নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবিষ্কারের নেশায়

রাকিব হোসেন ফুহাদ

এ ধরা ক্ষনিকের জন্য যেতে হবে চলে ক্ষনিকের মাঝে অসীম রহস্য উন্মোচন করে যাব বলে, যাহা আমি শিখিয়াছি এ ধরায় এসে তার চেয়ে ভাল কিছু করে যাব সাবইকে ভালবেসে। তোমরা যেখানে দেখাবে আমায় এক মুঠো মাটি আমি সেখানে খুজে বেড়াব যা সোনার চেয়েও খাটি। তোমরা যেখানে উড়াইয়া দিবে এক মুঠো ছাই আমি তাহাতে খুজে বেড়াব অসীম রহস্যের পাই।

রাকিব হোসেন ফুহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধু ও তাজ উদ্দনি সাহবেরে অজানা কছিু তথ্য

০৫ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

কিভাবে লিখবো বুঝতে পারছিনা, একজন প্রথিতযশা সাংবাদিকের সšতান হিসেবে এটা খুবই লজ্জার বিষয়, যে প্রয়াত বাবা তাঁর কলমে ও কর্মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়েছিলেন সর্ব প্রথম। যার লেখা অনেক ঝানু সাংবাদিক ও কট্রর সমালোচকরা করতেন প্রশংসা, তাঁর সšতান হিসেবে লেখা-লেখিতে আমি সত্যিই দুর্বল। একবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রি তখন বিরোধিদলীয় নেত্রী ছিলেন সুধা সদনে আমাকে লেখালেখি করতে বলেছিলেন, রাজি হইনি। তখন হয়তো তিনি মনে কষ্ট পেয়েছিলেন। কারণ একজন বস্তুনিষ্ঠ , সৎ, নির্ভীক সাংবাদিক হলে যে স্ত্রী, সšতানদের নিয়ে তিন বেলার খাবার জোগাড় ও বাড়ীওয়ালাদের চোখ রাঙ্গানীর ভয়াবহতা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম আমরা। যেটা ঘটেছিল আমার বাবা ও আমাদের বেলায়। যখন আব্বা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কে পুন; প্রতিষ্ঠা, এবং বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছিলেন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালের যে হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকান্ডের একটি । বাবাই প্রথম ১৯৭৭ সালে শেখ হাসিনা সভানেত্রী ও জোহরা তাজউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষনা করেন। এ ব্যাপারে অনেকের বইয়ে ভুল তথ্য দেয়া আছে। অনুরোধ করছি তাদের ভুল তথ্যগুলি শুধরে নেওয়ার।



সে সময়ে ১৫ আগষ্টের মাস খানেক পরে আমাদের জন্য দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা ছিল বাবার জন্য খুবই কষ্টকর। অথচ মরহুম জিয়াউর রহমান তাঁকে মন্ত্রিত্বের প্র¯তাব দিয়ে রেখেছিলেন। তিনি গ্রহন করেননি, কেনইবা করবেন? বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর “সাত রাজার ধন এক মানিক”। এত কোটি কোটি লোকের মাঝে শুধু ওনাকেই বঙ্গবন্ধু ঐ নামে ডাকতেন এবং বেগম মুজিব যাকে মাতৃত্বের ছায়া দিয়ে আত্মার আত্মিয় করে রেখেছিলেন। উপরোক্ত ঘটনাগুলি নিয়ে পরে অন্য সময় বিশদভাবে লিখবো আশা করছি। অনেক জানা-অজানা সত্য ও অনেক মানুষের ১৫ আগষ্ট পরবর্তী প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পাবে। লেজুড়ভিত্তিক সাংবাদিকতার সমালোচনা আমি সব সময় করে আসছি।



