নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে ...

পেলব চক্রবর্তী

ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম...

পেলব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা মধ্যরাতের গল্প (৪) - শেষ পর্ব

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০৪

প্রথম পর্ব Click This Link

দ্বিতীয় পর্ব Click This Link

তৃতীয় পর্ব Click This Link



বিপদে মোরে রক্ষা কর…এ নহে মোর প্রার্থনা




‘বিপদে মোরে রক্ষা কর/এ নহে মোর প্রার্থনা/বিপদে আমি না যেন করি ভয়/দুঃখ-তাপে ব্যথিত চিত্তে নাই বা দিলে শান্তনা/’- কবিগুরু একথাগুলো বলে গিয়েছিলেন ঠিকই।কিন্তু খুব কম মানুষই বিপদে সৃষ্টিকর্তাকে একথা বলতে পারে।প্রায় সবাই বিপদের সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চায়, যেন তাকে রক্ষা করা হয়।



ভয়ার্ত অনি তাই আর একবার সৃষ্টিকর্তার কাছে রক্ষা পাবার প্রার্থানা করে নিল।



কালাচাঁদ আর মাফিয়া ডাকু ওদের নৃশংসতম কাজটা করতে চলে গেল।

থেকে গেল শিবরাম ডাকু সহ আরও তিনজন।



রাত আরও গভীর হতে লাগল। আরও কাল হতে লাগল।



শিবরাম ডাকু তার সহকর্মীদের নিয়ে পাশেই এই উঁচু যায়গায় বসে পড়ল।খড়-কুটো জোগাড় করে আগুন জ্বালালো।



একটু পরে ঝাঁঝালো একটি গন্ধ অনির নাকে এসে লাগল।অনি এই গন্ধটাকে চেনে।এটা গাজা পোড়ানোর গন্ধ।



এই মুহূর্তে ওদের আশেপাশে কেউ নেই। যা করার এখনই করতে হবে।

কিন্তু হাত তো দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা।পাশে তমাল আর আরিফ মরার মত দাঁড়িয়ে আছে।



ফিসফিসিয়ে অনি তমালকে বলল, ‘তমাল, এই তমাল, রাশেদের কেচিটা তোর কাছে আছে না? তমাল, ওই তমাল?’

‘হম্, আমার ডান পকেটে আছে।কিন্তু ওটা বের করব কিভাবে?’

‘একটু চেষ্টা কর।’,উত্তর করল অনি।



‘সম্ভবই না।আমি পারব না।ওরা বুঝতে পারলে মেরে ফেলবে।’প্রতিউত্তর তমালের।



অনি অবাক হয়ে চেয়ে রইল।এই ছেলেকেই তো এতদিন ও খুব সাহসী বলে জানত।



ডাকাতদের জ্বালানো আগুনের ঝলকানি আশেপাশের খুব অল্প স্থানব্যাপী ছড়িয়ে আছে।সেই আঁধারঘেরা অস্পষ্ট আলোয় ছোট্ট বাচ্চাটির আবছায়া দেখা গেল,যার কান্না শুনে ওরা এখানে এসেছিল।



অনি ফিসফিসিয়ে ডাকল,‘বাবু,এদিকে এস।’



ছোট ছোট পায়ে ও অনির দিকে এগিয়ে আসল।



অনি বলল,‘তোমার নাম কি বাবু?’



বাচ্চাটি বলল,‘আমার নাম টুম্পা।’



অনি বলল,‘বাহ্ কি সুন্দর নাম।ওই পাশের ছেলেটার(তমালকে দেখিয়ে) ডান পকেটে একটা কাচি আছে।তুমি কি ওটা বের করতে পারবে?’



‘হ্যা পারব।’ ও উত্তর করল।



অনি বুঝতে পারল, টুম্পাকে ওরা যতটা ছোট মনে করেছিল, আসলে ও ততটা ছোট নয়।মোটামুটি আট-নয় বছরের একটা মেয়ে।



টুম্পা মাথা নিচু করে অন্ধকারে নিজেকে ডুবিয়ে তমালের ডান পকেট থেকে কাচি বের করে এনে অনির কাছে এল।অনি আবার বলল,‘তুমি কি আমার হাতের দড়িটি কেটে ফেলতে পার?’



