নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে ...

পেলব চক্রবর্তী

ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম...

পেলব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেখাপড়া নিয়ে ছেলেখেলা

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৯

প্রশ্নপত্র ফাঁস- আমাদের দেশে পরীক্ষার আগের একটি সাধারণ ঘটনা। ঘটনাটি একই সাথে রোমাঞ্চকর ও কৌতূহল উদ্দীপক। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র পাবার জন্য মুখিয়ে থাকে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। শর্ত থাকে, প্রশ্ন মিলে গেলে তবেই টাকা দেবেন। সেই প্রশ্নপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। লাখ লাখ টাকায় সেসব প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়। চোখের পলকেই সেই প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে যায় মুঠোফোন থেকে মুঠোফোনে। ফেইসবুক থেকে ফেইসবুকে। ই-মেইল থেকে ই-মেইল এ।



প্রতিবছর প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে শোনা যায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার। তবে সবাই তা পায় না। অধিকাংশই পায় ভুয়া ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র। আর খুব উপরের পর্যায়ের মানুষ-জনের সন্তানরা অনেক টাকার বিনিময়ে পেয়ে যায় আরাধ্য প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে শোনা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। গত বছরেরই ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে ব্যাপক গোলোযোগ হয়ে গেল। পুণরায় সেই ইউনিটের পরীক্ষা নেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সিন্ধান্ত নেবার জন্য আদালত জাফর ইকবাল স্যার সহ অনেক বিশিষ্ট জনের মতামত নিলেন। তাঁরা অবশ্য পুণরায় ভর্তি পরীক্ষা নেবার বিপক্ষেই ছিলেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে শোনা যায় বি.সি.এস পরীক্ষার। প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে শোনা যায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার। খোঁজ নিলে হয়ত জানা যাবে, কোন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে গেছে। এভাবে, যদি মেথর-মুচি নিয়োগের কোন পরীক্ষা থাকত, আমি নিশ্চিত, সে প্রশ্নপত্রও ফাঁস হতে সময় লাগত না।



একমাত্র আশা-ভরসার জায়গা ছিল আমাদের বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়(কলেজ) পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো। এগুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার কথা শোনা যায় না (যদিও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, ১৯৭৯, ৯১, ৯৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়)। এবার আর সে বিশ্বাসটুকুও থাকল না। এবারের উচ্চামাধ্যমিক পরীক্ষার ইংরেজী দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আমাদের সে বিশ্বাসটুকুও মাটিচাপা পড়ে গেছে।



তাহলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হতে পারি, মেধার ভিত্তিতে যে স্থানগুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ পাবার কথা, সে স্থানগুলোতে প্রশ্নপত্র পেয়ে যাওয়া তথাকথিত মেধাবীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এই তথাকথিত মেধাবীরা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের প্রশাসনে, প্রতিরক্ষা খাতে, চিকিৎসা খাতে। আর সাধারণ মেধাবীরা (যারা প্রশ্নপত্র পান না) অনেক কষ্টে নিজেদের স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছেন।







গতকাল প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন পড়লাম। প্রতিবেদনটির নাম ‘মাদ্রসার উপযোগী করতে পাঠ্যবইয়ে অদ্ভুত পরিবর্তন’। প্রতিবেদনটি পড়তে গিয়ে আমি বেশক’বার আঁতকে উঠেছি। সে নিয়ে আলোচনা করার তেমন কোন ইচ্ছে আমার নেই। শুধু এটুকু না বলে পারছি না।

‘ভূত ও আছর: বিস্ময়কর হলেও সত্য, পরিমার্জন কমিটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গদ্যটির শিরোনাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। তারা ‘ভূত’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘তৈলচিত্রের আছর’ নামকরণের প্রস্তাব করে। তবে স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য সভায় জানান, কোনো লেখকের দেওয়া শিরোনাম পরিবর্তন করা যায় না। তাই এই কমিটির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়নি।’



মানুষ কতটা মাথামোটা হলে একজন এতবড় লেখকের দেয়া গল্পের নাম পাল্টিয়ে দেবার প্রস্তাব করতে পারেন তা আমার জানা নেই। আতঙ্কের ব্যাপার হল, এইসব লোকেরাই পরিমার্জন কমিটিতে আছেন। কোথায়-কতটুকু-কি পরিমার্জিত হবে, তা বুঝতে খুব বেশি অসুবিধা হবার কথা নয়। লেখাপড়ার মাধ্যম ভিন্ন হবার কারণে কেন একই দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভিন্ন মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে, তাও আমার বোধ ক্ষমতার বাহিরে।







কি কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁস করার। এর সাথে রয়েছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। বিগত বেশ কয়েক বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল দেখলে ভুরি ভুরি জি.পি.এ ৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী দেখা যায়।



