![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকল অর্জনই বিফলে যাবে, যদি তা কোন মানব কল্যাণে না আসে ।আমার অস্তিত্বও সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে, যদি এ মুখখানা মানুষের নয়নে না ভাসে ।মানুষ হাজার বছর বাঁচে না, বাঁচে তার কর্ম ।বড় সাধ হয়, যদি কপালে সয়...ফেসবুক: http://www.facebook.com/ThisIsSohan
এখন অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে দুজনই ।
একে অপরের নাম জেনে নিল । রাফিন জানতে পারলো ছেলেটির নাম ‘শুভ’ । রিকশায় যেতে যেতে আরো অনেক কথাই হলো । পড়াশোনা বাদে অবসর সময় কিভাবে কাটে, কোথায় কোথায় ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে...এমন আরো অনেক কিছু ।
শুভ হঠাৎ বলে উঠলো, “আমরা কি বন্ধু হতে পারি? আমি খুব খুশি হবো তোমাকে বন্ধু হিসেবে পেলে...” বলেই রাফিনের উত্তরের অপেক্ষা করছে ।
রাফিন নিশ্চুপ ।
-কিছু বলছো না যে?
-কী বলবো...আপনার সাথে বন্ধুত্ব...
-আমাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতে পারো । আর বন্ধুত্ব হলে ক্ষতি কী?
-ক্ষতির কথা বলছি না । আমার পক্ষে তো যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব হবে না । আমার মা সব সময় চোখে চোখে রাখে আমাকে ।
-রাফিন, আমি বন্ধুত্ব করার কথা বলছি, অন্য কিছু না । হেসে বললো শুভ ।
-...............
-কিছু বলছো না যে?
-বন্ধুত্ব করতে আমার আপত্তি নেই । সত্যি কথা বলতে আমিও আপনাকে এমন কিছুর কথা বলবো ভাবছিলাম । কিন্তু সাহস হচ্ছিল না । বন্ধুত্ব করে যদি যোগাযোগই না থাকে তাহলে কষ্ট পাবো । বাইরে কোথাও গেলেও আম্মুর সাথেই যেতে হয় । আজ আম্মু জরুরী কাজে আসতে পারেনি তাই আমি একা এসেছি ।
-তাই? শুনো আমি একটা সমাধান দেই । তিনি নিশ্চই সারাদিন তোমার জন্য কলেজে এসে বসে থাকেন না?
-তাতে কী?
-যেদিন আগেভাগে ক্লাস ছুটি হয়ে যায় সেদিন আমরা দেখা করবো ।
-সম্ভব না ।
-কেন?
-আম্মু স্যারের কাছ থেকে খবর নিয়ে সেদিন আগেভাগেই এসে পড়েন ।
-মারাত্মক সমস্যা দেখছি । আচ্ছা, তোমার ফোন নাম্বার......
-...............
-এছাড়া তো আর কোন উপায়ও দেখছি না । প্লিজ ।
দৃশ্যপট ৫ :
রিকশা কলেজের আঙিনায় প্রবেশ করার পূর্বেই থামতে বললো রাফিন । স্যার, কিংবা বান্ধবীদের অভিভাবক দেখে ফেললে বিপদ ।
রিকশা থেকে নেমে চালকের দিকে টাকা বাড়িয়ে দিল রাফিন । সাথে সাথে হাত দিয়ে সরিয়ে দিল শুভ । এই প্রথম কোন ছেলের স্পর্শ পেল রাফিন । তাই স্থির দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে সে ।
-I’m sorry. আমি ইচ্ছে করে হাতটা লাগাইনি । তুমি কেন টাকা দিবে...
-আচ্ছা আ-মি যা-ই হ্যাঁ? আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন আপনি ।
-নাম্বারটা দিলে না? আমি কিন্তু খারাপ ছেলে নই । তোমার ভাল বন্ধু হতে পারতাম...
......কি করবে যেন বুঝতে পারছে না রাফিন । কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “আচ্ছা দিচ্ছি, কিন্তু কথা বলা যাবে না । শুধু মেসেজ । লিখেন ০১৮১৬.........”
