নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।
১৯৯৯ সালের কথা। গত ২ বছর মোটামুটি পড়াশোনা করেছি। কিন্তু '৯৮ এর আক্টোবর থেকে পরের কয়েকমাস খুব অসুস্হ্য ছিলাম। সে বছর নভেম্বর থেকে শরীর এতটা খারাপ হল যে, বসে বসে বেশিক্ষণ পড়তে পারি না। ডিসেম্বরে অবস্হা আরও খারাপ হল। আমার সব ধরনের চিকিৎসা চলছিল। মানে কবিরাজি থেকে আধুনিক চিকিৎসা সবকিছুই। কেউই বলতে পারছিল না, আসলে অসুখটা কি !
জানুয়ারী গড়িয়ে ফেব্রুয়ারী আসল। ডক্টর অপারেশনের কথা বলল। মার্চের ২ তারিখ থেকে আমার SSC পরীক্ষা শুরু। এদিকে শুয়ে শুয়ে যে পড়ব তারও উপায় নেই। হাত থেকে বই পড়ে যায়। এতটাই দুর্বল ছিলাম। জানুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম।
পরিবারের সবাই শেষ মেষ আমার অপারেশানের কথা চিন্তা করল। যেহেতু পরীক্ষা দিতেই পারব না। কষ্ট না বাড়িয়ে অপারেশন করবে। আরো আগেই করার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার কথা ভেবে করা হচ্ছিল না।
তারপর ফেব্রুয়ারীর ২২ তারিখে অপারেশনের পর ঞ্জান ফিরল ১ দিনের মাথায়, খাবার খেলাম ৩ দিনের মাথায়। পেটে ২২ টা সেলাই নিয়ে বাড়ি ফিরলাম ২৮ তারিখে। সবাই আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল যে, পরীক্ষা জীবনে অনেক আসবে, আগে সুস্থ্য হও। এক বছর সময় তেমন কিছু না, ইত্যাদি ইত্যাদি....
মাকে বললাম পরীক্ষা দিব, আব্বাকে বোঝাও। মা আব্বাকে বোঝাল, শরীরের যে অবস্থা , বেশি ক্ষণ বসে থাকতে পারবে না, তাছাড়া গেলে হয়ত একটা অভিঙ্গতা হবে। পাশ তো করবে না। জেদ ধরেছে, যাক পরীক্ষার হলে।
আমি যখন পরীক্ষার হলে, তখনও আমার পেটের সব স্টিচ কাটা হয়নি। বসে থাকতে খুব কস্ট হচ্ছিল। প্রশ্নপত্র পেয়ে দেখলাম আমি সব পারি। তারপর দেখলাম সব উত্তর মনেও পড়ছে।
তারপর লেখা শুরু করলাম উত্তর প্রত্রে। এতদিন না লিখে হাতের লেখা আর এগুচ্ছিলনা। হাত ব্যাথা ধরে যায়। শেষের দিকে এসে পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছিল। কোন রকম ৭৫ নম্বরের এ্যানসার করে বের হয়ে গেলাম। ওটা ছিল প্রথম পরীক্ষা।
আব্বা ভয়ে অস্থির ছিল। কারন আমি সুস্থ্য আছি কিনা সেটা ভেবে। এভাবে এক এক করে সব পরীক্ষা শেষ করলাম, কোন প্রিপারেশন ছাড়া।
কিছুদিন পর রেজাল্ট হল। আমি তখন মোটা মুটি হাটতে পারি। তবে বেশিক্ষণ না। পেটে খিল ধরে যায়। রেজাল্ট হবার দিন, সকাল বেলা আব্বা বলছে, তুমি স্কুলে যেওনা। অনেক ভিড় হবে, পেটে আঘাত লাগতে পারে। আমি দেখে আসব।
আমি বললাম, দু জনে ই যাব। আসলে আব্বা ভাবছিল, আমি যেহেতু ফেল করব, বন্ধুদের মাঝে গেলে আমার মন খারাপ হতে পারে।
আব্বা এসে বলল, কোন লিস্টেই তোমার রোল নেই। আমি আবার যেতে বললাম। এরপর দেখি আব্বা ফিরে আসল, চোখ লাল। আমার মুখ শুকিয়ে গেল। আমাকে বলল, এখানে ভিড় ফাকায় চল। এদিকে আমি ভাবছিলাম, এটলিস্ট পাশ তো করার কথা।
তুমি স্টার মার্কস পেয়েছ, ৪টাতে লেটার। আমি জিঞ্জেস করলাম, ভুল দেখনিতো ? সেবার রাজশাহী ডিভিশনে ৪৮% এর মত পাশের হার ছিল। তবে সঠিক মনে নেই।
যাই হোক রেজাল্ট শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠল। ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ। কোন রকম কান্না চেপে রেখে স্কুলের গেটে দাড়িয়ে থাকলাম।
আব্বা আমাকে বাসায় পাঠিয়ে মিষ্টি আনতে গেল। আমাদের এলাকাটা বানিজ্যিক আবাসিক এলাকা। আমি যখন হেটে হেটে এলাকার রাস্তায় আসছিলাম, কোন দোকানদার মামাই আমাকে কিছু বলছিল না, সবাই তাকিয়ে ছিল। ভাবছিল, আমি তো ফেল করবই। অযথা আমাকে কষ্ট দিতে চায়নি।
তারপরেও একজন জিঞ্জেস করে ফেলল, মামা তোমার খবর কি? আনন্দে আমার গলার আওয়াজ বের হচ্ছিলনা। শুধু বললাম, স্টার। তার মুখ দেখে মনে হল না যে, বিশ্বাস করেছে।
বাসায় ঢুকে দেখি মার মুখ শুকনা। আমাকে কিছু বলছে না। পাছে আামার মন খারাপ হয়ে যায়। সে সময় মোবাইল ছিল না, বুঝলাম মা এখনও খবরটা পায়নি।
