নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুর!

বিকট

হাসান মাহবুব

আমার অপদার্থতাকে মাহাত্ম্য ভেবোনা...

হাসান মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশি ড্রিম -৪

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৪২



প্রথম পর্ব- Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব- Click This Link
তৃতীয় পর্ব- Click This Link


তোমার জন্যে গাইছি গান

এই শহরে একটা বার আছে। একটা কলেজের ঠিক পাশেই বারটা। অভাবনীয় এই জায়গাটিতে আছে ধবধবে ফর্সা চামড়ার পেটে হালকা মেদ জমা একজন গায়িকাও। নাম তার পামেলা। এখানে কলেজ শেষ করে ছাত্র ,শিক্ষক এবং অন্যসব পেশার মানুষজন চলে আসে মদ খেতে। তবে অগ্নিতরল আর আগ্নেয় নারী থাকা সত্ত্বেও এখানে মেয়েঘটিত ঝামেলা বড় একটা হয় না। এই মদ্যশালাতেই মেয়েটা বরং বেশি নিরাপদ বোধ করে। এখানে জনা দশেক ষন্ডা ধরণের বারটেন্ডার আছে। একদম বেছে বেছে নেয়া হয়েছে একেকজনকে। ছয় ফুটের নিচে কারো উচ্চতা হবে না। সবারই বাইসেপ অন্তত সতেরো। তারা খরচোখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ঘন্টার পর ঘন্টা। কেউ একটু বেসামাল হলেই কয়েকজন মিলে গিয়ে ঘিরে ধরে। বাঙালির গড় উচ্চতা বা বাহুর মাপ, কোনোটাই সম্মানজনক নয়। আর বেসামাল অবস্থায় সহজেই তাদের কব্জা করে ফেলা যায়। তাই তাদের খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না।

ভীত আর ভয়প্রদর্শক, দুইপক্ষই আসে এখানে। দুই পেগ পেটে পড়ার পর সবাই পামেলার কাছাকাছি যেতে চায়। পামেলা ভ্রূক্ষেপ করে না। সে গান গায়। তার ওপর নির্দেশনা, পেট ভদ্রস্থভাবে অল্প একটু বের করে রাখতে হবে। পামেলা ওতে কিছু মনে করে না। এখানে সবাই তাকে দেখে, জলজ্ব্যান্ত কামনা প্রকাশ করে। কোনো রাখঢাক নেই। এখানে কেউ নায়ক বা ভিলেন না। সবাই পার্শ্বচরিত্র।

