নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
ফজরের আজান হয়ে গেছে বেশ খানিকটা আগে।এ সময় পাখিরা জেগে ওঠে ধীরে ধীরে। মসজিদের দিকে দারুণ ব্যস্ততায় ছুটে যায় মুসুল্লীরা।আজকাল অবশ্য মুসল্লীদের ছুটে চলা দেখতে পাওয়া যাচ্ছেনা করোনা ভাইরাসের জন্য মসজিদে নামাজপড়ার বিধিনিষেধের কারণে । চারদিক শুনশান শব্দহীন নীরবতা। অভি প্রতিদিন খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। এটা তার ছোট বেলাকার অভ্যাস। তারপর সে মাকে ডেকে তোলো।এবং তারপর তারা প্রাত্যহিক ইবাদত সারে খুবই আন্তরিকতার সাথে।
পারতপক্ষে মা ছেলে দুজনের একজনও ফজরের নামাজ কাজা করে না।কিন্তু আজ হঠাৎ ছন্দপতন হলো, অভি আজ ওঠেনি।সালেহা নামাজ শেষে খেয়াল করলো অভি নামাজ পড়তে ওঠেনি।একটু চিন্তিত হয়েই তিনি অভির ঘরে ঢুকলেন।মনে মনে ভাবলেন ছেলেটার শরীর খারাপ করেনি তো।
লক ডাউনের দিনে এতো বার করে মানা করার স্বত্ত্বেও ছেলেটা প্রায় বাইরে বেরিয়ে যায়।বড় বউমা প্রায় দিনই এনিয়ে দুচার কথা শুনাতে ভুল করে না সাথে অন্যান্য কথাও বলে।ভদ্রতার খাতিরে সালেহা বেগম তেমন একটা উত্তর দেন না।অশান্তি এখন আর তার ভালো লাগে না।
অভির বয়সী আজকালকার ছেলেমেয়েরা বড্ড বেশি বেয়াড়া কিছুতেই কথা শোনে না সেটা তিনি জানেন, আর এটাও জানেন অভি কি ধাঁচের ছেলে।মায়ের মন তো ভয় একটু লাগেই।তবে অভি যে কারণে বাইরে যায় এই লকডাউনের দিনে তা সালেহা বেগমের কাছে পরিষ্কার অভি তার মায়ের সাথে কোনদিন কোন লুকোচুরি খেলে না ।অভি যায় মানুষের প্রয়োজনে মানবতার টানে।
ছেলেটা একটা দুস্থ লোকেদের মাঝে খাদ্য বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবকদলের ভলান্টিয়ার। গরীব দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাবার পৌছে দেয়ে এই সংস্থার কাজ।অভির কাজ খাবার প্যাক করা।
এজন্য মনে মনে ভয় আশঙ্কা থাকলেও ছেলের জন্য ভিতরে ভিতরে একটা অহংবোধ ও কাজ করে মায়ের।আর যেহেতু এক্ষেত্রে অভির কাজটা আউটডোরে নয় ইনডোরে তাই খুব একটা রিস্ক ও নেই।তাছাড়া সব সময় শুধু নিজের কথা ভাবলে সে মানুষ আবার মানুষের পর্যায়ে পড়ে নাকি। মানুষ তো মানুষের বিপদের দিনের জন্যই ,নাকি?
সালেহা বেগমের দুই ছেলে বড় জাহিদ আর ছোট অভি। অল্প বয়সের বিধবা তিনি।অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে জাহিদ এই সংসারকে দাড় করিয়েছেন।পিছন থেকে উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা যাই হোক না কেন তার অবদান একমাত্র সালেহা বেগমের।নিজেদের সন্মিলিত কঠোর পরিশ্রমের ফলে শেষ বয়সে সুখের মুখ দেখেছেন তিনি।তারপর বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন সঠিক সময়ে।সংসার থেকে আস্তে আস্তে সরেও এসেছেন নিজেই। এখন ছোট ছেলেটির একটা ব্যবস্থা হলেই তার কাজ শেষ। ছোট ছেলেটিও এবছর পড়া শোনা শেষ করবে।আর তো কটা মাস তারপর নিশ্চিন্তের জীবন।
সালেহা বেগম প্রথমে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলেন। অভি আলো একেবারে বারে সহ্য করতে পারে না। পর্দা সরালেই তার ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা। আজ পর্দা সরালেও অভির ঘুম ভাঙলো না।নিসাড় হয়ে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা। নিশ্চয় শরীর খারাপ করেছে।
সালেহা বেগম মশারি সরিয়ে ছেলের কপালে আলতো করে হাত রাখলেন। অভির গায়ে বেশ তাপ। এসময় জ্বর এলে তো বিপদ। চারিদিকে করোনা ভাইরাসের ভয়।ডাক্তার পাওয়া মুসকিল। তার উপর অভির বাইরে বের হওয়া নিয়ে কম অশান্তি করেনি রুমা।এখন জানতে পারলে কি না কি বলে বসে।
জাহিদ আগে বেশ প্রতিবাদ করতো রুমার যে কোন উল্টাপাল্ট ব্যবহারে কিন্তু ইদানিং সে মনেহয় যে কোন কারণে হোক বউকে বেশ ভয় পায়।মা বা ভাইয়ের পক্ষে তাকে আর কথা বলতে দেখা যায় না। মাঝে মাঝে সালেহার এ নিয়ে বেশ দুঃশিন্তা হয়।ছেলেটা তার হাত থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে।
