নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একদা এসেছিলাম তোমাদের সান্নিধ্যে। ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটেছে বেলা। বিদায় বেলায় শুধু এটাই জানিয়ে যাওয়া বড় ব্যথা জাগে মনে পেলে অবহেলা।

ইসিয়াক

আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনার প্রাদুর্ভাবে দিনগুলিতে মাকে নিয়ে জরির ভাবনা

৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯


জোহরা সবসময় আচার আচরনে একজন চঞ্চল উচ্ছল প্রকৃতির মানুষ।শত দুঃখের মাঝে তার মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকে যেন।কোন দুঃখই তাকে মনে হয় সেভাবে স্পর্শ করতে পারে না।একসময় স্বামী সন্তান নিয়ে ভরা এক সংসার ছিলো তার।হাসি আনন্দ গান স্বপ্ন সোহাগ সবই ছিলো সেখানে।কোন কিছুর কমতি ছিলো না ।

যদিও প্রায় সব পরিবারের মতো ই শ্বাশুড়ীর সাথে ছিলো না তার বনিবনা তবু ও স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক খুব একটা খারাপ ছিলোনা।বউ শ্বাশুড়ীর যুদ্ধে বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে সে বেশ দাপটের সাথে টিকে ছিলো সংসারে।কিন্তু দিন সবার সমান যায় না। সুখের পরে দুঃখ আসে। জীবনের পালাবদলের খেলায় আসিফ সাহেব এর হঠাৎ পরিবর্তন আসে , সংসারের প্রতি তার টান কমে আসে একসময়।সময় মতো সে বাড়ি ফেরে না। কারো সাথে সে ঠিকমতো কথা বলে না। যাও বা বাড়িতে আসে যা না তাই করে সে। সবার সাথেই উল্টা পাল্টা আচরন শুরু করে সে।

দু একবার গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে জোহরার।এমন বিপরীত আচরণে ঘাবড়ে যায় জোহরা।প্রথম প্রথম সে কারণ ধরতে পারে না তারপর কাছের একজনের বুদ্ধিতে খোঁজ লাগায় সে, খোঁজ খবর করে জোহরা জানতে পারে যে তার স্বামী অন্য একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছে ।মেয়েটি অল্প বয়সী এবং সুন্দরী, এই খবরে জোহরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। প্রথমে সে খবরটা ভুয়া ভেবে উড়িয়ে দিতে চায় ।বিশ্বাসই করতে চায় না। কিন্তু তাতে করে সত্য বদলায় না।

প্রবল আত্মবিশ্বাসে জোহরার বারবার মনে হতে লাগলো কোথাও হয়তো তার ভুল হচ্ছে। স্ত্রী সন্তান অন্তপ্রাণ আসিফ এমনটা করতেই পারে না।কিন্তু দিনে দিনে যখন সব পরিষ্কার হয়ে আসে সেই ভুয়া খবরই সত্য বলে প্রকাশিত হয়, তখন সংসারের অশান্তি অন্য এক মাত্রা পায় অচিরেই ।আর জোহরা খুব বেশি রকমের ভেঙে পড়ে।

আসলে এই সংসারটাই তার কাছে সব। এদিক ওদিক তার কোথাও আর যাওয়ার জায়গা নেই।কি হবে এখন? বাবা আছে কিন্তু সংসারে মা নেই।বাবা আবার বিয়ে করে সংসারী হয়েছে।সেই সংসারে তার অন্য ছোট ছোট ভাই বোনগুলো অসহায় হয়ে টিকে আছে সে খবর তার কাছে অজানা নয়। এইরকম পরিবেশে তার দুসন্তান সহ তার ফিরে যাবার প্রশ্নই ওঠেনা ।পৃথিবীটা তার কাছে হঠাৎ অন্ধকার হয়ে আসে।

তার এমন দুরবস্থা দেখে শ্বাশুড়ী যে খুব খুশি তা বোঝা যায় স্পষ্ট।তার মুচকি মুচকি হাসি, টিকা টিপ্পনী, বাস্তুচ্যুত হবার ভয়ে জোহরা সব হজম করতে লাগে চুপচাপ। কি বা করার আছে তার।দুটো ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তায় দাড়াতে তো সে পারবে না।লেখাপড়াও সেভাবে সে শেখেনি।শেখেনি বললে ভুল হবে। জোহরার লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। তার বরাবর শখ ছিলো লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাড়াবে।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে না কিছুতেই কিন্তু আসিফের মা পিছনে ফেউ হয়ে লেগে বিয়েটা করিয়েই ছাড়লো।আর চাহিদা ফুরাতেই তাকে এখন রাস্তার পথ দেখিয়ে দিতে দ্বিধা করছে না।

