণ জেরা রাখতে হবে বলে প্রচার করে তারা হাদীসের শব্দের আড়ালে আমলের বিদআত পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এটা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.