নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিল্পের ছাত্র...

প্রশান্ত মন্ডল হেমন্ত

আমি একজন শিল্পের শিক্ষার্থী। শিল্প নিয়ে জানতে ও জানাতে ভালোবাসি।

প্রশান্ত মন্ডল হেমন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং ও এর প্রয়োজনীয়তা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫৩

গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়টি মূলত প্রচার ও প্রকাশনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই প্রচার হতে পারে কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের, হতে পারে কোন পেশাজীবীর, হতে পারে বাণিজ্যিক কিংবা সমাজকল্যাণমূলক অথবা অন্য কোন তথ্য। এসব তথ্যের যে প্রচার পদ্ধতি রয়েছে তাই পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর আওতাভূক্ত। মানুষকে কোন কিছুর সম্পর্কে জ্ঞাত করার প্রয়াস থেকেই এর জন্ম।
পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং: Publicity শব্দের অর্থ প্রচার আর Campaigning শব্দের অর্থ কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পরিকল্পিত ভাবে অভিযান বা প্রচারাভিযান। কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পণ্যকে দেশে আপামর জনসাধারণের ভেতরে তথা ব্যাপক পরিচিতির জন্য রেডিও, টেলিভিশন, স্যাটেলাইট, ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং, লিফলেট, বুকলেট, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদির সাহায্যে ব্যাপক যে প্রচারাভিযান করা হয় তাকেই Publicity Campaigning বলে।
প্রচার মাধ্যম: পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এ প্রচার মাধ্যম হিসেবে পোস্টার, ব্যানার, স্টিকার, লীফলেট, বুকলেট, পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, স্যাটেলাইট, বিলবোর্ড, হোর্ডিং, সিনেমা, রেডিও, ইন্টারনেট, ভ্রাম্যমান চলচ্চিত্র, পঞ্জিকা, ডায়েরি ইত্যাদিকে ব্যবহার করা হয়।
উদ্দেশ্য এবং শ্রেণীবিভাগ: পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর মূল উদ্দেশ্য হলো পণ্যের বহুবিধ ব্যবহার সম্পর্কে মানুষকে জ্ঞাত করা। এই পাবলিসিটি বিভিন্নভাবে করা যায়। নিচে এর তিনটি শ্রেণীবিভাগ উল্লেখ করা হলো-
১. শ্রবণ বিষয়ক: এই মাধ্যমে রেডিওকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।
২. চলমান দৃশ্য বিষয়ক: টেলিভিশন, সিনেমা ও ইন্টারনেট এই মাধ্যমে অন্তর্ভূক্ত।
৩. চিত্রলেখ বিষয়ক: সংবাদপত্র, শো-কার্ড, পোস্টার, ব্যানার, স্টিকার, লোগো, মনোগ্রাম, বিলবোর্ড, হোর্ডিং, ডিজিটাল সাইন, লীফলেট, প্যাকেজিং ইত্যাদি এতে অর্ন্তভূক্ত।
পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর শ্রেণীবিভাগ গুলোর মধ্যে তৃতীয়টি সহজলভ্য এবং জনগনের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে উপরে উল্লেখিত মাধ্যমগুলো ছাড়াও আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে।
নিচে পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর কিছু প্রচার মাধ্যম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ননা তুলে ধরা হলো-
১. পোস্টার: আধুনিক প্রচার মাধ্যমের অন্যতম হাতিয়ার পোস্টার কিছু তথ্য বা বক্তব্য কাগজে লিখে বা ছেপে জনসাধারণের মাঝে প্রচারের উদ্দেশ্যে রাস্তার পাশে দেয়ালে বা জনসমাগম হয় এমন স্থানে লাগানো হলে সেটিকে পোস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিভিন্ন সাইজের কাগজে রং এবং নকশা সহযোগে পণ্যের ছবি বা সুন্দর লেখা দিয়ে পোস্টার তৈরী করা হয়। মানুষের কাছে কোন তথ্য প্রচারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পোস্টারের অনন্য ভূমিকা ছিল।