একবার শুনেছিলাম, সরকার থেকে নাকি শিক্ষকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় লঘু করে খাতা দেখার জন্য। পরীক্ষার্থীদেরকে বেশি করে নাম্বার দেবার জন্য। বেশি বেশি করে পরীক্ষার্থীদেকে পাশ করানোর জন্য। তাহলে পাশের হার বাড়বে। সরকারের সুনাম হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সর্বোচ্চ ফলাফলকে মূল্যহীন করে দেবার পেছনে দায়ী কে? উত্তর বোধহয় না দিলেও চলবে।



কি শাস্তি আছে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছেন সেই সব রথী-মহারথীদের জন্য? প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় এই শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এই বিধানের পরও অসংখ্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটির তদন্ত হয়েছে। যাদের হাত দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তারা হয়ত মাঝে-মধ্যে ধরা পড়েছে। আবার ছাড়াও পেয়েছে। কিন্তু এর কল-কব্জা যাঁরা নাড়াচ্ছেন, আইন তাদের স্পর্শ করতে পারছে না। অদূর ভবিষ্যতে পারবে বলে মনেও হয় না।





তাহলে? আশাবাদী হবার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। তাই আশাবাদ শোনাতেও পারছি না। আমার মত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এখনও মেধা আর পরিশ্রমই সম্বল। কথা ছিল, সব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একমাত্র মানদন্ড হবে তাঁর মেধা ও পরিশ্রম। কথা দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। কত কথাই তো থাকে,কত কথাই তো মানুষ ভুলে যায়।



একমাত্র উপায়, দৃষ্টান্ত। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। অযোগ্য, অর্থলোলুপ, গোঁড়া মনোভাবসম্পন্ন লোকজনগুলোকে শিক্ষা কাঠামো থেকে সরিয়ে আনা।



শুভ পরিবর্তন ঘটাতে হয়ত অনেক সময় লাগে। কিন্তু শুভ পরিবর্তনের শুরু করতে বেশি সময় লাগে না। ক্ষমতাসীন কর্তা-ব্যক্তিরা যদি এগুলো একটু মন দিয়ে ভাবতেন, তবে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা নিশ্চিত থাকত। শিক্ষা কাঠামোর দশারও উন্নতি হত।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:৩৪

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
নাহিদ সাব কি পদত্যাগ করবে নাকি??


জানেন কিছু

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: না ঘূণপোকা ভাই। এমন খবর তো কানে আসে নি।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:২৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




প্রশ্ন পত্র ফাঁস সবসময়ই হতো এবং সব পরীক্ষারই। আগে সেটা আমরা হয়ত জানতামই না কিন্তু এখন এই যুগে ইন্টারনেট এর ব্যপকতা বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা প্রশ্ন ফাঁস হলে মেইলের মাধ্যেম দেশের আনাচে কানাচে মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। সেন্ট্রাল প্রেসগুলোতে যারা চাকুরী করে তাদের উপর কড়া নজরদারী রাখতে হবে।


আমার কষ্ট লাগে সেই অভিভাবকগুলোকে দেখলে যারা প্রাইমারী পড়া তার সন্তানকে কিভাবে ফাঁসকৃত প্রশ্ন দেয় ! আরে বাবা একটা কোমলমতি বাচ্চা পরিক্ষায় ভালো রেজান্ট না করলে কি এমন যাবে আসবে ! আপনার সন্তান কতটুকু জানে সেটাই বড় সে পাশ করলো কি না বা ভালো রেজাল্ট করলো কি না সেটা বড় কিছুই না। দিন দিন আমাদের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়ে নীতিবোধ হয়ে যাচ্ছি।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২০

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: হম্। অভিভাবক হবার চেয়ে অভিভাবকত্ব রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। সে কঠিন কাজটা সবাই ঠিকমত করতে পারে না।

চিন্তাশীল মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:০৪

আহাম্মেদ জুবায়ের করিম ( সৌরভ ) বলেছেন: @আমিনুর রহমান ভাই আপনি ঠিক বলছেন ।

@Pelob Chakraborti আপনার লেখাটি যে কত খানি সত্য আমি পড়ে হতাশ হইনি বরং চুপ হয়ে গেছি কারণ আমার হয় তো ইচ্ছা আছে কিন্তু সেই শক্তি নেই ।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে - আমরা আমি দোষ করলাম কোথায় ? আমাদের সময় কেন হাত খুলে নাম্বার দেয়া হল না । আমাদেরসময় আমি তো ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা দেইনি ।

সবাই তো আসা নিয়ে লেখা পড়া করে ।

কিন্তু দিন দিন যে অবস্থা হচ্ছে দুর্নীতির কাছে টাকার কাছে হার মানছে সব কিছু ।

দিন দিন বাংলাদশের প্রেক্ষাপটে লেখাপড়া মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে ।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: প্রিয় সৌরভ ভাই, একেবারেই যে ভালো কিছুই নেই তা নয়। এই ভালোগুলোকে নিয়ে এগুতে হবে। হতাশ হবার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এমন কিছু ভাবা, যার দ্বারা এ অবস্থার উন্নতি হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.