![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আচ্ছা, আমি পুরুষ, তাই না ?
হ্যা, আমি পুরুষ ।
ছিঃ লজ্জা !!
.
হ্যা, ঠিকই দেখেছেন,
আমার নিজেকে পুরুষ ভাবতে লজ্জা লাগছে,
লজ্জিত হতে বাধ্য হচ্ছি,
যখন দেখি আমার ছোট বোনের মতো একটা মেয়ের দেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে মাটিতে, রক্তাক্ত অবস্থায়, শরীরের জামা-কাপড়টুকুও বাঁচে নি, ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে লালসার কাছে...
.
চার-পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চা একটা মেয়ে,
এখনো স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না,
মুখে আটকে যায়,
শুনেছেন এমন কারো কথা ?
দেখেছেন এমন একটা বাচ্চা মেয়ে যখন চুলে বেনী করে কাঁধে ছোট্ট একটা স্কুলব্যাগ নিয়ে তার মায়ের কনিষ্ঠা আঙুল ধরে গুটি গুটি পায়ে হেটে হেটে যায় ?
এমন অপূর্ব দৃশ্য পৃথিবীতে খুব কমই আছে ।
.
যে বাচ্চাটির মুখের বুলি শুনলে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় তার মায়া ভরা চেহারার দিকে,
যে বাচ্চাটা জানে না যে "ধর্ষণ" শব্দটার অর্থ কি !
যে বাচ্চাটা জানে না মৃত্যুরর মানেটা কি !
.
এমন একটা বাচ্চা মেয়েও আমাদের,
হ্যা, আমাদের কিছু কিছু পুরুষদের কামনার ফাঁদে পড়ে,
হতে হয় ধর্ষণের স্বীকার !
পরিণতি হয় মৃত্যু !!!
.
ছিঃ আমি পুরুষ ?
এটা ভাবলে লজ্জায়, ঘৃণায় মৃত্যু হয় আমার,
যতবার ভাবি, ঠিক ততবারই ।
.
একটা মেয়ে,
সবে কেবল অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করলো,
নবম শ্রেণীতে পা রাখবে,
তার জীবনে বড় হওয়ার প্রথম ধাপ,
মনোস্থির করতে পারছে না কোন বিভাগের উপর পড়াশুনা করবে ।
সাইন্স ? আর্টস ? নাকি কমার্স ?
বড়দের সাথে পরামর্শ করছে এটা নিয়ে,
সে ভবিষ্যতে কি হতে চায়, সেক্ষেত্রে কোন বিভাগে পড়লে তার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে ইত্যাদি ।
সব কিছু ঠিকঠাক হলো,
নবম শ্রেণীর ক্লাস শুরু হয়ে গেছে কয়েকদিন হলো ।
.
একদিন আর ক্লাস শেষে সেই মেয়েটা বাসায় ফেরে না,
দুদিন পর তার নিস্তেজ দেহটা পাওয়া যায় একটা পাটক্ষেতের মধ্যে,
তার সদ্য বড় হওয়া তুলতুলে নরম দেহটার উপর লেগে আছে কতগুলো রাক্ষসের নখের আচর,
নতুন স্কুল ড্রেসটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে তার পুরো শরীরের মতো ।
এমন কোন কথা শুনলে বারবার আমার ছোট বোনটার চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে,
যে ছোটবোনটা আমায় ফোন করে আদুরে গলায় বলে-
"ভাইয়া, এতদিন হয়ে গেল বাসায় আসবি কবে ? আমার অনেকগুলো ম্যাথের প্রবলেম জমা হয়ে আছে, তুই আসলে ওগুলো সলভ করবো, আর হ্যা, ইংরেজীর একটা ডায়লগ কোথাও খুজে পাচ্ছি না, ওটাও লিখে দিবি । "
যেই মেয়েটা আজ এভাবে পড়ে আছে !
সে ও কারো না কারো বোন !
কারো না কারো হতে যাবে কেন ?
সে কি আমাদের বোনের মতো না ?
যে মেয়েটা জীবনটা নিয়ে মাত্র স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে !
বাদ গেল না সেই মেয়েটাও,
স্বপ্ন গুলো শুরু হবার আগেই কারো রক্তাক্ত লালসায় নিজের জীবন হারাতে হলো তাকে ।
.
আমি পুরুষ ?
আমিও ওই লালসার জোয়ার ভরা রাক্ষস গুলোর মতো দেখতে ?
ভাবলে আমি মাথা উচু করতে পারি না,
দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে,
এগুলো হয়তো অশ্রু নয়-
এগুলো আমাদের মতো পুরুষের ওপর ওই বোনটার মৃত্যুর আগের সময়কার ভয়,ঘৃণা,ক্ষোভ....
.
একটা মেয়ে,
স্কুলের গন্ডি পার করলো বেশ কয়েকদিন হলো,
কলেজ জীবনটাও শেষের পথে,
জীবনটা রঙিন হতে শুরু করেছে,
একটা ছেলে মেয়েটাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে,
মেয়েটাও কম যায় না,
দুজনের দুজনকে ঘিরে কতো স্বপ্ন !!!!
.
