![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জানি এ কান্নার শেষ হবেনা !
এ অপ্রাপ্তির ব্যদনার কোন গন্তব্য নেই।
তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কেদেই যাচ্ছি,
আজ অনেক কষ্ট নিয়ে লিখেছি, কিন্তু অনেক কেঁদেছি চোখের জলে কিবোর্ড বারবার ভিজে
যাচ্ছিল। লিখতে গেলেই প্রতিটি জল কনা এসে বাধা দিচ্ছিল।
আজ হঠাৎ করেই মনটা ভিষন খারাপ।
নিজের সব ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেই খারাপের ব্যাপ্তিটা।
বউ বার বার জিজ্ঞাস করছে কি হইছে ,ইমোশনালি কিছু না বললেও,মনে মনে বউকে ঠিকই
গালি দিচ্ছি,, বিরক্তককর মানুষ একটা ।
আমার কলিজার টুকরা আম্মুটা আধো আধো কথা বলতে শিখছে,তাই একটু পর পর ডাকে ও বাবা,ও
বাবা। শুনে একটু মুচকি হাসি আসে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল,বুকের এক কোনে ঝিমঝিম ব্যাথ্যা,,কিছু একটা ঘটছে,,কিন্তু কাউকে বলা
যাচ্ছেনা। ক্যালেন্ডারের পাতা খুলে দেখলাম,,আর তিন দিন পরেই আমার মায়ের মৃত্যু
বার্ষিকী। ব্যাথ্যাটার গতি আর একটু বেড়ে চলেছে, চোখের কোনে জল কনা গুলো বার বার
আঘাত করছে, কিন্তু আমার সহনশীলতার কাছে বাধা পাচ্ছে। আমার বিয়ের ঠিক ১৩ দিন পরে এই
রমজানে, এক সকালে সবকিছু থমকে দিয়ে আমার জীবনের এক মাত্র প্রিয় মানুষটি চলে গেল।
এখনো ভাবতে গেলে অবাক হয়, যে মানুষটি আমার বিয়েতে অনেক খুশী হয়েছিল, যে মানুষটি সব
মায়া ভুলে আমার কাছে থাকার সিধান্ত নিয়েছিলো, যে মানুষটি খুব খুশী হয়েছিল বউকে
পেয়ে, আমি এখনো ভাবতে পারিনি, যে মানুষ সুস্থ অবস্থায় সেহেরী খেল, এক টুকরো মাংসের
বেশী না খেলেও আমার যন্ত্রনায় তিন টুকরো খেয়েছিল। যে মানুষ প্রচন্ড অসুস্থ হয়েও ভেংগে
না পরে আমাদের ঘুম থেকে ডেকে তুললো,নিজে ডাক্তারের সাথে কথা বললো, সেই মানুষ কিনা ৫
মিনিটের মধ্যে সব সতব্ধ করে পৃথিবী থেকে চলে যাবে, সন্তান হিসেবে আমি কি করে সেটা
মেনে নিব।আজো সেই ডাক হৃদয়ে ভেংগে চুরমার করে, ও বাবা আমি বাচতে চাই, ও বাবা আমার
ভিতর কেমন করছে, আমি কি করবো, এই অব্যক্ত ব্যদনায় ভোরের আবহেই আমার সবচেয়ে প্রিয়,
আমার কলিজা,আমাকে একা রেখে, পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। এই মুহূর্ত গুলো প্রায় আমাকে
বোধশক্তিহীন করে দেয়। আর মা শিখিয়ে গেলেন ধর্য্য কাকে বলে,জীবনের চরম মুহূর্ত কিভাবে ধর্য্য ধরতে হয়।
একটু পর আবার বিরক্ত, এই তোমার কি হল, তখনই সব সহনিয়তা ভেংগে চোখ দিয়ে পানি আসতে
