![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি দুঃসংবাদ
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেড়ে যে জন্মের অলসতা শরীরে ভিড় করে, তা বোধহয় মানুষের আজন্ম পাপ।ক্যানো যে শরীরে অলসতা আসে? আলস্য না আসলে মানুষ দিন-রাত কাজ করে যেতে পারত রোবটের মত।দরকার হত না ঘুমানোর। ঘুম নিয়ে রচিত হত না বিশাল এক সাহিত্যজগত, অজানা রহস্যময়তা।
অলস দুপুরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে এসবই ভাবছিল অনি।
কিন্তু ঘুম না আসলে তো স্বপ্নও দেখা হবে না। আর স্বপ্ন না থাকলে তো জীবনটাই বৃথা।
এসব ভেবে চিন্তা-ভাবনা পাল্টে গেল অনির।
অবশেষে সে সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, ঘুম ভাল। আলস্য ভাল।স্বপ্ন সুন্দর।তাই জীবনটা সত্য।
বড় বেখাপ্পা সময়ে মোবাইলটা বেজে উঠল।কল রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে মেহেদী বলে উঠল, হ্যালো অনি, আমাদের বান্ধবী দৃষ্টির আব্বু আজ মরে গ্যাছে।দৃষ্টি ওর বাড়ি কিশোরগঞ্জ চলে গ্যাছে।আমাদেরকেও যেতে হবে। তুই কোথায়? তাড়াতাড়ি চলে আয় আমার রুমে।
মেহেদীর একনাগাড়ে বলা কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনল অনি। বিস্মিত হল, কিন্তু বিস্ময় প্রকাশ করল না।মনের এককোণায় একটু কষ্টও পেল, কিন্তু সেটাও প্রকাশ করার মত নয়।দৃষ্টি ওর খুব ভাল বান্ধবী নয়। কিন্তু একই ক্লাসে পড়ে। ক্লাসমেট বলে কথা।তার উপর আব্বু মরে যাওয়া। এ তো অনেক বড় কষ্ট।
অনির যাওয়া উচিত। তাই ও আলস্য কাটিয়ে দ্রুত তৈরী হয়ে নিল।সারাদেশে শৈত্যপ্রবাহ চলছে।ঢাকায় শীত অনেক কম। কিন্তু গ্রাম এলাকায় এবারের শীতে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে।সেই গ্রামাঞ্চলের শীতের সাথে লড়াই করতে হবে তাকে আজ রাতে। হাতে হাতমোজা,পায়ে কেড্স,মাথায়-মুখে মানকি টুপি,গলায় মাফলার জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে। যেতে হবে মেহেদীর কাছে।সব বন্ধু-বান্ধবরা বোধহয় এতক্ষণে জেনে গ্যাছে। ওরাও সবাই তৈরী হয়ে নিচ্ছে।
অনি বাইরে বেরিয়ে দেখতে পেল, মেহেদী আগেই আরিফ ও তমালকে নিয়ে বের হয়ে এসেছে।ওরা একটা চায়ের দোকানে বসে সিগারেট ফুকাচ্ছে।অনিকে দেখতে পেয়েই ওরা সিগারেট বাড়িয়ে বলল, নে অনি, সিগারেট খা।
অনি বরাবরই এমন প্রস্তাবে বিরক্ত হয়। বলল, তোরা ভাল করেই জানিস আমি সিগারেট খাই না, তাও আমাকেই ক্যান্ বার বার সিগারেট খাওয়ার কথা বলিস?এখন বল, এপাশের কি অবস্থা। সবাই জানে? আমরা রওনা দিব কখন?
