নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে কাব্যে ছন্দ নেই,যে সাহিত্যে রস নেই,যে প্রবন্ধে শিক্ষনীয় কিছু নেই,যে দর্শনের নিতীগত দিক নেই,আমি উহাসমগ্রের পাঠক।বরাবরই স্রোতের বিপরীতে চলাচল করে আসছি।আমি নকল সায়ানাইডের ফাদে পরে পার পেয়ে যাওয়া এক যুবক !!!

আমি একই সাথে প্রেমিক এবং বুর্জোয়া

রাব্বি রহমান

যে কাব্যে ছন্দ নেই,যে সাহিত্যে রস নেই,যে প্রবন্ধে শিক্ষনীয় কিছু নেই,যে দর্শনের নিতীগত দিক নেই,আমি উহাসমগ্রের পাঠক।বরাবরই স্রোতের বিপরীতে চলাচল করে আসছি।আমি নকল সায়ানাইডের ফাদে পরে পার পেয়ে যাওয়া এক যুবক !!!

রাব্বি রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদেশ বিভুঁইয়ের এক বসন্ত বেলায়

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:০৬

-হ্যালো
-হ্যালো......হ্যালো......
-অনি বাবা কেমনা আছিস ?
- হ্যালো......মা......মা কেমন আছো তুমি ?
-আমি ভাল আছি বাবা , অনেক কষ্ট করে লাইন পেলাম।
-মা আমি ফোন দিতে চেয়েছিলাম , আমি ভালই আছি মিডটার্ম এক্সাম শেষ হয়েছে।
-বাবা ভালো করে পড়াশুনা করিস । তুই ছাড়া আমার আর কেউ যে নেই , পারলে একটু দেশে এসে ঘুরে যা......
-হ্যালো......হ্যালো......হ্যালো......(ফোনের লাইনটা কেটে গেলো )



অনেক দিন পরে মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলো অনি । জার্মানীতে আসার পরে অনেকের সাথে কথা হলেও মায়ের সাথে খুব একটা কথা বলা হয় না । মা মধ্যযুগীয় মানুষ তাই ফোনেই কথা বলতে হয় । সে আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভ্যস্ত নয় ।


ভার্চুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভের নির্মমতায় কথার মাঝ পথেই লাইনটা কেটে গেলো ।কত দিন পরে মা মা বলে ডাকতে পারলো সে । চাইলেও মাকে ওভাবে এখন আর নিয়মিত ফোন দিতে পারে না অনি । প্রথম দিকে জার্মানীতে আসার পরে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের রিসার্স সহযোগী হিসেবে কাজ করে বেশ ভালই টাকা পেত সে । কিছুদিন যাবার পরে সে কাজটাও হারিয়ে ফেলে সে । দিনে দিনে জার্মানীতে প্রবাসী ছাত্রদের জন্য কাজের সুযোগ কমে এসেছে । অনি এখন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ক্যাথরিন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনিষ্টিকে রিসিপশনিষ্ট হিসেবে পার্টটাইম একটা জব করে । জার্মান ভাষা বেশ ভাল রপ্ত থাকায় কোনমতে এই কাজটা সে জোগাড় করে নিয়েছিল । এ দিয়ে যে আয় হয় তা তার থাকা খাওয়াই শেষ হয়ে যায় । তাই চাইলেও এখন আর মায়ের সাথে এখন আর ওভাবে কথা বলা হয়না। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতেই মনে হতে লাগলো , নিজের দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এ কোন অজানা বিদেশ বিভুঁইয়ে আছি যেখানে কিনা আমার পরিচিত একটিও আপন মুখ নেই!

চাপা কান্নাটা দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে আটকে যেত লাগলো অনির ।



অনি জার্মানীতে এসছে প্রায় বছর দেড়েক হয়েছে । ইউনিভার্সিটি অফ স্টুটগার্ডে ইলেক্ট্রোমবিলিটিতে এমএস করছে সে । ভাগ্যবশত একটা স্কলারশীপ পেয়েগিয়েছিল । অনি বেশ ভাল ছাত্র ছিল । তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিল ।


