![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাত্র কিছুদিন আগেই আমরা নতুন বছরের জন্য কতই না শুভকামনা করলাম। নতুন বছরের শুভেচ্ছা, আতশবাজি আর হর্ষধ্বনিতে ভরিয়ে দিলাম চারদিক।
আজ মাসের ৮ম দিন। এর মধ্যেই ৮ জনেরও বেশি মানুষ এবছর অপঘাতে মারা গিয়েছে। অনেকগুলো যান-বাহন আগুনে পুড়েছে। আগুনে ঝলছে গেছে কয়েকজনের শরীর। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি পেট্রোলবোমা। দেশজুড়ে চলছে বি.এন.পি সহ বিশ দলের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। ঢাকার বাহিরের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। প্রতিদিনেই নৃশংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জীবন থেমে নেই। পরিস্থিতিটাকে একটু বোঝার চেষ্টা করি।
গত ৫ তারিখ বি.এন.পি’র সাথে যা করা হয়েছে সেটা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। বি.এন.পি চেয়ারপার্সনকে তাঁর কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। রাস্তার দুপাশে বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঘটনাগুলো যতটা না পরিতাপের তার থেকেও বেশি হাস্যকর। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে কোন রাজনৈতিক নেতার ঘর থেকে বের হওয়া ঠেকাতে বালুভর্তি ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তার জন্য নিশ্চই ইতিহাসবেত্তাদের শরনাপন্ন হতে হবে।
বি.এন.পি সবসময়ই বলে আসছে, তারা অন্তবর্তী নির্বাচন চায়। না হলে তারা সরকারকে অন্তবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে। যদি তাদের দাবী মেনে নেই, তাহলে বলতে হয়, তার জন্য যা করা দরকার, যতখানি প্রস্তুতি দরকার তার কিছুই বি.এন.পি’র নেই। বি.এন.পি’র মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মধ্যে অনেক না পাওয়া, অনেক হতাশা কাজ করছে। বি.এন.পি’র কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা এমনকি বেগম খালেদা জিয়া নিজেও পারতেন প্রতিটি জেলায় গত একবছরে অন্তত একবার করে ঘুরে আসতে। কিন্তু তাঁরা সেগুলোর কিছুই করেননি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামাতকে ত্যাগের ব্যাপারটি নিয়ে তাঁরা সবসময়ই আশ্চর্য রকম নিরবতা বজায় রেখেছে। সেগুলো আমাদেরকে হতাশ করে।বি.এন.পি’র দুর্বলতা প্রকাশ্যে চলে আসে।
তাই, আমার ঠিক মনে হয় না, এই সরকারকে অন্তবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করার জন্য বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবী বাস্তাবায়নের জন্য যে পরিমাণ জনবল বা জনসমর্থন দরকার তা বি.এন.পি’র এই মুহূ্র্তে আছে। যার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি তাদের এই অনির্দিষ্টকালের অবরোধে। ঢাকা শহরে মাঝে-মধ্যে ককটেল ফাটার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু জায়গায় দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এসব ছাড়া ঢাকা শহর মোটামুটি স্বাভাবিক। ঢাকার বাহিরে কিছু জায়গায় যদিও পরিস্থিতি ভিন্ন। কিন্তু এ আন্দোলনে বি.এন.পি কতটুকু মানুষের সমর্থন পাচ্ছে, এটি ভেবে দেখার মত। এ ধরণের বিচ্ছিন্ন আন্দোলন দিয়ে তাদের পক্ষে খুব বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