আসলে সুন্দর রুপ হচ্ছে অনেক সময় মেয়েদের জন্যে কাল হয়ে দাড়ায়।সেই ব্যাপারটা যে কতখানি সত্য তা এখন জোহরা হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করছে।
তারপর অনেক ঝড় বয়ে গেলো তার জীবনে। শেষ আশ্রয় বলতে বাবার বাড়িতে ই তাকে উঠতে হলো একরকম বাধ্য হয়ে। কি বা করার ছিলো তার। এরকম কোন কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হবে।সেটা সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি।

সেই সংসারে অজস্র অপমান হজম করে দিন অতিবাহিত হলো কিন্তু সুখের মুখ সে আর কোন দিনই দেখলো না। এর মধ্যে আরো বড় আঘাত এলো তার জীবনে।একমাত্র ছেলেটি তার স্কুলের ফিরতি পথে দূর্ঘটনায় মারা গেলো।সেই থেকে জোহরা বেগম আর হাসে না।

কারো সাথে আর তেমন কথাও বলে না। পৃথিবীর সবটুকু তার যেনো দেখা হয়ে গেছে।সে তো কবেই মরে যেতো শুধু মাত্র একমাত্র মেয়ে জরির জন্যই বেঁচে আছে জিন্দা লাশ হয়ে। সুখ সাধ স্বপ্ন আশা বলতে জরিই এখন সব। বাপের সংসারের ঠাঁই ও একসময় ফুরিয়ে এলো জোহরার। নিজের ভাই সৎভাই সবার যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ভাগ্য ভালো ততদিনে জরি পড়াশোনা করতে করতে সরকারী প্রাইমারী ইস্কুলের একটা চাকরী জুটিয়ে ফেলল নিজের যোগ্যতায়।

এবং খুব শিঘ্রি তার একটা ভালো বিয়ে হয়ে গেলো।এর অবশ্য একটা কারণ আছে কারণ বাঙালি সমাজে বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো মেয়েদের খুব একটা ভালো বিয়ে হয় না। জরির হয়েছে।কারণ সে অতি রুপবতী একটা মেয়ে তার উপরে সুশিক্ষিত এবং চাকুরে।

জোহরার ও দিন ফিরে আসে। সে সরাসরি জরির কাছে না থাকলেও জরির বেতনের টাকায় কাছাকাছি এক ফ্লাটে এক রুম নিয়ে একা বাস করতে শুরু করে।জরি তাকে নিয়মিত দেখা শোনা করে হাজার কাজের ফাকে।
যদিও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ব্যপারটাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না।তাতে জরির কিছুই যায় আসে না।মা ই তার কাছে সব।সে সারাজীবন দেখেছে মা তাদের জন্য কি পরিমান অপমান গঞ্জনা সহ্য করেছে, কিভাবে নিজের বাপের বাড়িতে দাসীর মতো খেটেছে সারা দিন রাত।

জোহরা জীবন এই পর্যায়ে এসে সব কিছু ভালোই চলছিলো একরকম।
জীবনে কারো পথই একেবারে মসৃণ নয় কখনোই । একথাটা জরি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানে। আর বউ এর মা কে কোন পরিবারই মেনে নেবে না সে যতই সোনার ডিম পাড়া রাঁজহাস হোক না কেন। সে কথা সে ভালো করেই জানে।তাতে সে তাদের দোষ ও দেখে না।তার স্বামীও নিপাট ভদ্রলোক।সে বেশ সুখী বলতে গেলে।

তবে আজকাল জরির মায়ের জন্য খুব চিন্তা হয়।চিন্তা যে শুধু মায়ের জন্য হয় তা কিন্তু নয়, সবার জন্যও হয়, এমনকি নিজের জন্যও। করেনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব সারা বিশ্ব ব্যাপি।তার ঢেউ বাংলাদেশে ও এসে লেগেছে। কি যে হবে।

প্রথমে স্কুল কলেজ বন্ধ হলো তারপর অঘোষিত লকডাউন। নানা গুজব সত্য মিথ্যার ভেদাভেদ করা একরকম কঠিন একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার বাংলাদেশে গত দুদিন কোন করোনা ভাইরাসের রুগি নেই। এটা কি করে সম্ভব সেটা কিছুতেই মেলোতে পারে না জরি, অন্য অনেকের মতো।এক্ষেত্রে মায়ের জন্য তার চিন্তাটা আরো বেশি প্রকট হয়।

