নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুর!

বিকট

হাসান মাহবুব

আমার অপদার্থতাকে মাহাত্ম্য ভেবোনা...

হাসান মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশি ড্রিম- প্রথম অধ্যায়

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৯


প্রথম পর্ব

ধ্বংসতারা



কাজলের নিথর দেহ পড়ে ছিল নর্দমার পাশে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে মারা গেছে। দুর্ভাগ্যবশত, সে মারা যায় নি। যে বেধরক মার খেয়েছে, তাতে করে মরে গেলেই ভালো হতো হয়তো। মানুষ যে কখন মারা যায় তা ঠাহর করা বড় কঠিন! সুস্থ সবল নীরোগ মানুষ কখনও ঘুমের মধ্যে অক্কা পায়, আবার হাড় জিরজিরে, রোগে ভোগা তালপাতার সেপাই দেখা যায় অনেক তাণ্ডব সয়েও পৃথিবীর মায়া ছাড়তে নারাজ। কাজল খুব শক্তিশালী না, দুর্বলও না। সুন্দর না অসুন্দরও না। ফর্সা না কালোও না। তাকে শুধু ভালোবাসে তার কাছের মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের যারা, তারাই। সৌভাগ্যবশত, তার বাবা আছে, মা আছে, ভাই আছে, বোন আছে। আছে একটা পরিবার, যারা তার জন্যে গচ্ছিত রেখেছে ভালোবাসার অমূল্য অনুভূতি। পরিবার না কি একটা সংগঠন, সমাজের বা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক! যদি তাই হয়ে থাকে, তবে বলতে হবে কাজলদের সংগঠনটা একদমই শক্তিশালী না। মার দেয়ার দলে নেই তারা, আছে মার খাবার দলে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই অবশ্য তেমন। তারা মার খায়, অপমান সহ্য করে, আর মারা যায়। আচ্ছা, মার দেয়ার দলে যারা, তারা এত শক্তিশালী হয় কেন? তাদের তো ব্লেডের মতো নখ নেই, ড্রাকুলার মতো দাঁত নেই, চোখ দিয়ে তো আগুন ঝরে না তাদের, তারপরেও কেন তারা বারবার বিজয়ী হয়?

কাজলকে তারা পিটিয়েছে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে। এই একটা চমৎকার জিনিস! হাতে করেই ঘোরাফেরা করা যায়। কেউ আটকাবে না। শপিং মল বা স্টেশনের মেটাল ডিটেক্টরে ধরা পড়বে না। খেলবে বলে সারা শহর এটা পরিবহন করা যাবে, প্রয়োজনমতো শত্রু নিকেশের কাজেও ব্যবহার হবে। এই যেমন আজকে করে নিল! কাজলকে অবশ্য তাদের শত্রু বলা যায় না। কিন্তু মারধোরের উপলক্ষ্য তৈরি করতে তাদের খুব শক্ত কারণও লাগে না। কাজলকে মারার পেছনে ছিল তাদের পুরোনো রাগ। কাজলের বোন মালতির প্রতি তারা অপ্রতিরোধ্য কামনা অনুভব করত। ধর্ষণ করার সুযোগ হয়ে না ওঠায় তারা মালতিকে উত্যক্ত করেই সন্তুষ্ট ছিল। কাজল এর প্রতিবাদ জানালে একবার ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কি মৃদু হলেও এর জের যে অত সহজে শেষ হবে না, তা জানা ছিল। ওরা তো ছোরা-টোরা নিয়েই ঘোরে। মাথা গরম করে যেকোনো সময় মওকা করে ঢুকিয়ে দিতেই পারত পেটের মধ্যে। এলাকায় এটা নিয়ে সালিশ বসানোর পর যখন ছোকড়াগুলিকে মৃদু ভর্ৎসনা করে মালতিকে পোষাক আশাকের ব্যাপারে সাবধান করে ছেড়ে দেয়া হলো, তখন কাজলদের পরিবার নামক দুর্বল সংগঠনটি আশা করেছিল যে ব্যাপারটা এখানেই মিটে যাবে। এক সপ্তাহ আর তেমন কোনো ঝামেলা হয়ও নি। ছেলেগুলি থাকত আশেপাশেই। কিছু বলত না। শুধু ক্ষুব্ধ চোখে হিংসা আর রাগ নিয়ে তাকিয়ে থাকত। এর মধ্যেই যদি সীমাবদ্ধ থাকত ব্যাপারটা! তা কী আর হয়! শুরু হলো ভয়চক্র।

