![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন মায়ের কাছে সবচেয়ে আপন কে স্বামী, সন্তান না পরিবারের অন্য কেউ !
একজন মায়ের বেষ্ট ফ্রেন্ড কে ? সন্তান না তার স্বামী!
আজ প্রিয় মায়ের কঠিন এক পরীক্ষায় সফল হওয়ার গল্প শুনবো ।
বিশাল এক হল রুমে বোর্ডের সামনে মা দাঁড়িয়ে আছেন ?
মা কে প্রশ্ন করা হল আপনি আপনার প্রিয় ১০ জন মানুষের নাম লিখেন।
মা কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলেন, কপালে একটা স্পষ্ট ভাজ পড়ে গেল ,
কিছুটা নিরবতা,
মা একটা ছক করে তাদের নাম লেখলেন এবং পাশে প্রত্যেকের পরিচয় লিখে দিলেন।
সংসারের সবার নামের পাশে দুই একজন বন্ধু, ক্লাসমেট এবং প্রতিবেশীর নামও আছে।
সঞ্চালক এবার বললেন –
শ্রদ্বেয় মা জননী আপনাকে এবার লিষ্ট থেকে প্রিয় পাঁচ জনকে মুছে দিতে হবে ।
মা তার প্রতিবেশী, আর ক্লাশমেটদের নাম মুছে দিলেন ।
সঞ্চালক একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
মা এবার আরো তিন জনের নাম মুছে দিন।
মা তো এবার একটু ভাবনায় পড়লো।
হল রুমের সবাই একটু নড়েচড়ে বসলো এবং সিরিয়াসলি নিলো বিষয়টাকে।
খুব মনযোগ দিয়ে দেখছেন একজন সফল মায়ের সাইকোলজি কিভাবে কাজ করছে।
মা কপালের ঘাম মুছছেন,চোখের মনি গুলি একটু সাদাটে লাগছে, হাত একটু একটু কাঁপছে।
শ্রদ্বেয় মা একটু ভাবলেন তারপর ধীরে ধীরে তার বেষ্ট ফ্রেন্ডের নাম মুছলেন এবং সাথে উনার জন্মদাতা বাবা আর মায়ের নামও মুছে দিচ্ছেন আর সাথে সাথে মা রিতিমত চোখের জল জড়িয়ে যাচ্ছেন ।
সঞ্চালক যে মজা নিয়ে এতোক্ষন মা কে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন , সেই মজা আর নেই।
হল রুমের সবার মাঝেও টানটান উত্তেজনা,অনেকের চোখের কোনে পানি জমে আছে।
লিষ্টে আর বাকী আছে দুইজন। তারা হল প্রিয় মায়ের সারাজীবনের সঙ্গী সুখ দুঃখের সাথী প্রিয় স্বামী আর প্রিয় সন্তান।
এবার সঞ্চালক অনেক ভেবে আধো আধো গলায় বললেন, শ্রদ্বেয় মা জননী এবার আপনাকে আরো একজনের নাম মুছে দিতে হবে।
প্রশ্ন শোনে মা চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো আর চোখের জলের গতিবিধি আরো বাড়িয়ে দিতে লাগলেন । কি করবেন ?
কার নাম মুছবে ? কিছুতেই যেন আর মুছতে পারছেন না ।
সঞ্চালক আবার বললেন – মা গো, এইটা একটা গেইম। সাইকোলজিক্যাল খেলা। জাষ্ট প্রিয় মানুষদের নাম মুছে দিতে বলেছি, মেরে ফেলতে তো বলিনি!!!
মা বন্ধ চোখ খুলে সবার দিকে তাকালেন আর কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে চোখ জল মুছতে মুছতে বোর্ড এর মাঝে হত রাখলেন এবং ধিরে ধিরে স্বামীর নামটা মুছে দিলেন।
সঞ্চালক এবার মায়ের কাছে গেলেন,একটা রুমাল বাড়িয়ে দিয়ে পা ছুয়ে সালাম করলেন আর পকেট থেকে একটা গিফট বের করে বললেন–
শ্রদ্বেয় মা আপনার মনের উপর দিয়ে যে ঝড়টা গেলো তার জন্য আমি এবং আমাদের হল রুমের সবাই দুঃখিত এবং সবাই আপনাকে সেলুট জানাচ্ছি ।
আর এই গিফট বক্সে দশটা গিফট আছে। আপনার সব প্রিয়জনদের জন্য।
সঞ্চালক বললেন মা এবার বলেন,
কেন আপনি অন্য নাম গুলো মুছে দিলেন।
মা বললেন- প্রথমে বন্ধু আর প্রতিবেশীদের নাম মুছে দিলাম।
কারন তবু আমার কাছে বেষ্ট ফ্রেন্ড আর পরিবারের সবাই রইলো।
পরে যখন আরো তিন জনের নাম মুছতে বললেন, তখন বেষ্ট ফ্রেন্ড আর বাবা মায়ের নাম মুছে দিলাম। ভাবলাম, বাবা মা তো আর চিরদিন থাকবে না। আর বেষ্ট ফ্রেন্ড না থাকলে কি হয়েছে?
আমার কাছে আমার স্বামী আর তার সন্তানই বেষ্ট ফ্রেন্ড।
কিন্তু সবার শেষে যখন এই দুইজন থেকে একজনকে মুছতে বললেন তখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
পরে ভেবে দেখলাম, স্বামী তো আমাকে যে কোন সময় ছেড়ে চলে যেতে পারে তখন তো আর কোন উপায় থাকবেনা কিন্তু সন্তান সে মেয়ে আর ছেলে যায় হউক কেউ না কেউ আমার সাথে থাকবে । তাই সন্তানকে রেখে স্বামীর নামটা কেটে দিলাম ।
সঞ্চালক এবং হল রুমের সবাই চোখের জলে মায়ের কথা শুনে দাঁড়িয়ে বললো মা আপনাকে সন্তান হিসাবে জানাই সেলুট ও সালাম ।
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ও সুরক্ষার স্থল হচ্ছে মায়ের কোল। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসা চির বহমান, চলমান নদীর স্রোতের মতো।মায়ের ভালবাসার কোন বিনিময় মূল্য নেই। পৃথিবীর প্রতিটি মা’ই মমতাময়ী ‘মা’। মায়ের মমতাকে পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে তুলনা করা চলে না। মায়ের তুলনা একমাত্র মা। মায়ের চেয়ে আপন কে আছে এই পৃথিবীতে ? মায়ের চেয়ে বড় কে আছে ? সৃষ্টিকর্তার পর মা-ই হচ্ছেন মানুষের সবচেয়ে বড় স্নেহের আশ্রয়স্থল। সন্তানের হৃদয়ের শান্তি-স্বস্তি সবই এনে দিতে পারেন একজন মাত্র মানুষ, তিনি মা।
মায়ের চেয়ে বহুল উচ্চারিত শব্দ আর নেই। জন্মের পর, চোখ খোলার পর যে মানুষটিকে প্রথম দেখে শিশু, সেই মানুষটি মা। পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো ভাষায় শিশু প্রথম উচ্চারণ করে ‘ম’ শব্দটি। ‘ম’ থেকে মা।
কোন লেখনী বা কলমের কালি দিয়ে মায়ের প্রতি ভালবাসা আর শ্রদ্ধাকে কি পরিমাপ করা সম্ভব? কোনোভাবেই না। আমার পৃথিবীজুড়ে শুধুই একজন। সে তো আমার মা। সন্তান জন্ম দিতে মাকে কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় সেটা একমাত্র মা’ই জানে। মানুষের ব্যথা পরিমাপ করার জন্য বিজ্ঞান যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। আধুনিক বিজ্ঞানই বলে, মানুষ সর্বোচ্চ ৪৫ ডেল (ব্যথা পরিমাপের একক) ব্যথা সহ্য করতে পারে। কিন্তু একজন মা যখন সন্তান জন্ম দেন তখন তিনি ৫৭ ডেল ব্যথা সহ্য করেন; যা একই সময়ে ২০টি হাড় ভেঙে ফেলার সমান। সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে কতটুকু কষ্ট মাকে করতে হয় তা আমরা সন্তানরা বুঝব কী করে!কোন সন্তানই মায়ের প্রসব ব্যথার যন্ত্রনা বুঝতে পারে না। যদি বুঝতে পারত তবে কোন সন্তানই তার মাকে পরিবার থেকে বিচ্ছন্ন করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতেন না। প্রাণীজগতের অন্য যেসব প্রাণী আছে, তাদের সন্তানরা পৃথিবীতে আসার পর হাঁটতে জানে, দৌড়াতে জানে, উড়তে জানে কিংবা সাঁতার কাটতে জানে। কিন্তু একমাত্র মানুষ, শুধু মানুষই ব্যতিক্রম। তারা না পারে হাঁটতে, দৌড়াতে, না পারে উড়তে আর না পারে সাঁতার কাটতে। ক্ষুধায় চটপট করলেও মানবসন্তান কখনোই পারে না নিজের খাবারটা চেয়ে খেতে। কিন্তু মায়ের হৃদয় কীভাবে যেন তা জেনে যায়। সন্তান দুরে থাকলেও সন্তানের বিপদের খবর মা সবার আগে জানে। এমন মাকেও যারা কষ্ট দেন তারা সত্যিই মানুষ কি-না আমার প্রশ্ন জাগে। স্ত্রীর প্ররোচনায় হোক কিংবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, মাকে অনেকেই কষ্ট দিয়ে থাকেন। হাল আমলে ঝামেলা মনে করে অনেকে বাবা-মাকে রেখে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। কিন্তু যারা এ কাজ করেন কখনও কি ভেবে দেখেছেন_ তারাও একদিন বৃদ্ধ হবেন, তারাও মা-বাবা হবেন? তাদের নিয়তিতেও যে এমন কিছু লেখা নেই, তার নিশ্চয়তা কি? মা তো মা-ই। সন্তানের এমন আচরণও তারা কীভাবে যেন পরম মমতায় ক্ষমা করে দিতে পারেন!
তাই, হে সকল প্রিয় সন্তান, তোমাদের কখনো মায়ের অবাধ্য হওয়া উচিত নয়। অবাধ্য সন্তান মায়ের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কৃতী সন্তান মায়ের কাছে মাথার মুকুটস্বরূপ। যে সন্তান মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত, তারা জীবনে সাফল্য লাভ করে। বৃদ্ধ অবস্থায় "মা" সন্তানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় অসুখ ও স্বাস্থ্যের প্রতি অধিক নজর দিতে হবে। তাঁর সেবা-শুশ্রষার প্রতি যত্নশীল হওয়া সন্তানের একান্ত কর্তব্য। একটি অপূর্ব উক্তি যা না বললেই নয়— মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, 'আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি অথবা যা হতে আশা করি তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।'
সবশেষে বলতে হয়, মায়ের স্নেহ-ভালবাসা অকৃত্রিম এবং প্রতিদানহীন। কোন উপমা বা সংজ্ঞা দিয়ে মায়ের এ ভালবাসার পরিধি ও গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। মা উচ্চারণের সাথে সাথে হূদয়ের অতল গহীনে যে আবেগ ও অনুভূতি রচিত হয় তাতে অনাবিল সুখের প্রশান্তি নেমে আসে। কাজেই, মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়স্থল। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, দার্শনিক, দিক-নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। যাঁর ভালবাসার কোন সীমারেখা নেই।
তুলনাহীন এক সম্পর্কের নাম হলো মা। তাই পৃথিবী সৃষ্টির পর মানুষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মাকে দেয়া হয়েছে এমন এক আসন। যে আসনটি সন্তানের কাছে স্বর্গীয় সুখের সাথে তুলনীয়। শৈশবের মায়ের কোল, মাতৃশাসন, মাতৃস্নেহ সবকিছুতেই যে রয়েছে এক অতুলনীয় প্রতিবিম্ব, যা আর কিছুতে নেই। সন্তানের যে কোন প্রয়োজনে মা-ই হয়ে ওঠেন সব থেকে বড় অবলম্বন। অজান্তেই যেন সন্তানের বিশেষ মুহূর্তে মায়ের মুখটিই সবার আগে মনে পড়ে। মা সন্তানের জীবনে এমন এক অস্তিত্ব ধারণ করে আছে। বাস্তবিক অর্থে তাই সন্তান জীবনের প্রতিটি স্তবকে এসে নিবিড়ভাবে অনুভব হয় মায়ের উপস্থিতি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে মাকে। মা-কে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। উপাখ্যানের সীমা-পরিসীমা নেই।
সৃষ্টির সূচনা থেকেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ীর সম্পর্ক সৃষ্টিকর্তা রচনা করে দিয়েছেন। তার আর অন্য কোন দৃশ্যপট নেই। সন্তানের কাছে তাই মা হলো আনন্দ-বেদনার সর্বশেষ অংশীদার। ইসলাম সন্তানের ওপর পিতা অপেক্ষা মাতার অধিকার বেশি রেখেছে। কেননা নবজাত শিশুর লালন-পালনের জন্য মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কষ্ট অপরিহার্য।
ইসলাম মা হিসেবে নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে
এবং মুসলিম পরিবারে সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও কর্তৃত্বের স্থান দিয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল।
ইসলাম মাকে মহিমান্বিত করে প্রকৃতপক্ষে নারী জাতির মর্যাদাকেই সমুন্নত করেছে। মাতৃত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম নারীকে দিয়েছে সম্মানজনক মর্যাদা। সন্তানের সার্বক্ষণিক মঙ্গল কামনায় মায়েরা অনেক ত্যাগ করেন, যথাসম্ভব দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেন। সন্তানকে সুস্থ ও সৎমানুষ রূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়েদের আজীবন সাধনাকে অম্লান করতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণীতে ঘোষিত হয়েছে, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।’ (আহমাদ, নাসাঈ)
মায়ের গর্ভকালীন কষ্টের কথা আল্লাহ তাআলা ব্যক্ত করেছেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৪) ।
মুসলিম পরিবারে সন্তানের মা সব সদস্যের কাছ থেকে সম্মানজনক মর্যাদা ও সদাচরণ পাওয়ার দাবিদার। সন্তান জন্মের সূচনাপর্ব থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মায়ের অবদান অতুলনীয়। তাই মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিনয়, সদাচরণ এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের বাণী পবিত্র কোরআনে যথাযথ ও সুবাচনিক ভঙ্গিতে বিধৃত হয়েছে।
وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا (36
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তাঁর শরিক করবে না
এবং পিতামাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৩৬)
সন্তানের গোটা জীবনই হচ্ছে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের সময়, এমনকি মায়ের মৃত্যুর পরও সন্তানের এ দায়িত্ব কখনো শেষ হয় না। মানব সন্তানেরা মায়ের ত্যাগের কথা বেমালুম ভুলে সত্য স্বীকার করতে চায় না বলেই বিশ্বজুড়ে গৃহে বা বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের প্রতি বঞ্চনা, অবহেলা আর অবজ্ঞার বার্তা শোনা যায়। প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে মায়ের প্রতি অসদাচরণ ও অবহেলা করে বহু সন্তান বিপথগামী বা ভর্ৎসনার পাত্রও হয়েছে। তাই প্রত্যেক সন্তানসন্ততির অপরিহার্য কর্তব্য সব সময় মাতাপিতার প্রতি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাশীল হওয়া, তাঁদের মান্যগণ্য করা, তাঁদের সঙ্গে বিনম্র ও সদয় আচরণ করা, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, বার্ধক্যে উপনীত হলে যথাসাধ্য সেবা-শুশ্রূষা, প্রয়োজনবোধে তাঁদের ভরণপোষণ প্রদান করা এবং যত দূর সম্ভব তাঁদের জীবন আরামদায়ক করা। মা-বাবার ইন্তেকালের পর ছেলেমেয়েদের সমীচীন হবে তাঁদের ক্ষমা ও কল্যাণের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা এবং তাঁদের কোনো অঙ্গীকার থাকলে যথাশিগগির তা পূরণ করা।
হৃদয়ের সবটা জুড়েই আছে প্রিয় মা। হৃদস্পন্দনের প্রতিটি স্পন্দনে যে শব্দের অনুরণনটা গাঢ় আবেগ আর আকুলতা নিয়ে গুঞ্জরিত হয় সে শব্দটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর। সব থেকে কাছের এবং সবচেয়ে প্রিয় আশ্রয়স্থল আর এক বিশাল ছায়ার নাম হলো মা। যার গহনে সন্তানের জন্যে রয়েছে এমন এক ধনসম্পদ, মণিরত্নরাজি যা আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি এই মা-এর সঙ্গে কোন কিছুরই তুলনা হয় না। মা মানেই অন্য এক জগত। অন্য এক জীবন। যে জীবনে মায়ের কোন বিকল্প নেই। জন্ম থেকে জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে মায়ের অবস্থান সন্তানের কাছে অসীম মূল্যবান।
পারিবারিক জীবনে একজন মায়ের যে ভূমিকা তা আর অন্য কোন সম্পর্কের মধ্যে রচিত হয়নি। পৃথিবীর সব দেশে, সব জায়গায় সন্তানের কাছে অত্যন্ত কাছের মানুষটি হলেন মা। পৃথিবীর আলো দেখার আগেই সন্তান দেখে ফেলে মায়ের প্রিয়, মানবিক দরদভরা মুখটি। যে মুখের ক্যানভাসে আঁকা হয়ে আছে সন্তানের জন্য রাজ্যের যত কল্যাণকর শুভ কামনা, দোয়া, আশীর্বাদ, ভালবাসা। মঙ্গলকামনাসহ পৃথিবীর যাবতীয় ভালো লাগাটাও যেন মা সন্তানের জন্যেই তুলে রাখেন পরম যত্নে।
যাদের মা আজ বেঁচে নেই, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে অমূল্য সম্পদটিই হারিয়েছেন। জন্মান্তরের বাঁধন ছিঁড়ে মা আজ স্রষ্টার সানি্নধ্যে। পৃথিবীর সবাই ভালোবাসার প্রতিদান চাই এমনকি নিজের স্ত্রীও। কিন্তু একমাত্র মা, মায়েরাই পারেন কোনো প্রতিদানের আশা না করেই সন্তানকে ভালোবাসতে। মায়ের অভাব আপনিই হয়তো বুঝতে পারবেন অনেক বেশি যখন মাকে হারাবেন। যদিও যান্ত্রিক আর ব্যস্ত এ পৃথিবীতে অনেকের অবশ্য সে বোধ এখন আর নেই। যখন দেশে ছিলাম, মায়ের কাছাকাছি ছিলাম, মায়ের সানিধ্যে ছিলাম তখন মাকে অনুভব করতাম না, এখন প্রবাস জীবনে যতটুকু করি। আমার মতো সকল প্রবাসীর এমন হয় কিনা জানিনা।মায়ের শূন্যতা পৃথিবীর কোন কিছু দিয়ে পূরন করা যায় না। মায়ের শূণ্য স্থান একমাত্র মায়ের আদর সোহাগ দিয়ে পূরন করা সম্ভব। আমি এখন পিতা তাই আমি এখন অনুভব করতে পারি সন্তানের প্রতি মায়ের আকুলতা। একজন মায়ের কাছে পৃথিবীর সকল সন্তানই তার আপনার সন্তান। অনেক ভুল, অনেক অপরাধ জেনে হোক বা না জেনে হোক, হয়তো করে ফেলে সন্তানেরা। আমরা জানি, মা, দয়ার সাগর। সন্তান যখন মায়ের সামনে অপরাধ স্বীকার করে দাঁড়ায়, তখন সকল মায়ের হৃদয়ই নরম হয়! আপন মহিমায় মা সকলকে ক্ষমা করেন।
তাই আজ স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা, ‘
হে আল্লাহ, ছোট্টবেলায় মা-বাবা আমাদের যেভাবে লালনপালন করেছেন, তুমিও ঠিক সেভাবে তাদের লালনপালন করো।
হে আল্লাহ আমাদের সবার মাকে সুস্থ রাখুন ও বেহেস্ত নসীব করুন ।
তাদেরকে তুমি বেহেস্ত নসীব করুন ।
©somewhere in net ltd.