নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবিষ্কারের নেশায়

রাকিব হোসেন ফুহাদ

এ ধরা ক্ষনিকের জন্য যেতে হবে চলে ক্ষনিকের মাঝে অসীম রহস্য উন্মোচন করে যাব বলে, যাহা আমি শিখিয়াছি এ ধরায় এসে তার চেয়ে ভাল কিছু করে যাব সাবইকে ভালবেসে। তোমরা যেখানে দেখাবে আমায় এক মুঠো মাটি আমি সেখানে খুজে বেড়াব যা সোনার চেয়েও খাটি। তোমরা যেখানে উড়াইয়া দিবে এক মুঠো ছাই আমি তাহাতে খুজে বেড়াব অসীম রহস্যের পাই।

রাকিব হোসেন ফুহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাকাশ চ্যাম্পিয়ন ভয়েজার-ওয়ান

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৩৪



আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করেছিল, মহাকাশযান ‘ভয়েজার-ওয়ান’। এই মহাকাশযানটির যাত্রার শুরুর দিকে পর্যবেক্ষনের দায়িত্বে ছিল নাসার ৩০০ জন বিজ্ঞানী। তারপর ২০০৪ সালের পূর্বেই এর গতিবিধির দায়িত্বে রাখা হয়েছে- মাত্র ১০ জন বিজ্ঞানীকে। কারণ-ভয়েজারের এখন আর কোন বিপদগামী হবার সম্ভবনা নাই। সৌর মন্ডলের সব কয়টি গ্রহের তথ্য সংগ্রহের নিধারিত মিশনের দায়িত্ব পালন শেষে, সৌরজগতের বাইরে চলে গেছে। ভয়েজার এখন মহাজগতের যে এলাকা দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে- তাহল সৌর প্রভাব মুক্ত। সেখানে গভীর মহাকাশের নিঃসীম অন্ধকারের শুরু। মূলত আমাদের সৌরজগতের বাইরে অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহ ও বহিঃজগতের প্রানের খোঁজে এই ভয়েজার-ওয়ানের যাত্রা শুরু করে ছিল।



আন্তঃ নাক্ষত্রিক সভ্যতার স্বপ্নদ্রষ্টা কার্ল সাগানের পরিকল্পনায়। বিজ্ঞানীদের এক হিসেব মতে-মহাকাশের ঐ সুদূরের ৫-১০% আলোকিত। আর ৯০-৯৫% জায়গা অন্ধকার। তাই বলা হচ্ছে- ভয়েজার-ওয়ান এখন চলছে মহাকাশের সেই নিঃসীম অন্ধকারের মধ্যে। ২০০৪ সালের তথ্য অনুসারে ভয়েজার-১ ছিল সূর্য থেকে ১৪০০,০০০০০০০ কি.মি দূরে। পক্ষান্তরে ভয়েজার-২ ছিল ১১০০,০০০০০০০ দূরে। যাকে ভয়েজার-ওয়ানের টুইন বা যমজও বলা হয়।



বিভিন্ন কারণে সূর্য্যের গায়ে সৃষ্টি হয় প্রতিক্রিয়া। যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন সৌরবায়ু। সৌরবায়ু প্রবাহিত হয়-সূর্য পৃষ্ঠে বিস্ফোরনের ফলে। আার এই সৌর বিস্ফোরনের ফলে- মহাকাশে নিঃসৃত হয় বিপুল পরিমানে গ্যাস। ভয়েজার নভোযান সৌর পৃষ্ঠের বৃহত্তম বিস্ফোরনের তথ্য পাঠিয়েছিল-২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে। ঐ বিস্ফোরনটি সূর্যে ঘটেছিল ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে। ঐ ঘটনার প্রতিক্রিয়া ভয়েজার পর্যন্ত পৌছাতে সময় লাগেছিল ৩৬৫ দিন বা ১ বছর। মহাকাশ গবেষনা সংস্থা নাসা ১৯৭৭ সালে এই মহাকাশযানটি পাঠিয়েছিল মাত্র ৫ বছরের মিশনে। কিন্তু সেটা ২৮ বছর পরে ২০০৫ সালে সৌরজগতের সীমা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। এই ২৮ বছরে ভয়েজার-ওয়ান ৯৩২ কোটি মাইল বা ১৫০০ কোটি কি.মি. মহাকাশীয় পথ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।



প্রথমে বিজ্ঞানীরা এই পথে ভয়েজার-১ এর গতিবিধির ব্যাপারে শংকিত ছিলেন। কেননা টারমিনেশন শক এমন একটি এলাকা যেখানে মহাজাগতিক বস্তু সমূহ নাক্ষত্রিক গ্যাস এবং অন্যান্য কারনে বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে এটার গতি খুবই কমে যায়। এই এলাকায় বাধা বিপত্তি অনেক বেশি। এতে শংকার কারণ সৃষ্টি হয়েছিল। এই টারমিনেশন শক এলাকার পরেই রয়েছে – বিজ্ঞানীদের ভাষায় হিলিওসহেলথ অঞ্চল। বিজ্ঞানীদের পূর্ব ধারণা মিথ্যা করে দিয়ে, ভয়েজার-১ তার প্রবল বেগে টারমিনেশন এলাকা অতিক্রম করেছে।