“এত রাগ কীসের? যাও না বাবা, অন্য মেয়েদের বিরক্ত করো গে। আমার বোনকেই কেন? আমার বাবা ছাপোষা কর্মচারী। তার পুলিশ বা প্রশাসনে চেনাজানা নেই। আমার মা গৃহবধু। সে সবকিছুকেই ভয় পায়, এমন কী পরিবারের সবাইকেও। বোনটা দেখতে শুনতে সুন্দর। কিন্তু সেও ভীতু। তার মাস্তান প্রেমিক অথবা ছাত্রনেতা বড় ভাই নেই। সুবিধা আদায় করে নিতে আমরা কেউ জানি না। এজন্যেই কি সবাই আমাদেরকে পেয়ে বসেছো? সম্প্রতি বাসার সুয়ারেজ লাইনের ওপর দিয়ে দেয়াল বানানোর উপক্রম করেছে আরেক মাস্তান। তাকে অনেক বুঝিয়েও শান্ত করা যাচ্ছে না। সে উল্টো আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তোমরা ভয় পাও না। আমরা ভয় পাই। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।”

এই কথাগুলি মনে মনে বলে যায় কাজল প্রতিদিন। শোনে না কেউ।

কাজল যখন দেখল যে রাস্তার ওপারে ওরা চারজন; সুমন, রনি, কবীর আর বিটলু স্ট্যাম্প নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তখন তার চকিতে সেই কথাগুলিই মনে পড়ে গেল। ভয় পাওয়াই তার নিয়তি, সাবধানে গা বাঁচিয়ে নিরাপদে চলতে ফিরতে পারাটাই তার জীবনে সার্থকতা। এখন তাকে যেতে হবে রাস্তার অপর পাশে। পার হবে কি হবে না এটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছে সে। তাকে অভয় দিয়ে ডাকল বিটলু, ওদের নেতা।
-কাজল, আসো এদিকে।

কাজল দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেল। রাস্তায় তখন খুব বেশি মানুষ নেই। থাকলেই বা কী হতো? চারটে নখদন্তযুক্ত কিশোর একটা ভীত খরগোশকে নিয়ে শিকারের খেলা খেললে কার কী এসে যায়? কেন কেউ এগিয়ে আসবে? কেউ তো এখানে পরস্পরের এতটা প্রিয়তম নয়!