যাক সেসব কথা আপাতত। মানবজমিন পত্রিকায় প্রয়াত শ্রদ্ধেয় তাজউদ্দিন আহমেদের জীবনী পড়ে সত্যিই ভীষন খটকা লাগলো, খারাপ লাগলো এ কারনে যে, তার মেয়ে শারমিন আহমেদ নিজে এটি লিখেছেন। আমার বাবা, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন সাহেব, শেখ ফজলুল হক মনি চাচা ও বেগম মুজিব সহ আরও অনেকের কথাবার্তা ও আলাপ আলোচনা যা বাবার কাছে শুনেছিলাম তা থেকে বুঝতে পারি যে, তাজউদ্দিন আহমেদের যে জীবনী পড়ছি তা কতটা সত্য বলে মানা যায়!? তাহলে কি আড়াল থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছেন? তারা কি কোন দুষ্ট চক্রের দ্বারা প্রভাবিত? আরও একটি প্রশ্ন জাগে যে, কেনইবা শ্রদ্ধেয়া প্রয়াত জোহরা তাজউদ্দিন জীবিত অবস্থায় এ জীবনীটি প্রকাশিত হলোনা?



আমার প্রয়াত বাবা পরম শ্রদ্ধেয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক জনাব নাজিমুদ্দীন মানিককে তাজউদ্দিন সাহেব যথেষ্ট ভালোবাসতেন, ¯েœহ করতেন এবং কিছু কিছু খেত্রে সমীহও করতেন। তাঁর সততা ও নির্ভীকতার জন্য। একদিন তাজউদ্দিন সাহেব বাকশালের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকে কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছিলেন। বোধহয় অনেকখন ধরে তাঁদের কথা চলছিল। কথার মাঝখানেই বাবা আসেন, এবং তিনিও বঙ্গবন্ধুকে বাকশাল না করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন সে সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে হালকা বাক বিতন্ডাও হয়। (বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও পরম শ্রদ্ধেয় বেগম মুজিব বাবাকে সে অধিকার দিয়েছিলেন, একজন সন্তান হিসেবে।) বাকশাল না করার জন্য ঐ বিষয়টা বেগম মুজিব ও তাজউদ্দিন সাহেব বাবাকে জোরালো সমর্থন করেছিলেন। বাবাও পরদিন ‘বাংলার বানী’ পত্রিকায় বাকশালের বিপক্ষে লিখেছিলেন। তখন শেখ ফজলুল হক মনি চাচা বাবাকে বলেছিলেন ‘ওই তুই বাকশালের বিরুদ্ধে লিখছস, জানস তোকে বঙ্গবন্ধু কি করবে?’ ‘কি করবে বেশী হলে জেলে পুরে রাখবে’ মজা করে বলেছিলেন বাবা। পত্রিকায় পড়ে ঠিকই বাবাকে টেলিফোনে দরাজ গলায় বঙ্গবন্ধু ভবনে হাজির হতে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাবাও নির্ভীক চিত্তে বত্রিশ নাম্বারে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এইটা তুই কি লিখছস? আমি কি বাকশাল বেশিদিন রাখব নাকি? এই সময়ের পারিপার্শ্বিকতার চাপে, বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির জন্য একটা পরীক্খামূলক পদ্ধতি এইটা। মানুষ আগে দেখে বুঝে তারপর ভাল হলে ভালো বলে, খারাপ হলে খারাপ হলে খারাপ বলে। আমার ইচ্ছা নাই বাকশাল বেশিদিন রাখার।’ বাবাকে তখন শ্রদ্ধেয় বেগম মুজিব মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন ‘আমি মানুষ চিনি, মানিকই আপনার প্রকৃত লোক। ওর কথার বিরুদ্ধে আপনি যাবেন না।’ আসলে প্রকৃতপক্ষে সবার কথার বিরুদ্ধে না যাওয়ার জন্যই এটা বলা। এরপর কাউকে রুমে প্রবেশ নিষেধ করে বাবা ও বেগম মুজিবকে নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বাবাকে বঙ্গবন্ধু বুঝান। এই সময়ে বেগম মুজিব সাংসারিক কাজে ঐ ঘরের বাইরে মাঝেমধ্যে গেলেও আবার চলে আসতেন। ১৪ আগষ্ট ১৯৭৫ সালের দুপুর বেলা গণভবনে প্রতিমন্ত্রির সমমর্যাদায় বাকশালের একটি নিয়োগপত্র দেয়া হয় বাবাকে।

