নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কথা

আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা ।

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। জীবনটাকে সহজ করে ই দেখতে পছন্দ করি ।

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মেডিকেল বেলা (ডাঃ ফয়েজ চ্যাপ্টার) !

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০০





ডাঃ ফয়েজ, এম বি বি এস, এফ সি পি এস (বাংলাদেশ), এফ সি পি এস (পাকিস্তান),এম ডি,, এম পি এইচ (নিপসম); অতি দ্রুত গতিতে শ্বাস ফেলছেন। প্রতি শ্বাস এর সাথে সাথে তাঁর ভুরি টা কেঁপে কেঁপে উঠছে। বিস্ময়ে চোখ দুটা এত বড় হয়ে গেছে যে আমার ভয় হচ্ছে চোখ দুইটা যেকোন মুহূর্তে বের হয়ে যেতে পারে।



ঘটনার স্থান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দ্বিতীয় তলা, মেডিসিন ওয়ার্ড, সময়: সকাল সাড়ে দশটা। স্যার এর সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমত নার্ভাস ফিল করছি। একটু একটু ঘামছি। ফ্যান তো ঠিক ই চলছে, এত ঘামছি কেন কে জানে! একটু দূর থেকে উঁকি দিচ্ছে সহপাঠীরা। মেডিকেল লাইফ এর এত ছোট্ট একটা পরীক্ষায় এভাবে হেনস্থা হতে হবে ভাবি নাই। তাও আবার ওয়ার্ডে রোগীদের সামনে, সহপাঠীদের সামনে, সিনিয়র জুনিয়র সবার সামনে। বার বার আল্লাহ কে স্মরণ করছি। স্যার মনে হয় উত্তেজনাকে দমন করতে সমর্থ হলেন। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে পড়লেন।ওয়ার্ড এর ব্রাদার সবুজ ভাই স্যার এর হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে গেলেন। কয়েকটা চুমুক দিয়ে স্যার গ্লাস টেবিল এ রাখলেন। জলদ গম্ভীর স্বরে আবার নির্দেশ দিলেন, “আরেকবার এক্সামিন করেন তো পেশেন্ট কে, আর লিভার টা পালপেট করেন প্রথম থেকে”







মনে মনে সাহস সঞ্চ্য় করে রোগীর অনুমতি নিয়ে আবার পুরা প্রসিডিউর করলাম। একজামিনেশন শেষ করে আশা নিয়ে স্যার এর দিকে তাকালাম। আড়চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম রোগীর মুখে অনাবিল হাসি। সে আমার দুর্দশায় যেন প্রচন্ড রকম খুশি। স্যার কিছুই বলছেন না। আমি ও দাঁড়িয়ে আছে উদাস ভাবে। স্যার বসে থাকায়, স্যার এর পুরা টাক টা আমার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। আচ্ছা, এত পড়াশুনা করে মাথায় টাক বানিয়ে লাভ আছে! পুরা টাকটাকে আমার কাছে একটা স্টেডিয়াম এর মত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফ্লাডলাইটের আলোয় আলোকিত বিশাল একটা স্টেডিয়াম। স্যার এর টাক টার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মুগ্ধতার মাত্রা যখন আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে, হঠাত সে সময় স্যার বলে উঠলেন কিডনী একজামিন করেন। কিছুটা অন্যমনস্ক থাকায় স্যার এর নির্দেশটা অস্পষ্ট শুনতে পেলাম।নিশ্চিত হবার জন্য স্যার এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম, কেননা আর কিছু একজামিন করতে বলার কথা না।



স্যার আবার বললেন, কিডনী এবং স্পলীন (মনে হলো, আগের বার কিডনী বলেছিলেন শুধু) এক্সামিন করতে। বুঝতে পারলাম, আজ কপালে দু;খ আছে। বই এ পড়ে আসা স্টেপ গুলা স্মরণ করলাম, প্র্যাক্টিস করে আসা উপায়ে যথাসম্ভব পুংখানুপুংখভাবে একজামিন করতে শুরু করলাম। এক্সামিন শেষ করে উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম স্যার এর মুখে মৃদু হাসি।



বিপদসংকেত টের পেতে দেরি হলো না। চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রমাদ গুণলাম

, “হে ধরণী, দ্বিধা হও! তোমার ভেতরে আমাকে আড়াল নেয়ার সুযোগ দাও”।

চোখ খুলে দেখলাম, ধরণী দ্বিধা হয় নাই। আমিও অদৃশ্য হতে পারি নাই। স্যার বললেন, "এটা কি মেথড? এঁ!"



