নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবিষ্কারের নেশায়

রাকিব হোসেন ফুহাদ

এ ধরা ক্ষনিকের জন্য যেতে হবে চলে ক্ষনিকের মাঝে অসীম রহস্য উন্মোচন করে যাব বলে, যাহা আমি শিখিয়াছি এ ধরায় এসে তার চেয়ে ভাল কিছু করে যাব সাবইকে ভালবেসে। তোমরা যেখানে দেখাবে আমায় এক মুঠো মাটি আমি সেখানে খুজে বেড়াব যা সোনার চেয়েও খাটি। তোমরা যেখানে উড়াইয়া দিবে এক মুঠো ছাই আমি তাহাতে খুজে বেড়াব অসীম রহস্যের পাই।

রাকিব হোসেন ফুহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীববিজ্ঞানকে কতদূর পর্যন্ত ব্যাখা করা যায়

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১৭

জীববিজ্ঞানে কোনো একটা বিষয় কতদূর পর্যন্ত ব্যাখা করা গেলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি?



এটা বোঝার জন্য আমরা দুটো উদাহরণ ব্যবহার করবো - উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে একটা, প্রাণিবিজ্ঞান থেকে একটা। এইফাঁকে জানিয়ে রাখি, যদিও এখনো আমাদের দেশে জীববিজ্ঞানকে ঐ দুই ভাগে বিভক্ত করে পড়ানো হয়, তাই বলে জীবজগৎ কিন্তু এখন আর কেবল উদ্ভিদ আর প্রাণী - এই দুই ভাগে বিভক্ত নয়। আধুনিক শ্রেণীবিন্যাস মতে, জীবজগৎ মূলত পাঁচটি রাজ্যে বিভক্ত - আদিকেন্দ্রিক এককোষী (Monera), সুকেন্দ্রিক এককোষী (Protoctista), ছত্রাক (Fungi), প্রাণী (Animalia) এবং উদ্ভিদ (Plantae)। জীবজগতে ভাইরাসের অবস্থান নিয়ে নানা রকম টানা-হেঁচড়া চলছে বলে আপাতত সেটাকে এই শ্রেণীবিন্যাসে রাখা হয়নি। এখন মূল আলোচনায় ফিরে আসি।



উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন: গাছের পাতা সবুজ কেন?

প্র-১: গাছের পাতা সবুজ কেন?

উ-১: ক্লোরোফিল আছে তাই।

প্র-২: ক্লোরোফিল আছে বলে সবুজ কেন?

উ-২: কারণ ক্লোরোফিল সবুজ ছাড়া অন্যান্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে নেয়।

প্র-৩: বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর আচরণ আলাদা কেন?

প্র-৩: সেটা পদার্থবিজ্ঞানী ভালো বলতে পারবেন।

প্র-৪: আচ্ছা, তাহলে ক্লোরোফিল সব রঙ শোষণ করে শুধু সবুজকে ফিরিয়ে দেয় কেন?

উ-৪: কারণ ক্লোরোফিল, দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীর দুই প্রান্ত, অর্থাৎ বেগুনী-নীল অংশ এবং কমলা-লাল অংশকেই কেবল শক্তি সংগ্রহে ব্যবহার করতে সক্ষম। মাঝখানের সবুজ-হলুদ অংশ শোষিত না হওয়ায় সেটা আমাদের চোখে আসে। তাই পাতাকে মোটের উপর সবুজ দেখায়।

প্র-৫: দৃশ্যমান বর্ণালীর দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী অত বিশাল একটা অংশ ক্লোরোফিলের কাজে লাগে না কেন?

