![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে কাব্যে ছন্দ নেই,যে সাহিত্যে রস নেই,যে প্রবন্ধে শিক্ষনীয় কিছু নেই,যে দর্শনের নিতীগত দিক নেই,আমি উহাসমগ্রের পাঠক।বরাবরই স্রোতের বিপরীতে চলাচল করে আসছি।আমি নকল সায়ানাইডের ফাদে পরে পার পেয়ে যাওয়া এক যুবক !!!
প্রেম ইজ ভেরি ডেনজারাস। ভেরি হার্মফুল টু সোসাইটি। আনপ্রডাক্টিভ--- এক্সেপ্ট ইন আ হার্মফুল বায়োলজিক্যাল ওয়ে । প্রেম বড়ই সর্বনাশ , বড়ই ভয়ানক। প্রেম শব্দটার সঙ্গায়ন অনেকটা এরকমই আমার কাছে । এই ভয়াবহ বস্তুটার প্রতি আমার আকর্ষনও আর সবার মতো । আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল সেটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং কালীন সময়ে । যদি প্রচলিত সাফল্য ব্যার্থতার মাপকাঠিতে আমার সেই প্রেমটিকে পরিমাপ করা হয় তবে আমি ব্যার্থ । কারন আমি একাই মেয়েটিকে ভালবাসতাম আর মেয়েটি আমাকে পাত্তা দিত না । আর আমাদের সমাজে একবার প্রেমে কেউ ব্যর্থ হলে ব্যর্থ ব্যক্তির কাছে প্রেম এর মানে মিথ । আমার কাছেও এই বিষয়টাও তেমন । প্রেম শব্দটার অর্থ খুজতে আমিও একটা সময়ে মরিয়া হয়ে উঠি । প্রেম বা ভালোবাসার তাত্ত্বিক অর্থ এত বিস্তৃত এবং গভীর যে, ব্যাখ্যা না দিয়ে সংজ্ঞার সীমাবদ্ধতার মধ্যে এর বিভিন্নমুখী তাৎপর্যকে তুলে ধরা সম্ভব নয়। সম্ভবত এই একটি মাত্র জটিলতার কারণেই ভালোবাসার সংজ্ঞা নিয়ে অধিকাংশ দার্শনিক মাথা ঘামাননি। ভালোবাসা সম্পর্কে মনীষীরা কি বলেছেন , এটা জানার চেষ্টা করি । ভালোবাসা সম্বন্ধে পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক বার্নার্ডশ বলেছেন , ‘প্রেম হলো সিগারেটের মতো যার আরম্ভ অগ্নি দিয়ে, আর পরিণতি ছাইয়ে।’
এ ক্ষেত্রে বার্নার্ডশর দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন অত্যন্ত বিরূপ এবং প্রতিক্রিয়াশীল হয় বলতে হবে প্রেম সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না , নয়তো বলতে হবে তার এ মতবাদ প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার এক আত্মপ্রবঞ্চনা, আঙ্গুর ফল টক এই প্রবাদের মতো । ভালোবাসা সম্বন্ধে বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সুখের গোড়ায় ভালোবাসা। ভালোবাসার স্পর্শ ব্যতীত সুখের স্বাদ পাওয়া যায় না।’ প্রেম নিয়ে আমদের বাংলাদেশের হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন “সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষণীয়। কিন্তু ভণ্ডরা বলেন উল্টো কথা।” আমিও এই লেখায় ভন্ডের ভূমিকায় থাকবো । প্রচলিত প্রেমের বাইরেও নতুন ধারার এক প্রেমের কথা জেনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে তার ভাষায় এই প্রেমের নাম হচ্ছে নিষ্কাম প্রেম । যে প্রেমে কোন কামনা বাসনা থাকবেনা , প্রকৃতি প্রদত্ত লীলায় মত্ত হবার তোড়জোড় থাকবে না ।
আসলেই বাস্তবিক কি এটা সম্ভব ?
