নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন....

আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই

পথেরদাবী

সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)

পথেরদাবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষা নাগালের বাইরে গেলে কার লাভ কার ক্ষতি?

০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৫

আমি যখন এ লেখাটি লিখছি তখন একটা খুনকে কেন্দ্র করে মনের ভিতরে চলছে এক চাপা ক্রন্দন, একই সাথে চলছে বিক্ষোভ। যদিও কাউকে বলতে পারছিলাম না সে কথা, প্রকাশও করতে পারছিলাম না। কার কাছেই বা বলবো? শোনার মতো কেউ কি আছে? বিচার কার কাছে চাইবো? বিচার করবার মতো কেউ কি আছে? নেই, কেউ নেই। তাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছি, শুনে যাচ্ছি সব। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে না ঠিকই, কিন্তু চোখের কোণে জোর করে জল জমিয়ে রাখতে রাখতে রক্তচক্ষু নিয়ে পার করছি দিন। এই দিন পার করা শুরু হয়েছে অনেকদিন হলো। আমি শুধু লাশ গুনছি। আর কতো গুনতে হবে কে জানে? অথবা আমাকেসহ সে গননা নতুন সংখ্যা তৈরি করে কিনা সেটাই বা কীভাবে এড়িয়ে যাই। সে যাই হোক, এই লেখায় আমি আর এসব নিয়ে বলতে চাই না। অথবা এসব নিয়ে বলতেও বসিনি। বলতে বসেছি অন্য কিছু, বলতে বসেছি কি করে আমার বা আমাদের চিন্তাকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেসব কথা।

আমি গত ক’মাস ধরে ঠিকঠাক ভাবে কিছু লিখতে পারছি না, আড্ডা দিতে পারছি না, ব্ই পড়তে পারছি না, গান তুলতে পারছি না, পারছি না প্রাণ খুলে গাইতে। প্রশ্ন আসতে পারে কেন? প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। কারণ আমরা অনেকে আজ রাজপথে। অর্থাৎ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমি যেমন অনেক কিছু করতে পারছি না একটু স্বাভাবিক এবং সুস্থ মস্তিস্কে; ঠিক তেমনি আজ যারা শিক্ষার উপর ৭.৫% ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে রাজপথে আছেন, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গড়ে তুলছেন দুর্বার প্রতিরোধ, আমার মতো তারাও কেউ ভালো নেই। কেননা, ভালো থাকার সময়ও নয় এটি।

আমরা যারা এই আন্দোলনে আছি তারা কেউ শখ করে এ আন্দোলনে আসিনি। এসেছি তখন, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল তো অনেক পরের কথা, সবার আগে আমরা মনে করছি শিক্ষার উপর ভ্যাট আরোপ কোনো যুক্তিতেই পড়ে না। এটা এমন একটি দেশ যেখানে এমপি মন্ত্রিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করা হয় আর আমরা যারা লেখাপড়া করছি তাদের দিতে হচ্ছে ভ্যাট। এমন অশ্লীল বৈপরীত্ব পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নাই? আমরা ভাবি এসব অসঙ্গতি আমরা বুঝলেও এত উচ্চ পর্যায়ে বসে নীতিনির্ধারকরা কেন বোঝেন না? আমাদের উন্নয়নের কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু মানুষ যে তাদের এসব কর্মকান্ডে সবসময় ‘ছি ছি’ করে সে বিষয়ে তাদের কি কোন লজ্জাবোধ নেই? তারা কি এতোটাই নির্লজ্জ?

