![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভেবেছিলাম, এবার আর পহেলা বৈশাখ নিয়ে কিছু লিখব না। নিরবে আসুক, নিরবেই চলে যাক। কিন্তু সে আর হল না। তবে, এতটা হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে যে লিখতে বসতে হবে, তাও ভাবিনি। সবাই যখন সুন্দর সুন্দর ছবি আপলোড করছে, সেই সময় এসব কাঠখোট্টা কথা লিখতে আমারও ভালো লাগে না। তবুও লিখছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ টি.এস.সি, রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ এলাকা জুড়ে ১৯টি সি.সি.টি.ভি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিল, যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, সেখানে ছিল গোয়েন্দা সংস্থার সচেতন নজরদারী। টি.এস.সি, রাজু ভাস্কর্য- এসব এলাকা তো রাজধানীরও রাজধানী, দেশের শিল্প-সংস্কৃতি, বিপ্লব-চেতনার সবথেকে বড় আশ্রয়স্থল। এসব এলাকায় তো সারা বছরই নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকে। আর বইমেলা, পহেলা বৈশাখের মত দিনগুলোতে নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে যাবে-এমনটাই স্বাভাবিক।
যদি কেউ দয়াকরে বিগত পনের বছরে দেশের এই প্রাণকেন্দ্রে প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো হিসাব করে বসেন, আমি নিশ্চিত, অবাক হয়ে যাবে গোটা জাতি। এমনটি অবাক হবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু পহেলা বৈশাখের পবিত্র দিনে সন্ধ্যে ৬টায় ৩০-৩৫ জন বখাটে যুবক প্রকাশ্য রাস্তায় সবার সামনে যা ইচ্ছে তাই করে চলে যাবে, মেয়েদেরকে আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলে রাখবে, আর আশেপাশের সবাই ভুভুজেলা বাজাবে, কেউ এসব দেখবে না, পুলিশ শুনেও না শোনার ভান করে থাকবে- এই ব্যাপারগুলোকে আমি পরপর ঠিক সাজাতে পারছি না। এমনটা কি করে হতে পারে?
পত্রিকা পড়ে জানতে পারলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী গেটে যখন এই ঘটনা ঘটছিল, তখন সেখানে মাত্র দুজন পুলিশ ছিল। টিএসসির ডাচ-বাংলা বুথের দিকে বেশ কয়েকজন পুলিশ ছিল। আমরা তাদের এগিয়ে আসতে বললে তারা তখন রাজি হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুজনকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ পরে তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে জানতে পারি।’ (সূত্র: প্রথম আলো)
উপরের কথাগুলো বিশ্বাস করতে আমার ভয় হয়। আবার বিশ্বাস না করেও বা উপায় কি? অভিজিৎ রায়কে যখন হত্যা করা হয়, তখনও পুলিশের লোকজন আশেপাশেই ছিল। কিন্তু তারা এগিয়ে আসে নি। এমনটি অপরাধীদের ধরতেও পারেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় মেয়েদেরকে উত্যক্ত করা যে একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে, এমনটা স্বীকার করার মানুষের অভাব নেই। অথচ এসব এলাকায় সবসময়ই পুলিশের টহল থাকে। অপরাধীরা যদি পুলিশকে ভয় না পায়, বরং পুলিশ অপরাধীদের ভয় পেয়ে পালিয়ে থাকে, তাহলে লোক দেখানো নিরাপত্তা ব্যবস্থার দরকার কি?
দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, খবর পাওয়ার পর সেখানে গিয়ে অপরাধের সাথে যুক্ত কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া তাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগও করতে আসে নি!(সূত্র: দি ডেইলি স্টার)
এটা খুবই স্বাভাবিক যে, অপরাধীরা অপরাধ করার পর ধরা দেবার জন্য বসে থাকবে না। তাই এমন বক্তব্যের কোন মানে হয় না। হাইকোর্ট পুলিশের আইজিপি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর বরাবর আদেশ জারি করেছে আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে এই ঘটনার রিপোর্ট দেবার জন্য।পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে অপরাধীদের দ্রুত ধরা হবে। সেদিন গোটা এলাকায় ১৯ টি সিসিটিভি লাগানো ছিল। তাই, সদিচ্ছা থাকলে অপরাধীদের ধরে ফেলাটা মোটেও কঠিন হবে না।
আমরা চাই, অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়ুক, ওদের শাস্তি হোক। তবে এখানে আমি একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, প্রশাসনের কাজ শুধু অপরাধী ধরে শাস্তি দেয়াই নয়, তাদের কাজ অপরাধ ঠেকানোও। অপরাধ হয়ে যাবার পর অপরাধী ধরেও কি ক্ষতিপূরণ করা যায়? যেমন, এখন যদি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীকে ধরে ফেলা যায়ও, তবু কি আমরা অভিজিৎ রায়কে ফিরে পাব? সেদিনের ওই দুর্বৃত্তগুলোকে পুলিশ ধরে ফেললেও কি আর আমরা অত্যাচারের শিকার হওয়া নারীদের বিভৎস স্মৃতি মুছে দিতে পারব?
অভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর এর নামেও। কিন্তু এত অভিযোগ চালাচালি করে কি লাভ। দোষের পিঠে দোষ চাপিয়ে কতটুকু আর পাওয়া যায়। আমাদের প্রশাসন আমাদের কতটা নিরাপদে রাখে, ভাবলে বেশ হাসি পায়। সেদিন ওই বখাটেগুলো শুধু ওই মেয়েদের উপর নয়, আমাদের গোটা সংস্কৃতির উপরই আঘাত হেনেছে। কিন্তু এমন একটি ঘটনার পর যতটা প্রতিবাদ আশা করেছিলাম, সে তুলনায় কিছুই দেখছি না। দেশে নারী অধিকার, নারী আন্দোলন নিয়ে এত কিছু। তার সবই কি লোক দেখানো? শরীরে বাহরি রঙ্গের শাড়ি, ঝলমলে অলংকার, ভুভুজেলার শব্দ আর উল্লাসের আড়ালে যদি কেউ কেঁদে কেঁদে মরে, তবু কি আমরা শুধু উৎসব নিয়েই মেতে থাকব। যে শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের এত অহংকার, যে কৃষ্টির ডানায় ভর করে আমাদের প্রতিবছর এই রঙ্গিন বর্ষবরণ, সেই শিল্প-সংস্কৃতি-কৃষ্টিকে যদি কেউ আঘাত হানে, পদদলিত করতে চায়, তবুও কি আমরা চুপ করে থাকব? আমরা কি আমাদের মৌলিকত্বের চেয়ে বর্ণিলতাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না?
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৩
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: প্রশাসন যার ইচ্ছা তার গোলামী করুক। কিন্তু তারা যদি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাই নিশ্চিত না করতে পারে, তবে তো তাদের অস্তিত্বেরই কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। আমার কথাটা সেখানে, অন্য কোথাও আপাতত নয়।।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৫৩
সালমান মাহফুজ বলেছেন: প্রশাসন তো একটা গোষ্ঠির প্রতি নিশ্চল মূর্তির ভূমিকা পালন করছে ! খুবি লজ্জাজনক ।