ও উত্তর করল,‘হ্যা পারি। আমি কাটাকাটি ভাল করতে পারি।আমি প্রতিদিন মা’র পাশে বসে তার তরকারী কাটা দেখতাম।মাঝে মধ্যে মা না দেখলে আমিও কাটতাম।একবার হাত কেটে ফেলেছিলাম,বাবা ভীষণ বকেছিল।বাবা আমাকে অনেক ভালওবাসত।কিন্তু এখন বাবা আর বকবে না।ভালওবাসবেনা।বাবাকে তো ওরা মেরে ফেলেছে।’



ভাবলেশহীনভাবে বলে চলল ও।মরে যাওয়া বাবা সম্পর্কে কোন নাবালক একটি মেয়ে মনের কষ্টকে চেপে রেখে এমন সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে,ভাবাই যায় না।



‘গুড, আমি জানতাম যে তুমি পারবে।তুমি দ্রুত আমার হাতের দড়িটাকে কেটে দাও।তুমি মাথাটাকে একটু নিচু করে নিজেকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখ, যেন ওরা তোমাকে দেখতে না পারে।’



দ্রুত নিজের কাজ করে চলল ও।কিছুক্ষণ চেষ্টার পর অনির হাতের বাঁধনজোড়া খুলে গেল।এমন একটি মোটা দড়ি আট-নয় বছরের একটি বাচ্চা যে এভাবে কেটে ফেলল, তা এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা অনির।









কালাচাঁদ আর মাফিয়া চলে গেল রাস্তায় দাঁড়ানো মিনিবাসটার কাছে।

বাস প্রায় ঠিক হয়ে এসেছে। কিন্তু এতক্ষণেও অনি,তমাল,আরিফ ফিরে আসছেনা দেখে চিন্তায় পড়ে গ্যাছে সবাই।



বাসের পেছনে একটু আঁধারে গিয়ে নিজের শেষ সম্বলটুকু সিগেরেটে পুরাচ্ছিল রাশেদ।এমন সময় বাসে বেশ চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেল।ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে গেল ও।জানলা দিয়ে দেখতে পেল,দু’জন ডাকাত হাতে বন্দুক নিয়ে বাসে উঠে পড়েছে।ওরা সবাইকে শাসাচ্ছে।একজন দরজার কাছে।আর একজন একটু ভেতরে।রাশেদ দেখতে পেল এক অকল্পনীয় দৃশ্য।একজন ডাকাত তাদের বান্ধবী চৈতির হাত ধরে টানাটানি করছে আর অপরজন বন্দুকদিয়ে সবাইকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে।ওর সারা শরীরে যেন আগুনে জ্বলে উঠল।কিন্তু এখন উত্তেজিত হবার সময় নয়। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।



ওরা যে পাত্রে পানি গরম করছিল, লুকিয়ে লুকিয়ে সে পাত্রটির কাছে গেল রাশেদ। পানি এখনও গরম আছে। বেশ ভালই গরম আছে।মানুষের চামড়া পুড়ে যাবার জন্য যথেষ্ট।



শরীরের সোয়েটারটাকে খুলে ন্যাকড়ির মত করে হাতের সাথে পেঁচিয়ে গরম পানির পাত্রটি তুলে নিল রাশেদ।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল বাসের দরজার দিকে।



দরজার কাছে পৌঁছতেই দরজার আগের জানালা দিয়ে রাশেদের সাথে চোখাচুখি হল মেহেদীর।ওরা চোখে চোখে কথা বলে নিল খুব অল্প সময়ের মধ্যে।রাশেদ দরজার একদম কাছাকাছি নিজেকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে রইল।



মেহেদী পকেট থেকে কলম বের করে দ্রুত ছুড়ে মারল দরজার দিকে, যেন কেউ বুঝতে না পারে আসলে কি ছুড়ে মারা হল।

‘এই তুই কি ছুড়ে মারলি’, বলে পেছনের জন(মাফিয়া ডাকু)পেছন ফিরে তাকালো।



সাথে সাথে রাশেদ পাত্রের গরম পানিগুলো ঢেলে দিল ওর চোখে-মুখে।যন্ত্রনায় কুকিয়ে উঠল ও।বাবাগো মাগো বলে মুখে হাত দিয়ে পড়ে গেল।



একটি ফাঁকা গুলি ছুড়ল কালাচাঁদ ডাকু।কিন্তু ওতে ভয় পাওয়ার সময় এটা নয়।রাফি,মেহেদী,বর্ষণ-সবাই মিলে ততক্ষণে চেপে ধরেছে ওকে।যে যেভাবে পারছে,চর-কিল-থাপ্পর বসিয়ে দিচ্ছে ওর চোখে-মুখে।



দুই ডাকাতকে ওরা মারতে মারতে প্রায় আধমরা করে ফেলল।



কারোরই আর বুঝতে বাকি রইলনা যে অনি, আরিফ, তমাল- ওরা বিপদে পড়েছে।আশেপাশে নিশ্চই আরও ডাকাত আছে।



