নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্পের ছাত্র...

প্রশান্ত মন্ডল হেমন্ত

আমি একজন শিল্পের শিক্ষার্থী। শিল্প নিয়ে জানতে ও জানাতে ভালোবাসি।

প্রশান্ত মন্ডল হেমন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চ রেনেসাঁর শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সংক্ষিপ্ত জীবন ও শিল্পকর্ম

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০১

রেনেসাঁ যে ক’জন মহান ব্যক্তির সৃষ্টি করেছিল তাঁর মধ্যে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ ছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। উচ্চ রেনেসাঁ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ তিনজন সৃজনশীল শিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য ও বিশ্বজনীন। তাঁকে শুধু রেনেসাঁ যুগেই নয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন শিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি এমন মানসিক শক্তিতে বলিয়ান ছিলেন যে সেসময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ছিলেন এক বিস্ময়।

তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি এমন উচ্চস্তরের ছিল যে, সে সময়ের দেহ বিজ্ঞান, নৌ-বিদ্যা এবং বিংশ শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক ছিলেন তিনি। কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তিনি স্থির থাকতে পারেননি। তাঁর কাজের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মূলে রয়েছে রঙের ব্যবহার, উদ্ভাবনী কৌশল, শরীরস্থান, আলো, উদ্ভিদতত্ত্ব এবং ভূতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর বিস্তারিত জ্ঞান। একাধারে কবি, দার্শনিক, প্রকৌশলী, স্থপতিবিদ, ভাষ্কর্য, সঙ্গীতজ্ঞ, সমরযন্ত্রশিল্পী, দেহতত্ত্ববিদসহ অন্যান্য পরিচয়েও সুবিদিত এই মানব ইতিহাসের বহু আবিষ্কারের পথিকৃৎ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণোজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন ।