উ-৫: এর ঠিক ঠিক জবাব আমরা এখনো জানিনা। সম্ভব্য ব্যাখ্যাটি বলছি। আদিকেন্দ্রিক এককোষী রাজ্যের কিছু জীবের (Cyanobacteria) মধ্যে বিবর্তনের ধারায় সর্বপ্রথম সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল। তাদের দেহের ক্লোরোফিল, যাকে আমরা ‘আদি ক্লোরোফিল’ বলতে পারি, তা উদ্ভিদ রাজ্যের জীবদের থেকে আলাদা। আদি ক্লোরোফিল, উদ্ভিদ-ক্লোরোফিলের মতো দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীর উভয় প্রান্ত ব্যবহার করে না, বরং কমলা-লাল প্রান্তকেই কাজে লাগায়। তাই আদি ক্লোরোফিল বিশিষ্ট জীবের রং খানিকটা নীলচে। দৃশ্যমান বর্ণালীর এই প্রান্তের শক্তি সবচেয়ে কম তাই আপাতদৃষ্টিতে এই অংশকে ব্যবহার করা অর্থনৈতিকভাবে তেমন লাভজনক নয় বলে মনে হতে পারে, তবে আদি পৃথিবীর অস্থিতিশীল আবহমণ্ডল ভেদ করে সবসময় পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারার গ্যারান্টি একমাত্র কমলা-লাল অংশেরই ছিল, কারণ তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর মধ্যে সর্বাধিক বলে পারতপক্ষে আবহমণ্ডলে বাধা পায় না। এ যেন এমন ব্যবসা যেখানে বিরাট অংকের লাভ হয় না বটে, কিন্তু কম হলেও কিছু মুনাফা সবসময়ই হতে থাকে। এমন ব্যবসার সুবিধা হলো, দুম করে বিরাট লস খেয়ে পথে বসতে হয় না। তবে টিকে থাকা নিশ্চিত হলেও এভাবে বড়লোক হওয়া যায় না। তাই আদি ক্লোরোফিল বিশিষ্ট জীব আদিকেন্দ্রিক এককোষীর চেয়ে উন্নত হতে পারেনি। পরে যখন আবহমণ্ডল স্থিতিশীল হতে থাকলো, তখন বর্ণালীর বেগুনী-নীল অংশ ব্যবহারের ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমলো। আদি ক্লোরোফিলের কমলা-লাল অংশ ব্যবহারের ক্ষমতা তো ছিলোই, সাথে বেগুনী-নীল অংশ ব্যবহারের ক্ষমতাও বিবর্তনের ধারায় অর্জিত হলো - উদ্ভূত হলো উদ্ভিদ-কোরোফিল। আগে থেকেই আছে, তোমার এমন কোনো জামার উপর কিছু কাজ করে সেটাকে নতুন আঙ্গিক তুমি সবসময়ই দিতে পারো, তবে কাপড়ের পীস থেকে জামা তৈরি করতে দিলে ডিজাইনে যেটুকু স্বাধীনতা পাওয়া যেত, তা নিশ্চয়ই পাবে না। একইভাবে, রেডিমেড আদি ক্লোরোফিলের উপর কিছুটা নয়-ছয় করে উদ্ভিদ-ক্লোরোফিলের জন্ম, তাই তার বৈশিষ্ট্যের কিছুটা সীমাবদ্ধতা থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। সেই সীমাবদ্ধতাটুকুই হলো বর্ণালীর মধ্যবর্তী অংশকে ব্যবহার করতে না পারা। যদি উদ্ভিদ-ক্লোরোফিল একদম গোড়া থেকে বা প্রাথমিক কাঁচামাল থেকে উদ্ভূত হতো, তাহলে ডিজাইনটা আরো যুৎসই হতে পারতো। তখন হয়তো পুরো বর্ণালীটাই সে শুষে নিতো এবং পাতা হতো কালো রঙের। (কবি-সাহিত্যিকেরা তখন কেমনধারা প্রকৃতিবন্দনা করতেন একবার ভাবোতো!)

প্র-৬: আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়লে শক্তি কমে যায় কেন? কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বাধা বেশি পায় কেন?

উ-৬: এসব প্রশ্নের উত্তর পদার্থবিজ্ঞানীরা ভালো জানেন।

প্র-৭: আদিম পৃথিবীর আবহমণ্ডল অস্থিতিশীল ছিল কেন?

উ-৭: সেটা ভূতাত্ত্বিক এবং আবহাওয়াবিদকে জিজ্ঞাসা করো।

প্র-৮: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এবং আদি ক্লোরোফিলের উদ্ভব কীভাবে হলো?

উ-৮: সেটা আলোচ্য প্রশ্নের গণ্ডির বাইরে, আলাদা প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

প্র-৯: পাতাবাহারের পাতা তো শুধু সবুজ নয়, বরং নানা রঙের নকশা, কিংবা লাল শাকের পাতা তো সবুজই নয়; এই ব্যতিক্রমের কারণ কি?

উ-৯: উদ্ভিদে ক্লোরোফিল ছাড়াও আলো শোষণকারী পদার্থ আছে। সেগুলোর শোষণ-বর্ণালী ক্লোরোফিল থেকে ভিন্ন বলে রং সবুজ নয়। যেমন: ক্যারোটিন লাল, জ্যান্থোফিল কমলা ইত্যাদি। সব উদ্ভিদেই এগুলো আছে, তবে কোনো কোনো উদ্ভিদে তা বেশি পরিমাণে থাকে। সেক্ষেত্রে পাতা সবুজ ভিন্ন অন্য রঙের হয়। প্রজাতিভেদে পরিমানের এই তারতম্য কেন হয় তা জানা যায় নি।

প্র-১০: উদ্ভিদ ছাড়া অন্য জীবে (যেমন: ফড়িং, কয়েক প্রজাতির গেছোসাপ, কিছু ব্যাঙ ইত্যাদি) সবুজ রঙের কারণ কী?

