নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে ...

পেলব চক্রবর্তী

ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম...

পেলব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকরো টুকরো গল্প - ৪

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

হাঁচি



আমি জানি, এটি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে কম-বেশি মজার গল্প প্রত্যেকেরই আছে।



খুব ছোটবেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভাব ও অভাব’ নামে একটি রম্যরচনা পড়েছিলাম। ওতে কুঞ্জবিহারীবাবু শরৎ আকাশ,প্রকৃতি দেখে বিমোহিত হয়ে বশম্বদবাবুকে বলেন। বিনিময়ে বশম্বদবাবু দেন একটা উৎকট হাঁচি।এভাবে কুজ্ঞবিহারীবাবু ফুলের বাগান বা ফুলের মনমাতানো গন্ধ নিয়ে যা কিছু বলেন, তারসাথী বশম্বদবাবু বিনিময়ে আবার হাঁচি দেন। শেষের দিকে হাঁচির পরিমান এতটাই বেড়ে যায়যে, কুঞ্জবিহারীবাবু রেগে গিয়ে বশম্বদকে বের করে দেন। যাবার আগে বশম্বদবাবু বলে যান,‘শরৎকালের মাধুরী আমার নাক-চোখ দিয়ে বেরোচ্ছে।’ তারপর আবার দেন – ‘হ্যাঁচ্ছোঃ।’



আমার সাথে কারও এমন হয় নি। তবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই কবিগুরুর এই গল্পের থেকে কম যায় না। একে একে সেগুলো বলি।



পৃথিবীতে যে ক’জন লোক উৎকট মাত্রায় হাঁচি দেন, আমি বোধহয় তাদের মধ্যে একজন। একবার বন্ধুরা হাঁটছি। একটা হাঁচি দিলাম। একটু পর এক বন্ধু আমার কাছে ১০-১২ হাজার টাকা চাইল। অবাক হলাম। জানতে চাইলাম, কি করবি? উত্তর দিল, ‘একটু কানের চিকিৎসাটা করিয়ে নিতাম আর কি !’



আমার বন্ধু সম্রাট।আমরা পাশাপাশি বিছানায় ঘুমোতাম। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে দিলাম একটা হাঁচি। কে জানত, আমি যেপাশে হাঁচি দেব, ঠিক সেখানেই সম্রাট আরাম করে ওর মুখটা পেতে ঘুমোবে?



এরপর তো ইতিহাস।সম্রাট ভূত দেখার মত করে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। এরপর ও রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটালো ভয়ঙ্করভাবে(বলা যাবে না)।আমি ঘুমের ভান ধরে তখন সব শুনছি। ভুলেও বুঝতে দেয়া যাবে না, আমি জেগে আছি।



বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় শুরু থেকেই আমরা একসাথে থাকতাম। তাই আমাদের সম্পর্কটাও ছিল অন্যরকম। সেযাত্রায় হয়ত বেঁচে গিয়েছিলাম এই সম্পর্কটার কারণেই।



খারাপ লাগে, কারণ মাঝরাতে উঠে বেচারাকে অনেক করে মুখটা পরিষ্কার করতে হয়েছে। আমি ভুলে যেতে পারি, সম্রাট কখনওই এঘটনা ভুলতে পারবে না, আমি নিশ্চিত।





আর একদিনের ঘটনা।আমরা কয়েকজন বন্ধু গিয়েছি একটি সফটওয়ার ফার্মে কথা বলতে।



বেশ চমৎকার একম্যাডামের সাথে আমরা প্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলছিলাম। পাশের রুম থেকে একটা বাজে শব্দ আসছিল।বোধহয় কিছু ঠিক করা হচ্ছিল।



এমন সময় আমার এল হাঁচি। এ তো আর আটকিয়ে রাখা যায় না। খুব চেষ্টা করলাম, যেন শব্দটা খুব কম হয়। মাথায় মহাচিন্তা নিয়ে, মুখ চেপে ধরে, যতটা পারা যায় শব্দ কম করে হাঁচিটা দিয়েই দিলাম।



ভাবলাম, যাক্,ঝামেলা শেষ।



অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে আরেক বিশালদেহী ম্যাডাম পাশের রুম থেকে হেলে-দুলে আমাদের রুমে চলে এলেন। এসেজানতে চাইলেন, কিসের শব্দ হল?