বিজ্ঞানে নিস্কাম প্রেমের কোন ভিত্তি নেই এটি কখনই সম্ভব নয় । ধর্মের ভাষায় বিষয়টি সম্ভব যদি নিস্কাম প্রেমী মহাপুরুষ শ্রেনীর কিছু হয়ে থাকে আর দর্শনে নিস্কাম প্রেমকে সব থেকে সহজ এবং প্রচলিত বিষ্প্য বলা হয়েছে । নিস্কাম প্রেম নিয়ে ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে বিশ্বের সারা জাগানো কাল জয়ী দুই দর্শন গুরু সক্রেটিস এবং প্লোটোর প্রেম সম্পর্কিত মতাদর্শ নিয়ে কিছু ভাসা ভাসা প্রবন্ধ পাই । তার আলোকেই আমি নিস্কাম প্রেমের দার্শনিক ব্যাখ্যা লেখার চেষ্টা করে দেখলাম।
বিশ্বজুড়ে দর্শন শাস্ত্রবিদদের নামের তালিকায় গুরু সক্রেটিসের পাশাপাশি প্লেটোর নাম একই কাতারেই থাকার কথা। ওই যুগের অপর মহীরূহ দার্শনিক অ্যারিস্টটলের গুরু প্লেটোর বহুল আলোচিত নানামুখী দর্শন ও মতবাদের মধ্যে ‘প্লেটোনিজম’ একটি । সময়ের পরম্পরায় দেহলেশহীন প্রেম অথবা নিস্কাম প্রেমের সাথে এই দার্শনিকের নাম জড়িয়ে গেছে অঙ্গাঙ্গিভাবে ।
পরবর্তীতে প্লেটোর মতবাদ ‘প্লেটোনিজম’ থেকেই প্রেমের একটি পর্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে প্লেটোনিক লাভ বা প্লেটোনিক প্রেম । যে প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোসার গভীরে অবগাহন করবে কিন্তু শরীর নামক বস্তুটির কোনও প্রকার উপস্থিতি থাকবে না- প্লেটোর মতবাদ অনুসারে মুলতঃ প্লেটোনিক প্রেমের সজ্ঞা এমনটাই । আর আমার দৃষ্টিতেই সেটিকেই মনে হয়েছে নিস্কাম প্রেমের একমাত্র গ্রহনযোগ্য সংগা ।
এর মানে কি এই যে, সুদূর অতীতে এই গ্রিক দার্শনিকই সর্বপ্রথম ভালোবাসার রাজ্য থেকে মুছে দিতে চেয়েছিলেন শরীরকে?
প্লেটোর দর্শনের একাংশে অবশ্যই শরীরবিহীন এক অদৃশ্য প্রেমের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রেম ঠিক মোটাদাগের প্রেমের তত্ত্বস্থাপনা নয়! তাই বিষয়টি সাধারণ চোখে শুধুমাত্র প্রেম বা ভালোবাসা বলে ধরা হলেও এর অভ্যন্তর বেশ জটিল আর বাইরের দেয়ালও নানা আবরণে আচ্ছাদিত। অর্থাৎ মন-মগজ আর শারীরিক প্রেমের পাশাপাশি যে প্রেমে শরীর বিষয়টি অনুপস্থিত অথচ প্রেমের স্বাদ বা রস আস্বাদন করা যায় ষোল আনা, প্লেটো ঠিক এমন এক প্রেমানুভূতিকে পৃথকভাবে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। এটি আসলে ভালোবাসারই একটি মূল উপাদান বা অনুভূতির নাম যা কম বেশি সব প্রেমিক প্রেমিকাই তার প্রেমপর্বের কোনও একটা সময় এসে উপলব্ধি বা অনুভব করেন। তখন প্রেম তার কাছে ধরা দেয় দেহলেশহীনভাবে, তার মগজ ও মনে তখন সেই প্রেম এসে বাসা বাঁধে এক অদৃশ্য ইমেজ বা