এমন উল্টো রথে দেশ কেন চলছে সেই প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা প্রথমে হতাশ হলেও বুক টানটান করে সোজা রথে দেশকে আনার এক চেষ্টা চালানোর উদ্যোগ নেই। অন্তত এই ভ্যাট ইস্যুতে। সেই ধারাবাহিকতায় “নো ভ্যাট অন এডুকেশন”। আমরা সব তরুণ। আমরা সব গণজাগরণ প্রজন্ম। হ্যা, আমি এই প্রজন্মকে গণজাগরণ প্রজন্মই বলবো। কেনোনা সেই নব্বইয়ের পর তরুণদের এমন জাগরণ এর মাঝে কেউ আর দেখেছে বলে আমার জানা নেই। সেই প্রজন্মই আজ প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে। তারা বুঝতে শিখেছে অন্যায়কে যতই প্রশ্রয় দেয়া হবে ততই তা বড় হতে হতে অজগর সাঁপে পরিণত হবে। যেমনটা ১৯৭১ এর পর স্বাধীনতা বিরোধীরা হয়েছে। হঠাৎ কেন একথা বললাম, অনেকেই বলতে পারেন। কিন্তু বলার পেছনে কারণ আছে। একবার ভাবুন আজ যে অযৌক্তিক ভ্যাট আমাদের উপর বসালো সরকার সে ভ্যাট যদি বহাল থাকে তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ৭.৫% কত তে গিয়ে ঠেকবে? প্রতি সেমিস্টারে যে হারে সেমিস্টার ফি বাড়ে সে হারে ভ্যাট দিতে গেলে তো ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা বলে আর কিছু সাধারনের নাগালে থাকবে না।

এভাবে শিক্ষাকে পণ্যে রুপান্তর করার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে? তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে সত্যিই আমি কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাইনি। বারবার সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে শুনতে পাচ্ছি, যেহেতু শিক্ষার্থীরা বিপুল পরিমান টাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দিতে পারে সেহেতু আমাদেরও(সরকারকে) দিতে হবে। বাহ! কি চমৎকার শত্রুভাবাপন্ন বক্তব্য। আমরা যেন ইচ্ছে করে এসব বিশ্ববিদ্যালয় নামক মুরগীর খোঁয়াড়ে ভর্তি হতে চেয়েছি? যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত সিট নেই সেহেতু আমাদের পড়তে হচ্ছে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাও আবার পড়ছি নিজের বাবার টাকায়। আচ্ছা ধরেই নিলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবসা করছে প্রচুর। কিন্তু প্রশ্ন আসে মনে, এটা না অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিলো ১৯৯২ সালে? ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের যে সংশোধনী করা হয়েছে সেখানেওতো শিক্ষার্থী ফি’কে প্রধান আয়ের উৎস বলা হয়নি। আইনের ধারা-৪১ কি তবে লোক দেখানো? ‘ইউজিসি’ নামক প্রতিষ্ঠানটি কি করছে? অলাভজনক প্রতিষ্ঠান লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপ পায় কি করে? প্রতি সেমিস্টারে কিসের ভিত্তিতে ফি বাড়ানোর সুযোগ পায় প্রতিষ্ঠানগুলো? একই বিষয়ে স্নাতক করতে কোথাও সাত থেকে আট লাখ টাকা লাগলে কোথাও আবার দেড় দুই লাখ টাকায় লেখাপড়া শেষ হয় কি করে? টাকার পরিমান নির্ধারনের মাপকাঠি কি? দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ কি? দেশে কি শিক্ষা মন্ত্রনালয় বলে কিছু আছে? সে মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর কি আদৌ কোনো ক্ষমতা আছে? বাজেট ঘাটতি পূরনের আরো অনেক খাত থাকতে এইখানেই কেনো ভ্যাট আরোপ? নাকি শুরুতে যে প্রশ্ন করেছি, আমাদের কি অন্ধ করে রাখতে চাইছে কেউ? কোন অদৃশ্য শক্তি কি চাইছে শিক্ষা নামক বস্তুটা দিন দিন সাধারনের নাগালের বাইরে চলে যাক?