উ-১০: এটা ক্লোরোফিলের জন্য নয়, বরং অন্যান্য সবুজ যৌগের কারণে। এই বৈশিষ্ট্য যে কারণে এসব প্রাণীতে বিবর্তনের ধারায় উদ্ভূত হতে পারে তা হলো, গাছপালার সাথে মিশে থেকে শিকার বা শিকারীর চোখ ফাঁকি দিতে পারার সুবিধা আছে বলে।



এবারে প্রশ্নোত্তরগুলোকে বিশ্লেষণের পালা। ৪ নং এ দেখো শক্তিসঞ্চারণী স্বীকার্য ব্যবহার করা হয়েছে। এবং ৫ নং এ ব্যবহৃত হয়েছে বিবর্তনী স্বীকার্য। ৩, ৬ এবং ৭ নং এ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এমন নয় যে, ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা নেই বা প্রমাণ ছাড়াই সত্যি ধরে নিতে হবে, কিন্তু জীববিজ্ঞানে যখনই আমরা দেখবো যে ব্যাখ্যা করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যার পরবর্তী ব্যাখ্যাটুকু অন্য শাখার বিজ্ঞানীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারি, সেখানে আমরা সেটাই করবো। কেননা, তা না হলে ব্যাখ্যা কোনোদিন ফুরোবে না! আবার, ৮ নং প্রশ্নটি জীববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হলেও তা আলোচ্য প্রশ্নের সাপেক্ষে অবান্তর, তাই সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আলোচনা যাতে বে-লাইন না হয়ে যায় সেজন্য এমন এড়ানোরও দরকার আছে। জীববিজ্ঞানে কোনো ব্যাখ্যার চারটি দিক আছে, সেগুলোও উপরের উদাহরণে উঠে এসেছে।

১) নিকট-কারণ (Proximate cause): আলোচ্য ব্যাখ্যার যে কারণটুকু সরাসরি বর্তমান কালে নিহিত, সেটাই নিকট-কারণ। যেমন: উপরের উদাহরণে ১-৪ নং পর্যন্ত।

২) দূর-কারণ (Ultimate cause): আলোচ্য ব্যাখ্যার যে কারণটুকু অতীতে নিহিত সেটাই দূর-কারণ। এর আরেক নাম ‘ঐতিহাসিক’ কারণ। যেমন: উপরের উদাহরণে ৫, ৭ এবং ৮ নং।

৩) ব্যতিক্রম: ৯ নং দ্রষ্টব্য। লক্ষ্য করো, এতে ব্যতিক্রমের নিকট-কারণটা বলা হয়েছে কিন্তু দূর-কারণটা জানা নেই। যেটা জানা নেই সেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করাও ব্যাখ্যার একটা অংশ।

৪) পরিসাদৃশ্য: আলোচ্য ব্যাখ্যার অনুরূপ বৈশিষ্ট্য প্রকৃতিতে অন্য অনেক কারণেই উদ্ভূত হতে পারে। সেটাও ব্যাখ্যার একটা দিক। যেমন: ১০ নং। এখানে পরিসাদৃশ্যের নিকট-কারণ ও দূর-কারণ - দুটোই বলা হয়েছে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় কেবল নিকট-কারণ উল্লেখ করা থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে দূর-কারণটাও দেওয়া থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, যে ব্যাখ্যায় উপরের ঐ চারটার কোনো একটা দিক অনুপস্থিত, সেটা পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা নয়। এমনকি কোনো একটা দিক অজ্ঞাত থাকলে সেটা যে জানা নেই - তাও বলে দিতে হবে।



প্রাণিবিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন: লোহিত রক্তকোষ উভয়াবতল আকৃতির কেন?

প্র-১: লোহিত রক্তকোষ উভয়াবতল আকৃতির কেন?