সেই নিয়োগপত্রটি নিয়ে এসেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিললুর রহমান। এরপর বঙ্গবন্ধু অনেকখন খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘গাড়ি চালিয়ে দিলাম, জানি না কি হয়। জিললুর আমার মানিক কখনই আমাকে ছাড়তে পারবেনা। তোরাতো যে যার মত থাকবি। আমার মানিককে দেখিস।’ কথা রাখেনি জিললুর চাচা, বাবা বলেছিলেন ব্যক্তিগতভাবে জিললুর ভাই খুব ভাল লোক। সেদিন বাবাকে বঙ্গবন্ধু স্যান্ডউইচ ও রসগোললা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। সেদিন বাবাকে আমাদের পরিবার নিয়ে থাকার জন্য বেইলি রোডে একটি দোতলা বাড়ি বরাদ্দ দেয়ার জন্য সংশিলষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বাবা বলেছিলেন, ‘আপনি যে আমাকে এত বড় একটি বাড়ি দিলেন বাড়ি সাজানোর মত ফার্নিচার তো আমার নাই’। ‘গণভবন থেকে তোর যা ফার্নিচার লাগে নিয়ে নিস, বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু’। বোধহয় নিলামে ফার্নিচার ক্রয়ের কথা বলেছিলেন তিনি) বাকশাল নিয়েই বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দিন সাহেবের মনোমালিন্য প্রকাশ্যে আসে। এ সময়ে হঠাৎ করেই তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে খোন্দকার মোশতাক আহমেদের যোগাযোগ রহস্যজনকভাবে বেড়ে যায়। গোয়েন্দা সূত্র নির্ভরযোগ্য খবর পাওয়া যায় যে, তারা প্রায় টেলিফোনে একে অন্যের সাথে ২০, ৩০, ৪০ মিনিটি এমনকি এক ঘন্টার উপরও কথা বলতেন। এরপর তাজউদ্দিন সাহেব অগ্রনী ব্যাংক শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন যে, ঙঁৎ সধরহ ঢ়ৎড়নষবস রং ঃযধঃ নরম সধহ্র এবং জনতা ব্যাংকে পুরান ঢাকায় একটি শাখা উদ্বোধনের সময় তিনি বলেছিলেন ঃযধঃ নরম সধহ-------ড়ঃযবৎরিংব ও ফড়হ’ঃ পধৎব. এই বিগ ম্যান বুঝাতে উনি বঙ্গবন্ধুকেই বুঝিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু এতসব জানার পরে প্রচন্ড আঘাত পেলেও নির্লিপ্ত থাকতেন তাঁর মহানুভবতার কারনে। বেগম মুজিব সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে রাজি করিয়েছিলেন তাজউদ্দিন সাহেবকে ফোন করার জন্য। বঙ্গবন্ধু করেও ছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু তিনি যাননি। এরপর বেগম মুজিবও বারবার ফোন করেছিলেন। দুই/ তিনবার প্রয়াত জোহরা তাজউদ্দিনও ফোন ধরেছিলেন কথাও বলেছিলেন। অšতত একবার তাজউদ্দিন তনয়ার রিমি ফোন রিসিভ করে তার মাকে ডেকে দিয়েছিলেন। একদিন বেগম মুজিব খুব আফসোস করে বলেছিলেন ‘ যারা মুজিব নগর সরকারের সময় খোন্দকার মোশতাককে পাকি¯তানি চর হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন আর যে লোকটা তাকে শা¯িত স্বরুপ চলাফেরা থেকে শুরু করে যোগাযোগ ও অন্যান্য বিষয়াদিতে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলো সে কিভাবে এটা করতে পারলো? পারে?’



