![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝরাতে ঘুম না এলে সিগারেটগুলো শুধু শুধু্ই পুড়তে থাকে একের পর এক।
মন বিক্ষিপ্ত থাকে। মনে হয়, সারা জীবন বোধহয় এই অবস্থা আর কাটবে না।
আজ টুনির একুশ বছর বয়স। আমি ওর থেকে বছর দুয়েক এর বড়।
পাশের ঘরে ও ঘুমোচ্ছে।ওর ঘুমোনোর ভঙ্গিমাটা বেশ অদ্ভুত। ঘুমোয় চোখের প্রায় ৫০ শতাংশ খোলা রেখে।যদিও এখন আর তা বোঝা যায় না।
ছোটবেলা ও ঘুমোলে আমি মাথা নামিয়ে ওর তাকিয়ে থাকা ঘুমন্ত অংশটুকু অপার বিস্ময়ে দেখতাম। দেখতে দেখতে একবার ওর চোখের পাতা আলগোছে স্পর্শ করতে গিয়ে ওকে আঘাত দিয়ে ফেললাম। ঘুম থেকে ভূত দেখার মত করে উঠে সর্বশক্তিতে ও চিৎকার করতে লাগল।রান্নাঘর থেকে বটি নামিয়ে রেখে মা’র আসতে মিনিট খানেক সময় লাগল।ততক্ষণে আমি ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
তখন টুনির বয়স ছিল সাত। আমার নয়।
ছেলে হিসেবে ডানপিটে হওয়া আমার যেন উত্তরাধীকার। প্রায়ই হারিয়ে যেতাম পথে-ঘাটে। হারিয়ে গেলে আবার বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল হতাম না। সত্যি বলতে বাড়ি ফেরার কোন প্রয়োজনীয়তাও বোধ করতাম না।যেখানে হারিয়ে যেতাম সেখানে মাঠে-ঘাটে আমার বয়েসীদের খেলা দেখতাম। কোন উদোম দরিদ্র বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে সে বাড়ির গৃহিণীর রান্না করা দেখতাম।মা’র কথা মনে পড়ত ঠিক তখন। কিন্তু দৌড় দিয়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে করত না।
বিকেল গড়িয়ে যেত।ছেলে-মেয়েরা বাড়ি ফিরে হাত-পা ধুতো। কয়েকটি চটি অ-আ এর ব্ই নিয়ে পড়তে বসত।
আমি বাড়ির পথে পা বাড়াতাম। সারাদিন না খেলেও ক্ষুধা লাগত না।
কাল টুনিকে খুব করে বকেছি।খাবার দিতে একটু দেরী করেছিল বলে। কেন এমনটা করলাম, তার কোন উত্তর আমার কাছে নেই। অথবা উত্তর দেবার মত পর্যাপ্ত সাহস নেই।
২
বাবা মারা গেলেন, আমার তখন তেরো বছর বয়স। টুনির এগারো।
মা খুব কেঁদেছিলেন, আমার তা খুব ভালো করে মনে আছে। মানুষ মরে গেলে কাছের মানুষদের কান্না-আহাজারির দুটো পর্ব থাকে। একটি হল মায়া-মমতা। আরেকটি স্বার্থ।যেমন মা, বাবা মারা যাওয়ার কতইনা কাঁদলেন। সেই কান্নাকে যদি দু্ই ভাগে ভাগ করা যায়, তার একটি ভাগে পড়বে ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। এতটা দিন একসাথে নিজেদের জড়িয়ে থাকার ভালোবাসা।আরেকটি পর্ব হল দুশ্চিন্তা যা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। মানে, স্বামী মরে গেল, এখন দুটো বাচ্চা নিয়ে মা কি করবেন, কিভাবে বাঁচবেন, সেই দুশ্চিন্তার কান্না।পর্ব দুটি খুব গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে বলে এদেরকে বিশ্লিষ্ট করা যায় না। প্রয়োজনও নেই বোধহয়।
মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। সারাদিন ঘাম ঝরিয়ে সামান্য কিছু টাকা পেতেন। আমরা কোনরাতে ভাত খেতাম। কোনরাতে মুড়ি-তেল।কোনরাতে কিছু্ই না।
আমার পড়াশোনায় মন ছিল না। বিকেলে ছেলেরা মাঠে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলত। তার জন্য সক্কালে উঠে নাটাইয়ের সুতা দু্ই গাছের সাথে বেঁধে ভাতের মার লাগাতাম সুতোয় ধার দেবার জন্য। মা আমাকে ডেকেও পেতেন না।
টুনি আবার পড়াশোনা করতে ভালোবাসে।গ্রামের স্কুলের পড়াশোনা ভালো না। তবুও ও যখন ফার্স্ট হয়ে দৌড়িয়ে আসত,মা’র চোখমুখ আনন্দে ভরে যেত। আমি দূর থেকে দেখতাম। কাছে গেলে পিঠে দু ঘা পড়ার সম্ভাবনা ছিল ব্যাপক।
৩
সেবার শীত খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছিল। আমার বয়স তখন সতের। টুনির পনের।
পড়ন্ত বেলার বাড়ি ফিরে দেখি, গোল কি যেন একটার উপর একটা লাল কাপড় জড়িয়ে টুনি সু্ইয়ে সাদা সুতা ভরিয়ে কি চমৎকার ঘর তুলেছে।এ কাজ ও শিখল কি করে?