আমার সাথের বন্ধুরাও আমি মনে মনে হাসছি। আমাদের সাথের চমৎকার ম্যাডামটি বরং সমস্যায় পড়ে গেলেন। কি করেবলেন যে আমি হাঁচি দিয়েছি তার শব্দ। ম্যাডাম বললেন, পাশের ঘরে ইউ.পি.এস ঠিক করছে, তারইশব্দ হল।



শুনে বিশালদেহী ম্যাডাম বিশ্বাস বোধহয় করলেন না, কিন্তু চলে গেলেন। আর ঝামেলা করলেন না।





আরেকটি গল্প। তখন আমি ঢাকায় নতুন। আমার এক দাদা আছে। নাম রবিন। ও ছোট থেকে ঢাকায় মানুষ। কাউকে পরোয়া করে না।



ওর সাথে বেড়াতে গেলাম লালবাগ কেল্লায়। লালবাগ কেল্লার সৌন্দর্য দেখে যতখানি না বিমুগ্ধ হলাম তার থেকে বেশি আশ্চর্য হলাম ঝাঁকে ঝাঁকে প্রেম করা কপোত-কপোতি দেখে। এর আগে আমি এমনটা কখনওইদেখিনি।



রবিনদা বলল, দাঁড়া,মজা দেখাচ্ছি।



একটু পর একজোড়া ছেলেমেয়েকে আমাদের দিকে ধীরে ধীরে আসতে দেখলাম। ছেলেটা একটু এগিয়ে হাঁটছিল। মেয়েটা তার একটু পেছনে। একসময় ছেলেটা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেল। যেইনা মেয়েটা আমাদের সামনে এল, রবিনদা দিল একটা হাঁচি।



সে হাঁচিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হল। যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল পৃথিবী। আশপাশের সবাই তখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ মিটমিট হাসছে। আমি শব্দ করেই হাসা শুরু করলাম। আর মেয়েটা তো তাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়েই গেল।





হাঁচি নেয়ে গল্প বলে শেষ করা যাবে না। তবে, হাঁচি কিন্তু একটি রোগ। ‘হে ফিভার’ বা অ্যালার্জিজনিত কারণেহাঁচির উদ্রেক হয়। গোটা পৃথিবীব্যাপী যে রোগগুলো খুব সহজে ছড়ায় তার মধ্যে হাঁচি অন্যতম।এ রোগ ছড়ায় বাতাসে-বাতাসে। তাই বোঝার কোন উপায় থাকে না রোগী কোন সময় আক্রান্ত হল। হাঁচি দেবার সময় ক্ষতিকর পদার্থগুলো ১০০ মাইল বা তারও বেশি বেগে বের হয়ে আসে। সেগুলোই অন্যকে আক্রান্ত করে। তাই হাঁচির সময় মুখ ঢেকে নেয়া উচিত।



হাঁচি দেবার সময় মস্তিষ্কের কিছু কোষ মরে যায়। শরীরের বেশকিছু প্র্ত্যঙ্গে কাঁপুনি ওঠে। অন্ধকার ঘর থেকে হঠাৎ আলোতে এলে অনেকের হাঁচি হয়। হাঁচিকে অবহেলা করে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকে অ্যাক্সিডেন্টও করেছেন।



সুতরাৎ, এটিকে নিয়ে যতই হাসি-ঠাট্টা করি, অবহেলা করার ফল নিশ্চই ভালো নয়। কিন্তু হাঁচিকে নিয়ে যে মজার কাহিনীগুলো হয়, তা মনে করে মনের সব কষ্টগুলোকে ভুলে থাকা যায়- এটা তো সত্যি।।









