![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১১ সালের শীতকাল। আমরা ক’জন মিলে এক বন্ধুর বাসায় যাবার পরিকল্পনা করলাম। সব ঠিকঠাক। আমরা আসব বলে আয়োজন অনেক। যাবার ঠিক আগের দিন খবর এল, এলাকায় নাকি কে কাজে খুন করেছে, তাই নিয়ে সেখানে অনেক ঝামেলা চলছে। বন্ধুর সাথে কথা হল, ও জানালো, সমস্যা আসলে এতটা নয়। আমরা আসতেই পারি।
আশ্বাসবাণী শুনে ভালো লাগল। কিন্তু যাবার দিন খবরের কাগজে ওই এলাকার টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে ভয়ানক একটি রিপোর্ট চোখে পড়ল। টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দেখতে পেলাম, সত্যিই সেখানে বেশ গন্ডগোল হচ্ছে।
আমাদের পরিকল্পনা বাতিল করতে হল।
গল্পটার সাথে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে আসতে না চাওয়ার অনেক সাদৃশ্য আছে। আপাত অপ্রাসঙ্গিক হলেও তাই মনে পড়ে গেল গল্পটা।
মাঝখানে বিসিবি একবার বাংলাদেশ জাতীয় দলকে পাকিস্তান সফরে পাঠানোর অপপ্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদের মুখে বিসিবি শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছিল। আমাদের সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সে যাত্রায় বিপদসঙ্কুল পাকিস্তানের মাটিতে পা দিতে হয় নি। যদিও কিছুদিন আগে আমাদের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে গেল, কিন্তু কেউ কোন কথা বলল না। আমাদের সালমা-আয়েশা-চামেলী’রা তাহলে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের মত ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়! পৃথিবীর সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ যে দেশে যেতে ভয় পায়, সেই দেশের সাথে বিসিবি’র এত ভালো সম্পর্ক রাখায় কি প্রয়োজন, তা বোধগম্য নয়। বিসিসিআই যেখানে পাকিস্তানকে দিনের পর দিন অবহেলার দুরে সরিয়ে দিচ্ছে, সেখানে বিসিবি পাকিস্তানকে বুকে টেনে নিচ্ছে। কি কপাল আমাদের!
কাজের কথায় আসি। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল যে নিকট সময়ে আর বাংলাদেশে আসছে না, এটা মুটামুটি বলে দেয়া যায় (Australia cricketers return to state sides ahead of Bangladesh tour decision)। প্রশ্ন হল, বাংলাদেশর অবস্থা তো পাকিস্তানের মত নয়। তাহলে কেন এমন পরিণতি?
এটা এখনও পুরোপুরিই অনিশ্চিত যে আদৌ গতপরশু ইটালিয়ান নাগরিক হত্যার পেছনে আইএস এর হাত আছে কি না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ‘The Guardian’ পত্রিকায় গতকাল একটি খবর ছাপানো হয়। শিরোনাম ছিল- Isis claims responsibility for death of Italian man in Bangladesh.
সাথে সাথে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে দিল। বলে দিল, বাংলাদেশ আইএস জঙ্গীতে ভরে গেছে। তোমরা সাবধানে থাকো।
বাংলাদেশের সন্ত্রাসী তৎপরতার খবরগুলো খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। চারজন ব্লগার খুনের ব্যাপারটিও অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে এসেছে। ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশী অভিবাসীরা বাংলাদেশে এসে সিরিয়ায় চলে গিয়ে আইএস এ যোগ দিচ্ছে- এই খবরটিও অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনিতেও বাংলাদেশ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়দের মনে খুব ভালো ধারনা আছে, এমনটা মনে করার কোন কারন নেই। অস্ট্রেলিয়ানদের উপর আইএস এর হামলার হুমকি আছে, এটাও সত্য।তাই, এতকিছু দেখে, শুনে, পড়ে কোন অস্ট্রেলিয়ান চাইবে না বাংলাদেশে আসতে, যেমনটা আমরা চাইনা আমাদের ক্রিকেট দল পাকিস্তানে গিয়ে খেলুক। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে তাই আমি দোষারোপ করতে চাই না।
যদিও বাস্তব পরিস্থিতি আমরা জানি। বাংলাদেশে আইএস জঙ্গী আছে না নেই, সেটা গোয়েন্দা সংস্থা বলতে পারবে, কিন্তু বাংলাদেশে যে তাদের দৃশ্যমান কোন কার্যকলাপ নেই- সে ব্যাপারে আমরা জানি। আমাদের দেশে এসে ডেল স্টেইন নিরাপত্তার গন্ডি পেরিয়ে রাস্তায় নেমে ফুটবল খেলেছেন, হাশিম আমরা রাস্তায় ব্যাটিং করেছেন, এগুলো তাঁরা টুইটারে শেয়ারও করেছেন। তাঁদেরকে কেউ হামলা করেনি, তারা সুস্থ্য ও সবল দেহে আজও বেঁচে আছেন।
আইএস তিউনেশিয়ার হামলা করেছে, ফ্রন্সের ‘চার্লি হেডবো’ নামের পত্রিকা অফিসে হামলা করেছে; ওইসব হামলার পরে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য তিউনেশিয়ায় বা ফ্রান্সে তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলে নি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলেছে। এগুলো কোন রাজনীতির অংশ?
যেন সবাই মিলে এক হয়েছে- অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশে আসতে দেবে না। বিসিবি’র উচিত হবে একটু কঠোর হওয়া, মাথা নিচু করে সারাজীবন বাঁচা যায় না। অস্ট্রেলিয়া যদি একান্তই না আসতে চায়, না আসুক; কিন্তু তাদের কারনে যেন আরও কোন দল বাংলাদেশে আসতে ভয় না পায়, এটা নিশ্চিত করাটাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত- বিসিবি’র জন্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও।।
©somewhere in net ltd.