‘পুলিশ এর নাম্বারটা তোর কাছে আছে না?’ মেহেদীকে প্রশ্ন করল রাশেদ।প্রতিউত্তর করল,‘পুলিশকে জানা,আমরা বিপদে আছি।আমাদেরকে ডাকাত আক্রমন করেছে।ওরা যেন দ্রুত চলে আসে।’



খবর পেয়ে চলে এল কালো কাপড় পড়া, লম্বা বুট পড়া বন্দুকধারী কিছু মানুষ।এরাও দেখতে ডাকাতদের মতই।একটু পড়ে বোঝা গেল,এরা আসলে র‌্যাবের একটি দল।র‌্যাব দলকে সাথে দিয়ে রাশেদ,মেহেদী,বর্ষণ এগিয়ে গেল আঁধারঘেরা জঙ্গলের দিকে।



কালাচাঁদ আর মাফিয়া ডাকুকে আটক করা হল। র‌্যাবের দু’জন সদস্যসহ বাকিরা রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে লাগল।











ততক্ষণে অনির হাতের বাঁধন খুলে গ্যাছে।অনি শরীরের সবটুকু শক্তি সঞ্চয় করছে লড়াই করার জন্য।



টুম্পাকে আরেকটু কাজে লাগাতে চাইল অনি।অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।অনি ফিসফিসিয়ে বলল,‘টু্ম্পা,তুমি চুপ করে,পায়ের শব্দ না করে,ধীরে ধীরে রাস্তার দিকে হেটে যাও।ওখানে দেখবে একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে।ওখানে যাদেরকে দেখবে,ওদেরকে বলবে যে আমরা বিপদে পড়েছি।তবে সাবধান,ওখানে কিন্তু দু’জন ডাকাতও আছে।ওদের হাতে ধরা পড়া যাবেনা। কেমন?’



আদেশ পালন করতে চলে গেল টুম্পা।ওর যেন কোন ভয়ই নেই।



কিন্তু বিধি বাম।একটু পরেই টুম্পার একটা আর্তচিৎকার শোনা গেল।বোধহয় কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়েছে বা আঘাত পেয়েছে মেয়েটি।



তেড়ে এল কালাচাঁদ ডাকু।আহত টুম্পার চুলের মুঠি ধুরে টানতে লাগল।একেবারে পিষাচের মত বাচ্চা মেয়েটির দু’গালে সজোরে থাপ্পর মারল।টুম্পার গাল ফেটে ঠোঁট দিয়ে তখন রক্ত ঝরছে।



সহ্য করা দায় হয়ে পড়ল অনির জন্য।ওর জন্যই তো বাচ্চা মেয়েটাকে মার খেতে হল।এও কি সহ্য করা যায়?



অনি ঝাপিয়ে পড়ল ডাকাত সর্দারের উপর।শিবরাম ডাকুর চোখে-মুখে যেভাবে পারা যায় ঘুষি মেরে চলল ও।সামলিয়ে উঠল শিবরাম।অনির তলপেটে সজোরে একটা আঘাত করল। অনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

একটা সরু বন্দুকের নল এগিয়ে এল অনির মাথার কাছে।বন্দুকের ওপাশে শিবরাম ডাকু।বলল,‘তোকে আর বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।তুই হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছিস।বাচ্চাটাকে দিয়ে খবর পাঠাচ্ছিলি।তুই ভয়ানক।তোকে আর বাচ্চাটাকে আমি আর পৃথিবীতে থাকতে দেবনা।’

অনি দেখতে পেল,শিবরাম ট্রিগার চাপতে যাচ্ছে।



অনি চোখ বন্ধ করল।জীবনের শেষ মুহূর্তটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে।



কিন্তু শিবরাম ট্রিগার চাপছে না কেন?আবার চোখ মেলল অনি।মরার আগে মরে যাওয়া ঠিক হবেনা, সেটা ভালই বোঝে ও।



বুটের খসখসে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।একটি গুলি ছোড়া হল।ওপাশের অন্ধকার থেকে কারা যেন গুলি ছুড়ছে।



শিবরাম ডাকুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গ্যাছে ততক্ষণে।



অনি টুম্পাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে আড়ালে চলে এল।

গোলাগুলি শুরু হয়ে গেল।ভয়ানক শব্দ।টিভি-সিনেমা ছাড়া ওরা কেউই কখনও এমন দৃশ্য দেখেনি।



পেছন থেকে কে যেন একটি হাত কাঁধে রাখল অনির।পেছন ফিরে তাকাল ও।রাশেদ।ওটা রাশেদের হাত।অনির মনে হল, বহুযুগ পর কোন বন্ধুর হাতের ছোঁয়া পেল ও।