বঙ্গবন্ধু পরিবরের সদস্যরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছিলো তার চেয়েও অনেক বেশী অপপ্রচার করেছিলো গণকন্ঠ পত্রিকাসহ কয়েকটি পত্রিকা। চরম বিশ্বাসঘাতক সিরাজুল আলম খান ও তার (অনুজ) হাসানুল হক ইনু। এখনও জীবিত, তাদের জিজ্ঞেস করলেই হয়। একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, যে লোকটা না চাইলে কোনভাবেই, কখনোই ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সালের ঘৃন্যতম হত্যাযজ্ঞ হতো না, এক সময়কার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব চরম, চরম, চরম বিশ্বাসঘাতক তোফায়েল আহমেদ প্রথম, দ্বীতিয়, তৃতীয় সব পক্ষকেই তাল দিতেন। আসলে বিশ/পঁচিশ জন মীর জাফর তার কাছে নস্যি। তখন থেকেই সে সিরাজুল আলম খানের চর ছিল। কখনোই তোফায়েল আহমেদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্পূর্ন আনুগত্য ছিলনা। মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদেরও অনেক নেতিবাচক ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন সাহেব সহ অনেকের ভিতরে সম্পর্কের ফাটল ধরানো।



ডাহা ডাহা ডাহা মিথ্যা কথা। মুজিব বাহিনী কেন তাকে হত্যা করতে চাইবে? রাষ্ট্র না চাইলে দেশের ভিতরে কোন লোক কি জীবিত থাকতে পারে? না। যেমন চায়নি খোন্দকার মোশতাক আহমেদ । মুজিব বাহিনীর নামে খোন্দকার মোশতাক, সিরাজুল আলম খানের সর্বহারা বাহিনী অথবা অন্য কেউ যারা বঙ্গবন্ধুর ভাল চায়না তারা হয়তো চেষ্টা করেছিলো ভুল বুঝাবুঝিটা পাকাপোক্ত হোক, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিদন আহমেদের মধ্যে।



আরও কিছু কথাঃ

শ্রদ্ধেয় নেতা তাজউদ্দিন সাহেব একজন পরিনামদর্শী, সৎ, উদার এবং পাশাপাশি একজন একরোখা ধরনের রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মতো ব্যক্তিত্ব খতিকারক চাটুকার বিশ্বাসঘাতকের পাল্লায় পড়ে কিছুকালের জন্য তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জ্ঞান থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন। (রাজনীতিতে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক, আমার বাবাও শেখ হাসিনার থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছিলেন এক সময় তথাকথিত দুষ্ট চক্রদের কারণে। হয়তো তিনি আফসোস করে হতাশা থেকে কিছু রূঢ় অথচ শালীন ভাষাও ব্যবহার করেছিলেন। যেমনটা ঘটেছিল আমার খেত্রেও।)তাজউদ্দিন সাহেব পরে তিনি তা বুঝতে পারেন এবং নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা স্বরূপ অনেকদিন বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে টেলিফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলতেন প্রায় নিয়মিতভাবেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হতে পারে সে ব্যাপারেও তিনি তাঁকে সতর্ক করেছিলেন বেশ কয়েকবার। প্রয়াত তাজউদ্দিন সাহেবের স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দিন এ ব্যাপারে মূখ্য ভূমিকা রাখেন। ১৫ আগষ্টের হত্যাকান্ডের পরে প্রায় ৭/৮ মাস বিভিন্ন নেতাদের ঘোরাঘুরির পরে প্রয়াত জোহরা তাজউদ্দিনকে এক মহা অসম যুদ্ধে সঙ্গী হতে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে রাজি করাতে পেরেছিলেন বাবা।