২. ব্যানার: বাংলাদেশে ব্যানার শিল্পের বিকাশ ঘটেছে মূলত দেশভাগের পরপর চলচ্চিত্রের হাত ধরে। বিশেষ করে স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ ও বাণিজ্যিকভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হলে প্রচার ও প্রচারণা সংক্রান্ত প্রয়োজনের তাগিদে ব্যানার মাধ্যমটির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। প্রচার মাধ্যম হিসেবে এটি রাস্তা-ঘাটে মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করে। ব্যানার সাধারনত প্রধান সড়কের উপরে টানানো হয়। এতে এটি সহজেই সবার চোখে পড়ে।



৩. স্টিকার: প্রচারের জন্য স্টিকার অতি চমৎকার ও আকর্ষণীয় একটি মাধ্যম। সাধারণত পণ্যের গায়ে বা ছোট স্থানে এটি ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়।
৪. প্যাকেজিং: যেকোন পণ্য সুদৃশ্য মোড়কে উপস্থাপন করা বাজারজাতকরণের প্রাথমিক শর্ত। এই মোড়ক নানা রকমের হতে পারে। পণ্যের বৈশিষ্ট্য ও ক্রেতাদের শ্রেণীর উপর নির্ভর করে মোড়ক বা প্যাকেটটি কি রকম হবে তা নির্ধারণ করা হয়। এর মাধ্যমে পণ্যের সাথে সাথেও পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং চলমান থাকে।
৫. লীফলেট: বাংলাদেশে লিফলেটের প্রচলন ঠিক কবে থেকে শুরু হয়ে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সাধারণত কোন ব্যক্তি, পণ্য বা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কিছু তথ্য বা বক্তব্য একখÐ কাগজে ছেপে হাতে হাতে বিলি করা হলে সেই কাগজটিকে লীফলেট বা হ্যান্ডবিল বলে। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে, নাটক কিংবা সিনেমার প্রচার কাজে, সভা-সমাবেশে, নির্বাচনী প্রচারণা কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারে লীফলেট ব্যবহৃত হয়।

৬. বুকলেট: বুকলেট বা ক্ষুদ্রাকৃতির পুস্তিকারও প্রচলন ঘটেছে যথারীতি প্রচারণার প্রয়োজনে। নাটক কিংবা সিনেমা ছাড়াও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায়ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ইমেজ, শৈল্পিক টাইপোগ্রাফি, বিভিন্ন মডেলের আলোকচিত্র, হাতে আঁকা ড্রইং ইত্যাদি বুকলেট ডিজাইনে ব্যবহৃত হয়। আকারে এটি অনেকটা বইয়ের মত।

৭. পত্র-পত্রিকার বিজ্ঞাপন: দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ষান্মাসিক ও বাৎসরিক পত্রিকায় এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এই বিজ্ঞাপন অতি সহজেই শিক্ষিত জনগনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী, সিগারেট, বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী, বয়স্ক শিক্ষা, বৃক্ষরোপণ অভিযান, মিষ্টান্ন দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন এই মাধ্যমে প্রচার করা হয়।

৮. হোর্ডিং: সিনেমার ব্যানারের মতো বাংলাদেশে হোর্ডিং-এর সূচনাও পঞ্চাশের দশকে। সিনেমার বিজ্ঞাপন ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রচারণায়, জনসেবামূলক কাজে হোর্ডিং ব্যবহৃত হয়। শহরের শোভাবর্ধনে হোর্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বিশালাকার প্রচার মাধ্যমটি দেখতে অনেকটা বিলবোর্ডের মতোই তবে আকারে অনেক বড়। আকারের দিক থেকে এটি ৪০ থেকে ৩০ ফুট বা তার চেয়েও বড় হয়ে থাকে। রেল ষ্টেশনে, বিমান বন্দরে, লঞ্চঘাটে, রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এটি স্থাপন করা হয়।

৯. বিলবোর্ড: আমরা রাস্তা-ঘাটে চলার সময় দু’পাশে বা বড় পোলের সাথে হোর্ডিং-এর মতো যে বিজ্ঞাপন দেখতে পাই তাই বিলবোর্ড। প্রচার মাধ্যম হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিলবোর্ড রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করার সময় সহজেই চোখে পড়ে।

