নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাঁচতে চাই, অর্জন করতে চাই।

ওমর এন সোহান

সকল অর্জনই বিফলে যাবে, যদি তা কোন মানব কল্যাণে না আসে ।আমার অস্তিত্বও সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে, যদি এ মুখখানা মানুষের নয়নে না ভাসে ।মানুষ হাজার বছর বাঁচে না, বাঁচে তার কর্ম ।বড় সাধ হয়, যদি কপালে সয়...ফেসবুক: http://www.facebook.com/ThisIsSohan

ওমর এন সোহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : বুঝতে চাওনি কখনো তাই হারিয়ে যাবো (১ম ভাগ)

১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫২

দৃশ্যপট ১ :

রাত তিনটা । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় রাফিনের । ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে । বেড সুইচ চেপে লাইট জ্বালিয়ে দিল । ভয় কাটছে না এখনো ।

ভয়ে ভয়েই চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিল অপ্রাকৃতিক কিছু আছে কিনা । যেন তেমন কিছুরই প্রত্যাশা করেছিল ।

তারপর লাইটের সুইচ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঘুমাতে চেষ্টা করলো । কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না ।

সেই রাতটা গল্পের বই পড়ে, বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়েছে সে । পরদিন সকাল বেলা আবার ক্লাস । রাতে ঠিকমত ঘুমুতে না পারায় চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট । কিন্তু কিছু করার নেই, কলেজে যেতেই হবে । নইলে গুরুত্বপূর্ণ দুইটা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করা হবে না । তার মাও নিজের মেয়ের স্বেচ্ছাচারিতাকে মেনে নেবে না ।



মায়ের ইচ্ছে, মেয়ে শুধু কলেজে নয়, এইচএসসি পরীক্ষায় পুরো জেলায় ফার্স্ট হবে । বাবা ব্যবসায়ী মানুষ, প্রায় প্রতিদিনই দেরি করে বাসায় ফেরেন । দুই ভাই বোনের মধ্যে রাফিন ছোট । বড় ভাই স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে । মায়ের ইচ্ছে, মেয়েকেও দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবেন ।

এই শহরের রাস্তাঘাট, মানুষজন...বিশেষ করে তরুণ ছেলে গুলোকে তিনি কখনোই ভাল চোখে দেখেননি । কোন এক বাজে ছেলের সংস্পর্শে মেয়ে খারাপ হয়ে যাবে, সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি মেয়েকে দেশের বাইরের পাঠিয়ে দিতে চাইছেন । আর তাই বেশী বেশী পড়ার বিকল্প নেই ।



দৃশ্যপট ২ :

বেসিন থেকে হাতমুখ ধুয়ে সবেমাত্র নিজের রুমে এসেছে রাফিন, অমনি মায়ের ডাক । নাস্তা করতে, খাবার টেবিলে ডাকছেন ।

খেতে ইচ্ছে করছেনা তার, কিন্তু মায়ের হুকুম । হ্যাঁ ব্যাপারটা ওরকমই ।

মায়ের নির্দেশে অনিচ্ছা সত্ত্বেও করতে হয় অনেক কিছু ।

ইচ্ছে করে চার দেয়ালের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আকাশপানে চেয়ে, পাখি যেমন ডানা মেলে তেমনি দুহাত ছড়িয়ে প্রাণ ভরে তাজা নিঃশ্বাস নিতে । সম্ভব হয় না । তাই উপন্যাসের ঘটনাগুলো উপন্যাসেই থেকে যায়, তার মনের ইচ্ছে গুলোও অতৃপ্তি হয়েই মনের কোণে জমে থাকে ।



দৃশ্যপট ৩ :

কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে প্রায় । মা ডেকে বললেন, “রাফিন শোন, তোর খালার শরীরটা ভালো নেই, হাসপাতালে নাকি নেওয়া লাগতে পারে ।

তুই একা যেতে পারবি? আমি একবার দেখে আসি । কী বলিস?”