তমাল দায়িত্বশীল মানুষ। ও ক্লাস ক্যাপটেন।বলল, সবাইকে জানানো হয়ে গ্যাছে। এখন খুব সুবিধা হয়্ একটি ভার্সিটির বাস পেলে।তা না হলে এত রাতে যাওয়াটা তো কষ্টকর।
আরিফ যোগ করল, তার উপর মেয়েরাও যাবে। আমরা পোলা-পাইন সবকটা থাকলে কোন ঝামেলা নাই।কিন্তু এতগুলো মেয়ে নিয়ে যাওয়াটা-
কতজন মেয়ে যাবে? প্রশ্ন করল মেহেদী।
৬-৭ জন। বান্ধবীদের আবার বান্ধবীর প্রতি মায়া বেশি তো!সব মিলিয়ে আমরা আছি ১৮ জন। উত্তর করল তমাল।
রাত তখন কাছাকাছি
বিকাল হয়ে গ্যাছে। প্রায় সাড়ে চারটার মত বাজে। এখনও ভার্সিটির গাড়ি যোগাড় করা গেল না।বোধহয় না আর যোগাড় হবে। শেষ পর্যন্ত বাইরের বাসেই যেতে হবে।
রাত হয়ে যাবে শুনে ভয়ে আতকে উঠল অনি।বাইশ বছর বয়স হয়েছে, এখনও ভূতের ভয়টাই ছাড়তে পারে নি ও।ওর যুক্তি আবার অন্যরকম।ওকে ভীতু বলা হলে ও বলে, ‘আসলে সবাই ভয় পায়।ভয়ের যায়গা আসুক, ক’জন সাহসী আছ তখন বোঝা যাবে’।
তমাল বলে উঠল, একটি মাইক্রোকার পাওয়া গেলে ভাল হত।
অনেক চটপটে ছেলে বর্ষন। খুব দ্রুত কাজ করে ফেলতে পারে।ছুটে গেল মাইক্রোকারের খোঁজে।পাওয়া গেল ঠিকই। কিন্তু সেটা আঠারো জন নেবার মত না।তার উপর ভাড়াও অনেক বেশি।তাই সে চিন্তা বাদ দিতে হল।
এদিকে সন্ধ্যা হয়ে এল।তখনও ঠিক করা হয়নি কিভাবে ওরা যাবে?
অবশেষে যখন বাইরের বাসে যাবার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হল, তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গ্যাছে।রাতের প্রথমাংশ শুরু হয়ে গ্যাছে।একটি বাসে চড়ে সাভার-নবীনগর পেরিয়ে বাইপাইলে গিয়ে নামল ওরা।
শীত ততক্ষণে তান্ডবলীলা শুরু করে দিয়েছে পুরোদমে।চারপাশে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না।তখন রাত আটটার মত বাজে। মনে হচ্ছে যেন বারোটা বেজে গ্যাছে।শীতের রাত বলে কথা!
কোন বাস পাওয়া গ্যালো না।সবাই চিন্তিত। একটু একটু ভীত। অনি বলে উঠল, আমাদের যাত্রা অশুভ। মরা বাড়িতে যাবার সময় এমন অশুভ ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।দাদির কাছে শুনেছিলাম-
‘চুপ কর বেয়াদপ, যত সব আজাইরা প্যাচাল……’।তমালের ধমক খেয়ে চুপসি মেরে পড়ে থাকল অনি। পরের দু ঘন্টা আর কোন কথাই বলল না ও।
রাত প্রায় দশটার দিকে খবর আনল বর্ষন। একটা মিনি বাস যোগাড় করা গ্যাছে।যাওয়া-আসা ভাড়া আট হাজার।বাসে আঠারো জন বেশ ভালভাবে বসেই যাওয়া যাবে।
কিন্তু বাসটা দেখে মোটেও ভাল লাগল না অনির। বাসটা পুরাতন,লক্কর-ঝক্কর।এমন একটা বাসে এত রাতে যাওয়াটা ঠিক হবে কি না, তা বুঝতে পারছিল না অনি, কিন্তু কাউকে বলতেও ভয় পাচ্ছিল, কেউ যদি আবার ধমক দেয়। বিনা পয়সায় অন্যের ধমক খেতে আর রাজি নয় ও।
রাতের শুরু
বাস ছাড়ল সাড়ে দশটায়।দৃষ্টির সাথে মোবাইলে কথা হল সবার।ওর কান্নাসিক্ত কন্ঠ শুনতে পেল সবাই।সবাই কষ্ট পেল। বেদনাপ্লুত হল।
