![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্পাদকঃ বিপ্লবীদের কথা (মাসিক পত্রিকা), সম্পাদকঃ www.biplobiderkotha.com, সাধারণ সম্পাদকঃ বিপ্লবী গবেষণা সংসদ।
পে-স্কেলে লাভ হলো কার?
আহমেদ মিঠু
বেড়েছে বেতন বৈষম্য ॥ আয় বাড়বে সাড়ে ৪ শতাংশ পরিবারের ॥ মূল্যস্ফীতির ফল ভোগ করবে বেসরকারী খাতে নিয়োজিত ৯৫ শতাংশ কর্মজীবী
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সপ্তম জাতীয় বেতন-স্কেল ঘোষণা করা হলেও বর্ধিত বেতনের তেমন কোনো সুবিধা পাবে না নিম্নসত্মরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ৫ বছরে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে জীবনযাত্রার বর্ধিত ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়েনি নিম্নসত্মরের কর্মচারীদের বেতন। ফলে নতুন কাঠামো থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা লাভবান হলেও তেমন কোনো সুফল পাবে না নিম্নসত্মরের কর্মচারীরা।
অন্যদিকে নতুন পে-স্কেলের প্রভাবে দেশের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ পরিবারের আয় বাড়বে। কিন' অতীতের ধারা অব্যাহত রেখে মূল্যস্ফীতি বাড়লে তার প্রভাব পড়বে ব্যক্তিখাতে নিয়োজিত ৯৫ শতাংশ মানুষের ওপর।
গত বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সপ্তম জাতীয় বেতন-স্কেল অনুমোদন করা হয়। নতুন কাঠামো অনুযায়ী সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা মূল বেতন হিসেবে মাসে ৪০ হাজার টাকা পাবেন।। অন্যদিকে সর্বনিম্ন স-রের কর্মচারীরা পাবেন ৪ হাজার ১শ’ টাকা। এরফলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পদের মধ্যে বেতনের ব্যবধান আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া উচ্চতর গ্রেডের বেতন বৃদ্ধির তুলনায় নিচের দিকের বৃদ্ধির হার একেবারেই নগণ্য। দু’ মেরুর মধ্যে আগের স্কেলে পার্থক্য ছিল ২০ হাজার ৬শ’ টাকা। এবার তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯শ’ টাকায়। পাকিসত্মান আমল থেকেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১ঃ৫ রাখার দাবি থাকলেও এবার তা সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ ঃ ৯ দশমিক ৭৫-এ। এতে সচিবদের বেতন এক লাফে ১৭ হাজার টাকা বাড়লেও সর্বনিম্ন পর্যায়ে বেড়েছে মাত্র ১৭০০ টাকা। অবশ্য বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেয়া মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে সমন্বয় নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের বেতন বাড়বে মাত্র ১২২০ টাকা। আর সচিবদের বেতন বাড়বে ১২৪০০ টাকা।
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোট ২০টি গ্রেডে ভাগ করে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ের ১০টি গ্রেডে বেতন বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার টাকা থেকে শুরম্ন করে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৯০০ টাকা। আর কর্মচারীদের ১০টি গ্রেডে বেতন বেড়েছে ১৭০০ টাকা থেকে ২৩০০ টাকা। অবশ্য এই ২৩০০ টাকা বৃদ্ধির পরও ১১তম গ্রেডের একজন কর্মচারীর মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ৬৪০০ টাকা। আর ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের মোট বেতন ৬ হাজার টাকার কম। এই বেতনে বর্তমান বাজার দরে একজন কর্মচারীর পড়্গে সংসার খরচ চালানো কঠিন। ছেলেমেয়েদের শিড়্গা সহায়ক ভাতা হিসেবে একজন কর্মচারীর জন্য সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দেয়া হবে। অবশ্য সরকারী কোয়ার্টারে বাস করলে বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ কেটে রাখা হবে।
অঙ্কের হিসাবে নিম্নতম কর্মচারীদের বেতন প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়লেও ৫ বছরে ওই সত্মরের মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে এরচেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ইকনোমিক ট্রেন্ড : অক্টোবর, ২০০৯’ অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যনত্ম ভোক্তা মূল্য সূচক বেড়েছে ৫৩.১৯ পয়েন্ট। একই সময়ে ৩৬.৩৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ সময়কালে ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪১.৭১ শতাংশ। ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) অনুযায়ী গত ৫ বছরে কাপড়ের দাম ১০.১৬ পয়েন্ট, বাড়িভাড়া ৩১ পয়েন্ট, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যয় ২৬.৭৮ পয়েন্ট, যাতায়াত ব্যয় ৪২.১৮ পয়েন্ট এবং শিড়্গা ও বিনোদন ব্যয় ৩১.২০ পয়েন্ট বেড়েছে।
এদিকে পে-স্কেল ঘোষণার পর এবারো দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাব্য জোয়ার ঠেকাতে না পারলে নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের প্রকৃত আয় বৃদ্ধির বদলে তা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর পে-স্কেলের প্রভাবে মূল্য বাড়লে তার মাশুল গুণতে হবে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ন্যূনতম সুবিধা না পাওয়া বেসরকারী খাতের ৯৫ শতাংশ শ্রমজীবীকে। কারণ পে-স্কেলের ফলে সরকারি অফিস-আদালত ও আইন-শৃংখলা বাহিনীতে নিয়োজিত ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩শ’ ৪৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২শ’ ২৭ ও সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৫শ’ ৫৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী, সামরিক বাহিনীর ১ লাখ ৩৫ হাজার সদস্য এবং অবসর ভাতাপ্রাপ্ত ৩ লাখ ২৪ হাজার ১শ’ ৭ জনের আয় বাড়বে। বেসরকারী খাত ও আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষের আয় বৃদ্ধিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং নতুন করে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হলে তাদের প্রকৃত আয় অনেক কমে যাবে। এসব কারণে নতুন বেতন স্কেলের দ্বারা উপর তলার কিছু কর্মকর্তার উপকার হলেও কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ ও কয়েক লাখ নিম্নআয়ের কর্মচারীর জীবনের সঙ্কট শুধু অব্যাহতই থাকবে না বরং তা আরও গভীরতর হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:১৯
ডলুপূত্র বলেছেন: ধন্যবাদ।