তাঁদের লক্খ্য ছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। (এ ব্যাপারে তখনকার ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অবদান ছিল অপরিসীম) ১৫ আগষ্ট, ৩রা নভেম্বর জেলখানায় যে ঘৃন্য হত্যাকান্ড হয়েছিলো তার বিচার দাবি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুন;প্রতিষ্ঠা করা। পরে বাবা আরো ১০/১১ জন নেতা ও বঙ্গবন্ধু ভক্তদের এ অসম যুদ্ধে অংশগ্রহনে রাজী করান। এখনও এ অসম লড়াইয়ের কিছু কিছু চিত্র মনে হলে নিজেকে বাবার সাথে করা অবুঝ সাহসী শিশু সহযোদ্ধাই মনে হয়। এ যুদ্ধে সোহেল তাজও আমারই মতো একজন খুদে সহযোদ্ধা ছিলেন কেননা, তার মা তখন তাকে আমাদের বাসায় তাদের লাল রঙ্গের টয়োটা/ডাটসেন গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন বাবাকে নিয়ে যেতে তাদের বাসায়। তারপর বাবা ও প্রয়াত জোহরা তাজউদ্দিন একসাথে বের হতেন তাদের প্রতিদিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য। এতে বাবার প্রচন্ড গরমে, রোদ-বৃষ্টিতে সবসময় হাটাহাটি করে নেতাদের বাসায় যেয়ে ধরনা দেয়া যে অমানুষিক কষ্টটা হতো তা অনেকাংশেই লাঘব হতো। একদিন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডি ৩/এ তে সোহেল তাজ আমাকে বলেছিল, বিপুল ভাই আপনি কেন লিখছেন না? আমি মাকে জিজ্ঞেস করেছি আপনার কথা, আপনার বাবার কথা, মা বলেছেন ওরা তো অনেক কিছুই জানবেই। যা অনেকেই জানে না। ও যে নাজিমুদ্দীন মানিক সাহেবের ছেলে। তারপর অনেকটা বাধ্য হয়েই সোহেলকে উত্তর দিলাম, তোমরা কষ্ট পাবে আমি লিখলে বা তোমরা জানলে, যার অনেক কিছুই তোমরা জান না। আমি তোমার বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করি। তখন সোহেল তাজ চুপ থেকেছিল। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এ আওয়ামী লীগের এক সভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সোহেল তাজ বক্তৃতা দেয়ার সময় বলেছিলেন আমরা যারা স্বাধীনতার সময় খুব ছোট বা জন্ম তাদের জন্য হলেও বাবা বা মুরুব্বীদের থেকে যারা যা জানতে পারে সেই সব সত্যগুলি প্রকাশ করা উচিত। আমাকেই উদ্দেশ্য করেই একথাগুলি বলা কিনা জানিনা, তারপরও লিখিনি ওরা মনে কষ্ট পেতে পারে ভেবে। তবে আজ যখন জোহরা তাজউদ্দিন বেঁচে নেই তারপরও কেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে এইভাবে হীন করার চেষ্টা? বঙ্গবন্ধুর ‘সাত রাজার ধন এক মানিক’ এর সন্তান হিসেবে অহেতুক এ সম¯ত অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেয়াটা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে আমার বিশ্বাস। যেমন কর্তব্যের মধ্যে পড়ে ছিল ১৬ জুলাই ২০০৭ এর পরবর্তী সময়ে যখন শেখ হাসিনা সাবজেলে গিয়েছিলেন, তখন সোহেল তাজ বা তার বোনদের কিংবা আওয়ামী লীগের অনেক ডাকসাইটে নেতাদের ও শেখ হাসিনার অনেক আত্মীয় স্বজনকে খুঁজে পাইনি। অনেকে যোগ দিয়েছিল তথাকথিত সংস্কারপন্থীদলে। আমার বাবার মতো সে সময়ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রির জন্য অনেকবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য। এই ঘটনাগুলিও হয়তো কোনদিন বি¯তারিত ভাবে লিখবো। সোহেল তাজ যখন এমপি হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খমতায় থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা তাঁকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি করলেন। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর একজন আত্মীয়র সাথে তার মনোমালিন্য হয়েছিল। যার জের ধরে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। দোষ যে যদি কেউ করেই থাকে সে ঐ আত্মিয়ের, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নয়। সোহেল তাজ পদত্যাগ করার পরও এক বছরেরও বেশী সময় ধরে তার মন্ত্রিত্ব বহাল রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা এবং সেই সাথে সকল সুযোগ সুবিধাও। পরে সোহেল মন্ত্রী হিসেবে তার বেতনের একটি অংশ ফেরত দিয়েছিলেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই যে প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র গ্রহন না করে স্বপদে বহাল রেখেছিলেন তা কি প্রধানমন্ত্রির মহানুভবতা নয়? জোহরা তাজউদ্দিন অসুস্থ থাকা অবস্থায় তাকে বার বার দেখতে যাওয়া এবং চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়া এটা কি সর্বোচ্চ শিষ্টাচার নয়? তাজ উদ্দিন সাহেবের মেয়ে রিমিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে সংসদ সদস্য করা কি অন্যায়? নাকি উদারতা? জোহরা তাজউদ্দিনকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদে বহাল রাখা সে পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতারই বহি;প্রকাশ নয়?