পিছলে পড়া



এ নিয়ে ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত বর্ষাকালে। এখন বর্ষাকাল। চারপাশে নিশ্চই পিছলে পড়ার ঘটনা অনেক ঘটেছে।



আসলে এটি কোন মজার ঘটনা কি না, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। কারণ, যে পিছলে পড়ে যায়, তার কাছে এটা মোটেও মজার ঘটনা নয়। বরং তার কাছে এটা ব্যথার ও অপমানের একটা ব্যাপার।



সাধারণত মানুষরাস্তা পিচ্ছিল থাকলে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পিছলে পড়ে। আর পিছলে পড়ার পর সবার আগে সেআশেপাশে দেখে নেয় যে তাকে পিছলে পড়তে আর কতজন দেখল। সেই পিছলে পড়া দেখতে যে কি আনন্দ সে আর কি করে বোঝাবো।



আমি জানি এটা ঠিক না। এটা এক ধরণের মানসিক ত্রুটি। কিন্তু হাসি পেলে আমি কি করে তা চাপিয়ে রাখি।



তবে আমি এবার যে পিছলে পড়ার গল্পটা বলব, সেটা তাড়াহুড়োর জন্য নয়। অহংকারের জন্য।



তখন উচ্চমাধ্যমিক পড়ছি। সারাদিন স্যারদের কাছেই শুধু দৌড়োদৌড়ি করতে হয়। এক স্যারের কাছে পড়ে অন্য এক স্যারের কাছে যাচ্ছি আমরা ক’জন বন্ধু। মাটির সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। সরু রাস্তার চারপাশে পানায় ভরা। আমার সামনের জন তাড়াতাড়ি হাঁটছে দেখে ওকে বললাম ধীরে হাটতে। নাহলে পিছলে পড়ার সম্ভাবনা আছে। ও শুনলই না। জোর গলায় বলতে লাগলে, আমার বাড়ির সামনে এরকম অনেক আছে।আমি কখনওই পড়ি না।



দৈবাৎ কি না জানিনা, কথাটা শেষ করার একদম সাথে সাথে ওর পা পিছলে গেল। প্রথমবার অল্প করে, উঠতে চেষ্টাকরল, পারল না বরং দ্বিতীয়বার পিছলালো, এরপর আবার অর্থাৎ তৃতীয়বার। ততক্ষণে আমরা ওকে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করছি। বেচারা কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আর আমার যে কি আনন্দ! আমি যে পেছন থেকে ওকে পিছলে পড়তে দেখেছি। আমার আনন্দ আর ধরে না।



এভাবে অনেককেই অনেকরকম উপায়ে, ভঙ্গিমায়, কৌশলে পিছলে পড়তে দেখি, আর অট্টহাস্যে ফেটে পড়ি। সবাইকে বলি,তোমরা সবাই পড়ে যাও। আমি কিন্তু কখনওই পড়ি না।



আমার অহংকার বেশিদিন টিকলো না।



এক স্যারের বাসায়পড়তে গেছি। স্যারের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।



তখন বর্ষাকাল।সন্ধ্যা হয়ে গেছে। হঠাৎ স্যার ভেতরে আসতে বললেন। আমি খরগোসের মত লাফিয়ে লাফিয়ে এগুচ্ছিলাম।ফলে যা হবার তাই হল। খুব বাজেভাবে পিছলে পড়লাম পেছন পাশে।



প্যান্টে কাদা, কোমরে ব্যথা।ব্যথায় কাঁকিয়ে যখন কষ্ট করে দাঁড়ালাম, চারদিকে তাকিয়ে দেখি সবাই হাসছে! সে যার মত করে হাসছে। কেউ দাঁত বের করে। কেউ মুখে হাত দিয়ে।



তারপর থেকে মানুষ পিছলে পড়লে আমি হাসি না। মানে মনে মনে হাসি, কিন্তু কাউকে বুঝতে দেই না।



তারপরও যদি পিছলে পড়া দেখে আমার হাসির শব্দ বের হয়েই আসে, সেটা কি আমার দোষ হবে?