-ধন্যবাদ রাফিন ।
-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাই ।
-আচ্ছা, ভাল থেকো ।
চলে যাচ্ছে রাফিন...অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শুভ । হঠাৎ রাফিন পেছন ফিরে তাকালো...তারপর আবার দ্রুত হেটে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকে গেল ।
দৃশ্যপট ৬ :
পরদিন রাত দশটা । রাফিনের মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ (Hi Rafin, kemon acho? Tomar kotha khub mone porchilo…)। রাফিন বুঝতে পারলো এইটা শুভ । আনমনেই ভাবছে সে, ‘ছেলেটাকে কেন যেন বড় বেশী ভাল লাগে তার ।’ অথচ মাত্র দুই দিনের পরিচয় !
এইভাবে চলতে থাকে । দুই একদিন পরপরই মেসেজ আদান-প্রদান চলতো । সুযোগ বুঝে দুই-একবার কথাও হয়েছে ।
দৃশ্যপট ৭ :
রাফিনের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । পড়াশুনার প্রচন্ড চাপ । রাফিনের মাও তার মেয়েকে আগের চেয়ে বেশী নজরদারি করছেন । মেয়ে ঠিকমত পড়ছে কিনা, সময়মত ঘুমাচ্ছে কিনা । সময়ের কোন অপচয় হচ্ছে কিনা... মেয়েকে নিয়ে তার ভাবনার শেষ নেই ।
আর তাই শুভর সাথে আগের মত যোগাযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছে না রাফিনের ।
এই জন্য শুভর অবশ্য কোন অভিযোগ নেই । পরিচয়ের পর থেকে সে সব সময় রাফিনকে সমর্থন দিয়ে গেছে ।
আর তার এই দায়িত্বজ্ঞান রাফিনকে তার প্রতি দুর্বল করে দিয়েছে । কিন্তু সেটা শুভর কাছে প্রকাশ করেনি কখনো ।
দৃশ্যপট ৮ :
রাফিনের পরীক্ষা শেষ । কিন্তু কিছুদিন যে বিশ্রাম নিবে তারও উপায় নেই । তার মা ইতিমধ্যে কোচিং-এ ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন ।
রাফিন মাকে বলেছে, সে এখন একাই যেতে পারবে । কিন্তু মা একা দিতে রাজি হচ্ছে না । এ জন্য কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ রাফিনের ।
উদ্দেশ্য ছিল শুভর সাথে দেখা করা । তার পরও কলেজের থেকে নিয়ম কানুন এখানে শিথিল । মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই কিছুক্ষণের জন্য হলেও রাফিন আর শুভ দেখা করে ।
দৃশ্যপট ৯ :
ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে রাফিনের । কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে প্রতিটা বিষয়েই । অর্থাৎ সে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে ।
মেয়ের এই ফলাফলে বাবা-মা সবাই খুব খুশী । হওয়ারই কথা ।
তবে মা-বাবার পর সবচেয়ে বেশী খুশী হয়েছে আরেকজন । শুভ ।
দৃশ্যপট ১০ :
সেদিন রাতেই রাফিন শুভর একটা মেসেজ পেল, “Tomar sathe 1 minute kotha bola jabe?”
রাতদুপুরে কথা বলার জন্য আগে কখনো বলেনি শুভ । সাথে সাথে ফিরতি মেসেজ পাঠালো রাফিন, “Jabe…”
কল দিল শুভ...
-হ্যালো ।
-কেমন আছো রাফিন?
-ভাল । তুমি কেমন আছো?
-আমি তো বেশ ভাল আছি । তোমার ফলাফলে আমি খুব খুশী হয়েছি রাফিন ।
-এতে তোমারও অবদান আছে । বলেই মৃদু হাসলো রাফিন ।
-কীভাবে?
-কীভাবে আবার, আমাকে সবসময় সাহস যুগিয়েছো । আমার ক্ষতি হবে এমন সবকিছু থেকে বিরত থেকেছো...
-একটা কথা বলার ছিল......
-কী?
-রাফিন, আমি তোমাকে ভালবাসি.........
-..................
-কিছু বলছো না যে?...
শুভ শুনতে পেল ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে......সে আবার বললো, “আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি? যদি দিয়ে থাকি, বলো । আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করতে চাইনা ।”
-..................
এইবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল শুভ ।
-তুমি কাঁদছো কেন? প্লিজ, কান্না থামাও । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । আমি আর কখনো এমন কিছু তোমার কাছে প্রকাশ করবো না । প্লিজ কেঁদোনা রাফিন ।
ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ অনেকটা হালকা হয়ে এল । কিন্তু কোন কথা বলছে না রাফিন । কিছুক্ষণ থেমে থেকে পরিবেশ হালকা করার জন্য শুভ আবার বলতে শুরু করলো...