সংক্ষিপ্ত জীবনী: লিওনার্দো দি সের পিয়েরো দা ভিঞ্চি ১৪৫২ সালের ১৫ই এপ্রিল রাত তিনটায় ফ্লোরেন্সের অদূরবর্তী ভিঞ্চি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম পিয়েরে দা ভিঞ্চি এবং মাতার নাম ক্যাতারিনা।
লিওনার্দোর কৈশোর জীবন সম্পর্কে খুবই অল্প জানা গিয়েছে। তাঁর জীবনের প্রথম ৫ বছর কেটেছে আনসিয়ানো-র একটি ছোট্ট গ্রামে। তাঁরপর তিনি চলে যান ফ্রান্সিসকো-তে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোন শিক্ষা গ্রহণ না করা এই শিল্পীর লেখাপড়ার সবকিছুই ঘরোয়াভাবে। কৈশোরে লিওনার্দোর ছিল প্রকৃতির প্রতি ভীষণ টান। এজন্য তিনি বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে কাটাতে পছন্দ করতেন। ১৪৬৬ সালে তাঁর বয়স যখন ১৪ তখন তাঁকে তৎকালীন সফল ভাষ্কর, চিত্রকর ও স্বর্ণকার ডেল ভেরোচ্চির কাছে চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে পাঠানো হয়। ভেরোচ্চির তত্ত্বাবধানে কাজ করে লিওনার্দো হাতে কলমে প্রচুর কারিগরি জ্ঞানার্জন করেন। ১৪৭৪ সালে ভেরোচ্চি পিসতোয়া গীর্জায় কাজ পেলে লিওনার্দো সেখানে তাঁকে সাহায্য করেন। এখানেই তিনি বেদির পশ্চিম দিকে লম্বালম্বি ‘অ্যান্যানসিয়েশন’ নামে পরিচিত ছবিটি আঁকেন। ১৪৭২ সালে ২০ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসক এবং চিত্রকরদের সংঘ ‘গিল্ড অব সেন্ট লুক’ এর পরিচালক হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে ভেরোচ্চির সাথে কাজ করার পাশাপাশি ১৪৭৮ থেকে ১৪৮১ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করেছেন। এই সময়ের মধ্যেই ফ্লোরেন্সের রাস্তায় প্রকাশ্যে ফাঁসির আসামীর ড্রইং করেন এবং Adoration of Magai চিত্রটি অঙ্কন করেন। এরপর নেপলবাসী ও ফ্লোরেন্সের মধ্যে কোন্দল শুরু হলে সেখানে শিল্পকর্ম তৈরীতে ব্যাঘাত ঘটে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ফ্লোরেন্সকে রক্ষা করার জন্য নতুন সমরাস্ত্র আবিষ্কারে মন দেন। বহু নলাবিশিষ্ট বন্দুক আবিষ্কারও করলেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর নবাবিষ্কৃত অস্ত্রের কোন গুরুত্ব দিলেন না। তখন তাঁর বয়স ত্রিশের মতো হয়ে গেলেও ফ্লোরেন্সে কোন সম্ভাবনা না দেখে চাকরি প্রাপ্তির আশায় মিলানে যান। এরপর ১৪৮২ সালে তিনি ঘোড়ার মাথার খুলির আকৃতির একটি বীণা তৈরী করেন এবং এটি মিলানের ডিউকের দরবারে বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। ১৪৮২ থেকে ১৪৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি মিলানেই কাজ করেছেন। এ সময়ে তিনি লুডোভিকোর রক্ষিতা সিসিলিয়া গেলিরানির ‘Lady with ab Ermin’ শিরোনামের প্রতিকৃতিটি আঁকেন। এ সময়ে আঁকা তাঁর আরো একটি ছবি হলো ‘ভার্জিন অব দ্যা রকস্’। এরপর তিনি অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ডিউকের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। কিন্তু ডিউক তখন রাজনৈতিক ভাবনায় মশগুল থাকার কারণে শিল্পীর প্রতি মনোনিবেশ করতে পারলেন না। এরপর লিওনার্দো তাঁর কাছে অস্ত্রনির্মাতা হিসেবে ১০ দফার একটি পত্র পেশ করেন। কিছুকাল পর ডিউক তাঁর এই আবেদনে সাড়া দেন। পরবর্তীতে তিনি Painter & Enginer of the Ducke নামে খ্যাতি লাভ করেন এবং উদ্ভাবনী শক্তির পূর্ণ বিকাশ সাধন করে শহরকে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য একটি স্থানান্তর যোগ্য ব্যারিকেড তৈরিতে সক্ষম হন। এরই মধ্যে মিলান মহামারী প্লেগে আক্রান্ত হলে তিনি স্বাস্থ্যসম্মত এক নতুন নগর পরিকল্পনা করেন। এরপর ১৪৯৫-এ সান্তা মারিয়া গেৎসী গির্জার দেয়ালে ‘দ্যা লাস্ট সাপার’ চিত্রটি আঁকেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ আঠারো বছর পর ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় ফ্লোরেন্সে প্রত্যাবর্তন করেন। এই ১৮ বছরের মধ্যে তিনি ৬টি চিত্র অঙ্কন করেন। ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে তিনি বিখ্যাত প্রতিকৃতি ‘মোনালিসা’ অঙ্কন করেন। তিনিই সর্ব প্রথম এমন একটি প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন যাতে উভয় হাতই প্রদর্শিত হয়েছে। এরমধ্যে তিনি পুনরায় চিত্রকরদের গিল্ডে যোগ দিলেন। ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে শিল্পী মিকেল এঞ্জেলোর ভাস্কর্য ডেভিড স্থাপনের জন্য শিল্পীদের পরামর্শ সভায় আমন্ত্রিত হন। এছাড়াও তিনি ১৫০৫ সালের দিকে উড্ডন সক্ষম যন্ত্রের ডিজাইন করেছিলেন। যার ডিজাইন থেকে বর্তমানে আধুনিক বিমান নির্মান সম্ভব হয়েছে।
তিনি পাখির গতিবিধি এবং মানুষের রক্ত সঞ্চালন গতিবিধি সম্পর্কে গবেষণা করেন। পোপের কঠোর অনুশাসন উপেক্ষা করে সত্য প্রকাশে তিনি সর্বপ্রথম মানব দেহের পুঙ্খানুপুঙ্খ শব ব্যাবচ্ছেদ করে প্রাচীন ও পুরাতন মতবাদকে ভ্রান্ত প্রমাণ করেন। তিনিই প্রথম মায়ের গর্ভে এ্যামব্রায়ো ইন দ্যা এম্ব নামে ভ্রæনের চিত্র অঙ্কনের চেষ্টা করেন। যা ছিল তাঁর যুগান্তকারী সৃষ্টি। এছাড়াও তিনি মনের দুঃখ, যন্ত্রণা, আনন্দ, ক্ষিপ্ততা, রোমান্টিকতা সকল বিষয়ে মানুষের মুখমন্ডলের যে প্রভাব ফেলে তাঁর উপর স্কেচ রচনা করেন। এভাবে প্রচন্ড মানসিক শক্তি তাঁর চিত্রকলাকে শুষ্ক ও শক্ত পদ্ধতি থেকে অনেক বেশী উত্তরণ করেছিল। কাপড়ের ভাঁজ, মাটি ও পাথরের বাস্তব চিত্রায়ন তাঁর চিত্রকে গবেষণার নতুন মাত্রা যোগ করে। মানুষের অতি অভিব্যাক্তি মুক ও বধির নিয়ে প্রচুর স্কেচও করেছেন। সম্ভবত সবকিছু নিখুঁত করতে চাইতেন বলে তিনি তাঁর দীর্ঘ জীবনে খুব কম চিত্রই শেষ করতে পেরেছেন।
১৫১৯ সালের ২রা মে বর্তমান ফ্রান্সের ইন্দ্রে-এত-লোঁরের ‘ক্লস লুইস’ ভবনে থাকা কালীন এই বিশ্বজনীন শিল্পী মৃত্যু বরণ করেন।