প্রচন্ড শব্দে গোলাগুলি চলছে।কে কাকে গুলি করছে কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা।হঠাৎ অনির মনে পড়ল তমাল ও আরিফের কথা। ওরা তো এখনও বাঁধা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে আছে।ওদের গায়ে যদি গুলি লাগে?ওদেরকে আনা দরকার।কিন্তু কিভাবে।এগুলেই গায়ে গুলি লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।কিন্তু এখন জীবন-মৃত্যু নিয়ে চিন্তার সময় নেই। ওরা তো জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝিই রয়েছে।



এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল অনি।অনির শার্ট টেনে ধরল একজোড়া ছোট্ট হাত।টুম্পা।বলল,‘তুমি যেও না।তুমি বড় মানুষ।তোমার গুলি লাগবে।’



‘কিন্তু ওদেরকে তো বাঁচাতে হবে টুম্পা’ বলল অনি।



‘ওরা বাঁচবে।কিন্তু তুমি যাবেনা।’ টুম্পা বলল।



অনি রেগে উঠল, ‘তাহলে কে যাবে, বল?’



টুম্পার শান্ত প্রতউত্তর, ‘আমি যাব।আমি তো ছোট মানুষ।আমার গায়ে গুলি লাগবে না। তোমার হাতের দড়ি যেভাবে কাটলাম,সেভাবেই তো ওদেরটাও কাটতে হবে, তাই না?সে আমি পারব।আর আমি যে পারব,সেটা তো তুমি জান,কি, জান না?’



‘না টুম্পা,তুমি যাবেনা।তুমি ছোট মানুষ। তুমি পারবে না’, অনি বলে উঠল।



‘তুমি এখানে চুপটি করে বসে থাক। আমি আসছি’, বলে টুম্পা হাতে সেই কাচিটি নিয়ে গুটিগুটি পায়ে মাথা হেলিয়ে এগিয়ে চলল।নির্বাক হয়ে বসে রইল অনি।



মুহূর্তেই অন্ধকারে মিলিযে গেল ও।



এদিকে গোলাগুলির শব্দ ভয়ানক রকম বেড়ে গ্যাছে।



কিছুক্ষণ পর ডাকাত সর্দারের আর্তনাদ শোনা গেল।ওর গায়ে বোধহয় গুলি লেগেছে।



র‌্যাব সদস্যরা ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে লাগল।চারজন ডাকাতই আহত।ওদেরকে আটক করা হল।একজন র‌্যাব সদস্যও আহত।তাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার।



তমাল হাঁপাতে হাঁপাতে এল অনির কাছে।তমাল বলতে লাগল,‘ওই বাচ্চামেয়েটা এসে আমাদের বাঁচিয়ে দিল।আমাদের হাতের দড়ি কেটে দিল।আমরা তখন চোখ বন্ধ করে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলাম।’



পেছন পেছন এগিয়ে এল আরিফ।ওর কোলে রক্তাক্ত টু্ম্পা শুয়ে আছে।আরিফ বলতে লাগল,‘আমাদের হাতের বাঁধন কেটে দেবার পর একটি গুলি এসে ওর শরীরে লাগে।ঠিক কোথায় লাগে জানিনা।বেঁচে আছে কি না, তাও জানিনা।’,কথা শেষ করে হু হু করে কাঁদতে লাগল আরিফ।

আকাশ-মাটি সব একাকার হয়ে যেতে লাগল অনির।ওর জন্যেই তো মেয়েটা বারবার বিপদে পড়েছে।মার খেয়েছে।রক্তও ঝরিয়েছে।না, জীবনের মূল্য জীবন দিয়েই দেয়া দরকার।যে করেই হোক,টুম্পাকে বাঁচাতে হবে।





নতুন সকাল



রাত তখন প্রায় শেষের দিকে।



টপটপ করে কুয়াশা পড়ছে। পাতায় পাতায় শিশিরবিন্দু মুক্তার মত আটকে আছে।সাদাটে ভাব চলে এসেছে প্রকৃতিতে।



র‌্যাব সদস্যদের সহযোগিতায় দ্রুত একটি ক্লিনিকে নেওয়া হল টুম্পাকে।



ও অচেতন হয়ে পড়ে আছে।শীতের ভোরে কোন ডাক্তার পাওয়া যাবার কথা নয়।কিন্তু র‌্যাব সদস্যরা ছিল বলে রক্ষা।ওরাই ডাক্তার জোগাড় করল।

ডাক্তার জানালো রক্ত লাগবে। ও পজেটিভ।



এগিয়ে এল রাশেদ।রক্ত দিল।



ডাকাতদেরকে অনেক আগেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।



চিন্তিত,উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে সবাই।অনেক কষ্টে চোখের জল চেপে রাখছে অনি।র‌্যাবদল এসে সবাইকে ধন্যবাদ জানালো।বলল,‘আপনাদের জন্যই এ কুখ্যাত ডাকাতদলটিকে আজ ধরতে পারলাম। আপনারা সত্যিই অনেক সাহসী ও বুদ্ধিমান।আপনাদের মত সাহসী-বুদ্ধিমান যুবক থাকলে এ দেশের সব অপরাধীদের আমরা ধরে ফেলতে পারব…’।





ধীরে ধীরে চারপাশ আরও ফর্সা হতে শুরু করল।ভোর হয়ে গেল।



ডাক্তার জানাল,টুম্পা চোখ খুলেছে।ওর শরীর থেকে গুলি বের করে নেওয়া হয়েছে।



ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সবাই।টুম্পার সামনে অপরাধীর মত দাঁড়াল অনি।



সূর্যের মত হেসে উঠল টুম্পা।বলল,‘তোমার কি আমার জন্য খারাপ লাগছে?’



অনির এতক্ষণ ধরে চেপে রাখা চোখের জল এবার ঝর্ণার মত বইতে লাগল।



টুম্পা আবার বলতে শুরু করল,‘তুমি জান,আমার শরীরে গুলি লেগে কত ভাল হয়েছে?আমি যখন চোখ বন্ধ করে ছিলাম,তখন আমার বাবা আমার কাছে এসেছিল।আমাকে আদর করেছিল।আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল……’ বলতে বলতে টুম্পার চোখে জল চলে এল।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল ও।



চোখ চেপে ধরে বাইরে চলে এল অনি।চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা।সকাল হয়ে গ্যাছে।



পেছন পেছন ধীর পায়ে এগিয়ে এল আরিফ ও তমাল।অনির কাঁধে হাত রেখে বলল,‘বন্ধু,আমাদের দিকে তাকা।তোকে কথা দিচ্ছি, আমরা আর কখনও নেশা করব না।’



অনি ফিরে তাকাল,‘সত্যিই তোরা আর কোনদিন নেশা করবি না?’

‘না বন্ধু,করব না।’



ওদের সাথে এসে যোগ দিল রাশেদও।আমাকে বাদ দিস্ না।ওদের সাথে আমিও আছি।



তিনজনকে একসাথে বুকে চেপে ধরল অনি।

‘নতুন সকালের নতুন শপথটার কথা কোনদিন যেন ভুলে যাবি না,কেমন?’





ওরা চারজন একসাথে,এক হয়ে জড়াজড়ি করে আছে।চোখের পাতা ভিজে গ্যাছে সবারই। ভিজুক না।চোখের জল যদি শান্তি আনে,তবে সে জল অনন্তকাল ধরে ঝরতে থাকুক,ক্ষতি নেই।



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:০৩

অশুভ বলেছেন: ভালই লাগল পুরো গল্পটা। রাশেদরে আমিতো চিনি, ঐ পোলা নেশা ছাড়বে না। শপথ-টপথ করে কোনো লাভ নেই। :)
তমাল আর আরিফের ব্যাপারটা ভাল করে জানি না।
ভালো থাকিস। আর বেশি বেশি কোরে লিখবি। তোর লেখা অনেক সুন্দর হয়।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১০

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: হা হা ভাইয়আ, মনে হয় ঠিকই বলেছেন রাশেদের ব্যাপারে। তবে গল্পের খাতিরে লিখতে হল আর কি।
অনুপ্রেরণার জন্য ধন্যবাদ।
ক্যাম্পাসে এলে অবশ্যই দেখা হবে...।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা রইল।।

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

অশুভ বলেছেন: কিরে আর কোনো লেখা নাই কেন? পিকনিক নিয়া ব্যাস্ত নাকি খুব?

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫০

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: না ভাই। আসলে শরীরটা বিশেষ ভাল ছিল না। আর দেশে তো অঘোষিত ছুটি(হরতাল) লেগেই আছে। তাই এতদিন বাসায় ছিলাম। বাসায় পিসি নেই। তাই লিখে উঠতে পারিনি।

৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩৩

ডেনজারাসবয় বলেছেন: মদ্ধরাতের গল্প মদ্ধরাতেই পড়ব ।

৫| ০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪

ডেনজারাসবয় বলেছেন: পোষ্ট পর্যবেক্ষণে থাকল

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০০

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ডেনজারাসবয়।

কিন্তু গল্পটা ক্যামন লাগল সেটা তো বললেন না ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.