আমার একটা সাদা শার্টের উপর ও কালো সুতোয় লিখে দিল ‘ভাইয়া’। আমার পছন্দের শার্টে সুঁচ-সুতো চালানোর জন্য আমি ওকে বেশ বকলাম।দেখলাম মুখ নামিয়ে ও কাঁদছে।চোখের জল যেন দেখা না যায় তার সবটুকু চেষ্টা করছে।
পরদিন আমি সেই শার্ট পড়ে যখন বের হলাম, ওর আনন্দ আর দেখে কে।
৪
মায়ের শরীর দিনদিন ভেঙ্গে পড়ছিল।ছোটখাট একটা কাজ জুটিয়েছিলাম আমি।
টুনির বিয়ের প্রস্তাব আসছিল। এর আগে একটি এসেছে। এটি দু্ই নম্বর।প্রথম ছেলেটির ঘর ভালো ছিলনা বলে মা’র সম্মতি ছিল না। আমি বললাম, গরীবের মেয়ে, ঘরের আবার ভালো-খারাপের কি আছে? একখানে বিয়ে দিয়ে দিলেই হল।ঘরে গিয়ে দেখলাম, আমার কথা শুনে টুনি মিহি স্বরে কাঁদছে। আমার গোটা শরীর শিউরে উঠল, কিন্তু ওর মাথায় একবারও হাত রেখে সান্তনা দিলাম না।ভাই হিসেব আমি ওকে বোধহয় কখনও্ই ভালোবাসতে পারিনি।এমন ভাইএর ছোটবোন হয়ে জন্মানোও পাপ।আমি তাই ওকে ভালোবাসতাম না। ও নিঃসন্দেহে পাপী ছিল। না হলে কেন ও আমার বোন হয়ে জন্মালো।আমার ভালোবাসা নিশ্চই কোন পাপীর জন্য নয়।
কিন্তু টুনির বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়া দরকার। সেদিন এক সরু রাস্তার গলিতে টুনিকে দেখলাম লম্বা মত একটা ছেলের সাথে হেসে-হেসে ঢুলে-ঢুলে কথা বলছে।আমার খুব রাগ হয়েছিল। ইচ্ছে করছিল ওর দু্ই গালে দুটো চর বসিয়ে দিই।মনে ভেবেছিলাম, বাসায় গিয়ে মা’কে সব বলে দিই।কিন্তু এর কোনটিই করতে পারলাম না।এই আমার দোষ।মনে যেটা চাই, সেটা কখনওই করতে পারি না।
পাশের পাড়ার মর্জিনা আমাকে খুব ভালোবাসত।ও একদিন এসে বলল, চলো, আমরা পালিয়ে যাই।
দেখতে দেখতে আমিও মর্জিনাকে ভালোবাসতে শুরু করলাম। তবে মনে মনে। মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলার মত সাহস আমার কোনকালেই ছিল না। আমার ভালোবাসার কথা জানাতে সাহসের দরকার ছিল খুব্ই কম। কারণ মেয়েটি চাইতো যে আমি ওকে ভালোবাসার কথা বলি।আমি সেটুকুও করে উঠতে পারিনি।
এক বৈশাখে মর্জিনার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দুদিন আগে ও আমার কাছে এসেছিল, বলেছিল, চালো, আমরা পালিয়ে যাই।
আমি যাইনি। পালিয়ে বিয়ে করা কি কোন ভদ্রছেলের কাজ?