মা তো শ্বাসকষ্টের রোগী, মা কি পাবে তার সুচিকিৎসা যদি এসময়ে কোন উল্টাপাল্ট হয়ে যায়। পত্রিকায় ,ফেসবুকে তো কত লোমহর্ষক খবর আসছে।পড়তেই তার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।কোনটা গুজব কোনটা সত্যি কে জানে! কি আছে ভবিষ্যত তাই বা কে জানে।আল্লাহ যেন মাফ করে সেটাই সবার প্রার্থনা। একমাত্র ভবিষ্যতই ভালো বলতে পারবে সামনে কি আছে?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার এটা গল্প হলেও এটাই এখন আমাদের দেশের বাস্তবতা। জীবন ধর্মী গল্প।

জোহরাদের সামনে এখন বিপদ। এই বিপদ যেন জরীরা সামলাতে পারে, সেটা কামনা করছি।

অটঃ আপনার ব্যাপারে অভিযোগ আছে। আগের পোষ্টের সব মন্তব্যের উত্তর না দিয়ে নতুন পোষ্ট দেন, আর পুরানো পোষ্টের উত্তর পেন্ডিংই থেকে যায়। আপনার দু'টা পোষ্টে আমার নিজের করা দু'টা মন্তব্য আছে এমন। যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। :)

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১২

ইসিয়াক বলেছেন: প্রথমে আপনার অভিযোগ আমি মাথা পেতে নিলাম। আগের পোষ্টের মন্তব্যের সব উত্তর দিয়ে এসেছি ভাইয়া ।
আন্তরিক মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। :`>
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
সতর্ক থাকুন আপনজন নিয়ে।
শুভকামনা।

২| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: বউ শাশুড়ির যুদ্ধটা আমাদের গ্রাম বাংলায় চিরন্তন, জোহরার একাকী থাকাটাখোম কোয়ারেন্টিনের পর্যায়েই তো পড়ে তবে শ্বাস কষ্টের সমস্যা থাকলে করোনার আশংকাটা প্রবল হয়........গল্পে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬

ইসিয়াক বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইলো কামাল ভাই।
শুভকামনা জানবেন।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: বেলজিয়ামে কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।পরিস্থিতি বুঝে এই সময় বাড়তে পারে...
গতকালের মৃত্যুর সংখ্যা ৭৯ জন।এর মধ্যে বয়স্ক ই বেশী।বয়স্ক মানে, অভিজ্ঞ অভিভাবক শূন্য হচ্ছে এই পৃথিবী!

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
সতর্ক থাকুন সবসময় আপনজন নিয়ে।

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ত্রাণ নিয়ে অনেক দানশীল ব্যক্তি এগিয়ে এসেছে। তবে মনে হয় সরকারী তথ্যে লুকাচুরি আছে।যে সব বৃদ্ধ মা বাপ আশ্রমে আছে পরিবার হতে ভালোই আছে মনে হয়

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮

ইসিয়াক বলেছেন: সবার জন্য দোয়া রইলো আলি ভাই্
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

৫| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আগের পোষ্টের মন্তব্যের সব উত্তর দিয়ে এসেছি ভাইয়া। কিছু কাজ করেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ, তবে এখনও আরো বাকী আছে। এটা দেখেন [link|https://www.somewhereinblog.net/blog/Rafiqvai/30292073#c12747677|সম্পর্কটা ভুল ছিলো [১]]

সবচেয়ে ভালো, আগের সব মন্তব্য কাভার না করে নতুন পোষ্ট না দেয়া। তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়। প্রতি-মন্তব্য না দেয়াটাকে অনেকেই আপনার ইগনোরেন্স হিসাবে দেখবে, ব্যাড ম্যানার হিসাবেও দেখে। যেটা ভালো ইমেজ ক্রিয়েশানের জন্য ভালো না।

আশাকরি, আপনি কিছু মনে করছেন না। :)

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩

ইসিয়াক বলেছেন: ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো ভাইয়া।
ভালো থাকুন সবসময়।

৬| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে, লিঙ্ক আসছে না। ৬ আর এই মন্তব্যটা মুছে দিয়েন। যাই হোক, কোন লেখাটার কথা বলছি, আপনি জানেন। সম্পর্কটা ভুল ছিলো [১]

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫০

ইসিয়াক বলেছেন: আমি বুঝতে পেরেছি ভাইয়া।
শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.