১০. হ্যাগিং মোবাইল: হ্যাগিং মোবাইল সুতা দিয়ে ঝুলানো অবস্থায় বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে প্রদর্শিত হয়। পণ্য সামগ্রীর বিজ্ঞাপণে এটি বেশ অভিনব পন্থা। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে লেখার চেয়ে পণ্যটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।

১১. সিনেমা: প্রচার মাধ্যম হিসেবে সিনেমার গুরুত্ব অনেক। এই মাধ্যমে সকল বয়সের লোকজন বিজ্ঞাপনের বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়।
১২. রেডিও: এটিও একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও পণ্যের বা প্রচারিত বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়।
১৩. টেলিভিশন: একটি পণ্যের গুণ ও বৈশিষ্ট্য দ্রুত সকল শ্রেণীর মানুুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য টেলিভিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পণ্যের বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর কাজের প্রচারণায় এই মাধ্যমটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা সর্বাধিক এবং অতিদ্রুত ফলপ্রসূ হয়।

১৪. ইন্টারনেট: ইন্টারনেট আমাদের প্রচারকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে এখন আমরা ঘরে বসে মুহূর্তেই সকল তথ্য পেতে পারি। আর এডফার্ম বা পার্রসোনাল সকল বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত এবং খুব সহজে পাবলিসিটি করতে দেখা যায়। যা ইন্টারেনেট সাপোর্টেড সকল ফোনে এখন যখন তখন দেখা যায়। বর্তমানে এই মাধ্যমটির ব্যবহার খুব লক্ষণীয়।

১৫. ড্যাংলোর: কোন পণ্য কিংবা পণ্যের মোড়কের হুবহু নকল করে প্রকৃত আকারের চেয়ে কিছুটা বড় করে তৈরি করে বিভিন্ন বিপণির সামনে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে এটি প্রদর্শন করা হয়।
১৬. রেপ্লিকা: রেপ্লিকার ব্যাপারটাও অনেকটা ড্যাংলোর-এর মতই। তবে এই ক্ষেত্রে পণ্য বা পণ্যের প্যাকেটটি তৈরী করা হয় আরো অনেক বড় করে। সাধারণত কোন পণ্যের বাজারজাতকরণের উদ্বোধন উপলক্ষে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অতিকায় রেপ্লিকা তৈরি করে শহরের কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়।
১৭. ভ্রাম্যমান চলচিত্র: মফস্বলে ও গ্রামে এই মাধ্যমে প্রচার করা হয়ে থাকে।
১৮. স্যাটেলাইট: স্যাটেলাই আমাদের প্রচারকে আরও সহজ করে তুলেছে। বর্তমানে স্যাটেলাইটের ধরুণে শুধু নিজ দেশেই নয় বরং সমগ্র বিশ্বের কাছে তথ্য প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে।

পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর প্রয়োজনীয়তা: বিভিন্ন পণ্যকে বাজারজাত করতে হলে বা বাজারে পরিচিতি লাভ করাতে হলে সেই পণ্যের প্রচার আবশ্যক। এটা ছাড়া পণ্যের ব্যাপক পরিচিতি ঘটানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়। নতুন কোন পণ্য বাজারে আসলে তা সম্পর্কে লোকজন না জানলে সে পণ্যের বিক্রয় অলাভজনক হয়ে পড়ে। তাছাড়া একটি পণ্য তো জনগণের জন্যই তৈরী করা হয়। আর সে পণ্য সম্পর্কে যদি জনগণ না-ই জানে তাহলে তো সে পণ্যের বাজারজাতকরণ-ই বৃথা। বর্তমানে আধুনিক জীবনে কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং ছাড়া তা কল্পনাই করা যায় না।
উপসংহার: আধুনিক পরিবর্তনশীল প্রতিযোগিতা মূলক বাজারব্যবস্থায় পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কোন প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য বা পণ্য জনগণের নিকট পৌঁছানোর জন্য পাবলিসিটি ক্যাম্পেইনিং-এর কোন বিকল্প নেই।


তথ্যসূত্র:
১। চারু ও কারুকলা, গ্রাফিক ডিজাইন, শাওন আকন্দ। ও
২। ইন্টারনেট।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.