৫
টুনির বিয়ের পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল।টুনি বিয়ে করতে চায়নি। ও বলেছিল ও লেখাপড়া করতে চায়। আমি ওকে ধমক দিয়েছিলাম, গরীবের আবার লেখাপড়া!
আমার বয়স তখন উনিশ,টুনির সতের।
ভাদ্র মাসে বিয়ের আয়োজন চুড়ান্ত হল।প্রচুর গরম পড়েছিল সে বছর।
বউ সেজে টুনিকে বেশ লাগছিল।আমার দুচোখ এলোমেলো। এ কে? এ কি সত্যিই আমার বোন টুনি?
আমার ছোট্ট বোন আমার চোখের সামনে থাকতে থাকতেই কবে যে খুকি থেকে নারী হয়ে উঠেছে, তা বোঝার মত অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা আমার নেই। আমার মনে হয় পৃথিবীর কোন ভাইয়েরই এ ক্ষমতা নেই। আমার দোষ দিয়ে লাভ কি?
বিয়েতে দেনা-পাওনা নিয়ে ঝামেলা হল।যৌতুকের টাকা মেটাতে মা তার হাতের বালা বিক্রি করে দিল। সবগুলো উৎস থেকে অর্থ সঞ্চয় করে মা ঘরের আলমারিতে রেখে দিয়েছিলেন। বিয়ের মাত্র দুদিন আগের কথা।মাঝরাতে সে টাকা চুরি গেল।
এতগুলো টাকা একসাথে দেখে লোভ সামলাতে পারিনি।মাঝরাতে উঠে খুব সাবধানে পা টিপে টিপে মা’র ঘরে গেলাম।মা’র আঁচল থেকে আলমারির চাবি খুলতে হবে।কিন্তু মা’র আঁচলে হাত দিতেই মা’র শাড়ির গন্ধ আমার নাকে এলো।মা’র শাড়ির গন্ধ বড়ই মায়াজাগানিয়া।এ গন্ধ সবসময়ই মনকে ভালো করে দেয়।খারাপ কাজ করতে দেয় না।
কিন্তু আমি তখন অনেক বেশি খারাপ।এতটা খারাপ সন্তানকে ভালো করার ক্ষমতা মা’র অসহায় আঁচলের মায়াজাগানো গন্ধের নেই।
আমি যেখানে কাজ করতাম সেখানে কিছু টাকার দরকার ছিল।সেখানে টাকা দিতে পারলে আমি বড় একটা কাজ পেতাম।সেটা পেলে বোনের বিয়ের টাকা দ্বিগুন করে ফেরত দেয়া অসম্ভব ছিল না।তাই হাতিয়ে নিলাম টাকাগুলো। না হয় বোনের বিয়ে একবছর পর হবে। আমি নিজে ওর বিয়ে দেব।
টুনির শ্বশুর খুব ভালো মানুষ। টাকা চুরি গেছে জেনেও তিনি বিচলিত হলেন না। তবে বেশ রাগ করলেন। কিন্তু বিয়ে আটকালেন না।
তবে টুনির বরটা ছিল সাক্ষাত্ জানোয়ার।কালো লোমশ চেহারা।লোভী দু’টো চোখ। দেখলেই বোঝা যায় এর অনেক মেয়ের সাথে ঘোরাফেরা আছে।অবশ্য এ্ই স্বাভাবিক। গরীব ঘরের মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো ছেলে আর কোথায়ই বা পাওয়া যায়?
