নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই রকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। যেখানে থাকবে না কোন পাপ পঙ্কিলতা।

ইসিয়াক

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্পঃ তুমি আমায় ডেকেছিলে অনেকদিনের পরে

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৩৩


এখন বেলা তিনটা বেজে দশ। অপেক্ষার প্রহর গুলো সবসময় দীর্ঘ ও বিরক্তিকর হয়। কিন্তু আজ কেন জানি আমার একটুও বিরক্ত লাগছে না। নীলা বলেছিলো সে আড়াইটায় আসবে। সে কখনো দেরী করেনা অন্তত এর আগে কখনো তার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ করার সুযোগ পাইনি। আধা ঘন্টা লেট। আমি পার্কে বসে আছি তো আছি।

একসময় এই পার্কে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছি। সময় দারুণ কেটে যেতো্ তখন কিন্তু এখন এক ধরনের অস্বস্তি হচ্ছে। সব যুগে সব সময় পার্ক প্রেম করার জন্য একটা প্রধান স্থান হিসাবে কাজ করে।তবে এখন সময় বদলেছে যুগ ও বদলেছে যদিও।বর্তমান ছেলেমেয়েরা প্রেম করার কৌশলও বদলেছে বিভিন্ন আঙ্গিকে সময়ের সাথে সাথে। তবে দিনশেষে পার্কের প্রেমপর্ব চলছে ঠিকই।

আজ এখানে এই পার্কের সারিসারি ফুলের মাঝে ফটো তোলার ধুম পড়েছে খুব।ও দিকটায় ঝিলের ফুটেছে লাল পদ্ম। সেই পদ্মকে ব্যকগ্রাউন্ডে নিয়ে চলছে সেলফি তোলার মহা হিড়িক। অতি উৎসাহী কিছু যুবক তো আরো এক কাঠি উপরে, সেলফি আরো আকর্ষনীয় করার জন্য গিয়ে দাড়িয়েছে একেবারে ঝিলের ধারে। পা হড়কালেই কেল্লাফতে। সেলফি একেবারে পানিতে!

-সরি অপূর্ব দেরী করে ফেললাম। মিষ্টি কণ্ঠের আহ্বানে আমার দৃষ্টি ঘুরে গেল চকিতে।
নীলা দিকে তাকাতেই আমার মনটা ভরে উঠলো। এতো সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে কি আর বলবো। আমি মুগ্ধতা নিয়ে অনেকদিন পরে নীলাকে দেখছি। সাধারণ সাজে এসেছে সে। তবু কি অপরূপ। নীল শাড়ীতে তাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। একেবারে নীল পরী যেন। এত সুন্দর কি করে হয় মানুষ। আমি স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে হাতখানা বাড়িয়ে দিলাম।
-এসো।
কিন্তু নীলা হঠাৎ যেন থমকে গেল, বলল,
-ঠিক আছে, বসছি।
নীলা আমার পাশে বসলো। দূরত্ব রেখে সতর্ক একটা ভঙ্গী বজায় রেখে। মনটা একটু ভার হয়ে গেল আমার। অথচ আহা কি সব দিন ছিলো সেই সব। এই ঝিলের পাড়ে কত ঘনিষ্ট সময় কাটিয়েছি দুজনে। বাদাম কিনতাম, এর বেশি সামর্থ্য ছিলো না। ভাগাভাগিতে বাদাম পর্ব চলতো আর সাথে কতই না অকারণ কথকতা। পৃথিবীতে সুন্দর দিনগুলো খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে যায়।

স্মৃতির সেই দিনগুলো আজো অমলিন। এই তো সেদিনের কথা তুমুল প্রেম পর্বের মধ্যে হঠাৎ একদিন নীলা জানালো বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য প্রচুর চাপ দিচ্ছে, তুমি কিছু একটা করো্।