নিম্নে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির কিছু শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. দ্যা লাস্ট সাপার:
১৪৯৫-১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর বিচিত্র ধর্মী নিরীক্ষার নেশায় ফ্রেসকোর বদলে প্লাস্টারের তেলে গোলা রং লাগিয়ে টেম্পেরায় মিলানের সান্তা মারিয়া দেল্লা গ্রেৎসী গীর্জার ভোজনশালার দেয়ালে এই চিত্রটি আঁকেন। উচ্চ রেনেসাঁ যুগে প্রথম ফিগার কম্পোজিশনের এই চিত্রটির উপজীব্য বাইবেল থেকে নেয়া। চিত্রটিতে যীশু তাঁর ১২ জন শিষ্য নিয়ে এক সান্ধ্য ভোজে বসেছেন। তাঁরা সাদামাটা এক বড় কক্ষে লম্বা টেবিলে উপবিষ্ট। যার মধ্যস্থানে শান্ত, সৌম্য, অবিচল ও নিশঙ্ক মূর্তি যীশু। সকলের সামনে খাবার সাজানো। উপরে ছাদের অংশ বিশেষ এবং দুপাশের দেওয়ালে সকল কিছুতে বৈজ্ঞানিক পরিপ্রেক্ষিতের ব্যবহারে ক্রমান্বয়ে দূরে অপসৃয়মান। যিশুর পিছনে একটি খোলা দরজা ও দু’টি জানালা রয়েছে। যেগুলোর মধ্য দিয়ে বহু দূরের পাহাড়-পর্বত দৃশ্যমান।