-কী খবর কাজল? দিনকাল ভালো চলে? কই যাইতেছিলা?
সুমন জিজ্ঞেস করল।

কাজল মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিটা প্রশ্নেরই খুব নম্র,ভদ্র এবং স্বাভাবিক উত্তর দেবার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ওদের মতলবটা বুঝতে পেরেছে সে। স্বাভাবিক কথাবার্তার মাঝেই খুঁত ধরে আক্রমণ করবে তারা। ওদেরকে কোনোভাবেই সেই সুযোগ দেয়া যাবে না।
-এই তো, প্রাইভেট পড়তে যাই।
কাজল উত্তর দিলো কম্পিত কণ্ঠে।
-অনেক চাপ না? প্রাইভেট, ইস্কুল, বইনের সিকিউরিটি দেখা। না কি কও?
-জ্বী।
-তুমার বইন ভালাচে? আমরা কিন্তু আর ডিস্টার্ব করি নাই। অবশ্য ইচ্ছা করে না তা না। তুমি বুঝতা হেয় যদি তুমার বইন না হইতো।
বলেই খ্যাকখ্যাক করে হেসে ওঠে তারা। তাদের এইসব অশ্লীল ইঙ্গিত, পিশাচের হাসি কাজলের মাথায় আগুন ধরিয়ে দেয়। কিন্তু ও চুপ থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে এই সংকটময় সময়টা পার করে দিতে হবে ওকে। এমন কিছু বলা যাবে না যা ওদেরকে উত্তেজিত করে তোলে। ওরা চারজন। ওদের হাতে স্ট্যাম্প। ওরা শক্তিশালী। ভয় প্রদর্শনকারী। মাথা বিগড়ে গেলে মৃত্যুর হাওয়া এসে কানের কাছে শীষ কেটে যাবে। বাতাসটা এখনই কেমন যেন ভারী হয়ে উঠছে।
-ঠিক আছে। আমি যাই এখন। প্রাইভেটের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সুমন আর রনি দেখল যে খুব একটু সুবিধা করা যাচ্ছে না এখানে। এর চেয়ে অন্যত্র গিয়ে অন্য কারো গায়ে পড়ে ঝামেলা করা যেতে পারে, কিংবা খোঁজ করা যেতে পারে সুলভ মাদকের।
-আইচ্ছা যাও। পড়াশোনা কইরা বিদ্যাসাগর হও।
সুমন কাজলকে যাওয়ার অনুমতি দিলো হালকা একটু টিপ্পনি কেটে। যাক! মুক্তি মিলল! ভারী বাতাসটা এখন ঝিরঝিরে আর মৃদু লাগছে। হৃৎপিন্ড খাঁমচে ধরা কংক্রিট বাতাস এখন প্রবাহিত হচ্ছে সরল গতিতে। কাজল তড়িঘড়ি করে চলে যাচ্ছিল, এতক্ষণ চুপ করে থাকা বিটলু তখন মুখ খুলল। অন্যদের মতো রঙ্গ রসিকতার সুরে নয়, তার কণ্ঠ শুনে মনে হলো সেই যেন বঞ্চিত, সেই যেন নিপীড়িত, যেন সমস্ত আক্ষেপ তারই।
-একদিন বাসায় আসতে বল কাজল। তোরা না হয় মেলা ব্যস্ত থাকোস। মালতি যেদিন একা থাকবে, সেদিন না হয় আসব। চারজন না, আমি একাই। মনের ভাব আদান প্রদান করা দরকার তো, না কি?
হিসহিসিয়ে বলল সে।
বাকিরা আবার নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হলো এতে।
-শুধু ভাব আদান প্রদান করবা, আর কিছু করবা না?


আবারও সমবেত অশ্লীল হাসি। শুধু বিটলু হাসে না। সে শীতল চোখে তাকিয়ে থাকে কাজলের দিকে। কাজলের চোখ সরিয়ে নিতে ইচ্ছা হয়। দৌড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। সে ওদের সাথে পারবে না। তাকে কষতে হবে অংক আর হিসাববিজ্ঞান। তাকে পরীক্ষায় প্রথম না হলেও দশের মধ্যে থাকতে হবে। তাকে ভর্তি হতে হবে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেন বেচারা বাপটার টাকা বেচে যায়।

কিন্তু কেন? কেন এতসব কিছু? এসব করে কি কোনোকিছুর সমাধান হবে? হয়েছে কোনোদিন? এখন তার বোনকে উত্যক্ত করছে ওরা, কিছুদিন পরে ওদের ছেলেরা তার মেয়েকে উত্যক্ত করবে। আর কাজলের যদি কোনো পুত্রসন্তান হয়, সে মার খাবে বাজে ছেলেদের সাথে মিশে সিগারেট খাবার জন্যে, অথবা মাগরিবের আজানের পর বাসায় ফেরার জন্যে। ক্ষণিকের জন্যে এসব ভাবনা এসে তাকে বিমূঢ় করে দেয়। সে দাঁড়িয়ে থাকে নিশ্চল। সে হতাশা অনুভব করে, তার নিজেকে মনে হয় পৃথিবীর বিপন্নতম মানুষ। তার ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে ওদের ওপর, তার ইচ্ছা করে ব্লেড দিয়ে ওদের কণ্ঠনালী বিদীর্ণ করে দিতে। কিন্তু তার ভয় করে। তার কাছে ব্লেড নেই। তার নখ ভোঁতা। এখনও মা কেটে দেয় নেইলকাটার দিয়ে। অপমান সয়ে নিয়ে, মুখ বুঁজে বেঁচে থাকার এই নিয়তি সে মেনে নিয়েছে। সে বড়জোর খরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারে তাদের দিকে। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা তার নেই।
-কী রে, বেয়াদপের মতো তাকায় আছস কেন? চোখ নামা!
ধমকে ওঠে বিটলু।

কাজল এমনিতেই চোখ নামিয়ে ফেলত। কিন্তু ধমক খেয়ে তার অহমে লাগে এবং সে তার এই ক্ষীণ এবং মৃদু প্রতিবাদ আরো কিছুক্ষণ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সে তাকিয়ে থাকে।
আর তখন তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর।
-ধর বাইঞ্চোতটারে! চোখ গরম কইরা তাকায়! কত সাহস! গাইলা দে ওর চোখ!