কলেজটা শেষ হলে বাসায় জানাবে একে অন্যের ব্যাপারে,
পড়ালেখা শেষ হবে, তারপর বিয়ে,
ঘর হবে, সংসার হবে, তাদের ছোট্ট একটা বাবু হবে !
ভাবতেই মনে হয় জীবনটা অনেক সুন্দর ।
একদিন এই আপুটা তার মনের মানুষের সাথে দেখা করবে বলে বেশ কয়েকটা ঘন্টা ধরে সেজেগুজে, একটা সুন্দর শাড়ি পড়ে বেরিয়েছে, যেন তার মনের মানুষটা তাকে একটু আদূরে গলায় বলে-
"তোমাকে আজকে এক্কেবারে স্বর্গের অপ্সরার মতো লাগছে"
ভাইয়া টাও গায়ে ভালো একটু পারফিউম মেরে চোখে সানগ্লাস দিয়ে বেরিয়ে গেল, ওই আপুটার সাথে দেখা করতে ।
.
ভাইয়াটা আগেই পৌছে গেল গন্তব্যে,
আপুটা এখনো আসে নি,
ফোন দিচ্ছে, ফোন অফ !!
.
আপুর ছোট ভাইটার কাছে ফোন দেয়া হলো,
আপু অনেকক্ষন আগেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে,
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত !!
থানা !! পুলিশ !!!!!
.
আপুটাকে পাওয়া গেছে,
একটা জঙ্গলের মধ্যে,
তাকে দেখলে মনে হয় না যে তিনি কারো জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সেজেছিলেন,
গায়ের এখানে সেখানে বোধহয় বেশ আলতা লাগিয়েছিলেন !!
আচ্ছা, আলতা থেকে কি রক্তের গন্ধ আসে ??
আপুটা আর একটু সময় পরপর আচলটা ঠিক করছেন না,
শাড়িটা এখন আর তার শরীর ঢাকতে ব্যস্ত না,
ওটা দিয়ে হাত আর মুখ খুব জব্দ করে বাঁধা হয়েছে ।
.
আমি পুরুষ, তাই না ?
ছিঃ ঘৃণা লাগছে নিজের উপর,
যখনই মনে পড়ছে যে আমাকে দেখতেও এই লোভাতুর রাক্ষসদের মতো দেখতে, কোন পার্থক্য নেই ।
.
একটা বড় আপু,
মাস্টার্স শেষের পথে,
বিসিএস এর প্রস্তুতিও নিচ্ছে অনেকদিন হলো,
আপুটার আপন কোন ভাই নেই,
আমাদের মতো কাউকে দেখলে আপুর "ভাইয়া" বলে ডাক দিতে ইচ্ছে করে,
তার ইচ্ছে করে "ছোটভাইটাকে একটু বুকে জড়িয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে পারতাম !
ইস, কয়েকটা চকলেট হাতের মধ্যে গুজে দিতে পারতাম !"
ওদিকে পড়াশুনাটা শেষ করেই জব এ লেগে পড়তে হবে, ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিতে হবে !!
আরো কত্তো কি !!
.
একদিন,
পহেলা বৈশাখ,
আপুটা বেরিয়েছে, ফ্রেন্ডদের সাথে অনেক ঘুরবে,
অনেক মজা করবে, বন্ধুরা অপেক্ষায় আছে আপুর জন্য, আপু পৌছুলো, সবাই মিলে ভিড়ের মধ্যে হাটছে।
হঠাৎ আপুটাকে পাওয়া যাচ্ছে না !
এই মাত্রই তো এখানে ছিলো !!!
গেল কোথায় ?
ফোনে রিং হচ্ছে, রিসিভ করছে না ।
হয়তো এত শব্দের মধ্যে শুনতে পাচ্ছে না ।
বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলো,
এখন ফোন দিলে সুইচ অফ বলছে ।
.
শেষমেশ পাওয়া গেল,
যেই আপুটা অনেক মজা করবে বলে বেরিয়েছিলো,
বন্ধুদের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে চিৎকার করে গান গাইবে ভেবেছিলো,
সেই আপুটা নিস্তেজ-নিশ্চুপ হয়ে পড়ে আছে,
মুখে হাসি নেই এখন আর,
চোখ দুটো বড় বড় হয়ে আছে,
মুখটা হা হয়ে আছে, ঠোটের কোনায় রক্ত শুকিয়ে গেছে,
গালে-বুকে রাক্ষসদের থাবার ছাপ পড়ে আছে ।
.
ছিঃ আমি পুরুষ ?
আমাদের মতো কাউকে আপু বুকে জড়িয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে চেয়েছিলো ?
একগাদা চকলেট কিনে হাতে গুজে দিতে চেয়েছিলো !
.
ভাবলে আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ বন্ধ হয়ে আসে,
ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে হয়,
বলতে ইচ্ছে হয়,
আপু, আমাকে দেখতেও ওই রাক্ষস গুলোর মতো,
আমার কাছে এসো না......
.
.
.
লেখাঃ
#_পথ_হারা_পথিক_
০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:০৯
পথ হারা পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু......
২| ০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৮
কাশফুল মন (আহমদ) বলেছেন: সুন্দর
০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯
পথ হারা পথিক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ...
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ১১:১৩
প্রথমকথা বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।