নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।
যতদূর মনে পড়ে, বাড়ি ছেড়েছি ২০০১ এ। এটা পালান নয়, বা রাগ করে বের হয়ে যাওয়া না, এটা এক ধরনের মুভকরা। তাও পড়াশোনার জন্যে। স্বাধীনতার সুগন্ধি গায়ে মেখেছি তখন থেকেই।
কোন এক নাটকে দেখেছিলাম, ছোট বাচ্চা বলছে, বাবা স্বাধীনতা ভাল লাগে না। আমারও এক সময় ভাল লাগত না। বাসায় ফেরার জন্যে মন আকুপাকু করত। হঠাৎ মনে হল, আর রওনা দিলাম। যদিও আমার বাসায় যেতে পুরো একদিন লাগত। অনেক কষ্ট হত। কিন্তু বাসায় পা রাখা মাত্র সব ভুলে যেতাম। সমস্ত ক্লান্তি শুকনো পাতার মত ঝরে পড়ত।
আমার মা, ছোট বেলায় আমার জন্যে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল। ভূতের ভয়ের চেয়েও বড় ভয় ছিল আমার মা কে নিয়ে। আতঙ্কের কারণ হল, আমাকে চরম পেটান হত।
কঠিন ছকে বাঁধা জীবন, আর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার এক একটা দিন পার হত। পারফরমেন্স তার মনের মত না হলে চলত বেত, তাল পাখার ডান্ডি দিয়ে বা কাঠের মোটা স্কেল দিয়ে ভীষণ মার। গায়ে চাকা চাকা হয়ে ফুলে যেত, আগের দিনের জখম ভাল না হতেই পরের দিনের জখম পড়ত। কখনও কখনও ব্যথায় জ্বর আসত।
এতটুকু পড়ে হয়ত ভাবছেন, আমার মা, নিজের মা কিনা বা মানুষ কেমনে এমন হতে পারে? হতে পারে। কারণ গল্পটা শেষ হয়নি। আমি ঘুমালে মা আমার জখমগুলোতে জামবাক/মলম লাগিয়ে দিত। হেরিকেনের তাপে কাপড় গরম করে আলত করে ওম দিত। কাঁদত বসে বসে। আমি বুঝতাম, দেখতাম, কিন্তু ঘুমের ঘোরে থাকতাম। সকালে মনে থাকত না। দেখতাম কেউ একজন মলম লাগিয়ে দিয়েছে । তখন আবার মনে পড়ত।
এরপর ক্লাস ফাইভ। মা হাল ছেড়ে দিলেন। আমি নিজ দায়িত্বে পড়ালেখার সুযোগ পেলাম। আরও দিন গেল। স্কুল শেষে কলেজে গেলাম। মা তুই থেকে তুমি করে বলা শুরু করল। মার ব্যাপারে আমার ধারনা চেন্জ হতে শুরু করল। আমি অনেকটাই মাকে বুঝতে শুরু করলাম। একসময় আমাকে অত শাসনের কারণও জানলাম।
পড়ালেখার খাতিরে আমাকে বাড়ি ছাড়তে হল। পাথর টাইপের মানুষটার অঝর কান্না দেখলাম আমার বিদায় বেলায়। দূরে গিয়ে বুঝলাম, আমি মায়ের কত কাছের।
আজ কর্মস্থলে। ইচ্ছে থাকলেও যখন তখন মায়ের কাছে যেতে পারি না। আজ স্বাধীনতা অনেক সংকুচিত। সবকিছু উপচিয়ে মন কাঁদে মাকে দেখার জন্যে। মায়ের হাতের রান্না খাবার জন্যে। ছুটি পেলেই বাসায় ছুটে যাই। মায়ের কোলে ফিরে যাই।
আজ আমার সেই মা, যার ভালবাসার কোন তুলনা হয় না, যার কোন মূল্য নির্ধারণ করা যায় না, তার একটা বড় অপারেশন। আমি লিখছি, আমার চোখ ভিজে উঠছে। আমি এখন মার পাশে নেই। যেতে পারিনি মায়ের কাছে। দূরপাল্লার সমস্ত যোগাযোগ ২ দিন হল বন্ধ। রাজনীতির জালে আমি জিম্মি। ডাক্তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই নিয়েছে। মার জন্যে এখন প্রার্থনা করা ছাড়া, আজ আর আমি কিছুই করতে পারছি না।
মা আমাকে ক্ষমা করো।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬
অপলক বলেছেন: মা এখন বাসায়। আপনাদের দোয়ায় সুস্থ্য।
২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
ডরোথী সুমী বলেছেন: সুযোগ পেলেই চলে যান মায়ের কাছে। দোয়া করি অসুস্থ মায়ের জন্য। আশা করি আপনার ভালবাসার টানে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আসলে দূরে গেলেই মা-বাবার অভাব বেশি অনুভূত হয়। তারপরও একটা কথা না বলে পারছিনা মারাত্মক জখম করে মলম দিয়ে কী লাভ! সন্তানের শরীরতো বাবা-মায়েরই অংশ। সন্তানকে এতো কষ্ট দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না। তা সে যতই দুষ্টু আর অবাধ্য হোক।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭
অপলক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। মা এখন অনেকটা সেরে উঠেছে।
৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০
অথৈ সাগর বলেছেন:
আশা করি আপনার মা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
অপলক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। সকলের দোয়ায় এখন পর্যন্ত ভাল আছে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
নীল-দর্পণ বলেছেন: ইনশাআল্লাহ সব ভালয় ভালয়-ই হবে। মা সুস্থ হয়ে উঠবেন।