বিটলুর এই নির্দেশ শুনে অন্যরা আনন্দের সাথে এগিয়ে আসে। অনেকদিন পর এমন সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া গেল। মনের সাধ মিটিয়ে পেটানো যাবে।

কাজল একবার কোথায় যেন পড়েছিল, এক ভাবালুতাপূর্ণ কবির লেখনীতে, প্রচণ্ড মার খাওয়ার সময় না কি মনে হয় শরীরের ওপর বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝম করে। সেই সময় এরকম চমকপ্রদ উপমা পড়ে সে মোহিত হয়েছিল। আর এখন? প্রথম আঘাতটা পাওয়ার পরই সে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। মানুষের শরীর আর কিছু পারুক না পারুক, ব্যথার অনুভূতি তৈরি করতে খুব পারঙ্গম! কত লক্ষ লক্ষ সংবেদনশীল স্নায়ু তৈরি করতে প্রস্তুত এই অসহ্য অনুভূতিগুলি! প্রথম আঘাত এল পিঠের ওপর, এরপর আশেপাশে আরো কটা পরপর। ঝমঝম করে উঠল শরীর। তবে এটার সাথে বৃষ্টির তুলনা চলে না। তুলনা চলে না কোনোরকম কাব্য আর শিল্পের সাথেই। ওরা বেছে বেছে মাংসপেশীতেই আঘাত করছে। মাথায় আর শরীরের জোড়গুলি বাদ রাখছে। পেশীতে মারলে ফুলে যায়, খুব ব্যথা হয়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম থাকে। এসব হিসাব মনে হয় ওদের করা থাকে মারপিটের সময়। কিছুক্ষণ এভাবে পেটানোর পর আর তাদের ওসব নিয়ম মনে রইল না। দুই একটা জয়েন্ট ভাংলে এমন কোনো সমস্যা তো নেই! মারার পর যদি এর চিহ্নই না থাকে, তাহলে মেরে লাভটা কী! থাকল না হয় মাসকয়েক হাসপাতালে! একটা সময় ওদের মনে হতে থাকল, মেরেই ফেলা যাক না হয়! কয়েকজন মিলে একজনকে মারলে কারোই ফাঁসি হবে না। আর ওদের সার্টিফিকেটের বয়সও ১৮ এর কম। তাই কিশোর হিসেবেই বিবেচিত হবে ওরা। কদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে,অথবা জেল খাটতেও হতে পারে। ভয় প্রদর্শনের ক্যারিয়ারে এসব তো অর্জনই! প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে টানা পেটালো ওরা কাজলের শরীরের বিভিন্ন অংশে । কয়েকবার মাথাতেও আঘাত করল বিপদজনকভাবে। কাজল কোনোভাবে ঠেকিয়ে দিয়ে প্রাণ বাঁচাল। এত এত মার খেল, এত এত নতুন জায়গায়, প্রতিটারই একদম নতুন স্বাদ আর পরিচয়। আহা, কখন তার শরীর অবশ হয়ে আসবে, স্নায়ুতন্ত্রগুলি বিকল হয়ে যাবে, ব্যথার অনুভূতি হারিয়ে যাবে, আর সে ডুবে যাবে অতলে? তার হাড্ডি, পেশী আর জোড়া যখন আঘাত সামলাতে ব্যস্ত শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখন তৎপর হয়েছে সেই আদিম প্রবৃত্তির তাড়নায়। বাঁচতে হবে। পঙ্গু হয়ে, অন্ধ হয়ে, বিকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে, যদি চলে যায় যৌনতার অনুভূতি, যদি হারিয়ে যায় সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নেবার ক্ষমতা,যদি জাউভাত হজম করার ক্ষমতাও না থাকে, তাও বেঁচে থাকতে হবে। মৃত্যুর কাছাকাছি এসে, যখন পরিস্থিতিটা এমন যে আর কয়েকটা আঘাত পড়লেই মৃত্যু নিশ্চিত, বেকায়দা লাগলে এক মারেও হয়ে যেতে পারে, এমন অবস্থায় প্রতিরোধ কার্যক্রম থেকে কাজলের বাহ্যিক দেহ নিজেকে প্রত্যাহার করে নিল। সে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে এলিয়ে পড়ে রইল।