উ-১: দুটি কারণে - প্রথমত, নিউক্লিয়াস না থাকায় কোষঝিল্লীর দুই বিপরীত অংশ ব্যাস বরাবর ভেতরের দিকে চুপসে গিয়ে ওরকম আকৃতি তৈরি করতে পারে। এবং দ্বিতীয়ত, কোষ-কঙ্কাল, যা কিনা যেকোনো কোষের আকৃতি গঠন করে, সেটা লোহিত রক্তকোষে অন্যান্য কোষের চেয়ে বেশ খানিকটা আলাদা, যা উভয়াবতল আকৃতি বজায় রাখতে সহায়তা করে।

প্র-২: লোহিত রক্তকোষে নিউকিয়াস থাকে না কেন?

উ-২: আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত যে লোহিত রক্তকোষ তৈরি হচ্ছে, তা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে নিউক্লিয়াস ঠিকই থাকে। তবে লোহিত রক্তকোষ গঠনের একটা নির্দিষ্ট পর্যায় অতিক্রম করলে নিউক্লিয়াস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে কোষ থেকে বেরিয়ে যায়। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে যে লোহিত রক্তকোষ পাওয়া যায়, যাকে বলে ‘পরিণত লোহিত রক্তকোষ’, তাতে নিউকিয়াস থাকে না।

প্র-৩: মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর লোহিত রক্তকোষে কি নিউকিয়াস থাকে?

উ-৩: আসলে, লোহিত রক্তকোষ বিশিষ্ট যেসব প্রাণী আছে, তাদের মধ্যে স্তন্যপায়ীরা ব্যতিক্রম; তাদের কারোরই পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াস থাকে না। বাকি সবার পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াস থাকে।

প্র-৪: স্তন্যপায়ীদের পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াস থাকে না কেন?

উ-৪: স্তন্যপায়ীদের শক্তির চাহিদা অন্য প্রাণীদের চেয়ে বেশি। সেটা পূরণ করার জন্য সুবিধাজনক বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য স্তন্যপায়ীরা বিবর্তনের ধারায় অর্জন করেছে। তারই একটি হলো পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াসের অনুপস্থিতি।

প্র-৫: পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াস না থাকলে সেটা শক্তি বৃদ্ধি করে কীভাবে?

উ-৫: কোনো কোষে নিউক্লিয়াস থাকার অর্থ হলো সেখানে হাজারো রকম জৈবনিক প্রক্রিয়া চলতে থাকবে এবং ঐ প্রক্রিয়াগুলো তো বিনামূল্যে চলবে না, চলতে শক্তি লাগবে। শক্তি উৎপাদন করার কাঁচামাল হিসেবে লাগবে অক্সিজেন। এখন, পরিণত লোহিত রক্তকোষের কাজ হলো শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। সেই লোহিত রক্তকোষ নিজেই যদি অনেকটা অক্সিজেন ব্যবহার করে ফেলে তাহলে তো দেহের বাকি কোষ অক্সিজেন কম পাবে এবং তাদের শক্তিও উৎপন্ন হবে কম পরিমাণে। তাই পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াস না থাকলে অন্য কোষগুলো শক্তি বেশি পায়। ফলে সমগ্র প্রাণীটাই শক্তি বেশি পায়। তাছাড়া, নিউকিয়াস না থাকার জন্য পরিণত লোহিত রক্তকোষ উভয়াবতল আকৃতি নেওয়াতে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায় বলে বেশি পরিমাণ অক্সিজেনের সংস্পর্শে কোষটি আসতে পারে এবং একবারে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন অন্যান্য কোষে সরবরাহ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়। এটাও প্রাণীর শক্তির চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে।

প্র-৬: স্তন্যপায়ীদের শক্তির চাহিদা অন্য প্রাণীদের চেয়ে বেশি কেন?

উ-৬: সেটা আলাদা প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করলেই সবচেয়ে ভালো হয়।

প্র-৭: লোহিত রক্তকোষ উভয়াবতল আকৃতির হওয়ার পেছনে দ্বিতীয় যে কারণটি ১ নং এ উল্লেখ করা হয়েছে তার ভূমিকা কতটুকু? শুধু প্রথম কারণটাই যথেষ্ট নয় কেন?

উ-৭: তিনটি কারণে - প্রথমত, লোহিত রক্তকোষ বিশিষ্ট যেসব প্রাণী আছে, তাদের মধ্যে স্তন্যপায়ীদের পরিণত লোহিত রক্তকোষে কোষ-কঙ্কাল গঠনকারী প্রোটিনগুলো, অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা রকম। দ্বিতীয়ত, যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণীর পরিণত লোহিত রক্তকোষ জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত, উভয়াবতল ছাড়া ভিন্ন আকৃতির, তাদের ক্ষেত্রে সেইসব জীনে গণ্ডগোল পাওয়া গেছে যেগুলো কোষ-কঙ্কালের প্রোটিন গঠনের সংকেত বহন করে। তাদের পরিণত লোহিত রক্তকোষে নিউক্লিয়াস না থাকা সত্বেও উভয়াবতল নয়। মানুষের ক্ষেত্রে এরকম ত্রুটির একটি উদাহরণ হলো Congenital spherocytosis। তৃতীয়ত, অণুচক্রিকায় নিউক্লিয়াস নেই, কিন্তু কোষ-কঙ্কাল গঠনকারী ঐ বিশেষ প্রোটিনগুলো না থাকায় তা উভয়াবতল হতে পারেনি।