ছায়ারূপে। আর সেই ইমেজ এতটাই দৃঢ়ভাবে হৃদয়ে প্রথিত হয় যে শুধুমাত্র প্রেম নামক একবিন্দু অনুভুতিকেই স্বর্গ বলে ভাবতে শুরু করে প্রেমিকরা। তবে; প্রেমের এই আবহ সৃষ্টি হয় প্রেমের ডিসকভারি পিরিয়ড বা প্রাথমিক স্তরেই। মহামতি প্লেটোর দর্শনে ঠিক এমন আবহ সৃষ্টির সময় ও প্রেমানুভূতিকেই মূলতঃ অভিহিত করা হয়েছে ‘প্লেটোনিক প্রেম’ (বায়বীয় প্রেম!) হিসেবে। এই পর্যায়ে এসে নিস্কাম প্রেমের সাথে আমদের প্রচলিত ধারার প্রেমের সম্পর্ক সুস্পষ্ট । অর্থাৎ যেই প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনকে সত্যিকারে মন দিয়ে ভালবাসে সেখানে কামনা বাসনার উপস্থিতি কমে যায় । সুতারং কখনও কখনও আমদের বর্তমান সমাজের রোমিও-জুলিয়েটরাও মহাপুরুষুরের কাতারে থাকবে প্রেমের প্লোটোনিক পর্যায়ে।
প্লেটোনিক প্রেমের শুরু বা ডিসকভারি পিরিয়ডে এদেশের লাইলী-মজনুর কাহিনী কিংবা বিদেশের রোমিও-জুলিয়েট এমনকি একেবারে আমাদের মত মানুষের প্রেমেও একটা বিষয় কমন। তা হলো, শুরুতে আমাদের প্রেমের সাথে শরীরের যোগটা একেবারেই থাকে না। সময়সীমার ভিন্নতা হলেও প্রেমের অন্যান্য উপাদানগুলো অবশ্য যথার্থ বিদ্যমান থাকে। তখন আমরা প্রেমিক-প্রেমিকাকে বুঝে ফেলার পাশাপাশি আবিষ্কার করি-
সময় বড় বেশি দ্রুত ধাবমান, রক্তচোষা স্কুটারচালকেরাও কত মহান, ঝালমুড়ি-চটপটির মত আদর্শ খাবার আর নেই, কবিতাই হলো জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, কোন কোন গান শুনে মনে হয় নিজের জীবনের ঘটনাই যেন সুর হয়ে বাজছে, চারপাশের প্রকৃতি কত মনোরম এমন আরো কত কি।
বর্তমানে প্রেমের এসব উপাদান ও প্রক্রিয়াতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এখনকার প্রেমিক-প্রেমিকারা তাই ভালোবাসার মানুষটির সাথে দেখা হবার পর ভাবতে শুরু করে- মোবাইল কল কেন ফ্রি হয় না, ইন্টারনেটে কেন সারাটা সময় তাকে পাওয়া যায় না, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে’র মত দিনগুলো কেন বারবার আসে না আর সর্বোপরি ‘সে হীন জীবন সত্যি মরুভূমি!’ অথচ, তার সাথে দেখা হওয়ার আগে এসব সম্পর্কে কী উল্টো ধারণাটাই না ছিলো! প্রেমের এই সময়ে শরীর নয় মনই সব। নিজের মনটাকে অন্যের হৃদয়ের গভীরে তখন কেবল আমূল সেঁধিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। এই পর্যায়টি আসলেই অদ্ভুত এক পর্যায় আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কে এর প্রকৃতরূপ খুঁজে বের করার সাধ নেই । আসলে এই পর্যায়ে শরীর,আবেগ, স্বার্থ কোনটি প্রধান ।
এই ভালোবাসায় শরীর কোথায়?