পামেলা খুব একটু ভালো গান গায় না। সুর, তাল লয় ঠিক রাখতে পারে, তবে সেই যে দরদ দেয়ার ব্যাপারটা, তা নেই। কেউ যদি তার পেটের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার চোখের দিকে তাকায়, যদি তাকিয়ে থাকে এক মিনিট অবিচল, তাহলে বুঝতে পারবে, সেই চোখে প্রাণ নেই। তার শরীর দোলে, সে মাঝেমধ্যে হাত দিয়ে তার কোঁকড়ানো চুল ঠিক করে, কিন্তু তার চোখের ভেতর তারা নেই, আছে শুধু ধূলিধূসরিত মহাজাগতিক শূন্যতা।
পামেলার দিকে অবিচল চেয়ে ছিল শফিক। এখানকার লেখকেরা খুব সস্তা মদ খায় আর বেসিনে গিয়ে উগড়ে দেয়। তবে শফিক ভাগ্যক্রমে রয়ালিটির কিছু টাকা হাতে পাওয়ার পর বিলাতের সিঙ্গেল মল্ট পান করছিল। সে তখন পামেলার সামনাসামনিই বসে ছিল প্রায়। পুরোনো, জনপ্রিয়, সহজ কর্ডের কিছু গান ছাড়া পামেলা আর কিছু গায় না। “চিরদিনই তুমি যে আমার, যুগে যুগে তুমি আমারই” অথবা “বলছি তোমার কানে কানে আমার তুমি” এসবের পাশাপাশি কখনও এমন কী সে দেশাত্মবোধক গানও গায় । পামেলার নতুন কিছু শিখতে ইচ্ছে করে না। পামেলা জানে না পৃথিবীতে এই গানগুলির পর আর কোনো নতুন গান রচিত হয়েছে কি না। তার টেপরেকর্ডার নষ্ট হয়ে গেছে। ফিতে চলে না তাতে। সে আর কেনেও নি। ই মুহূর্তে ঘুরতে থাকা আলো তার পেটের ওপর পড়লে সঠিক রঙ পাচ্ছে কি না এদিকেই বরং তার মনোযোগ বেশি। অনেকসময় পেটটা বেশি সাদা দেখায়। হলুদ দেখালে ভালো লাগে। গানের পাশাপাশি এগুলিও ভাবতে হয়। চাকরি বাঁচাতে নতুন গান শেখার তাগাদা নেই তার, তবে পেটে যদি ঘা হয়ে যায়, দাদ বা চুলকানি রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে সস্তার পাউডার বা মলম দিয়ে হয়তো তা ঢেকে রাখা সম্ভব হবে কি না এই ব্যাপারটাই তার মূল ভাবনার বিষয়। ইদানিং সবার দাদ হচ্ছে। এর চেয়ে না হয় ক্যান্সার হতো! দাদ, খুজলি হলে চিকিৎসা করার টেনশন আছে। ক্যান্সার বা এইডস হলে অত চিন্তা করতে হবে না। পামেলার অত বাঁচার ইচ্ছে নেই। বড় অসুখ হয়ে মরে গেলে ভালোই হয়। যে অসুখগুলি মেরে ফেলে না, কিন্তু জ্বালায় এসবের প্রতি সে বিরক্ত।
পামেলার কাছে অনুরোধ আসে নতুন আইটেম সং গাওয়ার। ঐ অনুরোধ অগ্রাহ্য করে পামেলা। কর্তৃপক্ষ বারণ করে দিয়েছে তাকে এসব গান করতে। মাতালদের বিশ্বাস নেই। তারা কখন কী করে বসবে বলা যায় না।

প্রথম প্রথম যখন পামেলা এই পেশায় এসেছিল, প্রতিদিন তার কান্না পেত। গান গাওয়ার তেমন একটা প্রতিভা তার কখনই ছিল না। সে গায়িকা হতে চায় নি। হাজার হাজার পরপুরুষ প্রতিদিন তার পেট দেখবে, এটা সে স্বপ্নেও ভাবে নি। সে চাইত ঘরের বউ হয়ে থাকতে। একটা নির্ভরযোগ্য পুরুষমানুষ চাইত সে, চাইত এক বা দুইটি বাচ্চা, সাজানো রান্নাঘর, যেখানে প্রতিটা তাকে পট আর কৌটা ঠিকঠাক সাজানো থাকবে। তার শরীরের জবাফুলটার পাঁপড়িগুলি খসিয়ে নিয়ে, কাঁটাগুলি ছেটে ফেলে মধু আর চিনি দিয়ে ভরে দেবে এমন একজনকে সে চেয়েছিল। কেবল একজনকেই। তারপর কী হলো সে গল্প সে আর মনে করতে চায় না, পৃথিবীকেও বলার ইচ্ছে নেই। মাতালেরা তার পেট দেখছে, দেখুক।

দেখো মাতাল, দেখো! শোনো মাতাল, শোনো!