ভাঙ্গা-চোড়া বাসের ফাঁক-ফোকড়গুলো দিয়ে নির্লজ্জের মত শীতের বাতাস হু হু করে ঢুকছে।হাত-পা-কান সব এক করে জড়িয়েও শীত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।
রাফি-উপমা একসাথে বসেছে। ওরা পরষ্পরকে ভালবাসে।অনেক বেশি ভালবাসে। একে-অন্যের যত্ন নিচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস যেন ঢুকতে না পারে, সেজন্য উপমা রাফির মাফলারটাকে সুন্দর কের পেঁচিয়ে-মুড়িয়ে দিল।রাফি একটি মিষ্টি হাসি দিল বিনিময়ে। বর্ষন,তমাল,আরিফ বসেছে অন্য মেয়েদের সাথে।চৈতি ও রাহুল বসেছে একসাথে।একেবারে সামনে আছে মেহেদী,আনিস আর অনি।
বাস ছুটে চলল।বাইপাইল পেরিয়ে গাজীপুরে চৌরাস্তার দিকে।চৌরাস্তা থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ চলে যাওয়া যাবে।
গাজীপুরে চৌরাস্তা পৌঁছতেই অনেক সময় লেগে গেল।
প্রথম প্রথম বন্ধু-বান্ধবরা বেশ গল্পগুজব, হাসাহাসি করছিল।ওদের দেখলে মনেই হয় না যে ওরা একটা মরা বাড়িতে সান্তনা জানানোর জন্যে যাচ্ছে। মনে হয় যেন পিকনিক করতে বের হয়েছে।ব্যাপারটা অনির মোটেও ভাল লাগছে না।কিছু বলতেও ভয় পায়। পাছে আবার কেউ ধমক দেয়।এখন অবশ্য অনেকেরই চার্য ফুরিয়ে এসেছে।দু-একজন ঘুমে টুপছে।
ড্রাইভারের সমান্তরালের তিনজনের সিটে কোনরকমে বসে আছে ও।উঁচু-নিচু সিটে বসে থাকতে-থাকতে ওর পেছনটায় ব্যথা হয়ে গ্যাছে।কিন্তু প্রেমিকা নিয়ে রাফি কত সুন্দর ভাল একটি সিটে বসে আছে।শালা, প্রেম করাই ভাল ছিল। প্রেম করলে বাসে একটি ভাল সিটে অন্তত বসা যায়।প্রথমদিকে চৈতির ডাকে সাড়া না দেওয়াটাই ভুল হয়ে গ্যাছে বোধহয়।তাহলে আজ ওর সাথে বসে আরাম করে গল্প করতে করতে যাওয়া যেত।রাহুলের সাথে সম্পর্কটাও খারাপ হত না।
রাতের যাত্রা
গ্যাসের গাড়ি। খুব ধীরে চলে। আধো ঘুম, আধো জাগোরণ, আর রাজ্যে ক্লান্তি সবার চোখে-মুখে।চলন্ত বাসের ঘুমটা খুব বেপরোয়া হয়।কিছুতেই কথা শুনতে চায় না।ঘুমোনোর হাজার চেষ্টা করলেও ঘুম ধরেনা। আসলে ঘুম জিনিসটাই এমন।ও মানুষকে শাসন করে। ওকে কেউ শাসন করতে পারেনা।বিছানায় শুয়ে জোর করে ঘুমের চেষ্টা করলে ও কখনওই ধরা দেয় না।মানুষ যখন ওর কাছে বশ্যতা স্বীকার করে, ও কেবল তখনই আসে, নিরবে আসে,চুপিসারে আসে,মানুষ কখনও ওকে ধরতে পারেনা।
গাড়ি হঠাৎ থেমে গ্যালো।কাপাসিয়া বাজার এসে গ্যাছে। রাতে তখন প্রায় সাড়ে বারটা বাজে।চারপাশে কিছু দেখা যায়না।ছেলেরা সবাই নেমে হালকা খাওয়া-দাওয়া করে নিল।মেয়েরা নামল না।ওরা বাসের ভেতরেই খাওয়া-দাওয়া সেড়ে নিল।ঠান্ডা কনকনে পানি গিলতে হল সবাইকে। মেয়েদের কাছে উষ্ঞ পানি ছিল।মেয়েরা বোধহয় জন্মগত ভাবেই সাজানো-গোছানো।বাইরে বের হলে ওদের কাছে এক বোতল পানি,টিস্যু পেপার আর একটা চিরুণি থাকবেই।রাফি আর রাহুল ওদের প্রেমিকার সাথে গরম পানি ভাগাভাগি করে নিল।মেহেদী চাইতে গিয়ে দেখল যে, গরম পানি শেষ।ও মনের কষ্টে বলেই উঠল, হায় রে প্রেম। প্রেম করে কি লাভটাই না করেছিস তোরা!