আর এই তো সুযোগ আওয়ামীলীগ এর, নিজেদের ইচ্ছেমত সবকিছু চালানোর, ছাত্র সন্ত্রাস বাড়ানোর, সন্ত্রাসীদের ভরণপোষণ করানোর। খুবই অবাক হই, যখন প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর হাতে হাতে পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ঘুরে বেড়ায়, আর দায়িত্বপ্রাপ্তরা অকপটে বলে বেড়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। পদ্মাসেতুর দুর্নীতি নিয়ে সরকার নিজেদেরকে এখনও পরিস্কার করতে পারেনি। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি কল-কব্জায় দুর্নীতি আর নোংরামোর গন্ধ। সে গন্ধ দিন দিন এতই বাড়ছে যে সহ্য করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
তবুও তো মানুষ জীবন পাড়ি দিচ্ছে। সারাদিন খেটে পয়সা কামিয়ে পরিবার চালাচ্ছে। অনেক নামকরা অর্থনীতিবীদ অবাক হয়ে যান, কি ভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা দেখে। এর কারণ খোঁজার জন্য তাঁরা গবেষণা করেন।
কিন্তু যে মানুষটি দিন আনে দিন খায়, সে মানুষটিকে যদি কাজে যেতে না দেয়া হয়, যদি সে মানুষটি দিন শেষে ঘরে ফেরার পথে আগুনে ঝলসে যায়, তবে সে কি খেয়ে, কি পড়ে বাঁচবে? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় হরতাল-অবরোধ খুবই বেমানান, অনেক ক্ষতিকর, যদি না তাতে একেবারে সাধারণ মানুষগুলোর সমর্থন না থাকে।
সামনে বিশ্ব ইজতেমা। তাই অবরোধকে আপাতত অবরুদ্ধ করতেই হবে বি.এন.পি কে। পরবর্তীতে এমন আন্দোলনে নামার আগে, খুব ভালো হয়, যদি তারা নিজেদেরকে এত বড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করে নেয়, যদি তারা একেবারেই খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে আন্দোলনে আনতে পারে, টাকা দিয়ে নয়, আদর্শ দিয়ে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যারা সরাসরি বিরোধিতা করেছে, তারা যদি কোন রাজনৈতিক দলের শক্তি হয়, সে শক্তি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। সেটা যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য। যদি বি.এন.পি. কে এই কথা বলা হয়, তবে তাদের উত্তর, অতীতে আওয়ামীলীগও তাদেরকে দলে নিয়েছে। সেটা ভুল ছিল না? হ্যা, অবশ্যই সেটা ভুল ছিল। সেটা খুবই গর্হিত কাজ ছিল। কিন্তু আওয়ামীলীগ এই ভুল করেছিল, তাই কি বি.এন.পি একই ভুল করে আওয়ামীলীগের সমান হবার চেষ্টা করছে? ভুলের প্রতিউত্তর কি ভুল হতে পারে? এই উত্তরটা কিন্তু পাওয়া যায় না।
একই দিনে একই দেশে কখনও ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ও ‘গণতন্ত্র বিজয় দিবস’ হতে পারে না। যেকোন একটি ঠিক, একটি ভুল। তবে যদি ভোটাভুটি করা যায়, তবে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এর পক্ষেই রায় যাবে বলে মনে হয়। কিন্তু, আমাদের এক রাজপুত্র লন্ডনে বসে দিনের পর দিন যা সব বলে যাচ্ছেন, সেগুলো মেনে নেয়া যায় না একেবারেই।
আর আমরা, অর্থাৎ, যারা জনগনের কাতারে আছি, তারা শান্তিতে বাঁচতে চাই। রাস্তা-ঘাটে কয়লা হয়ে মরতে চাই না। হঠাৎ করে শুনতে চাই না, আমাদের প্রিয়জন অগ্নিদগ্ধ করে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এসব আন্দোলনে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষের। যার যায় সেই তো বোঝে। নেতারা বুঝবেন কি করে! তাদের তো কিছু যায় না, সবই আসে।
এগুলো একেবারেই আমার নিজের চিন্তা-ভাবনা। সবার সাথে মিলবে, তার কোন কারনই নেই। বরং কথাগুলো অধিকাংশ জনেরই খারাপ লাগাবে হয়ত। কিন্তু, শান্তি তো আমরা সবাই চাই। আর,আপনারা যারা দেশ চালান, তাঁরা আমাদের এটুকু চাওয়া বোঝেন, আমরা তা বিশ্বাস করি। প্লিজ, আপনারা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। মানুষের ভালো করার জন্যই রাজনীতি। ক্ষমতায় যাওয়াটার জন্য যাচ্ছেতাই করাটা রাজনীতি না।।
©somewhere in net ltd.