নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই রকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি যেখানে সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হবে। যেখানে থাকবে না কোন পাপ পঙ্কিলতা।

ইসিয়াক

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃবিবর্ণ সময়[শেষ পর্ব ]

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪১


[২]
সালেহা বেগম মাথাটা ধুইয়ে দেবার পর অভির একটু সুস্থ বোধ হতে লাগলো। নাস্তার টেবিলের প্রত্যেকটি কথা অভির কানে গেলো।কথা তো নয় যেনো বিষের বড়ি অভি চোখ ভিজে গেলো।এতো বাজে বাজে কথা মানুষ কিভাবে বলে?


মানুষের শরীর খারাপ হলে মনটাও দূর্বল হয়ে যায়। বড় ভাবী যে তাদের মা ছেলেকে এই সংসারে অবাঞ্ছিত মনে করে সেটা অবশ্য অভি ভালো করেই জানে।তবু আজকের কথা গুলো বড় বেশি সুই ফোটালে মনের গহীনে। অপমানেও একটা সীমা থাকে । মা আর ভাইয়া যে কেন বড় ভাবী কে ভয় পায়, তা অভি বোঝে না। তারা নিজেও কিছু বলে না আবার বলতে গেলেও বলতে দেবে না। প্রশ্রয় পেয়ে পেয়ে সীমা অতিক্রম করেছে ওই ভদ্রমহিলা।


হঠাৎ অভিমান এসে ভর করলো অভির মনের মধ্যে ।আর যাই হোক সে আর এ বাড়িতে থাকবে না। যে বাড়িতে তার এবং তার মায়ের কোন সম্মান নেই সে বাড়িতে থাকার চেয়ে না থাকাই অনেক ভালো।বিপদে আপন পর চেনা যায়। পাশাপাশি বাস করেও অনেক সময় শত বছরে কেউ কেউ আপন হয় না।


বিছানা থেকে উঠে দাড়াতেই মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো তবু অভি কোন রকমে চটি পায়ে গলিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ীর বাইরে চলে এলো । এখন অনেক কাজ পড়ে আছে খামাখা ভয়ে ঘরের কোনে ইঁদুরের মতো লুকিয়ে থাকার কোন মানে হয় না।

বেশ খানিকটা হেঁটে আসার পর তার মনে হলো ফোনটা ভুল করে সে বাড়িতে রেখে এসেছে। এখন আর বাড়ি ফিরে যাবার কোন মানে হয় না।নানা কথা শুনতে হবে অকারণে।

হাঁটতে হাঁটতে অভির মনে হলো এখন ঠিক মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।নিজের অজান্তেই অভি পথের পাশে কখন জানি বসে পড়লো।তার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে।একটু পানি পেলে খুব ভালো হতো । পানি পিপাসা পেতে পেতেই অভি শরীর আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। প্রচন্ড জ্বরে তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। সেই সাথে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে গোঙানির মতো আওয়াজ ।

লক ডাউনের কারণে রাস্তায় স্বাভাবিকের চেয়ে লোক চলাচল কম হলেও যারা পথচারী ছিলো তারা কেউ কেউ থমকে দাড়িয়ে গেলো।বেশিরভাগই সময়ের ব্যবধানে চলে গেলেও ,কেউ কেউ অবাক চোখে দাড়িয়ে রইলো ।কিন্তু করোনা ভাইরাসের ভয়ে কেউ সামনে এগিয়ে এলো না। অনেকেই আহা উহু করতে লাগলো শুধু দূর থেকেই।

একজন অতি উৎসাহী মহিলা মাতৃ সুলভ আবেগে কাছাকাছি চলে আসতেই অন্য অনেকে হাহা করে উঠলো।
-চাচী কি করেন সরে যান সরে যান। ওনার কাছে যাওয়া যাবে না ।
পৃথিবীর সব মানুষ সমান নয়।এই মহিলা অতি দয়াবতী মহিলা। আহারে একটা মানুষ রাস্তার উপর এভাবে পড়ে আছে আর সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখছে। তিনি রাস্তার উপর পাগলের মতো চিল্লাচিল্লি করতে লাগলেন।

বেশ খানিক পরে একদল টহল পুলিশের নজরে পড়ল ব্যপারটা । তারা হাসপাতালে খবর দিলো। মহিলার কাছে জানতে চাইলো সে রুগীর কিছু হয় কিনা?অনেক ঝামেলার পরে দুপুরের একটু আগে আগে অভিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
পৃথিবীটা বড় বিচিত্র জায়গা। এখানকার মানুষ তার চাইতে বিচিত্র। হাসপাতালের ডাক্তার নার্সে পরম সেবা যত্নে অভির দুদিনের মাথায় জ্বর ছেড়ে দিলো।সুস্থ হয়ে উঠলো দ্রুত।


তৃতীয় দিন তার শরীরটা বেশ ঝরঝরে হয়ে এলো। ডিউটি নার্স অলকা জানতে চাইলো তার বাড়ির কথা।
সব প্রশ্নের উত্তর মানুষের জানা থাকে না বা জানা থাকলেও বলতে মন চায় না।এখন যদিও অভি সুস্থ তবু বার বার তার মনের মধ্যে বড় ভাইয়া আর ভাবীর বলা হৃদয়হীন কথাগুলোই মনে পড়ছে।ভাবী না হয় পরের বাড়ির মেয়ে কিন্তু ভাইয়া কথাগুলো ওভাবে না বললেই পারতো।অভিমানে অভির চোখ আবারও ভিজে উঠলো।