দারিদ্র্য:



তখন আমি অনেকটাই ছোট। ক্লাস ফোর বা ফাইভ এ পড়ি। এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গেছি। ওখানে সমবয়সী ভাই-বোন,প্রতিবেশীদের নিয়ে বেশ ভালই দিন যাচ্ছিল।



সন্ধ্যায় খেলা শুরু করলাম লুকোচুরি। আমি, সাথে আরও একজন গিয়ে লুকোলাম বাড়ি থেকে একটু দূরের অপর একটিছোট্ট কুঁড়েঘরে। কুপির মিটমিটে আলো জ্বলছে। আশপাশটা অন্ধকার। বেশ নির্জন পরিবেশ। এখানেনিশ্চই চোর আমাদের খুঁজে পাবে না।



রাত প্রায় ন’টা বা সাড়ে ন’টা হবে তখন। ছোট্ট কুঁড়েঘরে এলেন একজন বৃদ্ধা। বয়সের ভারে পিঠ বেঁকে গেছে।সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না।



ঘরে এসে উনি আমার সাথের ছেলেটাকে বললেন, ভাই, আজ সারাদিন কিছুই জোগাড় করতে পারিনি। আজকে রাতে না খেয়ে থাকতে পারবি না?



‘পারব’- ব্যাস,শুধু এটুকু বলে ও আমাকে নিয়ে চলে গেল। বলল, চোরের মাথায় টিলো পড়েছে। চলো যাই।



আমার পা আর এগুচ্ছেনা। যে ছেলেটা আমাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল, ওটা ওরই ঘর ছিল। ছেলেটার কেউ নেই। আছে শুধুওই বৃদ্ধা দিদিমা। দিদিমা খাবার জোগাড় করতে পারলে খাবার হয়, না হলে হয়না।



প্রবল দারিদ্র্যের কথা বইয়ে পড়েছি, কিন্তু চোখের সামনে, এত কাছাকাছি থেকে কখনও দেখিনি। সেই কথাগুলো আমার কানে এখনও বাজে- ‘ভাই, আজ সারাদিন কিছুই জোগাড় করতে পারিনি। আজকে রাতে না খেয়ে থাকতে পারবি না?’



ছেলেটির কি সরল,অভিমানহীন, প্রতিবাদহীন উত্তর- ‘পারব’।



ঈশ্বর যাকে কষ্ট দেন, তাকে তা সহ্য করার শক্তিও দেন। তা না হলে ওইটুক ছেলে কি করে এভাবে বলতে পারল?



এ ঘটনা মনে পড়লেই নিজেকে অনেক সুখী বলে মনে হয়। জীবনে কখনও ভাতের কষ্টতো পাইনি। সন্ধ্যা রাতে কেউ তো কখনও এসে আমাকে বলেনি, আজ কিছুই জোগাড় হয়নি, রাতের খাওয়া নেই। এমন কিছু সহ্য করার ক্ষমতাও তাই আমার নেই। কিন্তু যাদেরকে এমন কথা শুনতে হয়, তাদের এ ক্ষমতা ঠিকই আছে।



কারও কিছু কম,কারও কিছু বেশি। পৃথিবীতে আমরা এভাবেই বেঁচে আছি।



তবে হ্যা, কষ্ট না পেলে মানুষ জীবনকে চেনে না। যে শিশু অর্থের অভাবে ভাত পায়না, ভাতের দাম তার থেকে বেশি কি আর কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

জুঁহি বলেছেন: ভালো লাগলো

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:০০

আপেক্ষিক বলেছেন: সুন্দর বলেছেন। তবে হাচি কোন রোগ নয় এটা সিম্পটম। আপনার শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোন বাধা বা কোন ধুলোবালি,কফ বা অন্যকিছু যাতে ইরিটেশন হয় সেরকম কিছু গেলে হাচি আসবে। ধন্যবাদ। আমার হাচিটাতেও বেশ শব্দ হয় :P :D

৩| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৩৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

ধন্যবাদ।

৪| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: ভাল লাগা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.