টারমিনেশন শক হচ্ছে- আমাদের সৌজগতের বাইরের একটি বিশেষ মহাকাশীয় এলাকা। যেখানে প্রচন্ড বেগে সূর্য থেকে ছুটে আসা কনিকা গুলোর গতি হঠাৎ করে থেমে যায়। এই ডিপ স্পেস হচ্ছে বিভিন্ন নক্ষত্রে মধ্যবর্তী এলাকা। যা গ্যাসে ভর্তি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন-টারমিনেশন শক এলাকা পার হবার বড় প্রমান হচ্ছে। সূর্য থেকে আসা কনিকা রাজির কারনে মহাকাশযানের চতুদিকে চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার সংকেত পাওয়া গেছে। আর গতি অনেক কমে গেছে। এই দুটো তথ্য প্রমান করে-যানটি টারমিনেশন শক এলাকা পার হয়ে গেছে।



মার্কিন যুক্তরাষ্টের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানী প্রফেসর ডুনাল গ্রানেট বলেছেন-এই হোলিওহেলথ এলাকা পার হলেই যানটি সৌরজগত থেকে বের হয়ে যাবে। তবে ঐ যানটি এখন দুটো নক্ষত্রের মাঝখানে চলমান রয়েছে।



আমরা পৃথিবীতে যে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। ঐ এলাকার গ্যাস তার থেকে সম্পূর্ন আলাদা। এই গ্যাসের কারনে ঐ মহাকাশ যান থেকে অনেক মহাকাশীয় শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।

একজন বিজ্ঞানী বলেছেন- আমরা ঐ যান থেকে সম্ভবত ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্য পাবো। তার পরে এর বিদ্যুৎ শক্তিতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে এটা পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবে। আর সেখান থেকে পাঠানো সংকেত দুর্বল হয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত আমরা সেই সিগন্যাল থেকে তথ্য ডাটা উদ্ধার করতে পারবো না। তবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ঐ যানটা চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌছায়, সেই দূরত্ব আর স্থানটা বলা যাচ্ছে না।



প্রথমে পরিকল্পনা ছিল ভয়েজার সৌর পরিবারের বাইরের দিকের গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষন করবে। শেষ পর্যন্ত এটা সেখানেই থেমে থাকেনি। চলতেই থেকেছে দুর থেকে আরও মহা-দূরে। তার গতিবেগে ক্রমাগত সামনের দিকে। সেটা এখন পৌছেছে- এই পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি মাইল বা প্রায় ২০০০ কোটি কি.মি. দুরে। সূর্যের চার পাশে ঘূরতে থাকা গ্রহের সব কয়টিকে ছাড়িয়ে। এই মহাকাশযানটি এখন এতই দুরে চলে গেছে যে সেখান থেকে রেডিও সিগন্যাল পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে ১৭ ঘন্টা।



এই প্রথম মানুষের তৈরি কোন মহাকাশযান সৌরজগতের বাহিরে যেতে সক্ষম হয়েছে। সৌর জগতের বাইরে এই-জগৎ হচ্ছে- একটি তারা হতে আর একটি তারার মধ্যবর্তী দূরত্ব। যাকে বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলা হয় ইন্টার স্টারস স্পেস। ঠান্ডা অন্ধকার মানব অভিজ্ঞতার বাইরের এক মহাকাশীয় জগৎ। ভয়েজার প্রজেক্টর একজন বিজ্ঞানী বলেছেন- এটা প্রথম চাঁদে অবতরনের মতই এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য পূর্ন ঘটনা। এর মাধ্যমে আমরা এক তারা থেকে আরেক তারার মধ্যে কি আছে তা জানার সুযোগ পেলাম।



প্রথম কথা হল আমরা সেখানে পৌঁছাতে পেরেছি। ৩৬ বছর আগে এটা যখন যাত্রা শুরু করেছিল, তখন আমরা আশা করেছিলাম আমরা সেখানে এক দিন পৌছাতে পারবো। কিন্তু আমরা কেউ জানতাম না সূর্যের বুদবুদ মধ্যে থেকে সৃষ্টি আমাদের সৌরজগত কত বড়। ভয়েজার যানটি তা অতিক্রম করার মত দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারবে কিনা? এর তথ্য উপাত্ত থেকে এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে এটা সৌরজগতের সীমা পার হয়ে গেছে। আসলে ভয়েজার সৌরজগত পার হয়ে গেছে ২০১২ সালের ২৫ আগষ্ট।



বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ভয়েজারের সেন্সর থেকে সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল যে, তার চারপাশের পরিবেশ বদলে গেছে। গত ২০১২ সালের নভেম্বর নাগাদ পাওয়া তথ্য থেকে দেখা গেছে। ভয়েজারের বাইরে প্রতি কিউবিক মিটারে প্রোটনের সংখ্যা হঠাৎ করেই ১০০ গুন বেড়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা আগেই ভবে ছিলেন এটা সৌরজগতের বাইরে গেলেই এর কম এটা কিছু হতে পারে। এর পর বিজ্ঞানীরা কয়েব দফা হিসেব নিকেষ করে নিশ্চিত হলেন। গত ২০১২ সালের ২৫ আগষ্টের দিকে ভয়েজার সৌরজগতের সীমা পার হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন- মহাকাশ গবেষনার ৫৫ বছরের মধ্যেই আমরা সৌরজগত পার হতে পেরেছি।



ভয়েজারের চারদিকে এখন যে, বস্তু কনা রয়েছে, তার সূর্য থেকে সৃষ্টি নয়।এ গুলো সৃষ্টি হয়েছে-আশেপাশের তারা থেকে। সুপারনোভা বা বিস্ফোরিত তারার অবশিষ্ট বা অন্যান্য অংশ থেকে। বাস্তবিক অর্থেই ভয়েজার এখন অচেনা অজানা এক নতুন পরিবেশ ও জগতে রয়েছে। এর ছবি ও বার্তা চালু থাকবে যত দিন এর বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু থাকবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে আগামী ১০ বছরের মধ্যেই তাও শেষ হয়ে যাবে। তখন ও এই চ্যাম্পিয়ান মহাকাশ যানটি চলতেই থাকবে ক্রমাগত সামনের দিকে। কিন্তু তখন আর পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ থাকবে না। এই চ্যাম্পিয়ান মহাকাশযানটির মধ্যে রাখা হয়েছে একটি গ্রামোফোনের সোনালী রের্কড। যার মধ্যে রাখা আছে- এই মানব সভ্যতার নানান নির্দশন। প্রাণী জগতের নানা রকমের শব্দ। যেমন মানুষের ছবি ও কথা-বার্তা, বিশ্বে নানান দেশের গান, যন্ত্রসংগীত, যানবাহনের শব্দ, বিভিন্ন প্রাণীর ডাক, কিছু সাংকেতিক বার্তা ইত্যাদি।



কার্ল সাগান এর গায়ে একেছেন এক ধরনের সংকেত। বিশ্বে বিভিন্ন দেশের ভাষার নমুনা এতে আছে। আছে রক্তের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়া, বাংলা ভাষাও। উদ্দেশ্য হল- সৌরজগতের বাইরে অন্য কোথাও যদি প্রানের অস্তিত্ব বা বুদ্ধিমান প্রানির কোন সভ্যতা থেকে থাকে। তারা যেন এই সোনালী রেকর্ড থেকে পৃথিবীর মানব সভ্যতা ও পরিবেশ সর্ম্পকে ধারণা পেতে পারে। আমেরিকান বিজ্ঞান লেখক ও সায়েন্স ফিকশন লেখক কার্ল সাগান সহ আরও ১০ জন বিজ্ঞানী এই রেকর্ডটা তৈরি করেছিলেন। এতে নানা রকম শব্দ দিয়ে এই পৃথিবীর পরিবেশ ও চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ধরুন আমরা যদি পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন সভ্যতা বা গ্রহ থেকে -কোন রেডিও সংকেত পাই, তাহলে আমরা ও তো সেই অজানা গ্রহ ও তার অধিবাসীদের জীবন থেকে নানান রকম শব্দ শুনতে চাইব। আমরা ঠিক এটাই করতে চেয়েছি। রেকর্ডটা এমন ভাবে ঐ যানের ১টা বক্সে রাখা আছে, যাতে কোন রকম কোন রশ্মিতে এর কোন ক্ষতি না হতে পারে।



ব্রিটিশ বিজ্ঞান লেখক- ক্রিষ্ট ক্রাইলি বলেছেন- আমরা আমাদের গ্যালাক্সিতে অন্য কোন প্রাণীর সভ্যতা আছে কি না তা জানার চেষ্টা করছি। এই রেকর্ডটা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে- যাতে তা আগামী ১০০,০০০০০০০ ( ১০০ কোটি) বছর পর্যন্ত এটা অক্ষয় বা ভাল থাকতে পারে। এমন ও তো হতে পারে, কোন কারনে মানব সভ্যতা বা এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। হতে পারে বিশাল বিস্ফোরন বা কিয়ামত। এটা তখন পৃথিবীর মানব সভ্যতার এক মাত্র প্রমাণ হয়ে থাকবে। এই যে পৃথিবী বা সৌরজগতে একদিন মানুষ ও আদর্শ সভ্যতার বসবাস ছিল!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.