দেখছিল বটে একজন! পামেলার দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা শফিক বার্নার্ড তুঘলকের মনে ঝড় হচ্ছিল আর শরীরটা কাঁদছিল। সে যদিও থাকে বাঙ্গাল মূলকের অপরিসর একটা মেসবাড়িতে, এবং সড়কপথে পঞ্চগড় গিয়ে সীমান্তের ওপারে একই রকম দেখতে গরু আর ঘাস ছাড়া দেশের বাইরের কিছুই দেখে নি এই বিশাল পৃথিবীর, তবুও সে নিজেকে একজন বিশ্বনাগরিকই মনে করে। এজন্যেই সে এমন নাম নিয়েছে। লেখক হিসেবে সে মাঝারি মানের। বয়স আটত্রিশ চলছে, ভক্ত-পাঠক তেমন নেই। খাতির রাখা নামকরা অগ্রজেরা মাঝেমধ্যে “তোমাকে দিয়ে হবে”, অথবা ‘সম্ভাবনাময়’ বলে পিঠ চাপড়ে দেয়। তার লেখার কিছু অনুরাগী আছে বটে, তবে তাদের কারোই প্রথম পছন্দ সে না। শফিক জানে, সে প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা না। তার যা কিছু অর্জন, সবই কষ্টের প্রতিফল। আবার খুব বেশি কষ্টও যে সে করে ফেলেছে তাও না। প্রতিভা নেই, পরিশ্রমও নেই, আছে শুধু খায়েস। সে যদি আর একটু কম ঘুমাত এবং আকাশপাতাল না ভেবে কম সময় নষ্ট করত, তাহলে এখনকার চেয়ে কিছুটা সম্মানজনক অবস্থানে যেতে পারত অবশ্যই। তবে এই মুহূর্তে ওসবকিছু নিয়েই তার আফসোস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। সে পামেলাকে দেখছে। পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটা যান্ত্রিক ভঙ্গীমায় গান গেয়ে যাচ্ছে। এই যান্ত্রিকতাই যেন গানটাকে আরও বেদনাবিধূর করে তুলেছে। শফিকের মাথার মধ্যে ঝড় বইছে তুমুল। সে জানে, সে যা ভাবছে এখন, তা যদি ঠিকঠাক লিখে ফেলতে পারে, তাহলে একটা মাস্টারপিস হবে। কিন্তু এই চিন্তার ঝড় থেকে ছেঁকে ছেঁকে সার এবং অসার বস্তু মিলিয়ে তাকে প্রকাশনাযোগ্য করে তুলতে যে বিপুল চেষ্টা করতে হবে তা দেয়ার ধৈর্য থাকবে কি না সে জানে না। মেয়েটার জন্যে একটা সুন্দর নাম চাই তার। উপন্যাসের জন্যে এই নামটি দরকার। কিন্তু কোনো সুন্দর এবং কাব্যিক নাম তার মনে এলো না। তার মাথায় এলো একটা ছোট্ট মিষ্টি নাম, “কিউটি পাই”। কিউটি পাই হলো এই শহরের রাণী। সবাই তার কথার বশংবদ। তার শরীরে আছে শুধু চিনি আর মধু। নেই মাংস আর চর্বি। প্রখর রোদে সে বের হয় না চিনি গলে যাবে বলে। রাতের বেলা সে যখন বের হয়, সবখানে বাজতে থাকে ড্যান্স আর টেকনো মিউজিক। পুরো শহরটা পরিণত হয় একটা নাইটক্লাবে…

এই ভাবনাটা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, সে আসলে কী দাঁড় করাতে চাচ্ছে সে জানে না। এটা জানে যে দ্রুতই আবছা হয়ে আসবে শব্দগুলি। থাকগে! ম্যাগনাম ওপাস লেখা হবে কি হবে না, তা চিন্তা না করে এর চেয়ে বরং দুঃখী গায়িকাটার দিকেই তাকিয়ে থাকা যাক অপলক। এই মহৎ বেদনার অনুভূতিটাই বা খারাপ কী! মানুষ কেন পয়সা দিয়ে ভালো মদ কিনে খায় সে বুঝতে পারছে এখন। বারে আসার পর প্রথমদিকে অপরাধবোধ হচ্ছিল। এখন সেটা একদম কেটে গেছে। ভালো লেখকেরা, যারা মাঝারি থেকে উচ্চমানের চাকরি করে, তারা লেখা থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ভালো মদ খেতে পারে। ভালো মদ খেতে হলেও তাকে ভালো লিখতে হবে আর টাকা কামাতে হবে। তাকে একসময় প্রেমিকারা মদ খাবার জন্যে টাকা দিত। প্রেমিকাদের নরম মনে সে সৃষ্টি করেছিল তার সম্পর্কে এক স্নেহশীল অনুভূতি। তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে বঞ্চিত লেখকের জীবনে মদ কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রেমিকা হিসেবে তাদের কী করা উচিত। অভিমানী প্রেমিকারা কেঁদে কেটে চোখ মুছে চলে গেছে অনেক আগেই। তারপর অনেকদিন আর কেউ আসে নি। চেষ্টা করলে যে আসত না এমন না, কিন্তু অত সময় আর শক্তি ব্যয় করতে ইচ্ছে হয় না শফিকের।