শিক্ষা নাগালের বাইরে গেলে কার লাভ কার ক্ষতি? এমন প্রশ্নের উত্তর মোটামুটি আমি হালকা হলেও খুঁজে পেয়েছি। লাভ হলো তাদের যারা দেশকে হীরক রাজার দেশে পরিনত করতে চায়। যারা চায় এমন এক শ্রেনীর মানুষ তৈরি হবে যারা কোনো প্রশ্ন করবে না। শুধু শুনবে। শুধুমাত্র জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করবে। আর তাতে ক্ষতি হবে এই দেশটার। মজার বিষয় হলো, দেশের ক্ষতি হলে কারইবা কি আসবে যাবে? এদেশের নীতি নির্ধারকরা তো নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। দেশ নিয়ে তাদের ভাববার সময় কোথায়? তাদের সন্তানরা লেখাপড়া তো আর এ দেশে করে না। এছাড়া যে দেশের রাজনীতিকরা সম্পূর্ণ নিজেদের প্রয়োজনে নামে বেনামে হরতাল-অবরোধ ডেকে পেট্রোল বোমা, বাসে আগুন, গান পাউডার ঢেলে মানুষ মারে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যহত করে, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারে না সে দেশে শিক্ষায় ভ্যাট অনেক ক্ষেত্রে "একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাও" মনে হতে পারে।

আমি মাঝে মাঝে ভাবি, যারা যুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? তারা কি জানতেন যে সংবিধানকে এভাবে লঙ্ঘন করা হবে? শোষনহীন সমাজের অর্থ কি বর্তমানে যা ঘটছে তা? তাহলে মহান সংবিধানে এমন গালভরা কথা কেন লিখে রাখা হয়েছে? ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি কোর্স’ তো প্রায় সবাই প্রতিযোগিতা করে কমপ্লিট করেছে, এখন সেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানকে লঙ্ঘন এবং বিকৃতির প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। এমন আরো কতকিছু কতদিন চলবে তা আমাদের জানা নাই, তবে শিক্ষায় ভ্যাট আমরা কোনভাবেই মানতে পারছি না এটুকু বলতে পারি। তাই এই প্রতিবাদ এই প্রতিরোধ। আমরা এই লড়াইয়ে জিতবো না হারবো তা জানিনা। তবে এর শেষ আমরা দেখেই ছাড়বো। মহামন্য রাষ্ট্রপতিকে দেয়া স্মারকলিপির একদম শেষে আমরা লিখেছিলাম; ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ মাটিতেই লাখো শহীদের জন্ম। সেই মাটির সন্তানেরা কখনো অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মানেনি, মানবেও না।’ সবশেষে একটা কথা মনে পড়ে গেলো। কলেজে পড়া অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে যখন কলেজে যেতাম তখন দেয়ালে আঁকা দুটো লাইন আমাকে সব সময় টানতো...

জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ,
মৃত্যু সেখানে শেষ কথা নয়।

এখানে দুটো লাইনকে ‘লেখা’ না বলে আঁকা এ কারনে বললাম, এই দু’টো লাইনকে কখনো আমার শুধু কথা মনে হয়নি, কতগুলো শব্দ মনে হয়নি; মনে হয়েছে প্রতিবাদের একটি চিত্রকল্প আঁকা হয়েছে দেয়ালে। যে চিত্রকল্প আজো মনের মধ্যে আগুন জ্বালায় যখন দেখি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে কোন অন্যায় ঘটতে থাকে। তখনই প্রতিবাদে সোচ্চার হই তাদের পক্ষে। হোক সে মুসলমান, হোক সে হিন্দু অথবা পাবলিক অথবা প্রাইভেট।

(০৯ আগস্ট ২০১৫, পল্টন)

(লেখাটি প্রিয় ডটকমে ০৯ আগস্ট ২০১৫ তে প্রকাশিত..)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


বুড়ো মুহিতের আর পড়তে হবে না; তাই, ছোট-মগজের থেকে শিক্ষার উপর ভেট দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.