তারপরেও দেহের ভেতরে ভেতরে যুদ্ধ চলছেই তখন। কারা চালাচ্ছে এই যুদ্ধ? হরমোন? শ্বেতকণিকা? এনজাইম? কাজল তাদের পরিচয় জানে না। শুধু জানে, তাদের চেয়ে আপন আসলে কেউ নেই। বেঁচে থাকার যুদ্ধের নতুন ধরণ শুরু হলো এবার। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বের করিয়ে কাঁপাতে লাগল শরীরটা, আর জান্তব এক ধরণের শব্দ বের করতে লাগল। ততক্ষণে ওরাও ক্লান্ত এত মেরে। জিরিয়ে নিচ্ছে। একবার বিরতি নিলে আবার নতুনভাবে শুরু করার উদ্দীপনা পাওয়া কঠিন। হাঁপাতে হাঁপাতে ওরা কাজলের শরীরের খিঁচুনি দেখতে লাগল। তারা যদি তার শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত বের হতে দেখত, তাহলে হয়তো বা উৎসাহ ফিরে পেত শীঘ্রই। ভোঁতা অস্ত্রের এই এক সমস্যা। যথেষ্ট গ্ল্যামারাস না। কাজলের মুখ দিয়ে বের হতে থাকা গ্যাঁজলা দেখে তাদের বিবমিষা জাগে। পিটিয়ে মেরে ফেলার মধ্যে যে বীরত্বসূচক ব্যাপারটা আছে, সেটা উবে যেতে থাকে। কিছুটা ভয়ও করে তাদের। ইতিমধ্যে উৎসাহী লোকজন জড়ো হয়েছে আশেপাশে। তাদেরকে প্রায় মৃত কাজলের দেহখানির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়ে তারা ধীর পদক্ষেপে স্ট্যাম্পগুলি বাগিয়ে ধরে চলে গেল।

কাজলকে যারা ঘিরে ছিল, তাদের কারো কাছেই কাজল প্রিয়তম কেউ নয়। তাই জীবনের ঝুঁকি নিতে মার থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে নি কেউ। তবে মারপিট শেষ হবার পর তাদের মধ্যে কেউ কেউ থেকে যাবে। তারা কাজলের পরিচয় বের করে বাসায় জানিয়ে দেবে, এবং এমন কী হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থাও করে ফেলবে।



মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:১৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: কাজলের উপর শারীরিক অত্যাচার, মানসিক নির্যাতন এবং বিদ্রুপের চিত্রগুলো অত্যন্ত নিপুণভাবে এঁকেছেন। + +
"প্রচণ্ড মার খাওয়ার সময় নাকি মনে হয় শরীরের উপর বৃষ্টি পড়ছে ঝম ঝম করে" - এমন উপমা চরিত্রের সাথে একেবারে না মিশে গেলে অনুভব করা যায় না।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই। আশা করি বইটি পড়বেন।

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:৩০

জনারণ্যে একজন বলেছেন: প্রথম পর্ব পড়লাম, হাসান।

আপনি সুলেখক, বলার কিছুই নেই তেমন। পরবর্তী পর্বগুলি কিংবা সম্পূর্ণ বই না পড়ে মন্তব্য করাটাও উচিত হবে বলে মনে হয়না। এখনো ঠিক বুঝতে পারছিনা, এখানে কাজল'ই মুখ্য চরিত্র কিনা। যদি হয়, তবে দেখাই যাক, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।

যাই হোক - একজন লেখক অথবা ধরুন মনোযোগী পাঠক হিসেবেই আপনি নিশ্চয়ই জানেন, কখন পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে - কোনো গল্প অথবা উপন্যাস পড়ার সময়।

সুদীর্ঘ অথবা অতিরঞ্জিত বর্ণনা পাঠককে বস্তুতঃ ঘটনার মধ্যে প্রবেশ করতে কোনো সাহায্য করে না, বরং বিরক্তির উদ্রেক করে। এখানে প্রথম পর্ব পড়ে এটাই মনে হলো। প্রথমবার পড়ে শেষ করতে পারিনি, পরেরবার নিজেকে একরকম জোরই করতে হলো - পুরোটা শেষ করার জন্য।

তবে আশাকরি সম্পূর্ণ উপন্যাস পড়ার পর আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে যাবে। যেহেতু আপনার এর আগের কিছু কিছু লেখা পড়েছি, চুম্বকের মতোই আটকে রেখেছিলো আমাকে।

