![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক এবং মুক্তচিন্তার অধিকারী
কলাম১: শাহ আবদুল করিমকে গান ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল। জবাবে শাহ আবদুল করিম নিরাপত্তার অভাবে নিজের গ্রাম ছেড়ে দিয়েছিলেন। স্ত্রী সরলার কবর নিজে খুঁড়েছেন, নিজে জানাজা পড়িয়েছেন, খুঁড়েছেন নিজের কবরও! লোকে বিকৃত করে গাইলেও তিনি বলেছেন- আমি গানের মধ্যে দিয়ে আদর্শ প্রচার করি। সেই আদর্শ হলো- একদিন দুনিয়াটা বাউলের হবে!
সবাই লালন সাঁই বা শাহ আবদুল করিম হবে না। কেউ কেউ হি'ন্দু নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ হোক চাইবে, এরপর সমালোচনা সইতে পারবেনা, যাদেরকে কেবল লেখার কারণে হত্যা করা হলো তাদের মত প্রকাশ নিয়েও বকাঝকা দেবে, বউ পিটাবে, সভা সমিতিতে গিয়ে সাম্যের কথা বললেও মনে বিশ্বাস করবেনা!
কিন্তু এদেরকে কি খারিজ করে দেয়া যাবে?
উত্তর হচ্ছে- না। পলিটিক্যাল কারেক্টনেস দিয়ে দুনিয়া চলবেনা!
কেউ কেউ হবে পাবলো নেরুদা, লিও তলস্তয় কিংবা জঁ জেনে। যে রেপের আসামি হয়েও কবিতা লিখবে, যে দারুণ সব উপদেশমূলক গল্প লিখেও সেসব উপদেশের ধার ধারবেনা নিজের জীবনে, যে চুরি ডাকাতি করবে কিন্তু দুর্দান্ত লেখক হবে, শিল্পী হবে! কেউ কবির সুমন হবে, গালি খাবে, অন্যের মত সহ্য করতে পারবেনা, কিন্তু বলবে- আমার নবী শচীন দেব বর্মন!
কেউ অরুন্ধতী রায় হবে, কেউ হবে ওরহান পামুক- যারা নিজেদের দেশের অন্যায়ও চোখে আঙুল তুলে দেখাতে পারে!
উল্লেখ্য তুরস্কের অটোম্যান সম্রাটদের চালানো আর্মেনিয়ার গণহত্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন ওরহান পামুক, অরুন্ধতী রায় যেমন বলেছিলেন কাশ্মীরের কথা।
আমাকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিল- তোমার সমাজে এতো সমস্যা, কিন্তু তবুও তুমি কেন লেখো?
আমি বলেছিলাম- তুমি যেকারণে খাবার খাও, আমি সেই কারণে লিখি!
কেউ কেউ আমার মতো আদালতে উঠবে, লেখার জন্য মামলা খাবে, থ্রেট পাবে, দেশ, সমাজ সব ছাড়বে, কিন্তু লেখা ছাড়বেনা! কারণ শাহ আবদুল করিমের মতে সেটা কেবল লেখা না, একটা আদর্শ! আদর্শের জন্য অনেকদূর যাওয়া যায়।
একবার আমাকে বলা হলো- পুলিশের পত্রিকায় লেখেন, একটা আর্টিকেল বাবদ ৫০০০টাকা দিবে! পকেটে একটা টাকাও নাই, তবুও লিখলাম না, কারণ সরকারি লেখক হওয়ার চাইতে হাত কেটে ফেলা আমার জন্য সম্মানের।
দুনিয়ায় দুই শ্রেনীর লেখক শিল্পীই থাকবে। তর্ক থাকবে, দ্বিমত থাকবে। কিন্তু কোনটা থাকবেনা জানেন?
একদিন লেখার কিংবা আঁকার কারণে কাউকে ঘর ছাড়তে হবে না, কাউকে জেলে যেতে হবে না, মামলা হবে না, কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না। দুনিয়াটা একদিন লেখকের হবে। বিশ্বাস করেন- শুধু টাকার জন্য সবাই লেখেনা। কেউ কেউ এইদিনটার কথা ভেবেও লেখে!
হয়তো এই বিদেশেই মরে যাবো কিন্তু দুনিয়া একদিন দেখতে চাওয়ার স্বপ্ন দেখা আমি কক্ষনো ছাড়বো না!
এমন একটা দিন কি এই দুনিয়া কখনো দেখবে না?
কলাম২: আমি নিশ্চিত- আমাদের দেশের ছেলে এবং মেয়েরা যদি দুনিয়াটা একটু ঘুরে দেখার সুযোগ পেতো তাহলে বুঝতো তারা যে দুনিয়ায় থাকে সেই দুনিয়ার বাইরেও এক দুনিয়া আছে মুক্ত স্বাধীন মানুষের মতো উড়ার জন্য।
এসোসিয়েশনের সুবাদে মিশেছি অনেক মেয়ের সাথে রাত দুপুরে চষে বেড়িয়েছি প্যারিসের অলিতে গলিতে ।এরমধ্যে কেউ কারও পোশাকের দৈর্ঘ্য মাপেনি, কেউ বলেনি- ওড়না কই? রাতের বেলা অচেনা শহরের জনমানবহীন রাস্তায় একা একা হাঁটতে এতটুকু ভয় করেনি! অথচ নির্ভয়ভাবে নিজের দেশের প্রকৃতিই বা কয়জন ছেলে বা মেয়ে দেখেছে?
প্রিয় দুনিয়া ও সমাজ, জেনে রাখো- এই পৃথিবীতে, এই প্রকৃতিতে মানুষ হিসেবে সবার আছে সমান ভাগ। যাকে তুমি রুখতে চাইবে, সে একদিন তোমাকে জয় করে হয়ে উঠবে অদম্য।
নিজের ভুলগুলো থেকে শিখে যে ফুল হয়ে ফোটে, ভেঙে দেয়ার চেষ্টাকে জয় করতে শেখে, সমাজের ভাষায় তথাকথিতভাবে 'ভালো’ হওয়ার চেষ্টা করেনা বরং নিজের মতো হতে চায়, নিজের যোগ্যতায় আর পকেটে নিজের টাকায় যে দুনিয়া চষে বেড়ায়, তাকে রুখে দেবার শক্তি তোমার হবে কেমন করে?
লেখক: মো: আব্দুল বাছিত রাজেল
পেশা : শিক্ষক
©somewhere in net ltd.