বার খোলা থাকে রাত বারোটা পর্যন্ত। তবে পামেলা চলে যায় রাত দশটাতেই। শফিক এসে বসেছে সন্ধ্যা সাতটায়। দুজনেরই যাবার সময় হয়ে এসেছে। দুজনেরই যাবার পথে আছে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। পামেলাকে অবশ্য বাস পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার জন্যে বারের একজন কর্মচারী সাথে যায়। কিন্তু সে আর কতদূর যাবে? রাত এগারটাতে গণপরিবহনও একজন মেয়ের জন্যে নিরাপদ না। বার থেকে বের হবার সময় সে অবশ্য বোরখা পরে নেয়। তবে মুখ আর চোখ ঢাকে না। ভালো হতো যদি সে গড়িয়ে গড়িয়ে যেতে পারত একটা বস্তায় আবৃত বলের মতো। কেউ যদি তাকে ভালোভাবে ঢেকে দিয়ে পাঠিয়ে দিত কুরিয়ারে করে রাতের এই সময়টায়, তাহলে বেশ হতো। বের হতে আরো ঘন্টা দুই। ভালো লাগছে না আর এখানে থাকতে। যদিও অতটা ক্লান্ত নয় সে, যে বাসায় ফিরতে শরীর কাঁদবে (মনের কাঁদার কিছু নেই), তারপরেও, শুয়ে থাকা যেত।
তাল কেটে যাচ্ছে কি? কাটুক। বারে আছে এয়ার কন্ডিশনার। তারপরেও গরম লাগছে। স্নান করতে হবে। আজ আর ফেরার পথে বোরখা পরতে ইচ্ছে হচ্ছে না। অবশ্য বোরখা পরলেই যে বিপদমুক্ত, এমন নয়। বাস থেকে নামার পর তাকে পার হতে হয় আরো এক কিলোমিটার পথ, হেঁটে। ঢাকার বড় রাস্তা কখনই বিপদমুক্ত নয়। না দিনে, না রাতে। বাজারী মেয়ে হিসেবে ইতিমধ্যেই পাড়ায় কানাঘুষা শুরু হয়েছে তার নামে। এখন তাকে উত্যক্ত অথবা ধর্ষণ করা পাড়ার সেইসব মানুষদের একরকম নাগরিক অধিকার- যারা পৃথিবীতে বাঁচে ভয়হীন! পামেলা ভয়হীনদের ভয় পায়। তবে তারা যদি তার এই নির্যাতিত জীবনটা শেষ করে দেয়ার একটা ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে কি কৃতজ্ঞতাও অনুভব করবে না শেষ নিঃশ্বাসের সময়?

