![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্ধ্যা নামলে মেস থেকে বের হওয়ার নিয়ম নেই সুমনদের কারন তাদের মেসের অতীত ইতিহাস বীভৎস রকমের ভয়ানক। কেন ভয়ানক এই নিয়ে কেউ কিছু বলেনা। মেসের দারোয়ানকে প্রশ্ন করলে সেও চুপচাপ থাকে। অনেক বলে এই মেসের পারপাশে নাকি অশরীরী আত্মারা ঘুরে বেড়ায় কেউ বলে এই মেসে নাকি রাতের বেলা কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।
সুমন, সম্রাট ও ফয়েজ মিলে এই মেসে নতুন উঠেছে। মেসটি একটি তিনতলা বাড়ি। একসময় মেসটি একটি ক্লিনিক ছিল কিন্তু কোন এক কারনে ক্লিনিকটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেক বছর পরে বাড়িটি পরিষ্কার করে মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। অন্যান্য মেসের তুলনায় এই মেসটি একটু সস্তা থাকায় সুমন , সম্রাট ও ফয়েজরা মিলে এই মেসে উঠেছে।
মেসটি শহর থেকে একটু দূরে। মেসের পিছনে অনেক খালি জায়গা। শুনা যায় এই খালি জায়গায় নাকি মৃত কিংবা গর্ভপাত করানো নবজাতকের কবর দেওয়া হতো। এই সব কাহিনি শুনে কেউ আর সেদিকে যায়না। আর এ জন্য জায়গাটি জঙ্গলের মতো হয়ে গেছে।
আজ ফয়েজ বাসায় একা। সুমন ও সম্রাট বাড়িতে গিয়েছে। সামনে ফয়েজের পরীক্ষা তাই মাগরিবের পর পড়তে বসল। পড়তে বসে তার মনে পড়ল রাকিব ভাইয়ার কিছু টাকা সে ধার এনেছিল সেগুলো সে ফিরিয়ে দিবে। রাকিব ভাইয়া তার পাশের রুমের বোর্ডার। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে সে রাকিব ভাইয়ার রুমে গিয়ে নক করল। রাকিব ভাইয়া খুব তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে বললেন, ফয়েজ তুমি এসেছ ? আমিই তোমার রুমে যেতাম।
রাকিব ভাইয়ার মুখে এমন কথা শুনে ফয়েজ কিছুটা বিব্রত হলো কারন রাকিব ভাইয়ের টাকাটা অনেক দিন থেকে দেওয়া হয়নি আর আজ তিনি নিজেই খুঁজতে যাচ্ছেন কি লজ্জার কথা। ফয়েজ বলল,
ভাইয়া আপনার টাকাটা দিতে আসছিলাম। আসলে ভাইয়া এই মাসে একটু সমস্যায় ছিলাম তো তাই আপনার টাকাটা দিতে পারিনি।
আমি কি তোমার কাছে টাকা চাইছি। যেদিন তুমি পারবে দিও সমস্যা নেই। শুন আমি একটু বাড়িতে যাব আমার মা খুব অসুস্থ। আমি চলে গেলে আমাদের এই ফ্ল্যাট একদম খালি হয়ে যাবে। একা এই ফ্ল্যাটে থাকা ভালো হবেনা তুমি এক কাজ করো নিচের কোন বোর্ডারের রুমে তুমি আজ রাতটা গিয়ে থাক।
রাকিব ভাইয়া এর বেশি কিছু না বলে বেরিয়ে পড়লেন।
ফয়েজ তার রুমে এসে ভাবলো সে যদি নিচে কারো রুমে যায় তাহলে তার পড়া হবেনা অথচ কাল তার পরীক্ষা। ভুত টুত এ সে খুব একটা বিশ্বাসি নয়। সে তার মতো আবার পড়তে বসল।
সারাদিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে এই জন্য বাসা থেকে বের হয়নি বাসায় থাকতে থাকতে খুব বোরিং লাগছিল তাই সে পড়া থেকে উঠে একবার নিচের ফ্ল্যাটে গেল।
নিচের ফ্ল্যাটে গিয়ে সে প্রায় আধা ঘন্টা থেকে উঠে পড়ল। বাহিরে বেরিয়ে সে সিড়িতে আসতে ঠের পেল কেউ একজন সিড়ির ঠিক মাঝখানে বসে আছে। সিড়ির এখানে আলো নেই। বারান্দার আলো পড়ে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। সে আবছা আলোয় দেখতে পেল সিড়ির মাঝখানে একটি বাচ্ছা শিশু বসে আছে। সে কৌতহলি হয়ে মোবাইল বের করে টর্চলাইট অন করল। টর্চ অন করার সাথে সাথে সে দেখল সে আবছা দেখা ছায়ার মতো শিশুটি রেলিং এর উপর দিয়ে হেটে উঠে দৌড়ে চলে গেল ছাদের দিকে। সেও ছায়াটির পিছু পিছু ছাদের দিকে যেতে লাগল। সে জানে তাদের ছাদের দরজা বন্ধ থাকে। যদি কেউ থেকেও থাকে তবে সে এখানেই থাকবে। সে খুব সাবধানে হেটে হেটে ছাদের দরজা পর্যন্ত গেল কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ওইখানে কেউ নেই। ছাদের দরজায় জং ধরানো অনেক দিনের পুরোনো একটি তালা ঝুলছে। সে ওইখানে দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকাতেই সে লক্ষ্য করল সে যে ছায়াটি দেখেছিল সেটি সিড়ির নিচে তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার দিকে ভয়ানক চোখে তাকিয়ে আছে। শিশুটির চোখ আগুনের ফুলকার মতো জ্বল জ্বল করছে। এটা দেখে ফয়েজ ভীষণ ভয় পেল তবু সে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে দেখতে চাইল শিশুটি কি করে। সে একটু একটু করে শিশুটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সে যতো এগুছে শিশুটি তার থেকে ততো দূরে চলে যাচ্ছে। ফয়েজ এগিয়ে যেতে যেতে বারান্দার এক শেষের দিকে চলে গেল। হঠাত করেই তার হাতের মোবাইল বন্ধ হয়ে গেল অথচ একটু আগেই সে ফুল চার্জ দিয়েছিল। এটা কি করে সম্ভব? মোবাইল পকেটে রেখে আবার শিশুটির দিকে তাকাতেই তার সাথে ঘঠে গেল তার জীবনে সবচেয়ে ভয়ানক ঘঠনা। শিশুটি একলাফে তার কাঁধে উঠে পড়ল।
এরপর তার আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে তার বেডে। তার পাশে নিচের ফ্ল্যাটের বোর্ডাররা দাঁড়িয়ে। সবাই ফয়েজকে প্রশ্ন করেছে কাল রাতে তার সাথে কি হয়েছিল। সে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে পড়েছিল কেন।
ফয়েজ যেন আর কোন কিছুই মনে করতে চায়না। এই ঘঠনার ব্যাখ্যা সে খুঁজে পায়না।
লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
©somewhere in net ltd.