আমি তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছি। পড়াশোনা শেষ হতে সময় লাগবে। তারপর চাকুরী বা অন্যকিছু। কি করলে কি হবে ভাবতেই দিশাহারা অবস্থা এর মধ্যে খবর পেলাম নীলার সৎবাবা আমাদের ব্যপারে সব জেনে গেছে, নীলাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়না আর। কিছুদিনের মধ্যে নীলার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। আন্তরিকতা থাকা সত্বেও আমি নীলার বিয়ে ঠেকাতে পারলাম না কিছুতেই। বাড়িতে অসুস্থ মাকে রেখে পালানোর কথাও ভাবতে পারলাম না। নীলা এভাবেই হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকে।

-কি ভাবছে? কেমন আছো?
আমি হেসে বললাম,
-যেমন রেখেছো।
নীলা মাথা নিচু করে ফেলল, বলল,
-তুমি হয়তো আমাকেই দোষ দেবে সারাজীবন!
-দোষতো দেইনি নীলা?
-তাহলে এখনো বিয়ে করনি কেন?
-মন থেকে সাড়া পাইনা যে?
-এটা কোন কথা হলো?
হঠাৎ প্রসঙ্গ ঘুরাতে আমি বললাম,
– ডেকেছো কেন?
-তুমি আমার একটা উপকার করবে অপূর্ব?

কণ্ঠের কাতরতায় আমার বুকটা কেঁপে উঠলো নিমেষে। অচেনা চিনচিনে ব্যথায় মনের অলিন্দে কিসের যেন অনুরণন খেলে গেল। নীলা আমার কাছে কিছু চাইছে। আমি দেবনা তাই কি হয়! হয়েছে কখনো।

আমি গভীর দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললাম,
-কি হয়েছে নীলা?কোন সমস্যা?
নীলা খানিক ইতস্তত করলো যেন, তাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে? গভীর কোন সমস্যায় না পড়লে সে কখনো আমার দ্বারস্থ হতো না তা ঠিকই বুঝতে পারলাম। আমি অভয় দিয়ে বললাম,
-তুমি তোমার সমস্যা আমাকে মন খুলে বলতে পারো নীলা কোন সঙ্কোচ করো না। নীলা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সে খুব ব্যস্ততার সাথে হড়গড়িয়ে বললো,
-তুমি আমার একটা উপকার করবে অপূর্ব?
-কি বলো?
-আমার একটা কাজ চাই, যেকোন কাজ। খুব দরকার। বিশ্বাস কর।
-এভাবে বলছো কেন নীলা? দাবি নিয়ে বলো, আমাকে বুঝি এখন পর মনে হয়?
-জানো তো লেখাপড়াটা সেভাবে করতে পারিনি। পারবে কি তুমি আমায় একটা চাকরি খুঁজে দিতে? একটু সাহায্য করো প্লিজ। আমি আর পারছি না। ঘরে প্যারালাইজ স্বামী। দুই বাচ্চা আরো সাথে অসুস্থ শ্বাশুড়ী…….তুমি যদি একটা চাকরি খুঁজে দাও। তো আমার পরিবারটা বেঁচে যায়।
-ওভাবে বলো না নীলা। আমি তো সবসময় তোমারই প্রিয়তমা। খুব বলতে ইচ্ছা করলো। খুব কিন্তু কথাগুলো মুখে এলেও বাণী হয়ে ফুটে বের হলো না কিছুতেই। অন্য রকম দ্বিধা বা সন্কোচ সময় মানুষের সম্পর্ককে জটিল করে দেয়।

এর কিছুদিন পরে নীলার একটা চাকরি হয়ে গেল। আমার সুপারিশেই হলো্ অবশ্য। তারও বেশ কিছুদিন পরে একদিন ভাবলাম খোঁজ খবর নেই একটু নীলার। ফোন দিলাম। অপর প্রান্ত থেকে জানালো সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সম্ভবত নীলা নাম্বার বদলেছে। মনটা খারাপ হলো যেন। তারপরে মনকে বোঝালাম নীলা হয়তো জীবনের বাস্তবতায় অতি সাবধানী হয়ে উঠেছে। সেটাই স্বাভাবিক।

