নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে ...

পেলব চক্রবর্তী

ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম...

পেলব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্ষা ও ছেলেবেলা

২৬ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩

আমি ছোট থেকেই টিনের চালে বৃষ্টিপতনের শব্দ শুনে বড় হয়েছি। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আশেপাশের বেশিরভাগ বাড়ি-ঘরই ছিল টিনের চালার। তবে কিছু ঘর-বাড়ি ছিল ছনের। ছনের ঘরে বৃষ্টিপতনের শব্দ শুনতে কেমন লাগে তা জানার সৌভাগ্য আমার হয় নি। কখনও ইচ্ছেও জাগে নি। এখন ইচ্ছে করে। ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টিসিক্ত লোকালয় দেখতে কেমন লাগে, তা জানার খুব ইচ্ছে হয়।

ছোটবেলায় আমার বেশ ক’জন পাড়াত বন্ধু ছিল। ওরা থাকত ছনের ঘরে। বর্ষাকাল আসলেই দেখতাম ওদের বাবা-মায়ের মুখগুলো মেঘে ঢাকা আকাশের মত কালো হয়ে গেছে। কেন? বুঝতাম না। বর্ষাকালে যখনই বৃষ্টি নামত, আমার ছনের ঘরে থাকা বন্ধুরা তখনই রাস্তায় নেমে পড়ত, বৃষ্টি গায়ে মাখত, আনন্দ করত আর আমাকে ডাকত- রাতে-দিনে সবসময়ই। আমি মাঝে মধ্যে গুরুজনদের অনুমতি পেলে ওদের সাথে যোগ দিতাম। বৃষ্টি থেমে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যেত। মানুষের আনন্দের মুহূর্তগুলো চিরকালই কেন যে এত সংক্ষিপ্ত হয়, কে জানে।

একদিন আমি ওদের কাছে জানতে চাইলাম, বৃষ্টি নামলেই তোমরা কেন রাস্তায় নেমে আসো? দিনে তো ভেজোই,রাতেও কেন বৃষ্টি নামলে তোমাদের ভিজতে হবে? তোমাদের সর্দি-ঠান্ডা লাগে না? তোমাদের বাবা-মা নিষেধ করে না?

ওরা হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যেত। ওরা জানাল, বৃষ্টি নামলে ওদের ঘরে বসে থাকা আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একই। বৃষ্টি নামলে ওদের ঘর জলে ভিজে যায়, বৃষ্টির তোড়ে পাতলা ছনের আবরণ খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ঘরে বসে থাকার কোন মানেই হয় না।

আমি বললাম, তোমরা তোমাদের ঘর ঠিক করতে পারো না। ওরা জবাব দিল, এ কথা বলাতে ওদের বাবা ওদেরকে ধরে পিটিয়েছে। আসল কারন ওরাও জানে, ঘর ঠিক করার মত যথেষ্ট সংগতি ওদের নেই। বর্ষাকাল আসলে তাই ওদের মুখগুলো কালো হয়ে যায়।


আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার বাড়ির পাশেই একটি পুকুর ছিল। সেই পুকুরে পরিস্কার জল ছিল।আমরা দল বেঁধে পুকুরে নামতাম, কত হাজারো খেলা খেলতাম। মজা আরও শতগুলো বেড়ে যেত যদি ঠিক দুপুরে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামত। ওরা রাস্তায় নেমে আসত। আমি যেভাবেই হোক না কেন,ওদের সাথে এসে যোগ দিতাম। বৃষ্টিতে ভিজতাম। একসাথে পুকুরে ঝাপ দিতাম। বৃষ্টির সময়ে পুকুরে স্নানের অদ্ভুত আনন্দ আছে। তোমরা যারা এমনটি করেছ, শুধু তারাই এটা জানো। ডুব দিলে জলের উপর বৃষ্টিফোঁটা পতনের শব্দ শোনা যায়। আমরা সেই শব্দ শোনার জন্য ডুব দিয়ে থাকতাম অনেকক্ষণ ধরে। আরও মজা হল যখন জলে ডুব দিয়ে চোখ খোলা রাখাটা শিখে গেলাম। জলের নিচ থেকে দেখতে পারলাম, বৃষ্টিফোঁটা কি ভাবে জলের উপরে এসে আছড়ে পড়ে, তারপর মিলিয়ে যায়।

বাড়ি ফিরতাম অনেক দেরী করে। চোখ লাল হয়ে থাকত। গুরুজনদের রক্তচোখ আমার চোখের লাল দেখে ফ্যাকাশে হয়ে যেত। দৌড়ে এসে আমাকে সাপ্লাইয়ের জলে স্নান করিয়ে দিত, গায়ে সাবান মাখিয়ে দিত আর হাজারো প্রলাপ বকত। রাত বাড়তেই গা কেঁপে জ্বর আসত। ভয় পেতাম। তবে জ্বর আসার জন্য আমি ছোটবেলা খুব করে অপেক্ষা করতাম। কারন জ্বর এলেই মা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। সুস্থ্য থাকলে এতটা আদর করতেন না!

বর্ষকালে সারাটা দিন আমরা বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতাম। আকাশে মেঘ জমলেই মনটা হাত-পা ছুড়ে নেচে উঠত। আমাদের অপেক্ষা ফুরাতো কোন একসময়। পাড়াত সব বন্ধুরা একসাথে হয়ে লুডু খেলতাম, চোর-পুলিশ-ডাকাত-বাবু খেলতাম এবং বরাবরই আমি চোর হতাম। বৃষ্টিতে ভিজে মার্বেল খেলার কোন তুলনা নেই। গাছে জাম পাকলে জাম ঝালাই হত, কাঁচা আমের ঝালাই হত। ঝালে চোখ দিয়ে জল নেমে আসত। কিন্তু কাঁচা আমের ঝালাই খাওয়া কমত না।



কোন এক দুর্ঘটনায় ছনের ঘরে থাকা আমার সব বন্ধুরা পাড়া ছেড়ে চলে যায়। আমার বন্ধুও অনেক কমে যায়। আমিও বড় হতে থাকি। সবাই শুধু পড়াশোনা করতে বলে। সবার কথা শুনে আমিও শুধু পড়াশোনাই করতাম। হঠাৎ করে একদিন বুঝলাম, আমার নিষ্পাপ আনন্দের সময়গুলো খুব বাজেভাব হারিয়ে গেছে। আনন্দ আর মজার দিনগুলো আমার উপর খুব বেশি অভিমান করে চলে গেছে, যাবার আগে বলে গেছে, তারা আর কখনও আসবে না।


আজও‍ দুপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকালেই আমি সেই দিনগুলোকে স্পষ্ট দেখতে পাই। দেখতে পাই, আমার সব বন্ধুরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজছে। আমাকে ডাকছে। ছোট্ট আমি দৌড়ে গিয়ে ওদের সাথে জুড়েছি। পুকুরে ঝাপ দিচ্ছি।

দিনগুলো শুধু স্মৃতিতেই থাকবে। বর্ষার বৃষ্টি শুধু স্মৃতিকাতরই করতে পারে, শুধু কষ্টই বাড়াতে পারে, কোন কিছু ফিরিয়ে দিতে পারে না।।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০৩

জেন রসি বলেছেন: বর্ষার সাথে সবারই মনে হয় ঘোরলাগা সময়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

আপনার বর্ষা এবং ছেলেবেলার কাহিনী পড়ে কিছু সময়ের জন্য সেই ঘোরলাগা সময়ে ফিরে গিয়েছিলাম।

++

২৬ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.