সেজন্যই শ্রদ্ধেয় তাজউদ্দিন সাহেবের পরিবারের সদস্যদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, এহেন অপপ্রচার না করা ও দুষ্ট চক্রের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসার জন্য।



আরো কিছু প্রশ্নঃ

যদি বঙ্গবন্ধু প্রয়াত নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের সাথে এত যোজন যোজন দূরত্ব থাকতো তাহলে কি তার স্ত্রী বেগম জোহরা তাজউদ্দিন ১৫ আগষ্ট’ ৭৫ এর পরে নিজের ও সন্তানদের জীবনের এত ঝুঁকি নিতেন?



যদি জোহরা তাজউদ্দিন নিজে না বুঝতেন তাজউদ্দিন সাহেবের ভুল, ত্রুটি ও বিচ্যুতিগুলি তাহলে কি তিনি শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে এত মরিয়া হয়ে উঠতেন?



শেখ হাসিনাও কি তাজউদ্দিন সাহেবের ভাই আফসার উদ্দিনকে মন্ত্রি বানাতেন?







বঙ্গবন্ধু পাকি¯তান থেকে লন্ডন যাওয়ার পর তাজউদ্দিন সাহেবসহ অনেকের সাথেই ফোনালাপ হয়েছিল, ঐ ফোনালাপে তিনি বারংবার বলেছেন কখনই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রি কোনটিই হতে চান না । সে কথাগুলো বারবার প্রতিধ্বনিত হয়েছে বিভিন্ন জনসভায়, তার দেওয়া বক্তৃতার মাঝে। তিনি বলেছিলেন তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীরাই দেশ চালাবে। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রি হতে চাননি এটাই চিরšতন সত্য। ১০ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে সেদিন সবাই যখন বঙ্গবন্ধুকে রাজী করাতে পারেনি, তখন দুুপুরের একটু পরে তাজ উদ্দিন সাহেব বঙ্গবন্ধুর সামনে বসে দুই উরুতে দুই হাত দিয়ে বলেছিলেন “আপনাকে প্রধানমন্ত্রি হতেই হবে. না হলে এ বাঙ্গালী জাতিকে আমরা বুঝাতে পারবো না। দেশ ঠিক করে না হয় আপনি অবসরে যাবেন। তখন দেশ আমরা দেখবো”। এরপর মধ্যাহ্ন ভোজের সময় খাওয়ার টেবিলে পরম শ্রদ্ধেয় বেগম মুজিব এবং তাঁদের জেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন। আরো কিছু বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন সাহেব এর অজানা তথ্য তুলে ধরার ইচ্ছা রইল ভবিষ্যতে।



প্রয়াত নেতা তাজ উদ্দিন আহমেদের এক স্মরণসভায় ধানমন্ডিস্থ বাসায় অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে কটাক্খ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বঙ্গবন্ধুর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম তাজউদ্দিন আহমেদের অনেক গুনের কথা বললেও পরিশেষে যথার্থই বলেছিলেন যে, “এরপরও হাজারটা তাজউদ্দিন মিলালেও একজন বঙ্গবন্ধু হবেন না”।

ইতিহাস বিকৃতি করলে বা যারা করে তারাই একদিন বিকৃত ইতিহাসের কোলেই ঢলে পড়ে এটাই প্রকৃতির নিয়ম ও মেনে নিতে হয় অমোঘ পরিণতি।





মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫০

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: অনেককিছু জানতে পারলাম...চালিয়ে যান।

২| ০৫ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

খোচা বলেছেন: শুরু হলো কাদা ছোড়াছুড়ি------

৩| ০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৪৯

মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: আহারে এই মহান দায়িত্বটা পালনে এতো দেরি কেন তা ব্যাখা করার পরও মেনে নেয়া যাচ্ছেনা। বড্ড দেরি হয়ে গেল....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.