নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে ...

পেলব চক্রবর্তী

ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম...

পেলব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ কি শুধুই ভুল ?

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১১

এবারের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা আর ছেলে-মেয়েগুলোর পড়াশোনার অবস্থা নিয়ে আমার কিছু মতামত আর অভিজ্ঞতার কথা আজ একটু বেশি সাহস নিয়েই লিখছি। কথাগুলো ভালো লাগলে অবশ্যই সে ভালোলাগা সবার। কারণ, আমার চারপাশের সবাই আমাকে এসব শিখিয়েছে। আর খারাপ লাগলে বা অসত্য মনে হলে তার দায় আমার।









ভর্তি পরীক্ষার সবথেকে বড় ব্যাপার ভর্তি বানিজ্য। ফর্মের দাম বাড়িয়ে দেয়া, অনেকগুলো ইউনিট তৈরী করে একজন ছাত্র/ছাত্রীকে অনেকগুলো ফর্ম কিনতে বাধ্য করা ইত্যাদি ইত্যাদি।



ভর্তি বানিজ্যের আরেকটি অংশ প্রশ্নপত্র ফাঁস করা বা পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের বাহির থেকে ব্লুটুথ ডিভাইস বা মোবাইলের মাধ্যমে উত্তর বলে দেয়া। জড়িতরা ধরা পড়ে না, ফলে এ ব্যবসা এখন বেশ রমরমা।



একজন ছাত্র/ছাত্রীর কাছ থেকে এর বিনিময়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নেয়া হয়। পরীক্ষায় বসার আগে মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের মূল সনদপত্র প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের কাছে জমা দিতে হয়। মেধা তালিকায় নাম আসার পর নির্দিষ্ট পরিমান অর্থমূল্য শোধ করে মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের মূল সনদপত্র ফিরিয়ে নিতে হয়। এ ব্যবসাটি বর্তমানে এতটাই লাভজনক যে, যে কেউই শুধু ভর্তি পরীক্ষার এই ক’টা দিনের মধ্যেই লাখ লাখ টাকার মালিক হয়ে যেতে পারবে।









এবার বলি ছাত্র/ছাত্রীদের পড়াশোনার অবস্থার কথা। ঢাবি ভর্তিপরীক্ষার করুণ অবস্থার কথা আমরা সবাই জানি। সেখানে এবছর ক ইউনিটে পাশ করতে পেরেছে ২১.৫০% ছাত্র-ছাত্রী। খ ইউনিটের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে বলতে লজ্জা লাগে, পাশ করেছে ৯% ছাত্র/ছাত্রী। এবছর ঢাবির ইংরেজী বিভাগের ভর্তির যোগ্যতা আছে মাত্র ৩ জন ছাত্র/ছাত্রীর!



এ অবস্থার পেছনে দুটো কারণ দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, পরীক্ষার নিয়ম-কানুনে পরিবর্তন আনা। এর ফলে অনেকেই পুরোটা বুঝে ওঠার আগেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। চান্স হয়নি।



আর দ্বিতীয় কারনটি ভয়াভয়, মানতে কষ্ট হয়, মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয়না। কথাটা হল এই যে, এবারের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েদেরই তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার যোগ্যতা নেই। কিন্তু তারা প্রায় সবাই জি.পি.এ ৫ ধারী। এদের অধিকাংশই আবার ডাবল গোল্ডেন ধারী।



মোটামুটি এমন সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, আমাদের পড়াশোনার মান এখন আমাদের মুদ্রার মানের থেকেও নিচে। ১ ইউ.এস. ডলার = প্রায় ৮০ টাকা। তেমনি ইউ.এস. এ উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া ১ জন ছাত্র/ছাত্রী = বাংলাদেশের অন্তত ১০০ জন গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছাত্র/ছাত্রী!!