এরপর আর কোনদিন আর নীলার সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি কিন্তু তবু হঠাৎ অচেনা নম্বরে কল এলে আমি ঠিকই রিসিভ করি। কে জানে কোনদিন হয়তো আমাকে নীলার প্রয়োজন হলেও হতে পারে। তখন যদি সে আমাকে না পায়…

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: নীলা ভালো থাকুক।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২১

ইসিয়াক বলেছেন: পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক ।
শুভসকাল।

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৫৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালোভাবে পড়লাম। সুন্দর I

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:০১

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভকামনা

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫০

নীল আকাশ বলেছেন: ইসিয়াক ভাই,
নীলা নাকি সবার সয় না? নীলা নামে পাথরও নাকি সবার সয় না।
তবে সব নীলা'রাই এইভাবে চলে যায় না- গল্পঃ নীলা পরী
গল্প সুপাঠ্য। অভিনন্দন।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

ইসিয়াক বলেছেন: মন্তব্যে অনুপ্রাণিত,
শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৯

নিভৃতা বলেছেন: ভালো লেগেছে ভীষণ। সুন্দর, সাবলীল লেখা।
শুধু একটা ব্যাপার, বার বার নীলা, অপূর্ব, নীলা, অপূর্ব এভাবে সম্মোধন না করালে আরো বেশি ভালো লাগবে মনে হয়।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

ইসিয়াক বলেছেন: গঠন মূলক মন্তব্যে ভালো লাগা।
শুভকামনা রইলো।

৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আহারে! একেই বলে ভালোবাসা। বহুদিনের ব্যবধানে নীলা এলেও থেকে গেল অধরা। বরং হৃদয়ে বাজা মাদলে হঠাৎ যেন ছন্দপতন ঘটলো।
এবার আসি অন্য বিষয়ে। উল্লেখ না করলেও বোঝা গেল গল্পটি আগের পর্বের ঘটমান। অপূর্ব চরিত্রটি বজায় থাকলেও আগের পর্বের ইয়ার স্থলে এখানে নীলার আগমনের কারণ বুঝলাম না।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪২

ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় দাদা গল্পটি আগের পর্বের সাথে সংযুক্ত নয়। এটা একটা সিরিজ, সেটা ঠিক আছে কিন্তু প্রতিটি গল্প ভিন্ন্ ভিন্ন। আরো বেশ কিছু গল্প পরবর্তী আসছে।
শুভকামনা রইলো।

৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: ভালোবাসাকে বার বার নাম ধরে ডাকতে মন চায়, হ্যাঁ যদি ফোন করে তখন অবহেলা করলে চলবে না।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

ইসিয়াক বলেছেন: মন্তব্যে ভালো লাগা। ভালো থাকুন সবসময়।

৭| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৪৬

শের শায়রী বলেছেন: পড়লাম, ভালোলাগা। কবি কি এখন গদ্যে মনোনিবেশ করছেন? তবে শুধু প্রেমের গদ্য না লিখলে সব টাইপের গদ্য লিখুন অন্তত দু একটা ভিন্ন ট্রাই দেন। ভালো লাগবে হয়ত।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

ইসিয়াক বলেছেন: শের শায়রী বলেছেন: কবি কি এখন গদ্যে মনোনিবেশ করছেন?
একটু চেষ্টা করছি ভাইয়া। অন্য ধরনের গল্পও লিখবো আশা করি।
গল্প পাঠে ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইয়া।
শুভকামনা।

৮| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: কেন জানি ব্যর্থ প্রেমের একটা অন্যরকম টান আছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি প্রেম সফল হলে পচে যায়।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: শুভকামনা রইলো ভাইয়া ।
ভালো থাকুন সবসময় ।

৯| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আমিতো তোমারই প্রিয়তমা নয় প্রিয়তম হবে।

গল্পটা ভাল লাগলো হঠাৎ শুরু হয়ে হঠাৎ শেষ।

০২ রা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৮

ইসিয়াক বলেছেন: শুভকামনা রইলো ভাইয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.