প্র-৮: স্তন্যপায়ীতে পরিণত লোহিত রক্তকোষ জন্মগতভাবে উভয়াবতল না হলে সমস্যা কী?

উ-৮: এতে করে প্রাণীর অক্সিজেনের চাহিদা তো মেটেই না, উপরন্তু লোহিত রক্তকোষের আয়ুষ্কাল কমে যায় এবং প্রাণীটি রক্তশূন্যতায় ভোগে।

প্র-৯: স্তন্যপায়ীতে পরিণত লোহিত রক্তকোষ জন্মগতভাবে উভয়াবতল না হলে তার আয়ুষ্কাল কমে যায় কেন?

উ-৯: সেই ব্যাখ্যা আপাতত অবান্তর। তবে এটা ঘটে বলেই স্তন্যপায়ীতে বিবর্তনের ধারায় সেইসব প্রজাতি টিকে থাকেনি যাদের লোহিত রক্তকোষ জন্মগতভাবে উভয়াবতল ছিল না।

প্র-১০: অন্য কোনো কোষ কি আছে, যা উভয়াবতল?

উ-১০: জানা নেই।

প্র-১১: অণুচক্রিকায় নিউক্লিয়াস নেই কেন?

উ-১১: কারণ অণুচক্রিকাগুলো আসলে Megakaryocyte নামক বিরাট আকারের এক ধরণের কোষের ভাঙা ভাঙা টুকরো। প্রচলিত অর্থে তাই সেগুলো ঠিক কোষই নয়! এরকম একটা ব্যাপার স্তন্যপায়ীতে কেন বিবর্তনের ধারায় উদ্ভূত হলো সেটার ব্যাখ্যা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়, নতুন প্রশ্ন হিসেবে তা বিবেচনার যোগ্য।

প্র-১২: লোহিত রক্তকোষ উভয়াবতল হওয়ায় তার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল কেন বেড়ে যায়?

উ-১২: কারণ তুমি যদি কম আয়তনে বেশি পৃষ্ঠতল বানাতে চাও তাহলে তোমাকে পৃষ্ঠের কোথাও ভাঁজ ফেলতে হবে। তবে জ্যামিতিবিদ এটাকে আরো ভালো করে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।



এবারে একটা অনুশীলনী। উপরের ব্যাখ্যায় জীববিজ্ঞানের কোন মৌলিক স্বীকার্যগুলো ব্যবহৃত হয়েছে, ব্যাখ্যার চারটি দিকের (নিকট-কারণ, দূর-কারণ, ব্যতিক্রম এবং পরিসাদৃশ্য) কোনটা কোথায় এসেছে, কোন পর্যন্ত গিয়ে ব্যাখ্যা আর এগোতে দেওয়া হয়নি এবং কেন - সেগুলো প্রশ্নোত্তরের নম্বর উল্লেখ করে বের করার চেষ্টা করো। দেখি জীববিজ্ঞানে যুক্তি প্রয়োগ করাটা কতখানি আয়ত্ত্বে আনতে পেরেছো।



এখন কয়েকটা প্রশ্ন দিচ্ছি। এগুলোর ‘পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা’ নিজে নিজে বের করো এবং নিজেই তা বিশ্লেষণ করো।

১) সকল জীবের স্বাভাবিক মৃত্যু আছে - ঠিক না ভুল?

২) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মশার ভূমিকা কী?

৩) লজ্জাবতী (Mimosa pudica) কে স্পর্শ করলে তা ‘লজ্জা’ পেয়ে গুটিয়ে যায় কেন?

৪) এমন কোনো পোকা কেন নেই যার আকার বেশ বড়, যেমন ধরো, ধেড়ে ইঁদুরের সমান?

৫) যেসব ফুলের রং হালকা বা সাদা সেগুলোর গন্ধ তুলনামূলকভাবে কড়া কেন?



আপনি চাইলে আমার সাথে ফেসবুকে ফেন্ড হতে পারেন ফেসবুক লিংক https://www.facebook.com/rakibhossen.fuhat

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.