মানব ত্রাতা ঈশ্বরের পুত্র যিশু অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন। তাই ক্রুশবিদ্ধ হবার পূর্বেই তিনি তাঁর নিয়তি জানতে পারেন। যীশু গম্ভীর ও হাত প্রাসারিত করে যখন বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে একজন মাত্র কয়েকটি মুদ্রার জন্য আমাকে শত্রæর হাতে সমর্পণ করবে।” সেই আকস্মিক ঘোষনার পর মুহূর্তের দৃশ্যই ‘লাস্ট সাপার’। ১২ জন শিষ্যের মধ্যে ৩ জন করে ৪ টি ভাগে ভাগ করে পরস্পরের সাথে ‘সেটি কি আমি!’ অভিব্যাক্তিকে প্রতিপাদ্য করে শিল্পী অত্যন্ত দক্ষতাঁর সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাছাড়া দিনের শেষে বিলীয়মান আলো প্রতিভাত হয়ে যিশুর চারদিকে এক জ্যোতির্ময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে বিশ্বাসঘাত, ঘৃণ্য পাপী জুডাসের কালো ছায়ায় আবৃত মুখমন্ডল ও হাতে টাকার থলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমগ্র চিত্রপটে শিল্পী যতগুলো চরিত্র ব্যবহার করেছেন তাদের মুখের অভিব্যাক্তি কোথাও ভাবমূর্তির ধারাবাহিকতা নষ্ট করেনি।
২. ভার্জিন অব দ্যা রকস্:
১৪৮৫ সালের দিকে লিওনার্দো প্রথমবার মিলানে অবস্থানকালে ৭৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৪৩ ইঞ্চি প্রস্থ বিশিষ্ট এই বিখ্যাত চিত্রটি অঙ্কন করেন। এর দুটি সংস্করণ। বর্তমানে একটি সংস্করণ প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এ চিত্রের আঙ্গিক মূলত তাঁর পূর্ববতী রেনেসাঁ শিল্পী ফ্রা ফিলিপ্পো লিপ্পির অনুসারে অঙ্কিত। এর কম্পোজিশনটি প্রচীনপন্থী পিরামিডাকৃতির। বহির্রেখার প্রয়োগ এখানে প্রায় তিরোহিত। চিত্রটিতে মাতা মেরি আর শিশু যিশু বসে আছেন- নিকটে ছোট্ট জন এবং একজন স্বর্গীয় দূত। চতুর্দিকে গুহা আর কালো কালো পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঝর্ণার উজ্জ্বল নীল ও প্রাণ রসে ভরপুর গাছপালার উজ্জ্বল সবুজ রং দেখা যায়।

শিলাবেষ্টিত এক রহস্যময় পরিবেশে কুমারী মাতা একটি পাথরের বেদিতে বসে আছেন। তাঁর পায়ের কাছে শিশু সেন্ট জন। মেরির ডান হাত গভীর স্নেহে ও আশির্বাদে জনের পিঠে আরোপিত হয়েছে। অপর হাতটি আশির্বাদের ভঙ্গিতে শিশু যিশুর প্রতি প্রসারিত। এমন স্নিগ্ধ ও পবিত্র মাতৃমূর্তি ইউরোপীয় চিত্রে বড় একটা দেখা যায় না। একটু দূরে মাটিতে বসে আছেন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য ও পবিত্রতা মন্ডিত দেবদূত এবং সম্মুখে উপদেশ দানের ভঙ্গিতে শিশু যিশু। পিছনের দিকে গভীর বর্ণের ভেঙে যাওয়া টুকরো টুকরো পাথর। আলো এসে এই পাথরের টুকরোগুলোর মধ্যে পড়ে এক মায়াময় রহস্য জালের সঞ্চার করেছে।
৩. মোনালিসা:
১৫০৩-১৫০৬ সালে শিল্পী মিলান থেকে ফ্লোরেন্সে প্রত্যাবর্তনের পর তেল রঙে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন। বিশ্বের এ শ্রেষ্ঠ ছবিটির মধ্যে মোনালিসার পাতলা ও কোমল অধরে রয়েছে ক্ষীণ রহস্যপূর্ণ হাসি। জীবন্ত এ নারী শরীরের সমস্ত পরিপূর্ণতা ও ওজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই সাথে চিত্রটির উপস্থাপন এমনভাবে করা হয়েছে যে মোনালিসার দৃষ্টি সরাসরি দর্শকের দিকে নিবদ্ধ। তাঁর হাত দুটি অংকনেও শিল্পী বাস্তবতাঁর সাথে আরোপিত রূপ সৃষ্টিতে সফল হয়েছেন। এছাড়াও চিত্রের পশ্চাৎপটে রকস্ পর্বত, ভূমি, জলস্রোত, পরিপ্রেক্ষিতের গভীর দূরত্ব নিয়ে সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে।