এই সময়টায় জার্মানীর আবহাওয়া অনেক ভাল থাকে । মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে । স্প্রিং জার্মানদের কাছে অনেক উপভোগ্য একটা সময় আর প্রবাসীদের ঘুরে ফিরে জার্মানী দেখার জন্যও চমৎকার সময় । দীর্ঘ শীতকালের তুষারপাতের পরে গাছে গাছে ফুল ধরতে শুরু করে । প্রকৃতি নতুন রূপে সাজতে শুরু করে । এই সময়টায় জার্মানরা তাদের দেশীয় ঐতিহ্যগত ইস্টার অনুষ্ঠান এবং স্প্রিংকে স্বাগত জানতে চারদিন ব্যাপী বসন্ত উৎসব উদযাপন করে । এ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্টার অনুষ্ঠান এবং বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হবে ২৫-২৮ মার্চ । বিশ্ববিদ্যালয়ও ছুটি হয়ে গেছে । আপদত অনি অলস সময় কাটাচ্ছে । হসপিটালের কাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের কেপলারস্ট্রীটের রাস্তা ধরে হাটছিল অনি । অনির বাসা স্টুটগার্ড ইউনিভার্সিটির কাছেই কেপলার স্ট্রীট পার হয়ে হাতের ডানের গেসুইস্টার স্কুলটাকে অতিক্রম করার পরে ব্যাস্ত ফ্রেডেরীক স্ট্রীটবে পার হলেই স্টুটগার্ড ওয়েসিঙ্গার মিডিয়া পাড়ায় । এখানে কিছু সস্তা দুই-এক রুমের ফ্ল্যাট ভাড়া পাওয়া যায় । অনি সে রকম একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েই থাকে । নিজেই রান্না করে খায় , কখনও কখনও কাজ পড়া শোনার চাপ বেশি থাকলে না খেয়েও থাকতে হয় ।মাকে আজ খুব ,মনে পরছে অনির । দেশে থাকতে ছুটির সময় অনি মায়ের কাছে ছুটে যেত অনি , তার মা ঢাকা থেকেও অনেক দূরের এক অজ-পারা গ্রামে থাকে । বাবার স্নেহ অনি একদমই পায়নি । সে ছোট থাকতেই তার মা বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে । পরে অনি জেনেছে তার বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করে লন্ডনে থাকে । তার মা আর তার কোন খোঁজই রাখেনি সে । মা তাকে অনেক পরিশ্রম করে পড়া শোনা করিয়েছে । তবুও কেন জানি অনিকে অজানা এক হতাশা সারাক্ষণ গ্রাস করে রাখে । সবসময়ই চুপচাপ থাকে সে । স্টুটগার্ডে বাংলাদেশীদের সংখ্যা একেবারেই নগন্য । যারা থাকে তারাও সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকে । তাই অনির অবসর কাটে মুভি দেখে , গান শুনে , বই পড়ে , ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি আর লেখা লিখির মধ্য দিয়েই । এই স্প্রিং ভ্যাকেশনে অনি প্ল্যান করেছে কোথাও থেকে ঘুরে আসবে । স্টুটগার্ডও তাদের ইন্ট্যারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য বিশেষ অফার দিয়েছে । অনিও তাই ভেবছে এবার ঘুরে আসবে ।



পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ শে মার্চ সব কিছু গুছিয়ে অনি রুইডেসহাইম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিল । বাসা থেকে সকাল সাতটায় বের হয়ে প্রথমে ইউনিভার্সিটি গিয়ে তারপরে ট্যুর পাশ নিয়ে আটটায় বের হয়ে সাড়ে আটটায় রেলস্টেশন পৌঁছে গেল। মাস্টার্স , পি এইচ ডি স্টুডেন্টরা নামমাত্র কিছু ইউরো দিয়ে ট্যুর পাশ নিয়ে এই ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ পায় । বাকি খরচ ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় । এটা একটা বিশাল অফার তাই সুযোগ পেলে কেউ হাতছাড়া করে না। তার প্রমাণ অনি দেখল স্টেশনে গিয়ে প্রায় ত্রিশজনের বিশাল দল দেখে । কি সমস্যার জন্য পৌনে নয়টার ট্রেন না ধরে নয়টার ট্রেনে তারা রওনা দিল । স্টুটগার্ড থেকে রুইডেসহাইম এর দূরত্ব প্রায় ২৩৯ কিলোমিটার । স্টুটগার্ড রেলস্টেশন থেকে সরাসরি ট্রেনে রুইডেসহাইম যাওয়া যায় । এমনিতে ভাড়া ৬৮ ইউরো হলেও ট্যুর পাশ দেখিয়ে অনি ৩০ ইউরোতে একটা টিকেট কেটে নেয় । দিনটি রবিবার হলেও এই সময় প্রচুর যাত্রী বলে সবাই বসার জন্য সিট পয়নি । ফলে কেউ দাঁড়িয়ে , কেউ বসে এভাবে যাত্রা শুরু হলো ।