যদিও ফ্রয়েড বলেছেন- মানুষের মনে যৌন প্রকৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে মাত্র ৩ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে। যদি তাই হয়, তাহলেও এই যৌনতার বহিঃপ্রকাশ তো সে সময় ঘটেই না বরং যৌন অনুভূতিও থাকে মনের অতলে ঘুমন্ত অবস্থায়। সুতরাং ফ্রয়েড সাহেবের যুক্তি এখানে খুবই নড়বড়ে! অচল! প্লেটোর দর্শনের একাংশে এমন এক চিরন্তন সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে যা ইন্দ্রিয়াতীত। ইন্দ্রিয়াতীত প্রেমের সাথে তার সংমিশ্র রূপই মানুষের চির সন্ধিৎসার বিষয়। কিন্তু এই ব্যাপক উচ্চ মানসিক প্রেম ও সৌন্দর্যকে বোঝার জন্যই মানুষকে লৌকিক প্রেমের সরোবরে অবগাহন করতে হয়। আর তখনই তার ভেতরে জেগে উঠতে থাকে পারমার্থিক আকাশে উড়ার ভাবনা। অর্থাৎ মহত্তর ‘আমি’ ক্রমে তার কাছে প্রতীয়মান হয়, যেন মর্ত্য মানবীর তুলনায় পরা প্রকৃতির রূপশ্বৈর্য কত বেশি! তখন ইন্দ্রিয়ের ছোট পরিসর পেরিয়ে, সমস্ত ক্লেদ ঝেড়ে ফেলে তার জীবনে আসে নতুন দিগন্ত। নতুনের পথে তার যাত্রা হয় শুরু। বোঝা কঠিন নয়, এই ভাবনাই কাজ করেছে নিষ্কাম প্রেম সম্পর্কিত ধারনার দার্শনিক ব্যাখ্যা হিসেবে।
আবেগ আর স্বার্থের অবস্থান কোথায়?
প্লোটোনিক পর্যায়ে আবেগ আর স্বার্থ জড়িয়ে একই সুতোয়- স্বার্থ দেখে প্রেমের শুরু হলেও এক সময়ে তা নিস্কাম প্রেমের দার্শনিক গন্ডিতেই পরে যায় । দুজন দুজনের গভীর প্রেমে পরে যায় । এটা সাধারনত হয়ে থাকে খুব বেশি মেলামেশার ফলে । আবার আবেগ দিয়ে প্রেমের শুরু হলেও এক পর্যায়ে সেখানেও স্বার্থের উদয় হয়ে থাকে । মানুষ প্রাকৃতিক কারনেই ধন সম্পদ , টাকা , পয়সা , স্ত্রী-পুত্র , পরিজন , আত্মীয়-সজন , ইত্তাদি কামনা করে । যে শক্তি বা বৃত্তি মানুষের মনকে প্রভাবিত করে তা লালনের ভাষায় ভবের পিরীতি । জর জগতের প্রতি আকর্ষণই পার্থিব প্রেম বা একের সাথে অন্নের প্রেম-ভালবাসা , দয়া-মায়া , স্নেহ-মমতা ,পরোপকার , বদান্যতা , মানব কল্যাণ ইত্তাদির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরপ করেছে । ঐশী প্রেমের উন্নতি হতে হলে মানবিক প্রেমের মাধ্যমে স্তরে স্তরে উন্নীত হতে হয় । যারা নিয়ম না মেনে এক লাফে আকাশে উঠতে চায় তারা লালনের ভাষায় – “অবিশ্বাসী –কাফের এবং তারা কামনা –বাসনার পূজারী , ভোগ বিলাসে মত্ত , আত্ম-স্বার্থে নিয়োজিত , পার্থিব বা প্রাকৃতিক প্রেমে মগ্ন । প্রেমাগ্নিতে কুপ্রবৃত্তিসমুহকে দগ্ধিভুত করে মানুষ প্রকৃতির প্রেম বা কাম থেকে নিস্কাম-প্রেমে বা ঐশী প্রেমে উন্নীত হতে পারে ।”
আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদ এর একটা উক্তি আছে এরকমের “আজকাল আমার সাথে কেউ একমত হ'লে নিজের সম্বন্ধে গভীর সন্দেহ জাগে। মনে হয় আমি সম্ভবত সত্যভ্রষ্ট হয়েছি, বা নিম্নমাঝারি হয়ে গেছি।” লেখা শেষ করার আগে এই উক্তিটা বলে নেয়ার কারন হচ্ছে পৃথিবীর এক এক জন মানুষের দর্শন চিন্তা চেতনা সম্পূর্ন আলাদা আলাদা । তাই আমার সাথে সবাই একমত হবে না এটাই স্বাভাবিক ।
©somewhere in net ltd.