জাহিদের বউ অভিকে কেন যে দেখতে পারে না তা সালেহার কাছে স্পষ্ট নয়। সালেহা বেগম নিজের কানে শুনেছেন রুমা জাহিদকে বলছে যে তোমার মা ভাইকে অন্য জায়গা দেখতে বলো।ওরা থাকলে আমাদের প্রাইভেসী নষ্ট হয়।
সালেহা চুপ করে থাকেন ।তিনি জানেন এখন তার পাথরের তলায় হাত। এখন কিল খেয়ে কিল হজম করার সময়। একটু ভুল করলেই পা হড়কে খাদে পড়ে যাবেন তাই তো তিনি ছেলে বউ এর শলাপরামর্শ শুনেও না শুনার ভান করেন।সেই কারণে সদা সতর্ক সালেহা এখনই বড় বউ এর হাতে কোন কোন ইস্যু তুলে দিতে চান না।তিনি প্রতিটি মুহুর্তে গা বাঁচিয়ে বুদ্ধি করে চলেন আর তো কয়েকটা মাস।
ছেলের মাথায় পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দ্রুত রান্নাঘরে এলেন সালেহা বেগম। নিজে না চাইলেও ছেলে ও ছেলের বউ এর ইচ্ছায় রান্না বান্নার কাজ গুলো তাকেই চালিয়ে নিতে হয়।অবশ্য কাজ করতে সালেহার ভালোই লাগে,কাজের বেলায় তিনি কোন দিনই অলসও না এতে বরং সময়টা দ্রুত কেটে যায় কিন্তু ইদানিং একটা সমস্যা হয়েছে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাসায় বাড়তি লোক আসার ব্যপারে কড়াকড়ি চলছে। তারই জের হিসাবে প্রথমেই ড্রাইভার ও কাজের লোককে ছাড়িয়ে দিয়েছে রুমা।এক্ষেত্রে সালেহা বেগমের উপর চাপ বেশি পড়ে যাচ্ছে। রান্ন্বাবান্নার সাথে ধোয়া মোছা কাটা কুটিও যোগ হয়েচে বাড়তি হিসাবে।রুমা কোন কাজে কোনদিন হাত দেয়নি এখনও দেয় না।
নাস্তার টেবিলে সবাই মিলেই নাস্তা খাওয়া চল এ বাড়ির বহুদিনের।যদিও রুমা এব্যপারটা ভালো চোখে দেখেন না কোনদিনও তবু জাহিদের আপত্তির কারনে এখনও সহ্য করে খানিকটা।প্রাইভেসীর অজুহাতে সবটাতেই তার শুধু চিল চিৎকার। এসব ন্যাকা মার্কা কথা শুনলে সালেহা বেগমের খুব হাসি পায়।মাঝে মাঝে তিনি হো হো করে হেসেও নেন খানিক।
সকাল সকাল ফেসবুকে চোখ রাখতে রাখতে নাস্তার টেবিলে হাজির হলো রুমা।জাহিদ অভিকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন ,
অভি কোথায় মা,অভি ওঠেনি?
সালেহা বেগম বলবেন না বলবেন না করেও মুখ ফসকে বলে ফেললেন
-অভির খুব জ্বর এসেছে,শুয়ে আছে।
মানুষ মনেহয় ভুত দেখলেও এতোটা চমকে ওঠে না।রুমা তড়াং করে লাফিয়ে উঠে বলল
-জ্বর? কবে থেকে।
-ভোরেই তো দেখলাম।
-শুকনো কাশি ,শ্বাসকষ্ট?
জাহিদ রুমাকে থামিয়ে বলল,
-বার বার করে নিষেধ করেছিলাম বাইরে না যেতে, দেখো এখন করোনা বাধিয়ে এনেছে কিনা,বাড়ির সবাইকে এবার সাফার করতে হবে।
এবার রুমা এক নিঃশ্বাসে বলল,
মা আপনি অভিকে এক্ষুনি বাড়ি ছাড়তে বলেন,আমি কিছুতেই করোনা রুগির সাথে এক বাড়িতে থাকবো না।
সালেহা বেগম অশান্তি চান না তবু এখন রুমার ব্যবহার তাকে আহত করলো তাছাড়া অভি এখন কোথায় যাবে? আর অভিকে বাড়ি ছাড়তে বলার মানেই বা কি?সামান্য জ্বরে বা যে কোন রোগে মানুষ কি তার অধিকার হারিয়ে ফেলে। আগে তো কখনো মানুষের এরকম আচরণ দেখো যায়নি রুমা কিভাবে এসব কথা বলছে আর কিভাবে বলার সাহস পাচ্ছে। জাহিদের কোন উচ্চবাচ্য নেই সেও ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত।সালেহা মৃদু প্রতিবাদ করলেন,
-এসব তুমি কি বলছো বউমা অভি এখন কোথায় যাবে?
-কোথায় যাবে কি করবে তার আমরা কি জানি।ওর ভুলের জন্য তো আমার আমাদের পরিবার সাফার করতে পারে না। [চলবে]
২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০০
ইসিয়াক বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইলো ।
শুভকামনা।
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: নান্দনিক লেখনী ।
২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০০
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া্
৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ১ম পর্ব টা আরেকবার পড়লাম।
২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০১
ইসিয়াক বলেছেন: কৃতজ্ঞতা রইলো ।
শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: একদম আধুনিক গল্প। বাস্তব গল্প। চলুক।