আমি জানি, এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষার আগের সারাটি রাত জেগে জেগে প্রশ্নপত্র দেখে দেখে উত্তর শিখে পরীক্ষায় বসেছে। কিন্তু তাদের পরিণতি যে এত ভয়াভয় হবে, এ তো ভাবতে পারিনি কখনও।









তৃতীয় ব্যাপারটি হচ্ছে রাজনৈতিক লাম্পট্য। ভর্তি পরীক্ষার সময় উশৃঙ্খ ল সদ্য রাজনীতিক বাচ্চা-কাচ্চাদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ার মত। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার সময় অন্তত একটি গন্ডোগোল হয়। এবারও হয়েছে।



সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়। নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে শুধু রাজনৈতিক কর্মীরা নয়, নেতারাও হাস্যকর রকমের কাজ-কর্ম করে থাকেন। সেগুলো দেখে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ছেলে-মেয়েগুলো তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে- এ ব্যাপারটা আমি অনেকের সাথে কথা বলে এখন নিশ্চিত। শুধু গন্য-মান্যরা যদি এটুকু বুঝতেন!



আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে এত বড়বড় মানুষজন যুক্ত থাকেন যে তাদের নাম বলাটা রীতিমত জীবনের ঝুঁকি নেয়ার মত। তাদের কথা বলতে সবাই ভয় পায়। আমি একজন সাধারণ ছাত্র, বলা বাহুল্য, আমিও ভয় পাই। সবথেকে নিরাপদ উত্তর হচ্ছে, এর সাথে কে বা কারা জড়িত, আমি তা জানি না।







মজার অভিজ্ঞতা বলি। একবার এক বন্ধুর ছোটবোন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। বন্ধু তার দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে চলে যায়। ভালো কথা, আমি তাকে মেয়েদের হলে রেখে আসলাম। সে ভর্তি পরীক্ষা দিল। ওয়েটিং লিস্টে তার নাম ছিল। কিন্তু অনেক দূরে। মেধা তালিকায় আসবে না।



একরাতে সে আমাকে ফোন দিল। মধুর স্বরে কথা বলছে সে। এক পর্যায়ে সে বলল, আমার হাতে অন্য কোন উপায় আছে কি না ভর্তি হবার জন্য। মানে, টাকা-পয়সা দিয়ে যদি…। আমি তার কথাকে আর এগুতে দিলাম না। আমি বললাম, না, এমন কোন উপায় আমার কাছে নেই, আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব হয়ও না।



বলা বাহুল্য, সে মন খুব খারাপ করে ফোন রেখে দিল। আর কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করে নি।



ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স কম। তাদের ভুল হতেই পারে। তাহলে এবার একজন বাবার ভুলের গল্প বলি। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে আমার কাছে এসেছেন, ভর্তি পরীক্ষার দিন কয়টা থাকতে। খুব ভালো কথা, নিজে বাহিরে রাত কাটিয়ে ওনাদের থাকার ব্যাবস্থা করলাম।



ভর্তি পরীক্ষায় ওনার ছেলে যখন চান্স পেল না, তখনই দেখা গেল তার আসল রূপ। তিনি আমাকে বললেন, তার ছেলে যে চান্স পাবে না, তিনি তা আগেই জানতেন, তাই তিনি টাকা-পয়সা রেডি করেই রেখেছেন। তিনি আমার কাছে বিকল্প উপায়ে ভর্তি করার পদ্ধতি জানতে চাইলেন।



আমি তাঁকে ওই মেয়েটির মত করে একই রকম উত্তর করলাম। বললাম, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব হয় না। তিনি গেলেন রেগে। কিন্তু বুঝতে দিলেন না। খুব সুন্দর করে বললেন, “হয় বাবা, এসব এখানেও হয়। তুমি হয়ত জানো না!!” অবাক ব্যাপার, আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমি জানিনা। তিনি জানেন !