লাগলো,সাথে বউ নামক জীবনের চোখেও অঝোর দ্বারা,এটা আগে থেকেই আমার কিচ্ছু হলে ও অস্থির হয়ে উঠে।
চোখ মুছে চুপচাপ বসে রইলাম,,বুকের ব্যাথ্যাটা আগের মতই আছে, খুব অস্থির লাগছে, শরীলে পানি দিয়ে আসলাম,
একটু হালকা লাগছে, এর মধ্যে বউয়ের সাহসী সান্তনা।
সত্যি বলতে কি বাবা হওয়ার পর থেকেই আমার বাবার অভাববোধটা আরো বেশী টের পাচ্ছি।
বাবা কি ছিলেন, বেচে থাকার জন্য কতটুকু প্রেরণা ছিলেন, পৃথিবীর সব শক্তি হার মেনে
যেত বাবা নামের বিশাল শক্তির কাছে। কিন্তু সেই বাবাও আমায় না বলে রাতের অন্ধকারে
চুপিচুপি চলে গেলেন। হয়তো আমার সাথে বড্ড অভিমান করে ছিলেন। অনেক দুর থেকে যখন
বাবার চলে যাওয়ার খবর শুনলাম, রাত তখন ৩টা,পুরোপুরি পাগলের মত আচরন করে যাচ্ছিলাম।
প্রশ্ন করছিলাম নিজেকে আমি সত্যি কি খুব একা হয়ে গেলাম।
আমার কেউ নেই।
আজ বুঝতে পারছি কেন বাবা নিজের জন্য কিছু কিনতেন না,সেটা ঈদ হউক আর যায় হউক।
কেন সব কষ্ট নিজের করে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চাইতেন। কেন সবচেয়ে মজাদার জিনিসটা
সন্তানের জন্য রেখে দিতেন।
এই আমি যে মানুষ টা প্রতি মাসে নতুন জামা কাপড় কিনতে হত সেই আমি বাবা হওয়ার পর আজ
৫/৬ মাস হল কিছু কিনতেই মন চায়না, কিছু কিনতে গেলেই ভাবি মেয়ের জন্য কিছু কিনি পরে আমার জন্য।
সারাক্ষণ মেয়ে আর টুকটুকির ভাবনায় সময় যায়।
মাঝেমাঝে ভাবি এই হচ্ছে মা বাবা সন্তানের জন্য সব পারে,জীবনের সব কিছুর
বিনিময়ে হলেও দিতে চায় সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ।
বাবা যখন বিকেল বেলায় নিয়ে বাজারে যেতেন হাজার রকম আবদার চলতো, আজ সেই দিন গুলি খুব
মিস করি। মা বাবাকে আজ খুব মিস করি, আমার মেয়ে মৌনতা যখন ও দা দা দা,, দাদাদু বলে
ডাকে তখন চোখের জল আর ধরে রাখতে পারিনা।
মেয়েটা ইদানীং দাদা,দাদু খুব বেশী ডাকাডাকি করে।
কি জানি হয়তো স্বপ্নের দেশে ওর দাদা দাদু ওকে এসে আদর করে যায়।
সব্ধ্যা হচ্ছে কিন্তু বুকের ব্যাথ্যাটা কমছে না, আমি জানি যখন বাবা মার কথা ভাবি তখন
আমি আর আমাতে তাকিনা।
বিরক্তকর বউটা আবার এসে জ্বালাচ্ছে, মাথায় হাত
বুলাচ্ছে,কিন্তু সে জানেনা না হাসলে বুকের ব্যাথ্যা কমবেনা,,
একটু পরেই আমার কলিজাটা, ডাকতে শুরু করলো, ও
বাবা,বাবা,ও বাবা। বউটা হেসে উঠলো, আর
আমিও হেসে কলিজাটা কে কোলে নিয়ে
পৃথিবীর সবকটা আদর দিয়ে দিলাম।
আর মনে হল বাবা হওয়ার স্বার্থকতাটা এখানেই।
যখন নি:শপাপ মুখে সময়ে অসময়ে আওয়াজ আসে ও বাবা, বাবা, ও বাবা।
হে আল্লাহ বাবা মা কে বেহেস্ত নসিব করুন।
©somewhere in net ltd.