যেতে যেতে অনি দেখল অনেকেই সকালের নাশতা সারছিল । একটা গ্রুপকে দেখল বসার জন্য সিট না পেয়ে নিচেই বসে পড়েছে এবং সেখানেই খাবার দাবার বের করে খেতে শুরু করেছে । এরা এমনই ,যেখানে যা খুশি করে ফেলেন । কে কি ভাবল তাতে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না । এই বিষয়কে খারাপ বলবে না কিন্তু এই বিষয়টি যখন কোন প্রেমিক যুগল ভেবে বসেন তখন বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় । এদেশে ছেলে মেয়ে হাত ধরে হাটলেও কেউ প্রেমিক প্রেমিকা ভেবে বসে নাহ ।

অনি জানালার পাশে একটি সিট পেয়েছিল । জানালা দিয়ে সে বাহিরের প্রকৃতি দেখছিল আর ভাবছিল বাংলাদেশের মানুষ কত সহজেই একটি যুগল এর মেলামেশাকে নিয়ে নানা রকমের কুৎসা রটিয়ে ফেলে । ঢাকায় থাকার সময় অনি তন্দ্রা নামে একটা মেয়ের প্রেমে পরেছিল । এখনো অনি সেই মেয়েটাকেই ভালবাসে । এই মেয়েটাকে অনি কথা দিয়েছিল তার জন্য হলেও সে অনেক বড় হবে । হতাশাবাদী অনিকে তন্দ্রা নতুন জীবন দিয়েছিল । আগে অনি প্রচুর সিগারেট খেত তন্দ্রাকে ভালোবাসার পরে অনির একাকীত্বের অগোছলো জীবন গুছিয়ে উঠেছিল ।



তন্দ্রা না থাকলে অনির এই জার্মানীতে আসাও সম্ভব হতো না । কারন সে ভেবে নিয়েছিল তাকে দিয়ে কিছুই হবে নাহ । কিন্তু তন্দ্রা অনির সব ধারনাকে বদলে দেয় । অনি তন্দ্রাকে অনেক ভয় পেত । তন্দ্রা অনেক রাগী ছিলো ।





স্প্রিং এ নতুন সাজে সেজে ওঠা এডলফ হিটলারের নয়নাভিরাম জার্মানীকে অনি বেশ উপভোগই করছিল ট্রেনের জানালা দিয়ে । লুদসবার্গ , হাইডেলবার্গ হয়ে রুইডেসহাইমগামী ধীর গতির ট্রেনটি ম্যানহেইমে যাত্রা বিরতি দেয় । অনি সকাল থেকে এ অবধি কিছু খায় নি , তার তন্দ্রার কথা মনে পরে যা তাকে সে কথা দিয়েছিল সে একবেলাও খাবার মিস করবে না কোনদিন । একমগ কফি আর একটা বার্গার দিয়ে অনি সকালের নাস্তা টা সেরে নেয় । আজ কেন যেন হঠাৎ খুব সিগারেট খেতে মন চাইছে অনির । হুমায়ুন আজাদের একটা বইয়ে অনি পরেছিল ছায়া ঘেরা বসন্তের প্রাক-দুপুরে নতুন গজানো পাতাওয়ালা কোন গাছের নিচে বসে , ঠোটে একটা জ্বলন্ত সিগারেট খেতে খেতে বসন্ত দর্শনের মধ্যে স্বর্গীয় সুখ বিদ্যমান । ম্যানহেইমের রেলস্টেশনটাও সে রকমই । অনি একটা সিগারেট জ্বালাতে গিয়েও তন্দ্রার নিষেধ মনে পরায় সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ট্রেনে গিয়ে বসে । তন্দ্রা অনেক রাগী ছিলো , অনি তন্দ্রাকে অনেক ভয় পেত । সে জন্য তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে মজাও করতো । অনি তন্দ্রার জন্য এখনও দিনের নির্দিষ্ট সময় রাখে , যে সময়য়াটায় সে তন্দ্রাকে নিয়ে ভাবে , নীরবে চোখের জল ফেলে । তন্দ্রার চুল , চোখ আর হাতের আঙ্গুল অনির সব থেকে প্রিয় ছিলো ।