-“পারবো ।” জবাব দিল রাফিন ।

মা বের হয়ে গেলে একটু আগে ভাগেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল সে । বাসা থেকে রিকশায় গেলে মিনিট চল্লিশের রাস্তা । কিন্তু রাফিন ঠিক করলো বাসে যাবে । কতদিন পর একা বের হয়েছে । সেই স্কুল লাইফ থেকেই মা ছায়ার মত সাথে সাথে ছিল । আজ সুযোগ পেয়ে এই প্রকৃতি, নগরীর কোলাহল সব কিছুর সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হল তার ।

প্রখর রোদ, আর তীব্র জানজটের মাঝেও যেন সে খুঁজে পাচ্ছে আনন্দ । এমন কাছ থেকে সময় নিয়ে দেখার সুযোগ যে আগে হয়নি ।



দৃশ্যপট ৪ :

বাসে উঠলো রাফিন । মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে বসে পরলো ।

কিছুক্ষণ পর একটা ছেলেও তার পাশে এসে বসলো । সে কিছুটা বিব্রত হল । পাশ ফিরে একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে, “কী অবস্থা, হুট করে এসে মেয়েদের আসনে বসে পরলো । কোন ভাবান্তর নেই।

এইবার ছেলেটাও বিব্রত হয়ে গেল । মুখ দেখে মনে হল সে ভাবছে, মেয়েটা এখনি তাকে রাগত স্বরে বলে বসবে, “এইখানে বসছেন কেন? দেখতেছেন না মেয়েদের সিট এইটা?”

কিন্তু রাফিন তেমন কিছুই বললোনা । পাশ ফিরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । কি মনে করে আবার ছেলেটির দিকে তাকালো ।

কিন্তু এমন কেন হলো? প্রতিদিনই তো কতশত ছেলে চোখে পড়ে ।

এই ছেলেটার মধ্যে এমন বিশেষ কী আছে, যার জন্য চোখ আটকে যায়?

হ্যাঁ আছে । ছেলেটার মায়াবী দু’চোখ । রাফিনের মনে হল ছেলেটিও যেন তার প্রকৃতিরই মানুষ । হঠাৎ লক্ষ্য করলো ছেলেটাও তার দিকে তাকিয়ে আছে ।

এইবার সে কিছুটা লজ্জাও পেল । ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো জ্যামে আটকা পড়ে আছে তাদের বহনকারী বাসটি ।

ধ্যাত! ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে । রিকশা দিয়ে আসলে অন্য পথ দিয়ে হয়তো এতোক্ষণে পৌঁছে যেতাম’ ভাবছে সে ।

কিছু করার নেই দেখে বই খুলে পড়ার চেষ্টা করছে ।

নাহ! পড়তেও ইচ্ছে করছে না ।



রাফিন তো এমন নয়, পড়াশোনার জগতেরই মানুষ সে । পরীক্ষার সময় মায়ের সাথে রিকশায় বসে অনেকবার বই পড়েছে, সমস্যা হয়নি ।

কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে তার । মাথার ভেতর ছেলেটার অপলক চেয়ে থাকার ব্যাপারটা ঘুরপাক খাচ্ছে । ছেলেটার কথা কেন মনে পড়ছে তার, আনমনেই সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে সে । বারবার চেষ্ট করছে তার এই ভাবান্তর যেন চেহারায় ফুঁটে না উঠে ।

এদিকে ছেলেটাও একটা ম্যাগাজিন বের করে চোখ বুলাচ্ছে । কিন্তু মনে হচ্ছে মনস্থির করতে পারছে না ।

‘তবে কী ছেলেটার বেলায়ও একই রকম হচ্ছে । না না, এমনটা হতেই পারে । আমার কথা সে কেন ভাববে ।’ এই ভেবে মাথা থেকে চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলতে চাইলো রাফিন ।



এদিকে জ্যামও ছাড়ছে না । হঠাৎ মায়ের ফোন...

-হ্যালো, আম্মু ।

-কিরে পৌঁছেছিস?