৬
যে টাকাগুলো আমি চুরি করেছিলাম, সেগুলো বেহাত হল।মকবুল কুত্তার বাচ্চা আমার টাকাগুলো নিয়ে চম্পট মারল।আমি আর ওকে খুঁজে পেলাম না।
প্রায় মাস খানেক হল টুনির বিয়ে হয়ে গেছে। কথা ছিল, ছয় মাসের মধ্যে যৌতুকের সব টাকা শোধ করতে হবে। কিন্তু যা অবস্থা, মনে হয় না তা সম্ভব হবে।
এর মাঝে একবার আমি টুনিকে দেখতে গিয়েছিলাম। ওর ডানগালে গভীর ক্ষত দেখলাম। জিজ্ঞেস করব না করব না করেও জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, টুনি, গালে কিভাবে কাটা গেল? টুনি কিছু না বলে ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে পাশের ঘরে চলে গেল।ওর চোখের জল আমি দেখতে পেলাম না।
মুখে কিছু না বললেও আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম।গরীবের মেয়ে, বিয়েতে যৌতুক দেয়া হয় নি, সেই মেয়ের গালে যদি কোন ক্ষত দেখা যায়, তার কিইবা কারণ হতে পারে। হয়ত ওর বর ওকে মেরেছে। হয়ত হাত দিয়ে, অথবা কোন লাঠি দিয়ে, অথবা খন্তি দিয়ে, অথবা……।
কিন্তু মারলে তো শরীরের আরও অনেক জায়গাতেই মারার কথা।অত্যাচার চাইলেই হাজারভাবে করা যায়। কিন্তু হাজারভাবে ভালোবাসা অনেক কঠিন কাজ।
আমার শরীর-মন খুব ভয়ঙ্করভাবে শিউরে উঠল। আমি আর বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না।উঠে চলে আসার সময় দেখি আমার শরীর অসম্ভব রকম ভারী হয়ে উঠেছে। পা চলছে না। বন্ বন্ করে মাথা ঘুরছে।টলতে টলতে বাসায় ফিরে এলাম। টুনি ওর স্বামীর হাতে মার খায়, টুনির ডান গালে একটি গভীর ভয়ঙ্কর ক্ষত- এসবের কিছু্ই মাকে বলতে পারলাম না।মা কে সবকিছু বলতে হয় না, সন্তানের মুখ দেখে মা মনের খবর ঠিকই বুঝতে পারেন।
আমি শুধু পরের দুদিন কিছু খেতে পারলাম না।বোনের জন্য এত ভালোবাসাবোধ আগে আমার কখনওই হয়নি।তুলতুলে পুতুলের মত আামার বোনকে এভাবে কেউ মারতে পারে, এ আমার ভাবনা-চিন্তার বাহিরে।
আজকাল অনেক আইন হয়েছে।নারী নির্যাতনের আইনগুলো নাকি খুব কড়া। একবার কেস্ ঠুকে দিলেই ব্যাস্, কাজ শেষ। কিন্তু ওতে কি হবে। আমার বোনের সংসারটা ভেঙ্গে যাবে। সংসার ভাঙলে ও আবার আমাদের ঘরে আসবে।খরচ বাড়বে।লোকে নানা কথা বলবে। অনেক ঝামেলা।
তার চেয়ে থাক। ও একটু আধটু মার খেয়ে সংসার করতে থাকুক। আমি ওর বিয়ের যৌতুকের টাকাটা যোগাড় করার চেষ্টা করি।টাকাটা হাতে পেলে নিশ্চই আমার বোনকে ওরা আর মারবে না।
৭
এক বছর পেরিয়ে গেল।এক ভাদ্র গিয়ে আরেক ভাদ্র আসল।ভ্যাপসা গরমে ভেসে যাচ্ছে চারদিক।
দিনটা ছিল সুনসান।সকাল থেকেই অশুভ কিছু যেন ডেকে উঠছিল।
খবর পেলাম, টুনি হাসপাতালে।বিয়ের এক বছর পর টুনি হাসপাতালে, নিশ্চই ওর বাচ্চা হবে। বাহ্, কি মজা!
মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।টুনির শ্বশুরবাড়ির কাউকেই পেলাম না।প্রতিবেশী দুজন লোককে দেখলাম।
টুনির বর টুনির চোখে প্রচন্ড রকম ভাবে আঘাত করেছে। বোধহয় টুনির চোখদুটো নষ্ট হয়ে যাবে।পাড়ার লোকজন চিৎকার শুনে টুনিকে উদ্ধার করে। তখন ও বাড়িতে কেউ ছিল না। শুধু রক্তাক্ত টুনি জান্তব চিৎকারে চারপাশ কাঁপিয়ে তুলছিল।
টুনির অসাড় হাতদুটো ধরলাম।ওর সাদা নখে রঙচটা নেইলপালিশ লেপ্টে আছে।
টুনির জ্ঞান ফিরল অনেক পর।জ্ঞান ফিরেই আবার ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।মা সারাটাক্ষণ ওর মাথার কাছে বসে রইল।মা কাঁদে নি- আমি অবাক হলাম। সত্যিই মা’র চোখ শুকনো।মা সত্যিই কাঁদছে না। একেবারেই কাঁদছে না।
নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা দরকার।নির্যাতনের শিকার হবার পর এটা একটা রুটিন কাজ।
পুলিশ বলল, মামলা চালাতে পারবেন তো? এমনিতে কোন খরচই নাই। কিন্তু বাবুদেরকে কিছু না দিলে মামলা এগুবে না।যাক আপাতত হাজার দশেক টাকা………।