এরপর তিনি আমার সাথে যোগাযোগ না করে অন্য কারও সাথে যোগাযোগ করা শুরু করে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেন নি। তবে চেষ্টাও কম করেননি।



তার মানে, দুর্নীতিতে বাবা-মায়েরাও পিছিয়ে নেই। একজন বাবা-মা কিভাবে নিজ ছেলে-মেয়েকে অন্যায় কাজে উৎসাহ যোগাতে পারে, সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।









এমনিতেই ভর্তিপরীক্ষা দিতে আসা ছেলে-মেয়েগুলোকে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। প্রচুর যানজট, হৈচৈ, খাবারের আগুন দাম, তার উপর পরীক্ষার টেনশন, পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার টেনশন- সব মিলিয়ে ছেলে-মেয়েগুলোকে দেখলে বেশ মায়া লাগে। আর মনে পড়ে যায় আমার প্রায় পাঁচ বছর আগের স্মৃতি। তখন আমি ফার্মগেটে ছো্ট্ট একটি ম্যাচে থাকতাম ।সেখান থেকে এসে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমার সাথে দুটো ক্যালকুলেটর ছিল। তা নিয়েই আমার মহা চিন্তা, দুটো ক্যালকুলেটর স্যাররা নিতে দেবেন তো।



শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয় আমার। কিন্তু আমাদের মাথায় একবারের জন্যও আসত না নকল করার কথা, লাখ-লাখ টাকা দিয়ে অবৈধ উপায়ে ভর্তি হবার কথা। মাত্র ক’বছরের ব্যবধানে কি এমন হয়ে গেল যে ছেলে-মেয়েরা, বাবা-মায়েরা দলে দলে ভাবা শুরু করল, পড়াশোনা না করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়? আর এতসবের ভিড়েও যারা শুধুমাত্র মেধা আর যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে নিচ্ছে, তাদেরকে আলাদা একটা সম্মান জানাতেই হয়।



ব্যাপারটি এখন গুরুতর। তাই এটিকে গুরুত্ব দিয়েই ভাবার সময় চলে এসেছে। এ লেখাটি হয়ত কয়েকজন বাবা-মায়েদের চোখেও পড়বে। তাদের জন্য বলছি, আপনারা যারা টাকা-পয়সা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান, এবারের ঢাবি ভর্তিপরীক্ষার ফলাফলই আপনাদের সতর্ক করে দেবার জন্য যথেষ্ট। এটা শুধু ভুল নয়, এটা অন্যায়। তা না হলে ভবিষ্যত অন্ধকার, আপনাদেরও, আপনাদের ছেলে-মেয়েদেরও এবং বলাবাহুল্য, দেশেরও।।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৮

টুম্পা মনি বলেছেন: দিন দিন বাংলাদেশে সারভাইভ করাই অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভার্সিটি ভর্তির শুরুতেই এত জটিলতা পরবর্তী জীবনে অনেক হতাশার জন্ম দিবে।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৯

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: যে ছেলেটি বা মেয়েটি অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করবে, সে কখনওই নিজের কাছে মাথা উঁচু করতে পারবে না। সবাইকে ঠকানো গেলেও নিজের বিবেককে ঠকানো যায় না। তারা মানসিকভাবে ভঙ্গুর হবে। তার ফল মারাত্মক ।

২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২২

ভাঙ্গা হৃদয় বলেছেন: ভয়াবহতা আরও পাচ বছর পরে দেখবেন। এরা যখন পাস করে বের হবে।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩১

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আমিও তাই ভাবছিলাম। দেশ তো একসময় এদের হাতেই থাকবে ।

৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৫

আমিনুর রহমান বলেছেন:




দারুন কিছু বিষয় তুলে এনেছেন আপনার লিখায়। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যখন বাবা-মা'রা তার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য দুনম্বরী পন্থা খুঁজে বেড়ান।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০১

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: কষ্টটা এখানেই। সন্তানরা ভুল করতেই পারে। বাবা-মায়েরা কেন এমন করবে ?

৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫০

আবু শাকিল বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা গুলো ভয়ংকর :)

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০২

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: সত্যিই ভয়ংকর। শুধু ভয়ংকর নয়, দুঃখজনক ।

৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৭

সুমন কর বলেছেন: ভবিষ্যত অন্ধকার, আপনাদেরও, আপনাদের ছেলে-মেয়েদেরও এবং বলাবাহুল্য, দেশেরও।।

দারুণ সব কথা বলেছেন। সহমত।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৯

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

আতাউল বারী বলেছেন: এখন নতুন করে মিডিকেল নিয়ে শুরু করছে, ২০ নম্বর পেলে পাশ। যদি এইটা হয়ে যায় তাহলে কি হবে আমি চিন্তা ও করতে পারছি না . . .

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.