নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুর!

বিকট

হাসান মাহবুব

আমার অপদার্থতাকে মাহাত্ম্য ভেবোনা...

হাসান মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্টেলা নেই

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:০৪


(১)

আমি যখন শ্বাসকষ্ট আর অনিদ্রা রোগের উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম, সেদিন আমার সাথে ছিলো আমার স্ত্রী এবং বাবা। সে অনেকদিন আগের কথা। ডাক্তার দেখিয়ে আমরা পাশের একটা ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে বসলাম। হাসপাতালের পাশে সবসময়ই আমি এমন রঙচঙে রেস্টুরেন্ট থাকতে দেখেছি। উজ্জ্বল হলুদ রঙের রিসিপশন,কমলা রঙের দেয়ালের সাথে লাল উর্দি পরিহিত কর্মীরা একটা আনন্দের আবহ তৈরি করে। কোথায় যেন পড়েছি নোনতা খাবার মস্তিষ্কে আনন্দের উদ্দীপনা তৈরি করে। কথাটা মনে হয় মিথ্যে না। খাবার খেতে খেতে আমরা উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। চিজ বার্গার ভেঙে মুখে নিয়ে আমার স্ত্রী ভরসা দেয়ার কন্ঠে বললো,
-দেখলে তো, তোমার শরীর একদম ঠিক আছে! সমস্যাটা তোমার মনে। মনটা শক্ত রাখো, আমাদের সাথে হেসেখেলে বেড়াও, দেখবে, আর শ্বাসকষ্ট হবে না, আর ভয় লাগবে না!
ওর কথায় ভরসা পেলাম। আমার বাবাও মিল্কশেকে চুমুক দিয়ে সস্নেহ কন্ঠে সাহসের পরশ যুগিয়ে গেলেন,
-শোন, তুই এত চিন্তা কইরবিনে বুঝিছিস, আরে আমরা তো আছিই! আমরা থাকতি তোর এত চিন্তার কী আছে?
খাবারের শেষ পর্যায়ে হাসি-ঠাট্টা রদ করে গম্ভীর মুখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে করিয়ে দিলো আমার স্ত্রী,
-শোনো, ঔষধগুলি কিন্তু খুব নিয়ম করে খাবে। আমি তোমাকে প্রতিবেলা মনে করিয়ে দেবো। আর ডাক্তারের ঐ কথাটা মনে থাকবে তো? নিজের ইচ্ছায় ঔষধ ধরাও যাবে না, নিজের ইচ্ছায় ঔষধ ছাড়াও যাবে না। ঔষধ ধরার, আর ছাড়ার, দুটারই নিয়ম আছে। মনে থাকবে তো?
আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলাম।

(২)
কতরকম ঔষধ! কত বিচিত্র তাদের রঙ, বিচিত্র তাদের নাম! প্রতিদিন প্রায় দশরকম ঔষধ খেতে হবে আমায়। প্রথমদিকে গুলিয়ে যেত। তারপর একটা সময় অভ্যেস হয়ে গেলো। বছরের পর বছর, বছরের পর বছর ধরে ওদের সাথে আমার বসবাস। কয়েক মাস পরপর ডাক্তারের কাছে ভিজিটে যেতে হত। ডাক্তার আমার অবস্থার উন্নতি দেখে একটার পর একটা ঔষধ কমিয়ে দিতে লাগলেন। প্রতিবার ডাক্তার দেখিয়ে আমরা সেই রঙচঙে রেস্তোঁরায় গিয়ে খেয়ে নেই। একেকটা ঔষধ কমে, আর আমি ওদের মুখে পরিতৃপ্তির হাসি দেখতে পাই। আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছি। এখন রাতের বেলা ভাল ঘুম হয়, অযথা ভয় পাই না, দম আটকে আসে না।

(৩)

আজ আমি ডাক্তারের কাছে একাই এসেছি। গত সাত বছরে তার বয়স বাড়লেও কর্মচাঞ্চল্য কমে নি। আগের মতই আন্তরিকভাবে কথা বলেন।
-তা কী খবর আপনার? আজকে একাই এসেছেন? বাবা কই?
-তিনি অসুস্থ। শয্যাশায়ী।
-আচ্ছা, আর স্ত্রী?
-সেপারেশন হয়ে গেছে।
-ওহ! এনিওয়ে!
তিনি আমার অসুখের বিবরণ নেয়া শুরু করলেন।
-আপনি এখন কী কী নিচ্ছেন যেন? এক বেলা স্টেলা, তাই না? আর কিছু না তো? ওটা আর নেয়া লাগবে না।
-আর কোন ঔষধ নেয়া লাগবে না আমার?
-না।
তিনি স্মিত হেসে জানালেন।

ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরার পর অভ্যাসবশত তাকালাম সেই রঙচঙে রেস্টুরেন্টটার দিকে। ওটা আজকে বন্ধ। অনেকদিন ধরেই বন্ধ মনে হয়। মরচে ধরা লোহার দরোজায় সময়ের অভিমান জমা। আমি ওখান থেকে ঔষধের দোকানে চলে গেলাম। গত ছয় মাস ধরে আমাকে একটাই ঔষধ কিনতে হয়েছে। স্টেলা। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাকে এখন আর কোন ঔষধ নিতে হবে না! তারপরেও মনের ভুলে জিজ্ঞেস করে বসলাম।
-স্টেলা আছে?
-না, নেই।

বড় ক্লান্ত আর বিপন্ন লাগলো। আমি আমার স্ত্রীকে ফোন করলাম। ওকে ফোন করা আমার বারণ। জিজ্ঞেস করলে কী বলবো?
-কী ব্যাপার, তুমি আবার ফোন করেছো যে?
ঝাঁঝালো শীতল কন্ঠে তার জিজ্ঞাসা।
-বীথি...স্টেলা নেই।

আমার শোক শুধু স্টেলার জন্যে না। আমার মন খারাপ করছে যিওনিল, জোলিয়াম, কোয়াইট, ভিটামিন সি সবার জন্যে। অন্যদের মত যথারীতি যারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে!

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

বিজন রয় বলেছেন: ভাল আছেন আশাকরি।

জোলিয়াম কি অনিদ্রা দূর করে?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২

হাসান মাহবুব বলেছেন: হ্যাঁ, ভালো আছি। আপনি ভালো তো?

হ্যাঁ, ঘুমের।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮

বিজন রয় বলেছেন: গল্পের থিম ধরতে পারিনি।
ওৗষধগুলো যে ক্রমে বাদ হলো বা ছেড়ে গেল এটার সাথে স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার কোন সম্পর্ক আছে কি?
অথবা স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার পরও জীবন স্বাভাবিক, এরকম কিছু?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: খুব জটিল কিছু না আসলে। একজন লোকের সাত বছরের ব্যবধানে সম্পূর্ণ একা হয়ে যাওয়া, তখন ঔষধগুলিকেই তার সঙ্গী মনে হয়, এমন কিছু একটা।

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ  লেখা। শুভেচ্ছা ।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আগামী বছর সামুর ব্লগদিবসের অনুষ্ঠানে আপনি এলে, গল্পটা একটু বুঝিয়ে দিয়েন।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: আপনি এত বুঝদার মানুষ, আর এই সহজ গল্পটা বুঝলেন না?

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ব্লগ এখনো আছে আমার সাথে। আপনি কেন যেন আর আগের মতো আসেন না। পুরোনো দিন গুলি এখন আর নেই অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: আসি না, এ জন্যে সত্যিই খারাপ লাগে। আসার তাগাদা দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ!

৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন: আগামী বছর সামুর ব্লগদিবসের অনুষ্ঠানে আপনি এলে, গল্পটা একটু বুঝিয়ে দিয়েন।
লেখক বলেছেন: আপনি এত বুঝদার মানুষ, আর এই সহজ গল্পটা বুঝলেন না?

১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: প্রিয় রাজীব নূর, আপনিও কিছু বলুন!

৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১১

অন্তরন্তর বলেছেন: হাসান ভাই লিখা বেশ ভাল লেগেছে। দীর্ঘ সময় অসুস্থতা একটি মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয় যদিও তার পরিবার তার সাথে থাকে।
আপনার পরিবার আশা করি ভাল আছে। আমরাও পৃথিবীর এই সংকটময় সময়ে আল্লাহ পাকের রহমতে ভাল আছি। শুভ কামনা।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো আছি অন্তর ভাই। নিয়মিত আপনার উপস্থিতি আমাকে আনন্দিত করে।

৮| ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১০:২৬

ডি মুন বলেছেন: হাসান ভাই, কেমন আছেন?

অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়লাম। ভালো লাগলো।
মানুষের ক্রমে ক্রমে একা হয়ে যাবার গল্প।

ব্লগে এলে আমি যাদের ব্লগবাড়িতে একবার হলেও ঢু মারি তাদের মধ্যে আপনি অন্যতম।
আরও দুর্দান্ত সব গল্প লিখতে থাকুন।

ঈদ মোবারক

২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো আছি মুন।

জানি না আমি এই প্রত্যাশার ভার বহন করার উপযুক্ত কি না।

ভালো থেকো।

ঈদ মুবারক।

৯| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কেন যেন টম হ্যাংকসের সেই একমাত্র সঙ্গী - বীচবল-টার কথা মনে পড়ে গেল।

০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:১৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো মিলাইছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.