ডাক্তার বলেছে টুনির চোখ ভালো করে তোলা সম্ভব। তবে প্রচুর টাকা লাগবে।টাকার পরিমাণ শুনে আমি আধা মিনিট স্বপ্ন দেখেছিলাম তাকিয়ে তাকিয়ে।ডাক্তার আমার অবস্থা বুঝে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
৮
আজ টুনি অন্ধ।
ও চোখে দেখতে পারেনা তো কি হয়েছে, ওর মনের জ্যোতি অসম্ভব রকম উজ্জ্বল। ও ঘরের কাজে একটু একটু করে হাত লাগাতেও শুরু করল।
আমি ওকে সবসময় হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করি।আবার মাঝে মধ্যে বকা-ঝকাও করি। মা সমসময় ওকে সঙ্গ দেয়।
আমি আমার ব্যবসাটা বেশ জমিয়ে শুরু করেছি।
টুনি চোখে সবসময়ই কালে চশমা পড়ে থাকে।আমি কখনও সাহস করে ওর চোখজোড়া দেখার চেষ্টা করিনি।
টুনি ঘুমিয়ে আছে।চোখের কালো চশমাটা খোলে নি এখনও।আমি পা টিপেটিপে ওর কাছে গেলাম। চশমাটা সরিয়ে ওর ক্ষত-বিক্ষত চোখজোড়া দেখলাম দুচোখ ভরে।
টুনি আগে প্রায় তাকিয়ে তাকিয়েই ঘুমোতো। এখন আর তা বোঝা যায় না।
আমি ওকে আদর করার জন্য হাত বাড়ালাম।থেমে গেলাম মাঝপথে।ওকে স্পর্শ করার অধিকার কি আমার আছে?আমার জন্যই কি ওর এ পরিণতি নয়? সেদিন যদি আমি টাকাগুলো চুরি না করতাম, আজ হয়ত রঙ্গিন শাড়ি পরা বোন আমার সামনে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হাসত।
হঠাৎই আমার হাতদুটো জড়িয়ে ধরল টুনি।স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠল, ভাইয়া, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো, আজ জানলে তো?
আমি কিছু বলতে পারলাম না, আমার চোখের জল আমাদের দুজোড়া হাতকে ভিজিয়ে দিল।চোখ মুছে দেখলাম, মা দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে।আমি তাকানো মাত্র সে চোখের জল মুছল ।।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: খুব বেশি কষ্ট পেলেন বোধহয় ।
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
ভালো লাগলো .....
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০২
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৫
বোকা ছেলে ৯৮৯ বলেছেন: এই গল্পের ভাই টাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
দারুন লিখেছেন। ভালো লাগলো পড়ে।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: খারাপ বলেননি। এমন ভাই না থাকাই ভালো।
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪১
খান সাব বলেছেন: গল্প না বাস্তব? তবে সম্পূর্নটা পরে গলাটা ধরে আসল!
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: প্রিয় খান সাহেব, এটা গল্পই। তবে 'বাস্তব নয়', সেটা বলতে পারছি না।
৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:০৭
মুহাম্মদ যিয়ান ইলাহী বলেছেন: @ লেখক,
না, এই কাহিনী তো বাংগালির চিরায়ত কাহিনী। কেবল হতাশ হলাম কোন প্রতিবাদী চরিত্র না পেয়ে।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: এটা সত্যি যে, যেহেতু এটা গল্প, তাই এতে অন্তত একটি প্রতিবাদী চরিত্র থাকা উচিত্ ছিল।
কিন্তু বাস্তবে কি খুব বেশি প্রতিবাদী চরিত্র পাওয়া যায় ?
৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩
রায়হান চৌঃ বলেছেন:
আপনার এই লিখা টা আমি বেশ ক বার পড়েছি....
এখনো মন কে কিছুতেই মানাতে পারছি না যে এটা একটা গল্প মাত্র....
যত বার ই পডেছি মন কে কিছুতে ই বেঁধে রাখতে পারিনি... পারিনি নিজেকে নিয়ন্তনে রাখতে... পারিনি থাকতে দু চোখ না ভিজিয়ে.....
খুব বাজে কাজ করেছেন......
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আমি জানি আমি খুব বাজে কাজ করেছি। কারণ, আমাকে দ্বারা কখনওই কোন ভালো কাজ হয় না।
গল্পটা বেশ ক’বার পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২
মুহাম্মদ যিয়ান ইলাহী বলেছেন: