![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক এবং মুক্তচিন্তার অধিকারী
·
বই পড়া, সিনেমা দেখা আর ভ্রমণ- দারুণ অভ্যাস। কিন্তু বই পড়লে, সিনেমা দেখলে, ভ্রমণ করলে আপনি জীবনে কোথাও ঠেকবেন না, ঝামেলায় পড়বেন না- এই কথাগুলো মিথ্যা।
বরং বই বেশি পড়লে আপনি এমন সব সূক্ষ্ম সব কারচুপি দেখতে পাবেন দুনিয়ার, যা আগে দেখতে পেতেন না! দেখবেন আপনি এদ্দিন যাদের বন্ধু বলে চিনলেন তারা বন্ধু না, যাদের শত্রু বলে চিনলেন তারাও ঠিক শত্রু না! বরং বলা যায়- মানুষের মধ্যের কদর্য আর সৌন্দর্য একইসাথে নতুন করে দেখার একটা চশমা উপহার পাবেন আপনি! এ
দেশ ওদেশ ঘুরে আপনি দেখবেন সারা দুনিয়ায়ই মানুষ প্রায় একরকম!
কিন্তু বই পড়া, সিনেমা দেখা আর ভ্রমণ তারপরও আশীর্বাদ কেন জানেন?
কারণ এতে করে আপনি একাকীত্বের এক নতুন রূপ দেখবেন। যে রূপ আপনাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখবে যে সেই একাকীত্বকে আপনি জয় করতে শিখবেন। আপনি শিখবেন সবকিছুর পরেও মানুষ শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ায়, মানুষের জীবনে যুদ্ধ আছে। মানুষের মূল যুদ্ধটা নিজের সাথে, প্রতিনিয়ত নিজেকে গড়ে তোলা আর ভেঙে ফেলার অভ্যাস!
সেই অভ্যাস তৈরির পরে দেখবেন আপনার কাছের মানুষ দূরে সরছে আর দূরের মানুষ কাছে আসছে। আবিষ্কার করবেন এদ্দিন যাদের শত্রু জ্ঞান করতেন মতপার্থক্যের জন্য, তাদের মতামতেরও বৈচিত্র্য আছে। আপনার সাথে মিলবেনা, কিন্তু তাতে যায় আসে খুব সামান্যই!
বই পড়ে, সিনেমা দেখে আপনি প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারেন, আবার একইসাথে বুঝতে পারবেন- শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষে মানুষে ভেদাভেদ আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো!
আবার একইসাথে এও সত্য আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে উঠবে অসম্ভব। যার ব্যক্তিত্ব সে নিজে গড়ে তোলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবেই বা কেন? ফলে দেখবেন খুব তুচ্ছ কারণে আপনি দূরে চলে গেছেন তার, যার জন্য আপনি জীবন দিতে রাজি ছিলেন!
আপনি জানবেন- ভাত খাওয়া ছাড়াও, আয়নায় নিজেকে দেখা ছাড়াও মনের আয়নায় নিজেকে দেখা যায়! সেই রূপে মুগ্ধ হতে পারেন, দেখতে পারেন- জাগতিক বাস্তবতা আপনাকে ব্যথিত করলেও বিচলিত করতে পারছেনা!
যেমন ভ্রমণের আনন্দে কয়দিন আগেই নরওয়ের এক জেলেপাড়ায় ঠাণ্ডার মধ্যেও বৃষ্টি পড়া দেখে নস্টালজিক হয়ে উঠেছি আবার জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টের পাইনবনের অরণ্যে হারিয়ে গিয়ে, পাহাড়ের কোলে ফোটা এক জংলী ফুল ক'দিন আগেই দিয়েছে দুনিয়া জয়ের আনন্দ! বলতে ইচ্ছে করেছে-
কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই-
দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু,
পরকে করিলে ভাই।
তবুও বলি বন্ধু- বই পড়লে, সিনেমা দেখলে, ভ্রমণ করলে আপনি এক অপূর্ব একাকীত্বের দেখা পাবেন। সেই একাকীত্বের এক প্রবল বেদনা আর দুর্বার আকর্ষণ আছে! সেই আকর্ষণ আপনাকে দেবে বেদনার গায়ে জমা ভালবাসাকে জয় করতে, সেই একাকীত্ব আপনাকে দেবে এক অদ্ভুত জীবন যার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়, নিজের সাথে কথা বলতে হয়, নিজেকে সাগরসেঁচে পাওয়া মুক্তোর মতো যত্ম করতে হয়!
তাই বলি- যেদিন দেখবেন অর্থ-কীর্তি-স্বচ্ছলতা ছাড়াও আপনার বুকের মধ্যে হাহাকার করছে, কোনখানে এক নাম না জানা পাখির মতো মন উড়তে চাইছে, অনাহারী একজনের চোখের জল নিজের কাছে কিলিমাঞ্জারো পর্বতের মতো ভারী হয়ে উঠেছে সেদিন বুঝবেন একাকীত্বের সেই নির্জন উপত্যকার দেখা আপনি পেয়েছেন!
বই, সিনেমা আর ভ্রমণের কল্যাণে জনতার মাঝের নির্জনতা আর নির্জনতার মাঝের কোলাহল আপনি দেখতে পাবেন!
সৌন্দর্য সুরের মতো, তাকে ব্যাখ্যা করা যায়না! কিন্তু অনুভব করা যায়! বই, সিনেমা আর ভ্রমণের কল্যাণে জানবেন- যে মানুষ জগতের সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে পারে, সমগ্র জীবনের সাধনায় যে নিজেকে গড়ে তুলতে শেখে প্রতিদিন, তাকে হারিয়ে ফেলা যায়, কিন্তু তাকে হারিয়ে দেয়া যায়না!
একাকীত্বের এই অপূর্ব খেলায় যে মানুষ নিজের কাছে নিজেকে জিততে শেখে, তাকে হারাবেন কেমন করে?
©somewhere in net ltd.