কুয়াশায় পাঁচহাত দূরের কিছুও দেখা যায় না।সবাই আশেপাশেই আছে।তমাল,আরিফ আর ড্রাইভারকে দেখা যাচ্ছে না।ড্রাইভারটা একটু ভূতুড়ে টাইপের। প্রথম থেকেই ওকে ভাল লাগেনি অনির।চোখ-মুখ ভয়ঙ্কর রকামের কালো।বোধহয় নিয়মিত নেশা করে আর বাড়িতে গিয়ে বউ পেটায়।
ওদের খোঁজার জন্য একটু এগিয়ে গেল অনি।সামনটা একেবারেই নির্জন। এপাশের সব দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গ্যাছে।কুয়াশায় আবছায় একপ্রান্তে মানুষের মত কিছু একটা দেখা গেল।অনির খুব ভয় করল।অনির মনে হল ও দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু ওর পা গুলো সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।
আরও কাছাকাছি গ্যালে তমাল, আরিফ আর ড্রাইভারের মুখগুলো মুটামুটি স্পষ্ট হয়ে উঠল।অনি একটু আড়ালে দাঁড়ালো যেন ওকে দেখা না যায়।
ড্রাইভার ঝাঝালো কন্ঠে বলছে, ‘বুঝলেন ভাই, গাঞ্জা না খাইলে গাড়ি চালাইয়া কোন শান্তিই নাই। আপনাগোর তাড়াহুড়ার জইন্য না টাইনাই উইঠ্যা পড়ছি। এখন শান্তি’। এই বলে ড্রাইভার সদ্য আগুন ধরানো গাজা ভরা সিগারেটটি আরিফের দিকে এগিয়ে দিল।দু’টান দিয়ে আরিফ দিল তমালকে।তমাল দু’টান দিয়ে আবার দিল ড্রাইভারকে।ঝাঝালো পোড়া গন্ধ ভেসে এল অনির নাকে।ওরা গম্ গম্ করে হেটে গ্যালো গাড়ির দিকে।আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল অনি।
তমাল সবাইকে আবার গাড়িতে ওঠার জন্য ডাকছে।অনিকে না পেয়ে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করল।অনি ধীরে ধীরে গিয়ে তমালের সামনে দাঁড়ালো।তমাল ওকে হালকা ধমকের সুরে বলল, কোথায় ছিলি? সবাই উঠে গ্যাছে তোর দেখা নাই।
অনি বলল, গাজা টানতে গিয়েছিলাম বন্ধু।একটা মৃত মানুষের বাড়িতে যাওয়ার আগে এমন কাজ না করলেই কি হত না? (চলবে)
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৪
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: বাকিটুকু এখনও লিখে উঠতে পারিনি। তবে খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারব বলে আশা করছি প্রিয় এক্সপেরিয়া। আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫১
এক্সপেরিয়া বলেছেন: তারাতারি পরের পর্বের অপেক্ষায় ।