তন্দ্রাকে অনি যেদিন প্রথম শাড়ি পরা দেখেছিল , যেদিন তার হাত প্রথন স্পর্শ করেছিল সব কিছুই কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে অনির চোখে ।

রুইডেসহাইম যেতে যেতে এই শহরটি সম্পর্কে একটু ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করলো অনি । হাতের টুরিস্ট গাইডটিতে চোখ বোলাতে লাগলো । এই শহরটিকে মদের শহর বলা হয় । এটি রাইন নদীর ধারে হেসসে স্টেট এর ডার্মস্ট্যাড জেলায় অবস্থিত । এর অপর পাশে বিনগেন শহর অবস্থিত । এটি জার্মানির একটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর । এই শহরেই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের নাইদারওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট অবস্থিত । শহরটির আয়তন প্রায় ৫১ বর্গ কিমি ।



এটিকে কেন মদের শহর বলা হয় তা আসতে আসতে প্রমাণ পেল অনি । ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে মাইলের পর মাইল শুধু আঙুর ক্ষেত । অনি রুইডেসহাইম পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে ১২ টার বেশি বেজে গেলো । ট্রেন থেকে নেমে অনির মনটা আনন্দে দুলে উঠলো ।

এত সুন্দর !! রাস্তার পাশ দিয়ে নদী , নদীর ওপাশে পাহাড়ের ঢালে আরেকটা শহর । এ যে ছবির মত সাজানো । রাস্তার পাশে গোলাপ ও নানান রঙের ফুল ফুটে আছে । ঝলমলে আকাশ , মিষ্টি রোদ ( ইউরোপের খুব কাঙ্খিত ) । পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সেরা জায়গা ।

আগেই শিডিউলে বলা ছিল ট্রেন থেকে নেমে অনিদের লাঞ্চ করানোর জন্য রেস্তোরাঁয় নিয়ে যাওয়া হবে । অনি রেস্তোরাঁয় গিয়ে পছন্দমত জায়গা নিয়ে বসে গেল । জার্মান রেস্তোরাঁয় জার্মান ডিশ দিয়ে অনির দুপুরের খাবার সম্পন্ন হল । অনি মাংস খাবো না জানিয়ে দিল তাই তাকে সুপ , সবজি , মাছের কাটলেট, আলু এবং সবশেষে কেক দেওয়া হোল । ভালোই লাগলো খেতে অনির ।





খাওয়া শেষ করে অনি রেস্তোরাঁয় বসেই বিশ্রাম নিচ্ছিল । রুইডেসহাইম এর রেস্তোরাঁগুলো রাস্তার গা ঘেঁষে । সবুজ লতাপাতায় ঘেরা । অনি জার্মান স্প্রিং উপভোগ করতে করতে ভাবছিল সে জীবনে কতবার আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলো । তন্দ্রা তার জীবনে আসার পরে সে বদলে যায় । তন্দ্রা আজ পাশে থাকলে অনেক ভালো লাগতো অনির । হয়তো শক্ত করে তন্দ্রার হাত চেপে ধরে বিদেশ বিভুইয়ের বসন্ত উপভোগ করা যেত । সে তন্দ্রাকে কিছুই দিতে পারেনি তার অসহায় অকৃত্রিম ভালোবাসা ছাড়া ।

শেষদিন তন্দ্রা এয়ারপোর্টে অনিকে বিদায় দিতে এসেছিল । ওই অনি অনেক দুঃসাহসিক ভাবে তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরেছিলো । তন্দ্রার কপালে চুমু দিয়ে কেঁদে দিয়েছিল অনি । তন্দ্রা অনিকে বিশাল এক বইয়ের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছিল আর তার লেখা একটা ডায়রী । তন্দ্রা কখনও অনিকে ভালোবাসি বলেনি । কিন্তু অনি প্রতিদিন শত শত বার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তন্দ্রাকে বিরক্ত করে রাখতো । শেষ দিনেও অনি তন্দ্রার হাত ধরে কথা দিয়েছিল তাকে ছাড়া আর কারও হবে না সে কোনদিন । তন্দ্রার ডায়রী টা অনি প্লেনে বসে ভেজাচোখে খুলে পড়ে ফেলেছিল ।



