![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংস্কৃতিক কর্মী শিল্প তৈরি করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন..... তবে শিল্পীর শিল্প তৈরি হওয়া চাই-ই-চাই.......সাংস্কৃতিক কর্মীর মূল কাজ শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম এবং জনগনের মধ্যে মেল বন্ধন অর্থাৎ সহজ ভাষায় বললে, সেতু তৈরি করা..... আর এই সেতু তৈরির কাজ সাংস্কৃতিক কর্মীর করা চাই ই-চাই....এখানে ফাঁকিবাজির সুযোগ নাই.....সুযোগ নাই শিল্পীর মতো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা করার..... সাংস্কৃতিক কর্মীকে তাই মাঝে মাঝে শিল্পীর চাইতে সংগঠকের ভুমিকায় বেশি অবতীর্ণ হন...... এতে দোষের কিছু দেখি না....সব ঠিকঠাক থাকলে সাংস্কৃতিক কর্মী নামক শব্দের উৎপত্তি ঘটতো না..... সবাই শিল্প চর্চাই করতো.....শিল্প চর্চা করতে এসে কেউ বিপ্লবের কথা বলতো না..... যেহেতু বিপ্লব একটি কঠিন সত্য...... বিপ্লব দীর্ঘজিবী হোক.....\\\\\\\\\\\\\\\\n(১৪ মার্চ ২০১৫, পল্টন ...........)
"নকশাবিহীন আধুনিকতা....."
একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি।কিছুদিন আগে আমরা একদল বন্ধু জাতীয় জাদুঘর যাই। বেশ দুষ্টমির ছলেই জাদুঘর পরিদর্শন। প্রথমে আমার যাবার তেমন ইচ্ছা না থাকলেও শেষে ভাবলাম যাই ঘুরে আসি। জাদুঘরে প্রবেশের পর একটা একটা কক্ষ যখন পরিদর্শন করছি তখন এক ধরনের লজ্জা আর আত্মপরিচয়হীনতায় ভুগতে শুরু করলাম। আমি দেখতে পেলাম সেই পুরোনো দিনের নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, শাড়ি, নানান ধরনের নৌকা আরো বহু কিছু। এসব দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা নারিকেল কাটার কোরানী(নোয়াখালির ভাষায়) দেখতে পেলাম। এতো সুন্দর কারুকার্যমন্ডিত। সেটা দেখেই মুলত আমার মাথায় একটা প্রশ্ন আসে “আমরা কি আসলে আধুনিক”? নারিকেল কাটার একটা যন্ত্র দেখে কেনো এমন প্রশ্ন আসলো সে উত্তরে পরে যাবো।
জাদুঘরে দেখছিলাম নৌকাগুলো। ঠিকই আছে; নৌকাগুলো এখন জাদুঘরেই থাকবে এর কারণ আমাদের সবার জানা। আমি দেখছিলাম অন্য বিষয়, ভাবছিলাম এতো সৃজনশীল গ্রামের এমন অশিক্ষত মানুষগুলো কি করে হলো? এতো নকশা এদের মাথায় কি করে এলো? অবাক হয়ে দেখছিলাম জমিদারদের খাট। জমিদাররা সৌখিন ছিলেন তা মানি, কিন্তু একটা খাটের পায়ায় এতো অপরুপ কারুকার্য কি করে করলো? যদি আজ থেকে শত বছর আগে এমন সকল কিছুতে এতো অপরুপ নকশা হতে পারে তবে এখতো আরে বেশি হবার কথা। কিন্তু কি দেখছি চারপাশে?