মদে মাতোয়ারা হবার পরেও পামেলার এই সুরবিচ্যূতি শফিক ঠিকই ধরতে পারে। তার মনের মধ্যে রচিত হতে থাকে আরেকটা গল্প । পামেলার জন্যে একটা ভয়হীন জীবন তার কাছে পরম আরাধ্য হয়ে ওঠে। যদিও তার নিজের সময়টাও অনুকূলে নেই। লেখালেখির পাশাপাশি টুকটাক একটিভিজমের সাথেও জড়িত থাকার কারণে কিছুটা হুমকি-ধামকি এবং বিপদ তাকে ঘিরেই থাকে। বিপদ-আপদ তার পছন্দ না। আবার এরকম মুখ বুঁজে থাকতেও ভালো লাগে না। তাই সে মাঝেমধ্যে সক্রিয় মুখদের আহবানে মানববন্ধন, শোভাযাত্রায় যায়। কখনও কখনও টুকটাক বক্তৃতাও দেয়। লেখকজীবনের মতো একটিভিস্ট জীবনেও সে সবসময় পার্শ্বচরিত্র হয়েই থাকে। এতদিন এসব তার জীবনে তেমন প্রভাব ফেলে নি। কিন্তু সাম্প্রতিককালের একটা ঘটনা তাকে সত্যিই খুব নাড়া দিয়েছে। বোনের সম্মান রক্ষার জন্যে প্রতিবাদ করায় একটা ছেলেকে মেরে প্রায় শেষ করে দিয়েছিল মাস্তানরা। সে এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে একটা কবিতা লিখে ফেলে। পত্রিকায় ছাপা হবার পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা হতে থাকে। এমন না যে, এর ফলে ভয়প্রদর্শকদের ভিত্তিমূল নড়ে উঠেছিল, কিন্তু তারা এতে অনেকটা বিরক্ত আর খানিকটা বিব্রত হয়। গান, কবিতা, সুর এসব বিনোদন হিসেবে ভালো। কিন্তু এগুলিকে কখনই রাষ্ট্রের শক্তিবন্টনের নির্ণায়ক হতে দেয়া যাবে না। যখনই দেখা যাবে যে পেশী, প্রতিপত্তি এবং অর্থের চেয়ে বিমূর্ত ব্যাপারগুলি বেশি মূর্ত হয়ে উঠছে, তখনই ব্যবস্থা নিতে হয়। সারা পৃথিবী এই নিয়মে চলে এসেছে এতদিন। তৃতীয় বিশ্বের একট দেশে এসে এই “ওল্ড ফেইথফুল মেথড” এর ব্যত্যয় ঘটবে তা কী করে হয়? শক্তিমান ভয়প্রদর্শকেরা তাই নিম্নস্তরের সহভয়প্রদর্শকদের নির্দেশ দিলো ব্যবস্থা নিতে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শফিককে একটা প্রাথমিক সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে ফোন করে। খুবই ভদ্র এবং পরিশীলিত ভাষায়, তবে তাতে হুমকি প্রচ্ছন্নভাবে না, বরং প্রকটভাবেই ছিল। শফিক জীবনে প্রথমবারের মতো এমন হুমকি পেলো। ফোনকলটিতে তার প্রতিভার প্রশংসা করা হয় এবং সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করে তারা। সাথে তাকে এমন কবিতা বা গল্প রচনা করতে নিষেধ করা হয়, যেগুলি বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। শফিকও রাজী হয় তাতে এবং যথারীতি বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। এইসব ভীতি নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকবে সে? পরাজিতের জীবন তো সে চায় না। কিন্তু রুখে দাঁড়াবার মতো শক্তিও তার নেই! ভাগ্যক্রমে সেদিনই সে জমে থাকা বেশ কিছু বিল পেয়ে গেল। সিঙ্গল মল্ট খাওয়ার জন্যে এর চেয়ে ভালো দিন আর হতে পারে না। বেশ ভুলে থাকা যাচ্ছে। মনের মধ্যে সাহসও জমা হচ্ছে। এই মুহূর্তে তার ইচ্ছা- এই যন্ত্রের মতো গান গেয়ে যাওয়া মেয়েটার যন্ত্রণাকে দূর করা। লেখক হওয়া সত্তেও এই সাইত্রিশ বছর বয়সে তার স্থায়ী কোনো সঙ্গী জোটে নি। যত দিন যাবে, তার চাহিদাও কমতে থাকবে। তাই তার দরকার সমাজের চোখে খুঁতযুক্ত একজন মেয়ে। তার সমস্ত ভয় আর শঙ্কা সে দূর করে দিবে। তাকে নতুন নতুন সুন্দর সুন্দর সব গান শেখাবে। সে গাইবে দরদ দিয়ে, আর তার চোখে জ্বলতে থাকবে ফেইরি লাইট।