৪. লেডি উইথ অ্যান আরমাইন:
লিওনার্দোর আঁকা এই চিত্রটিতে কোলে বেঁজির মত আরমাইনসহ একজন নারী মূর্তির অবয়ব চিত্রিত। ছবির বাম দিক থেকে তিন-চতুর্থাংশ কোণে দাঁড়ানো নারীর মুখটি তাঁর বাম দিকে রাখা। সেই সাথে তাঁর দৃষ্টি সরাসরি সম্মুখে না নিবদ্ধ রেখে বরং তা ফ্রেমের বাইরে তৃতীয় কোন বিষয়ের উপর নিবদ্ধিত। চুলগুলো মাথার দু’পাশে জড়ানে এবং কালো ব্যান্ড দিয়ে আবদ্ধ করা।

৪. দ্যা ভার্জিন এন্ড চাইল্ড উইথ সেন্ট অ্যানি এন্ড জন:
কাঠ কয়লায় আঁকা এই চিত্রটির দৈর্ঘ্য ১৩৮ সে.মি./১০১ সে.মি.। এতে ভার্জিন মেরির কোলে থাকা শিশু যিশু তাঁর কাকাতো ভাই সেন্ট জনকে ধরে আছে এবং পাশেই সেন্ট অ্যানি মেরির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছেন। সেন্ট অ্যানের পাশে জন হাঁটু গেড়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
৫. সেন্ট জেরোমি ইন দ্যা ইয়ার্নউইন্ডার:
এই চিত্রটি সেন্ট জেরোমিকে ভক্তিমূলক এক জীবন যাপনে দেখানো হয়েছে। জেরোমি ডান হাতে একটি পাথর ধরে আছেন। তাঁর গলার এবং কাঁধের পেশীগুলো স্পষ্ট, যা শিল্পীর শারীরবৃত্তীয় অংকনের ব্যবহারকে ইঙ্গিত করে। সামনে সর্পিল লেজ বিছিয়ে হিংস্রতাহীন একটি সিংহ শুয়ে আছে। বাম দিকে পটভূমিতে দূরে পাহাড় ও ঘাস আবৃত ভূমি দৃশ্যমান।

৬.The Virgin and Child with Saint Anne:
এই ছবিটিতে শিশু যিশু একটি মেষশাবক নিয়ে ক্রীড়ারত। পিছনের দিকে ম্যাডোনা ও সেন্ট অ্যানি বাৎসল্য রসে আপ্লুত হয়ে এই মধুর দৃশ্য উপভোগ করছেন। ১৫০৩ সালের দিকে আঁকা এটি পেইন্টিংটি ভিঞ্চির একটি অসমাপ্ত পেইন্টিং।

৭. এ্যামব্রায়ো ইন দ্যা উম্ব:
সাদা ও ব্রাউন পেপারে কালি কলমে এ চিত্রটি অঙ্কিত হয়েছে। শিল্পী এখানে রেখার ব্যবহারে অত্যন্ত দক্ষতা দেখিয়েছেন। মাতৃগর্ভে ভ্রুনের যে অবস্থান তিনি তা অত্যন্ত নিপুণতাঁর সাথে চিত্রিত করেছেন। শিশুটির অবস্থান দেখে মনে হয় তা একটি ছেলের। ভাবতে অবাক লাগে যে, শরীরতত্ত্ব নিয়ে নির্ধারিতভাবে আলোচনার বহু পূর্বেই মানব শিশুর জন্মের রহস্য অনুধাবন করার জন্য তিনি এই চিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন।

উপসংহার: ঈশ্বর প্রদত্ত অলৌকিক জ্ঞানের অধিকারী এই শিল্পী বহু বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। যদিও শিল্পী তাঁর জীবনে খুব কম চিত্রই শেষ করতে পেরেছেন। তাঁরপরও এই অল্প ছবির মাধ্যমে যে আবিষ্কার করেছেন তা শিল্পজগতে অকল্পনীয়।


তথ্যসূত্র:
১. লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মোবাশ্বের আলী।
২. পাশ্চাত্য শিল্পের ইতিহাস, কামাল আহমেদ।
৩. বিশ্বসভ্যতা ও শিল্পকলা, ড. রফিকুল আলম। ও
৪. ছবি: উকিপিডিয়া

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.