দু’জন মানুষের সাথে আমার এ শহরের মডার্ণ আর্কিটেক্চার নিয়ে আলাপ হয়। একজন আমার বন্ধু যে কিনা স্থাপত্যবিদ্যার ছাত্র ছিলো আরেকজন আমার ছোট ভাই চারুকলায় এখন পড়ছে। তাদের দু’জনের কাছেই একটি কমন প্রশ্ন ছিলো। আমি জানতে চেয়েছি বাইরের দেশের কেউ যদি এসে বলে তোমাদের আর্কিটেক্চার কোনগুলো তখন আমরা কি দেখাবো? দু’জনই আমাকে বললো দেখানোর কিছু নাই। অথবা দেখাতে চাইলে পশ্চিমা চোখে বানানো বাড়িঘরগুলোই দেখাতে হবে। আমি যেবার পানাম নগরে গিয়েছি সেবার পানাম নগরের রাস্তার মাথায় প্রথম যথন পা দেই তখন কেনো যেনো মনে হলো পরিচিত একটা নগরে এসেছি। এখানে যেনো আগে বহুবার এসেছি। এটা একধরনের আবেগি একটি অনুভতি। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা আমার চোখে লেগেছে তা হলো বাড়িগুলোর গায়ে করা নানান নকশা। এসব স্থাপত্য একেবারে আমাদের বলা ঠিক হবে না। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যেসব শাসক এখানে শাষন করেছেন তারা শুধু শাষণ করেননি সাথে নিয়ে এসেছিলেন তাদের শিল্প সংস্কৃতি। এসব নকশায় তারই প্রতিফলন। কিন্তু সেটা আজকের আলোচ্য বিষয়না। আমি ভাবছি সৃজনশীলতার জায়গাটা নিয়ে।
ধনীক শ্রেনী বাদেও যদি আমরা সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের কথা বলি তবে তাদের নিজস্ব হাতে তৈরী নৌকা, নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র সকল কিছুতেই ছিলো নকশার প্রধান্য। একটি বিষয়কে কতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় সেটাই ছিলো তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। অন্তত জাদুঘর পরিদর্শন করে আমি সেটাই বুঝেছি। ধনী অথবা গরিব যে শ্রেনী হোক না কেনো নান্দনীকতায় তারা যে সামর্থসাধ্য চেষ্টা করতেন তাতে আমার সন্দেহ নাই।
একটা বিষয়তো সত্য যে নদীপাড়গুলোতে বাজার বসতো একসময়। এখন নদী নাই, বাজার নাই, মানুষের আড্ডা নাই। আড্ডা নাইতো চিন্তা নাই। এই জটিল জীবন যাপনে আমরা কবে ঢুকেছি কে জানে। কিন্তু আমরা কি খেয়াল করেছি আমাদের বৈচিত্রতা নাই। একটু আপনার রান্না ঘরের বাসন-কোসনগুলো কি দেখবেন? বিছানার চাদর? যে খাটে ঘুমাচ্ছেন? যে বাড়িতে দিনের পর দিন থাকছেন একটু দেখাতে পারবেন ভিন্ন কিছু? সম্ভব না। কেননা আধুনিকতার জোয়ারে আমাদের শৈল্পিকমন হারিয়ে গেছে।
আমরা চলচ্চিত্রে একটি সুন্দর গানের চাইতে নারী দেহ প্রদর্শনে অধিক আগ্রহী। কিন্তু দেখুন লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে আনোয়ার হোসেন যখন চর দখলে যাবার পূর্বে তার স্ত্রীকে গাল টিপে বিদায় নেয় তাতে একধরনের প্রেম আর কামুকতাই আমরা দেখি, যা বাই ন্যাচারাল। তখন বিকৃত যৌনচাহিদা জাগে না, মনে প্রেম জাগে। আমার বোনের কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। বিয়ে মানেই আনন্দ উল্লাস। আর উল্লাসের সাথে গানের একটা সম্পর্ক আছে। আবার বিয়েতে একধরনের বেদনা আছে যদি তা মেয়ের বাড়ী হয়। আমার মনের অবস্থাও সেরকমই ছিলো। কিন্তু আমি গান খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার আত্মীয়তার সুত্রের ভাই বোনেরা সবাই হিন্দি গান ছাড়ছে, আমি শুনছি। আবার কিছু বলছিলামও না। কেননা আমার এই গো ধরে বসে থাকার কোনো মানে নেই কেননা আনন্দ করতে আসা এই ছোট ছেলে মেয়েগুলোকে আমরা হিন্দি গানের অল্টারনেটিভ দিতে পারিনি।