সে কাউকে ভয় পাবে না। কারো তোয়াক্কা করবে না। সে সময় নিয়ে লিখবে একেকটা মাস্টারপিস, সেগুলি বিক্রি হবে দেদার। যেকোনো অন্যায়ে সে সবার আগে এগিয়ে আসবে। কবিতা লিখে ছাড়খাড় করে দিবে। ভাবতে ভাবতেই শফিক বুঝতে পারছিল, এই উদ্দীপনা কেটে যাবে নেশা কেটে যাবার পরে। আহা, একে কীভাবে স্থায়ী করে রাখা যায়?

শফিকের টাকা শেষ হয়ে আসে। ভালো মদটাও মনে হয় শেষতক উগরে বের হবে। লিভারের অবস্থা ভালো না তার।

এই সময়, কোথাও যদি অবশিষ্ট থেকে থাকে কোনো গীর্জা, যদি সেখানে থেকে থাকে বড় ঘন্টাওলা ঘড়ি, তাতে ঢংঢং করে দশটা বাজবে। গান ছেড়ে দিয়ে বিষাদকাতর মাতালদের একা করে দিয়ে পামেলা কালো কাপড় চাপিয়ে উঠে যাবে শেষ বাসে।



মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:২৫

নিমো বলেছেন: ড্রিম শব্দটাই কেন? স্বপ্নের দোষটা কোথায়?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: মূল কনসেপ্টটা "আমেরিকান ড্রিম" ধারণাটি থেকে নেয়া। এটা একটা বহুল প্রচলিত শব্দবন্ধ। আমেরিকানরা এই ড্রিম অর্জন করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশিদের জন্যে এমন কিছু নেই। প্রচলিত এবং জনপ্রিয় বিধায় আমেরিকান ড্রিম কনসেপ্টটি থেকে ড্রিম শব্দটি অবিকৃত রেখে বাংলাদেশি- এর সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৪০

কামাল১৮ বলেছেন: আপনার সাথে আলাপাের পরই কামালপাশা ২য় নাই হয়ে গেলো।কাকতালিয় ঘটনা।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: কাকতালীয়? ;)

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:১১

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: সরকারী তিতুমীর কলেজের দুই পাশে দুটি বার এবং রেস্টুরেন্ট ছিল—একটি সরকারি, অন্যটি বেসরকারি। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার পথে সেগুলোর দিকে তাকাতাম, কিন্তু কখনো ভেতরে ঢোকার সাহস হয়নি। আপনার গল্প পড়তে গিয়ে ছাত্র জীবনের সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো আবার মনে পড়ে গেল।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৫৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্যে।

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: তিতুমীর কলেজের পাশে যে বার সেটার কথা বলছেন?

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৪৭

জনারণ্যে একজন বলেছেন: একটু বর্ণনাবহুল এই পর্বটি, সামান্য একঘেঁয়ে লেগেছে। তবে তার জন্য আমার ধৈর্যহীনতাও দায়ী হতে পারে।

যাই হোক; নতুন নতুন চরিত্র আসছে, এগিয়ে যাক পর্বগুলি।

শফিকের বয়স আসলে কত?! একবার বললেন 'বয়স আটত্রিশ চলছে' আবার বললেন 'সাইত্রিশ বছর বয়সে তার স্থায়ী কোনো সঙ্গী জোটেনি'।

আর ও হ্যাঁ, শব্দটা সাইত্রিশ না হয়ে "সাঁইত্রিশ" হবে না? ছোটবেলায় তাই তো পড়ে এসেছি।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্যে। শফিকের বয়স ৩৭ শেষ হয়ে ৩৮ চলছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.