-রাফিন ।
-হ্যাঁ ।
-কিছু বলো?
কিছুই বললো না রাফিন, শুভও চুপ । কেউ কথা বলছে না আবার লাইনও কাটছে না । তারা যেন কথাই বলছে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তাদের কথা অন্য কেউ শুনতে পাচ্ছে না ।
এইবার রাফিন বললো, “আমাকে আর কখনো বলবে না? তো এই কথা গুলো কি মনেই রেখে দিবে?”
শুভর উপর তখন রাজ্যের বিস্ময় ভর করেছে! তবে কী রাফিন......
নিজেকে সামলে নিয়ে জবাব দিলো, “তা ছাড়া তো আর কোন উপায়ও নেই । তুমি ছাড়া আমার কেইবা আছে যার সাথে আমি মনের কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি.........”
দৃশ্যপট ১১ :
রাফিন আর শুভর ভাললাগার সম্পর্কটা ভালবাসায় পরিণত হয়েছে ।
এখন আর সুযোগ বুঝে নয়, সুযোগ করে নিয়ে প্রতিদিনই ফোনে কথা হয় দুজনের ।
যেই যেই দিন কোচিং-এ রাফিনের ক্লাস থাকে, শুভ প্রায় প্রতিদিনই আশেপাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে । স্যারদের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নোট সংগ্রহ, সেগুলো কপি করা বা অন্য কোন কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা দেখা করে । একে অপরের সাথে কথা বলে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে একজন আরেকজনের দিকে । এ যেন লোক মুখে প্রচলিত প্রেম নয়, তার চেয়েও বেশী মধুর কিছু । যা এই দুজনেরই সৃষ্টি ।
দৃশ্যপট ১২ :
জানালার পাশে দাড়িয়ে এফএম-এ গান শুনছিলো রাফিন...
“পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেবো, একটাই আশা ।
তুমি ভুলে যেও না আমাকে, আমি ভালবাসি তোমাকে...”
রাফিনের মা বেশ কিছুদিন যাবত মেয়ের মাঝে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন । প্রথমে আমলে না নিলেও এখন তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে । ‘মেয়ে আবার কোন ছেলের সাথের সম্পর্কে জড়ায়নি তো?’
দৃশ্যপট ১৩ :
মায়ের চাপাচাপিতে স্বীকার করতে বাধ্য হলো রাফিন । রাফিন তার মাকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলো । শুভর সম্পর্কে বললো, “শুভ ভাল ছেলে, পড়াশুনায়ও ভাল । তোমরা একবার ওকে দেখ, ওর সাথে কথা বল ।”
কিন্তু মা সেইসব শুনতে নারাজ । সে রাতেই কথাটা রাফিনের বাবার কানে গেল । রাফিনের মায়ের চাপাচাপিতে মেয়েকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে রাজি হলেন তিনি । একরকম বাধ্য হয়েছেন বলা যায় ।
দৃশ্যপট ১৪ :
নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে রাফিন । বালিশের উপর মাথা রেখে সারারাত শুধু কাঁদলো । অঝোর ধারার অশ্রু ভিজিয়ে দিচ্ছে বালিশ । শুভ ফোন করেছিল, ধরেনি । সাড়া না পেয়ে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে শুভ, তাতে লেখা ছিল-
“Tomar sorir-torir kharap hoyni to? Na ta keno hobe… Ghumiye porecho hoyto. Good Night. ”
দৃশ্যপট ১৫ :
পরদিন রাফিনই ফোন করে শুভকে জানালো ব্যাপারটা ।
-আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না শুভ । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । আমি আমার মা-বাবাকেও অনেক ভালবাসি, কিন্তু তারা কিছুতেই আমাকে বুঝতে চাইছেন না ।
-আমিও কি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো?
দৃশ্যপট ১৬ :
এই মামা যাবেন?
-কই যাবেন মামা?
-বাস স্টেশন ।
-যামু, চলেন ।
-তাড়াতাড়ি উঠে বসো... মামা, চালান ।
ঘোর অনিশ্চয়তা সত্তেও ঘর ছেড়েছে দুজনই... গন্তব্য কোথায় তা কেউই জানে না......
(সমাপ্ত ।)
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৭
ওমর এন সোহান বলেছেন: অনুগ্রহ করে কেউ কপি করবেন না । অনেক শ্রম দিয়েছি গল্পটা লিখতে যেয়ে ।