আমি চুপ থাকাকেই সমীচীন মনে করলাম। স্যার উতসাহ হারালেন না। বললেন, “আপনার নাম কি ?”

নাম বললাম, “স্যার, আনিস”।

স্যার: “আচ্ছা আনিস, তো এটা কি আনিস’স মেথড নাকি! এঁ! আপনার তো নতুন বই লেখা উচিত। বই এর নাম হবে “দ্য আনিস’ মেথড” ! আমরা সবাই সেই বই পড়ব। নতুন নতুন নিয়ম শিখব। বলেন, ঠিক কিনা!”

এ প্রশ্নের জবাব হতে পারে না! চুপ করে থাকলাম। স্যার আবার বললেন, বলেন, ঠিক কিনা!

বিড়বিড় করে বলতে চেষ্টা করলাম, “জ্বিনা স্যার”।



আর বেশি সময় ব্যয় করলেন না স্যার। আইটেম কার্ড বের করলেন। নাম্বার বসিয়ে সাইন করলেন। আইটেম কার্ড হাতে পেয়ে খুলে দেখার সাহস হলো না। ১০ এর পরীক্ষায় ৬ এ পাশ। পাশ নাম্বার পেয়েছি বলে মনে হলো না। উদাসীন মুখে তাকালাম আমার পরের রোল সুহাস এর দিকে। আমার দিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সুহাস ফিসফিস করে বলল, ক্যান্টিনে থাক, আসতেছি। পিছে ফিরে দেখি ওর দিকে তাকিয়ে আছেন স্যার। ও এগিয়ে যাচ্ছে স্যার এর দিকে, স্যার এর চোখ চকচক করছে নতুন শিকার এর অপেক্ষায়।



জীবনের এ পর্যায়ে এসে মেডিকেল লাইফ এর যত স্যার এর কথা বেশি করে মনে পড়ে, যাদের কাছে আমি ঋণী, তাদের মাঝে একজন হলেন এই ফয়েজ স্যার। উনার মত জ্ঞান পিপাসু লোক খুব কম ই দেখছি। আজকের বিদেশের মাটিতে এসে বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতকার্য হবার সময় উনাদের কথা অনেক মনে পড়ে। যত সময় যায়, ততই বিস্মিত হই যখন বুঝতে পারি ইনভেস্টিগেশন কত কম করে ক্লিনিকালি ওরা কিভাবে কত রোগ ধরে ফেলেন। আর আমাদের উপর করা অত্যাচার এর পেছনে আসলে ছিল কত স্নেহ, শেখানোর কতটা প্রচন্ড ইচ্ছা।





মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০৩

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ভাল লাগল লেখাটি
আসলেই আজব ডাক্তার

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১৬

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার পরিবেশ বন্ধু ,

আসলেই বিচিত্র। :)

মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:৪৬

না পারভীন বলেছেন: নতুন শিকার , হাহাহা

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:৪৪

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: :)

সেটাই।

মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ
আপনাকে ব্লগার না পারভীন

৩| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০৫

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার কান্ডারী অথর্ব,

অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
আপনার মন্তব্য সবসময় ই আরো ভাল লেখার অনুপ্রেরণাদায়ক।

ভাল থাকবেন। :)

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চ্রম লেখছেন !!!!