তারপর মাকে জানালাম, মা আমি ৪ টা লেটার সহ স্টার মার্কস পাইছি। এ কথা বলতে বলতেই আব্বা মিষ্টি বিলাতে বিলাতে হাজির। মোটামুটি শোরগোল পড়ে গেছে এলাকায়। দেখলাম মা বাবা দুজনেই বাচ্চাদের মত করে হাসছে, সবার সাথে কথা বলছে আত্মহারাদের মত।
যাই হোক.... আমি পেরেছিলাম, আমি পারি। এখনও জীবন যুদ্ধে আমি একটা একটা করে ঘটনা পার করছি। সবই ওপর ওয়ালার দয়া।
ভাল থাকবেন সবাই।
১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭
অপলক বলেছেন: এত ধৈর্য্য নিয়ে যে লেখাটি পড়েছেন, এজন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩
সময়ের ডানায় বলেছেন: আনন্দ ও বেদনার স্মৃতিটা খুব সুন্দর করে লিখছেন।
লেখার হাত ভাল চালিয়ে যান।
১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯
অপলক বলেছেন: এক টানা লিখেছি। শুধুই স্মৃতিচারন ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে। সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন।
৩| ১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪
সিল বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। কিন্তু এখন তো ssc এর রেজাল্টে আগের মতো মজা নাই। সবাই A+ পায়। ভালো খারাপের কোন পার্থক্য নাই।সবাই ভালো!
১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:১১
অপলক বলেছেন: রেজাল্টের ব্যাপারে আমারও তাই মনে হয়। এখন সবাই বাঘ। কে আফ্রিকান কে রয়েল বেঙ্গল, সেটা বড় কথা না
৪| ১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫
নীল জোসনা বলেছেন: দারুন লাগলো পড়তে । পুরোনো কিছু কথা মনে পড়ে গেলো । আমিও ঐ বছর এস,এস,সি দিয়েছিলাম । রেজাল্ট ও তাই । তবে অসুস্থ ছিলাম না ।
ভালো থাকুন ।
১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:১৫
অপলক বলেছেন: বাহ। আজ নতুন এক ইয়ারমেট পেলাম। খুব ভাল লাগছে। আপনিও সে সময়ের স্মৃতি চারণ করে কিছু লিখুন। সময় কে বেধে ফেলুন।
৫| ১৯ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: স্মৃতিচারনটা অসাধারণ লিখেছেন।
২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪
অপলক বলেছেন: স্মৃতিগুলোই বেশি সুন্দর।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৬| ১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:২০
মন্জুরুল আলম বলেছেন: আমিও ভাই '৯৯ এর পরীক্ষার্থী ছিলাম। খারাপ টাইপ স্টুডেন্ট কিন্তুক ৭৫৭ পাইছিলাম।
২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৭
অপলক বলেছেন: আমি ছিলাম মাঝমাঝি টাইপের স্টুডেন্ট। স্কুল লাইফের ১০ বছরের মধ্যে ৭ বছরই ছিল ১২ রোল।
৭| ১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৩
দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। পড়তে বেশ ভাল লাগল।
২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮
অপলক বলেছেন: আপনার অনেক ধৈর্য্য ভাই। এত লম্বা একটা সাদামাটা লেখা পড়েছেন, অস্বীকার করার উপায় নেই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৮| ২০ শে মে, ২০১৪ ভোর ৬:৫০
বটের ফল বলেছেন: H.S.C পরীক্ষার কথা মনে পড়ে গেল ভাই।
২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৫০
অপলক বলেছেন: আমারও মনে পড়ছে। হয়ত অন্য কোন লেখায় তুলে ধরব।
ধন্যবাদ ভাই।
৯| ২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:২৪
বোকামানুষ বলেছেন: ভাল লাগলো আপনার কাহিনী জেনে
২০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪
অপলক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়ার জন্যে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৩
মোহাম্মদ তুহিন১৫ বলেছেন: আনেক পুরাতন গল্প কিন্তু ভালো লাগলো !
আপনার জীবনের গল্প শুনে অনেক টা সিনেমার গল্পের মত মনে হয় - কিন্তু ভলোলাগলো আপনার গল্প টা & congrats আমি কামনা করি আপনি আপনার জিবন এ আর ও ভালো করবেন - এবং বিগত বছর গুলে তে ও ভানো করেছেন !