ভালো থাকবেন, সুদীর্ঘ মন্তব্যের জন্য দুঃখিত।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১১

হাসান মাহবুব বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। তবে আমি এই জাতীয় কিছু আবার লিখলে এরকম ডিটেইলেই লিখব। কারো কাছে অতিরঞ্জন মনে হবে, কেউ বা তাড়িয়ে তাড়িয়ে পড়বে।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৩২

কামালপাশা২য় বলেছেন:




আপনি বই না'লিখলে জাতি উপকৃত হতো।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১২

হাসান মাহবুব বলেছেন: আর লেখার ফলে কী কী অপকার হয়েছে?

৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:২৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়টি পড়ে খুব ভালো লাগলো। বর্ণনাগুলো বেশ সুন্দর ছিল। তবে প্রথমে ছেলেগুলোর বয়স নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম।

কিছু পর্যবেক্ষণ: প্রথম লাইনে, "দুর্ভাগ্যবশত" সে মারা যায়নি। এখানে একটু হোঁচট খেলাম। কথাটি আয়রনি করে বললেও "দুর্ভাগ্যবশত" বলা কিছুটা বিসদৃশ্য মনে হয়েছে। "সৌভাগ্যবশত" বললে কি সঠিক হতো না?

ইভটিজিংয়ের কারণ হিসেবে আপনি প্রথম যে লাইনটি লিখেছেন "কাজলের বোন মালতীর প্রতি তারা অপ্রতিরোধ্য কামনা অনুভব করতো"। এটি আমার কাছে ঠিক উপযুক্ত মনে হয়নি। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি "অপ্রতিরোধ্য কামনা" প্রায়শই প্রাণশক্তির এবং সৃষ্টিশীলতার লক্ষণ, যা একটি পজিটিভ শক্তি বলে মনে হয়। "ইভটিজিং" ঠিক অপ্রতিরোধ্য কামনা বা প্রাণশক্তির বিষয় নয়, এটা বিকৃতি।

ছেলেগুলোর বয়সের সাথে তাদের মনস্তত্ত্বের কিছু গড়মিল আছে বলে মনে হয়েছে। তাদের আচরণ ঠিক কিশোরদের মতো মনে হয়নি।

সর্বোপরি, আপনার জন্য শুভকামনা এবং বইটির সাফল্য কামনা করছি।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: দুর্ভাগ্যবশত সে মারা যায় নি এর পরের অংশেই সেটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে মরে গেলেই ভালো হতো। অপ্রতিরোধ্য কামনার বিষয়টা ভালো অবজারভেশন। আপনি বেটা রিডার হলে এই পরামর্শটা নিতাম।
এখানে কাজল কিশোর, অন্যরা কৈশোরউত্তীর্ণ। কিশোর গ্যাং নিয়ে কি আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে? থাকলে সাদৃশ্য পেতেন হয়ত।

আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার আলোচনার জন্যে। আমি চাইব যেন বইটি আপনি পড়েন।



৫| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের একজন ব্লগার বই লিখেছেন। এটা আনন্দের সংবাদ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: তাই? খুব আনন্দিত হয়েছেন আপনি?

৬| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৯

জনারণ্যে একজন বলেছেন: লেখক বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। তবে আমি এই জাতীয় কিছু আবার লিখলে এরকম ডিটেইলেই লিখব। কারো কাছে অতিরঞ্জন মনে হবে, কেউ বা তাড়িয়ে তাড়িয়ে পড়বে।

- আপনি ডিটেইলে লিখবেন নাকি সংক্ষেপে লিখবেন, সেটা আপনার ব্যাপার। এবং পাঠক হিসেবে আমার যে মতামত দেয়ার, তা দেব। অন্য পাঠক কি ভাবছে না ভাবছে; তা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়।

বাই দ্যা ওয়ে , শব্দটা "তাড়িয়ে" "তাড়িয়ে" নয় - "তারিয়ে তারিয়ে" হবে। হয়তো বানান জানেন না অথবা অতি উত্তেজনা বশতঃ বানান ভুল হয়ে গেছে - এই আর কি।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: অবশ্যই। আপনার মতামতই আপনি দিবেন। ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ। আমি কনফিউশনে ছিলাম বানানটা নিয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.