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০৭

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার ইরফান আহমেদ বর্ষণ,

:)

আপনাকে ও অনে এ এ এ ক ধন্যবাদ। :)

ভাল থাকবেন।

৫| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০৮

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার মামুন রশিদ,


ভাল লেখার জন্য আপনাদের উতসাহ, অন্যপ্রেরণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন। :)

৬| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২১

নীল-দর্পণ বলেছেন: কিছু শিক্ষক আছেন, যাদের এরকম বকা-ঝকা আপমানের পেছনে ভালটাই থাকে। ১০ এ কত পেয়েছিলেন ? :)

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১১

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার নীল দর্পণ,

প্রশ্নটা করেই ফেললেন,

:)

আনিস ঐ আইটেম এ ১০ এ ৪ পেয়েছিল। আর সুহাস পেয়েছিল ১০ এ ৩। অতঃপর তারা ক্যান্টিন এ তাদের দু;খ ভাগ করে নিয়েছিল।

আনিস আর সুহাস দুইটাই ছদ্মনাম। :)

মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৭| ০৭ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪

ইলুসন বলেছেন: লজ্জা লাগে না? ৩, ৪ পান আবার সেটা ব্লগে ফলাও করে সবাইকে বলে বেড়ান! /:) :P

আসলে অনেকের ধারণা মেডিকেলে এমন পেইন না দিলে কেউ ভাল মত পড়ালেখা করবে না। ক্লাসে পেইন দিলে পরে প্রফে বা বড় প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাগুলোতে ভাল করা যায়। ব্যাপারটা আমার সম্পূর্ণ অন্য রকম মনে হয়। ক্লাসে বেশি পেইন দিলে দেখা যায় মেডিকেলে পড়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে অনেকে। মেডিকেলের শিক্ষকদের উচিত বন্ধুসুলভ আচরণ করা। আইটেমে কিছু না পারলে কম নম্বর দিবেন ঠিক আছে কিন্তু বকা ঝকা না করে সেখানেই তাকে সঠিক পদ্ধতিটা শিখিয়ে দেয়া যায়, আইটেমে ভুল করার পরে কেউ যদি শেখে তাহলে পরে তার আর ভুল হবার সম্ভাবনা নাই, কারণ ঐ সময়টাতে এমনিতেই পূর্ণ মনোযোগ থাকে যে আমি ভুল করেছি কম নম্বর পেয়েছি তাই আমার এটা শিখতে হবে। পরে বন্ধু বান্ধব থেকে শিখে নেয়া যায় কিন্তু একজন শিক্ষক যদি দেখিয়ে দেন আরো বেশি মনে থাকবে। আর লিভার, কিডনী পালপেট করতে এমন আহামরি সময় লাগে না যে শিক্ষক অন্তত আইটেমে ভুল হবার পরে একবার দেখিয়ে দিতে পারবেন না।

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৬

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: হাহহাহাহহা,

আমি ৩/৪ পাই নাই তো। আনিস আর সুহাস পেয়েছে।

:)

আসলে কমিউনিটি মেডিসিন এর আগ্রহ শেষ করে দিয়েছিল অতি পেইন দিয়ে। আর মাইক্রোবায়োলজিতে আগেহ বাড়িয়েদিয়েছিল একজন স্যার এর বন্ধুসুলভ আচরণ আর অনুপ্রেরণা। তিনি একি সাথে কঠোর ও ছিলেন এবং বন্ধুবতসল ও ছিলেন।


মেডিসিন এর ক্ষেত্রে আসলে বিভিন্ন ধরণের স্যারদের থেকে শেখার সুযোগ হয়েছে। একেক জন একেক রকম আর কি ! :)

ব্লগার ইলুসন, মন্তব্য করার জন্য আরেক ধন্যবাদ।

:)

ভাল থাকবেন অনেক।

৮| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১২

সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: ভাল লাগল উপলব্ধি।

১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০৩

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার সপ্নাতুর আহসান

ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকবেন।

৯| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:০৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আপনার মেডিকেল বেলা ভাল হয়েছে।++

১২ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫৭

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ব্লগার এবং কবি সেলিম আনোয়ার ভাই,

আপনার কবিতার তুলনায় কিছুই না। :)

মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.