![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কি চমৎকার সব খবর আসছে পত্রিকা গুলোতে, জাবিতে তিন বিভাগের দ্বন্দ্ব, দুই বিভাগের ২৫ জন শিক্ষকের পদত্যাগ, দুই বিভাগের সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ, ছাত্র-ছাত্রীদের আমরণ অনশন। খবরগুলো দেখে ও পড়ে চোখ ও মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। আমি একটা অমানুষ। এমন খবর দেখে তো আমার লজ্জা পাওয়া উচিত, আমার কষ্ট হওয়া উচিত। তা না করে আমি আমার তৃপ্তির কথাগুলো নির্লজ্জের মত বলে যাচ্ছি। ছিঃ। আমি কত নিচ,অধম। এই খবরগুলো পড়ে যারা আমার মত করে আনন্দ পাচ্ছে, তারাও নিশ্চই আমার মতই নিচ ও অধম।
বুয়েট EEE আর CSE’র জন্য কি বিশাল ভবন বানিয়েছে। দেখলে চোখটা জুড়িয়ে যায়। বাদ দিই। জাহাঙ্গীরনগর কি আর বুয়েট নাকি! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা যদি বলি, সেখানেও চমৎকার একটি CSE বিভাগ আছে। তাদের আছে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, সময়ের প্রয়োজনে তা আরও বাড়ছে। অতি আগ্রহীরা একটু অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন। বর্তমানে দেশে তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দুর্ভাগ্যবশত, এই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে জাহাঙ্গীরনগরের তুলনা করতে আমার ভয় হয়।
অথচ এমন একটি সময় ছিল, যখন বুয়েট আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশে আর কোথাও CSE/ECS বিভাগই ছিল না। এমন একটি সময় ছিল, যখন জাহাঙ্গীরনগরের CSE কোন দিক থেকেই পিছিয়ে ছিল না এবং গর্ব নিয়ে বলতে হয়, তারা এখনও পিছিয়ে নেই। এইতো কিছুদিন আগেই জাহাঙ্গীরনগরের একটি ছেলে গুগলে চাকরি পেয়েছে বলে হৈ চৈ উঠল গোটা দেশে। কিন্তু এই বিভাগের ছেলে-মেয়েগুলো কেন আমরণ অনশনে বসবে? এর দায় কার উপর বর্তায়? কেন CSE ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ২৫ জন শিক্ষক পদত্যাগ করবেন? আর এতকিছুর পরও নিরব উদাসীন হয়ে প্রশাসন কেন রবীন্দ্রসংগীত শুনবে? একটিরও উত্তর কারও জানা নেই।
২
জাহাঙ্গীরনগরে অনেক বিভাগই স্থান সংকটে ভোগে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি খুবই লজ্জার কথা। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগরের মত একটি বিরাট আয়তনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কথাগুলো হাস্যকর শোনায়। তাহলে এর সমাধান কি? খুব সহজ উত্তর। ভবন নির্মান করতে হবে দ্রুত সময়ে। এই সমস্যা অবশ্যই প্রশাসন অনুধাবন করে। কিন্তু ২০০৩ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবার পর ২০১৫ সালে এসেও কেন একটি ভবনের নির্মান কাজ শেষ হয়না, কেন একটি ভবনের তিনটি উইং হবার কথা থাকলেও দুটি উইং হবার পরই কাজ বন্ধ হয়ে যায়, এই ভবনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তাহলে কোথায় গেল- প্রশ্ন কিন্তু অনেক দুর গড়ায়।
জাহাঙ্গীরনগরে আজ যে কৃত্রিম স্থানসংকট, এসব অস্বচ্ছতা তার অনেক বড় কারন। তাই ভবন নির্মান না করে একটি বিভাগের উপর আরেকটি বিভাগ মুড়ির টিনের মত চাপিয়ে দিয়েই দায়িত্বপ্রাপ্তরা মায়ের আঁচলের তলে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন। দায়িত্বপ্রাপ্তরা একবারও বোঝে না যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো মুড়ির টিন নয়, বিভাগগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাদের অনেক স্থান দরকার, ল্যাব দরকার, ক্লাসরুম দরকার।