-না মা, এই তো কাছাকাছি ।

-আচ্ছা ঠিকমত যাস । দুপুরে খেয়ে নিস কিন্তু ।

-আচ্ছা মা ।



কল কেটে দিল রাফিন । জ্যামে পড়ে আছে এই কথা বলে মাকে জানাতে চাইলো না যে সে বাসে এসেছে ।

বাইরে তাকিয়ে দেখলো ট্রাফিক সিগন্যাল সবুজ হয়ে আছে, কিন্তু তাদের রাস্তা এখনো খুলে দেওয়া হয়নি । মনে মনে বাসে আসার জন্য নিজের উপর কিছুটা বিরক্ত হল সে ।

আবার বই পড়ায় মন দিতে চাইল, কিন্তু এবারও সেই একই ব্যাপার

ঘটলো । পাশে বসা ছেলেটির কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেনা...

কিছু বলতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু কী বলবে? একটা অপরিচিত ছেলেকে তার কীইবা বলার আছে?

এবার তাকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটিই বলে উঠলো, “কোথায় যাবেন আপনি?”

রাফিন মোটেই প্রস্তুত ছিলনা । তাই কিছুটা বিব্রত স্বরেই জবাব দিল, “সরকারী ইউমেন্স কলেজ । আপনি?”

-আমিও তো সেদিকেই যাচ্ছি । আমি সরকারী কলেজে ফিন্যান্সে অনার্স করছি । আপনি কিসে পড়ছেন?

-আমি এইবার এইচএসসি দিব ।

-ও আচ্ছা ।



কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ । এদিকে জ্যাম থেকে ছাড়া পাওয়ার আনন্দে বাসের সবাই স্বস্তি ফিরে পেল । কিন্তু সেদিকে নজর নেই এই দুজন মানুষের ।

রাফিন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ।

ছেলেটি সেটা লক্ষ্য করলো । সে আবার বলতে শুরু করলো, “আমার ক্যাম্পাস আপনার কলেজের কাছাকাছিই, জানেন নিশ্চয়ই?”

-হ্যাঁ জানি তো । জবাব দিল রাফিন ।

-কই আপনাকে কখনো দেখিনি কিন্তু ।

-দেখবেন কীভাবে? আপনি কি সারাদিন ওখানেই গিয়ে বসে থাকেন নাকি?

-না, ঠিক তা নয় । এইচএসসি ও পাশ করেছি এই কলেজ থেকে । এতোদিন যাবত পড়ছি যখন, চোখে পড়লে পরতেও পারতো । মৃদু হেসে জবাব দিল ছেলেটি ।

এইবার রাফিনও মৃদু হাসলো ।



হঠাৎ বাসের কন্ডাক্টরের কথা শুনে চমকে উঠলো রাফিন । ওরা যে স্টেশনে নামবে কন্ডাক্টর তার পরেরটার নাম বলছে । তার মানে কথা বলতে বলতে কখন যে স্টেশন পার হয়ে এসেছে টেরই পায়নি তারা কেউ!

ছেলেটা রাফিনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলো, “আসলে আমার জন্যই এমন হয়েছে ।”

সে নিজের উপরই দোষ চাপাচ্ছে দেখে রাফিনের কিছুটা বিব্রত হল । খানিকটা দায় তো তার নিজেরও...

-যা হবার হয়েছে, এখন কীভাবে যাবো সেই উপায় বলুন ।

-যদি কিছু মনে না করেন, আমিও তো সে দিকেই যাচ্ছিলাম । আমার সাথে যেতে কী আপনার আপনার আপত্তি আছে?

- ...না নেই ।

-তাহলে চলুন, নেমে একটা রিকশা নিয়ে চলে যাই ।

-চলুন ।



( চলবে...... )

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:১৫

ওমর এন সোহান বলেছেন: ওয়াচ থেকে কবে যামু গুরু? লেখতে লেখতে কী-বোর্ড ক্ষয় হইয়া যাচ্ছে! :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.