তন্দ্রা কখনও তাকে বুঝতে দিতো না অনিকে । ডায়রী পরে অনি অনেক কিছুই জেনেছিলো । তন্দ্রা কত কষ্ট বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াত । স্টুটগার্ডে আসার পরে প্রথ দিকে অনি নিয়মিত তন্দ্রার সাথে কথা বলতো । পরে একদিন হঠাৎ তন্দ্রার ফোন অফ পাওয়া যায় ।ঐদিনের পরে আর কোনদিন অনি তন্দ্রার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি । অনি তখন থেকেই আবার আগের মতো চুপচাপ হয়ে পরে ।


তন্দ্রা মেডিকেলে পড়াশোনা করতো । তার আম্মু অনেক রাগী ছিলো । অনি অনেক চেষ্টা করেছে তন্দ্রার সাথে যোগাযোগের ; এখনও করে যাচ্ছে । অনি প্রতিদিনই নীরবে চোখের জল ফেলে তন্দ্রার জন্য । এসব চিন্তা করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেলের পথে ।




অনি খাবার বিল পরিশোধ করে নাইদারওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে বের হলো । সবুজ সবজির একটা বাগান পার হলেই ১৮৭০ এর দিকে স্থাপিত বিখ্যাত মনুমেন্টটি । সব কিছু মিলিয়ে মন খারাপের বিকেলে এরকমা জায়গা ; একদম খারাপ লাগছে না অনির । মূল মনুমেন্টে ওঠার পথে আমাদের বাংলাদেশের আহসান মঞ্জিলের মতো প্রশস্ত এক সিড়ি । সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অনি মনুমেন্টের একদম মাথার দিকে তাকিয়ে উঠছিল।মূল মঞ্চে ওঠার জন্য ডান-বাম দুই দিকে দিয়ে দুটি সিড়ি । অনি ডান দিকের সিড়ি ধরে উপরে উঠছিল । মূল মঞ্চে দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চের মতো দেয়া আছে । অনি মঞ্চে উঠেই বাম দিকে ঘুরেই প্রথম বেঞ্চে যাকে দেখলো তার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিলো নাহ ।



অনেকদিন পর অনিকে দেখে তন্দ্রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনিকে জড়িয়ে ধরলো । অনি কেঁদে দিলো । তন্দ্রা যে এতটা আবেগী তা অনি কখনও ভাবতে পারেনি আগে । তন্দ্রা জানালো সে WHO এর একটা প্রজেক্টে গতকালই জার্মানী এসেছে , অনেক কষ্টে অনির নাম্বার জোগাড় করেছে সে আজ বিকালে স্টুটগার্ডে গিয়ে তাকে বিস্মিত করাই ছিল তন্দ্রার লক্ষ্য । তন্দ্রা অনিকে সেই দেড় বছর আগেকার মতোই কিল-ঘুসি আর সুরসুরি দিয়ে যেতে লাগলো ।

তন্দ্রা জানালো তার আম্মু তাদের যোগাযোগ টা ভাল ভাবে নেয় নি তন্দ্রার ফোন সহ সবকিছু সে নিয়ে গিয়েছিল । আর পরে তা ফিরে পেলেও সে কোন ভাবেই অনিকে পায়নি । তাই তন্দ্রাও অনির উপরে রাগ করেছিলো ।



অনিকে তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে সেই পুরোনো সুরেই বলতে লাগলো ভালোবাসি তরু......

আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি তন্দ্রা !!!

অনেক অনেক বেশি ভালবাসি তরু !!!!!!!!!




রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা উপন্যাসে অমিত কে লেখা লাবণ্যর শেষ চিঠিটা অনি তন্দ্রাকে পড়ে শোনাচ্ছিল সহস্র মাইল দূরের বিদেশ বিভূয়েই বসে গভীর আলিঙ্গনে......ও তন্দ্রা......



“ কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?
তারি রথ নিত্য উধাও।
জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন
চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
দু'সাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম। ”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.