একটি হাস্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিই। ধরা যাক, CSE বিভাগের স্থান সংকট, সেজন্য CSE বিভাগকে লাইব্রেরীরর তৃতীয় তলা দিয়ে দেয়া হল। কিন্তু এটা কি কোন সমাধান? না তাতে CSE বিভাগের মত একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রয়োজন মিটবে, না তাতে লাইব্রেরীর সমস্যা কমবে। কারন, যারা লাইব্রেরীতে যায়, তারা নিশ্চই জানে লাইব্রেরীতে সিট সংকটের কথা। ডেস্কে বসার জন্য সকাল ৬ টা থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়। পৃথিবীর আর কোন লাইব্রেরীতে প্রবেশের জন্য এমন লাইনে দাঁড়াতে হয় কি না, আমার জানা নেই।
৩
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সমস্যার কথা আমরা জানি। বিভাগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিভাগটি যতটুকু স্থান জুড়ে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগরে জন্য সেটা বেশ লজ্জাজনক। তাদেরও জায়গা দরকার, ক্লাসরুম দরকার, ল্যাব দরকার। তাদের জন্য ভবন নির্মান করতে হবে। কিন্তু একটি বিভাগের চাহিদা পূরণ না করে একটি বিভাগের মাথার উপর আরেকটি বিভাগ বসিয়ে দেয়াটা কি মুড়ির টিন বসানোর মত হয়ে গেল না?
প্রশ্ন, আন্দোলন কতদিন চলবে? মানুষ না খেয়ে কতদিন থাকতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন আমরণ অনশনে বসে, যখন ২৫ জন শিক্ষক পদত্যাগ করে, তখন সমস্যাটা শুধু ওই বিভাগের না, সমস্যাটা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের। অন্তত আমি তাই মনে করি। সমস্যাটি অনেক দিনের। সঠিক তথ্য না জানার কারনে বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনেই অনেক রকম ভুল ধারনা আছে। আমি আবার বলতে চাই, এই সমস্যাটি এখন শুধু CSE আর ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের না, সমস্যাটি এখন গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এমন সময় সঠিক তথ্য জেনে সঠিক মতামত দেয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৪
অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্রদের আন্দোলনের ইতিহাস গর্বের। তারপরও ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসরুমে না বসে আমরণ অনশনে বসবে, এমনটা কোনভাবেই মানা যায় না। আমরা বিজ্ঞ প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর সমাধান চাই। এটা অনুরোধ নয়, এটা দাবী। কারন, সমস্যার জন্মদাতা তাঁরাই। এতকিছুর পর CSE বিভাগ কোনভাবেই তৃতীয়তলা হাতছাড়া করতে চাইবে না। জোর খাটানোর চেষ্টা করলে তার ফল হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং সমাধান হতে পারে অন্য উপায়ে। হতে পারে ভবনটিকে বর্ধিত করে বা ভবনটির বাতিল হয়ে যাওয়া তৃতীয় উইংটি বানিয়ে(আমি জানি তা সম্ভব না) অথবা অন্যকোন উপায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ আছেন। সমাধান তাঁরা নিশ্চই খুঁজে বের করবেন।
প্রশাসন বিশ্ববিদ্যায়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক। দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ভেবে দেখুক না একবার, তাদের নিজের সন্তানেরা অনশনে বসেছে, তাদের সন্তানদের হাত-মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, তাদের সন্তানরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে একফোঁটা জলও তুলছে না। এই দৃশ্যগুলো অনুভব করতে হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি কলঙ্ককে দ্রুত মুছে দেয়ার জন্য, শুধু আবেগতাড়িত হবার জন্য নয়।।
[এ সম্পর্কিত কয়েকটি লিংক:
১। JU computer science teachers resign en masse
২।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছেই
৩। Save JU CSE, Save Our Rights
৪। ভবন রক্ষার দাবীতে আমরণ অনশন
৫। সজীব ওয়াজেদ জয় এবং জুনায়েদ আহমেদ পলককে উদ্দেশ্য করে রাসেল ভাইয়ের ফেইসবুক স্ট্যাটাস
৬। শিক্ষক শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার(ভিডিও)]
©somewhere in net ltd.