বোনের বিয়ের কথা এই কারনে বললাম কারণ, একটু আগে চলচ্চিত্রের কথা বলছিলাম। তাই চলচ্চিত্রে আবার ফিরে যাই। গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে গোলাপীর যখন বিয়ে হয় তখন দুটো গান আমরা দেখেছিলাম। একটা ছিলো গোলাপীকে যখন হলুদ লাগায়। আরেকটি বরপক্ষ যখন আসে। দুটো গানের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, ভাষা ভিন্ন। তাই উপস্থাপনও ছিলো ভিন্ন। হলুদের সময় খুব মন খারাপ করা একটা গান আবার বরের সামনে ছিলো আনন্দ আর হাসিঠাট্টার প্রধান্য। এসব কি শুধুই সিনেমায় দেখা যেতো? আমি তো বলবো না, ছোটবেলায় আমার চাচাতো জ্যাঠাত বোনদের বিয়েতে যখন গ্রামে যেতাম ঠিক একই ধরনের দৃশ্য দেখতাম। এই গানগুলো নিশ্চই গ্রামের এই নিম্ন বর্গের লোকেরাই তৈরি করতো, আর পরিচালক তা প্রত্যক্ষ করেছেন বলেই তো্ সিনেমায় নিয়ে এসেছেন।
সিনেমা, বিয়ে, গান এসব নিয়ে এতো কথা এই কারনে যে, একসময় আমাদের একটি শৈল্পিক মন ছিলো যে মনে নানান রঙের নকশা খেলা করতো। নকশা ছিলো মুলতো মনে, তারপর বিভিন্ন ফর্মে তা প্রকাশ পেতো। আর সে হাওয়া থেকে সমাজের কেউই দুরে ছিলেন না। মূল কথা গোটা সমাজে সৃজনশীলতার চর্চা হতো এবং এর মর্যাদা দেয়া হতো। কিন্তু এখন? এই আধুনিক সমাজ কি করে এগিয়েছে সেটা ভেবেই আমি লজ্জিত। কেননা ধার করা সংস্কৃতির উপর আমরা এখন আছি। তাতেও সমস্যা নাই যদি না তাতে নূন্যতম শিল্পবোধ, মানবিক বোধ বলে কিছু থাকতো।
আধুনিকতার যে দম্ভ আমাদের, আমারতো মনে হয় জাদুঘরগুলো ঘুরে আসলে সে দম্ভ একদম চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যাবে। যতোদিন না সঠিক সাহিত্য, চলচ্চিত্র, গান, চিত্রকর্ম বা যেকোন শিল্পকর্ম নিয়ে আলাপ হবে না, বাহাস হবে না ততদিন এরকম চলতেই থাকবে। আমরা এখন যা দেখছি সব পশ্চিমা চোখেই দেখছি। আমাদের সফলতার স্ট্যান্ডার্ড শেষ পশ্চিমা যেকোন ব্যারোমিটারেই মাপা হয়। আমাদের ভেতরের সম্ভাবনাগুলো বা মৌলিকত্ব আমরা না বুঝলেও শাষকরা চিরকাল বুঝেছে বলেই তারা আমাদের সব লুট করেছে, পরিণত করে রেখেছে দাসে। নয়তো মসলিন কাপড় যেনো বুনতে না পারি সে জন্য হাত কেটে দিবে কেনো? নিজের লেখা একটি কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই....
“স্মার্টফোন….”
শেষ নকশি কাঁথায় কবে ঘুমিয়েছি কে জানে,
শীতল পাটি এখন জাদুঘরের তিন তলায়-
মাটি থেকে উঁচুতে উঠেছে, জাতে ওঠা একেই বলে বোধ হয়।
নদী তীরের বজরাগুলো এখন কোথায় জানতে মন চায়,
বাড়ীর সদর দরজায় এখন আর কোনো কাচারী ঘর নাই।
বিশেষ দিবসে শহরের অলিগলিগুলো-
এখন আর সাজায় না কেউ।
এই যে সেকেলে মন শুধু পড়ে থাকে
বিরাট বটগাছের নিচে মহীষের দুধের চায়ের পানে;
আমার কি আর আধুনিক হওয়া চলে?
তবু স্মার্ট দুনিয়ার ভ্রান্তি বিলাসে আমারও একটা স্মার্টফোন চাই।
দ্বন্দ?
এতো চিরকাল সহোদরা পুরানের সাথে নতুনের,
কিন্তু ভাবি নতুনের মাঝে নকশা নাই কোনো,নাই কোন ভিন্নতা;
একই ছাঁচে বাঁধা, বারেবারে রিপ্রোডাকশন।
তবে এতো দেমাগ কিসের-
আধুনিকের.....!? (কবিতা প্রকাশ ৩০ আগস্ট ২০১৫)
(০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, পল্টন)
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১০
পথেরদাবী বলেছেন: ধন্যবাদ..
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৬
মহান অতন্দ্র বলেছেন: "আমি জানতে চেয়েছি বাইরের দেশের কেউ যদি এসে বলে তোমাদের আর্কিটেক্চার কোনগুলো তখন আমরা কি দেখাবো? দু’জনই আমাকে বললো দেখানোর কিছু নাই" "কেননা আধুনিকতার জোয়ারে আমাদের শৈল্পিকমন হারিয়ে গেছে।"
খুব সুন্দর লেখা ও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন। লেখককে ধন্যবাদ অনেক।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১০
পথেরদাবী বলেছেন: ধন্যবাদ..।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১
উম্মে সালমা কলি বলেছেন: অসাধারণ