নার্স অলকা হাসিহাসি মুখ নিয়ে এগিয়ে এসে জানতে চাইলো,
-আপনার নামটা কিন্তু জানা হয়নি? শুধু জ্বরের ঘোরে একবার মনে হয় বলেছেন কবি।আপনার নাম কি কবি? আমি কিন্তু কবি নামেই এন্ট্রি করেছি।
অভি মাথা নাড়লো,বলল
- আমার নাম অভি।
-পুরো নাম? পুরো নামটা বলুন আমাদের খাতায় এন্ট্রি ঠিক করতে হবে।

অভি পুরো নাম বলল।
আপনার বাড়ি কোথায়? বাড়িতে কে কে আছে? আপনি কি বাড়িতে কাউকে খবর দিতে চান?
অভি আবারো কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। কিছু কিছু পরিচয় মানুষের জীবনের জন্য কখনও কখনও বোঝা হয়ে দাড়ায়। অভি সে বোঝা থেকে মুক্তি পেতে চায়।সে খানিক সময় নিয়ে ভেবে তারপর অনেকদিন আগে ফেলে আসা গ্রামের নাম বলল।বলল তার নিজের বলতে কেউ নেই এই পৃথিবীতে। সে একা।
অলকা একটু অবাক হয়ে তাকালো,সম্ভবত কথাগুলো তার বিশ্বাস হয়নি তারপর বলল,
- অভিমান ভালো তবে বেশি অভিমান কখনো কখনো জীবনের জণ্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে সেটা কি জানেন? বয়স কম মাথা একটু ঠান্ডা করে ভাবুন? আপনি এখানে এলেন কিভাবে? একেবারে পথের ধারে বেহুশ হয়ে পড়ে ছিলেন। ঘটনা কি বলুন তো?
অভি কিছুই বলল না ।তার চোখ কেন জানি ছলছল করে উঠছে। এজীবনে হয়তো সে তার পরিচয়ই হারিয়ে ফেলেছে।পরিচয়হীন মানুষ স্রোতে ভাসা শেওলার মতো শুধু ভেসে বেড়ায়। কোথাও তার ঠাই হয় না।

অলকা কি ভাবলো কে জানে,সে তার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।হাসপাতালে রোগীরা পরিচয় গোপন করছে এটা তার কাছে নতুন না। এ জীবনে মানুষের জীবনের উঠা পড়া চরাই উৎরাই অনেক কিছু তার দেখা হয়ে গেছেেএটা আর নতুন কিছু নয়। এসব তার আবেগকে তার আর আগের মতো স্পর্শ করে না।সে নিজের কাজে মন দিলো্।


পরেরদিন অলকা এসে জানালো অভি যেহেতু এখন সুস্থ সেহেতু তাকে আজ রিলিজ দেওয়া হবে।তার করোনা টেস্ট রিপোর্ট ও চলে এসেছে করোনা নেগেটিভ দেখাচ্ছে। তাকে অভিবাদন জানালো অলকা।অলকার কর্তব্য পরায়নতায় অভি মুগ্ধ হয়ে গেলো। এরকম কিছু কিছু মানুষের জন্য পৃথিবীটা এতো সুন্দর।

অভির মনের অভিমানের মেঘ হঠাৎ করে সরে গিয়ে সেখানে রোদ ঝলমল আলোর রেখা দেখা দিলো। তার মুখের হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে অলকার খুব ভালো লাগলো। অলকা জানে হাসি খুব ছোঁয়াচে। একজনের মন ভালো দেখলে তার বরাবর মন ভালো হয়ে যায় তবে তার নিজের কাজের প্রতিও সে খুব দায়িত্বশীল।এখন অনেক কাজ ।সামনে অনেকটা পথ তাকে তীব্র সংগ্রাম করতে হবে। অচিরেই আবারো সে তার নিজের কাজে মন দিলো। যাক ছেলেটি হয়তো তার নিজের বাসায় ফিরে যাবে।

অভি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার আগেই ভেবে রেখেছে তার কি করণীয়। সে আর ওই স্বার্থপর বাড়িতে ফিরে যাবে না। তার চাইতে সে তার কাজে ফিরে যাবে।

দেশের এই মহা দূদিনে তার মতো ভলান্টিয়ারের খুবই দরকার। করোনা ভাইরাসকে নিয়ে ভয়ে ঘরে বসে থাকার কোন যুক্তিই নেই। মানুষের মুক্তির পথ খুজে বের করতে হবে। মানুষকে সাহায্য করতে হবে।তারপর যা হয় দেখা যাবে।আগে ভয়কে জয় করতে হবে।
শুধু নিজে নয়। করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে তাকে/তাদেরকে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে জয় লাভ করতেই হবে। সামনে মোড় ঘুরলেই ”এসো হাত বাড়াই” এর ছোট্ট অফিস।সে রোদ ঝলমল পথে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলো।
১ম পর্বের লিঙ্ক নিচে দেওয়া হলো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪৯

ইসিয়াক বলেছেন: Click This Link

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩৭

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: ভালো লাগলো :)

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৫৪

ইসিয়াক বলেছেন: কৃতজ্ঞতা সহ ধন্যবাদ রইলো ভাইয়া।
ভালো থাকুন সবসময়।

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২০

রাজীব নুর বলেছেন: আগেও বলেছি, আরেকবার বলি- আপনার কবিতার চেয়ে গল্প ভালো হয়। তার মানে এই না যে কবিতা মন্দ হয়।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭

ইসিয়াক বলেছেন: অনুপ্রেরণা মূলক মন্তব্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো।
শুভকামনা সহ ধন্যবাদ জানবেন।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অতুলনীয় লেখা।  সুচিন্তিত 

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৮

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ নেওয়াজ আলি ভাই্।
৥আপনি কি শব্দনীড়ে লগ ইন করতে পারছেন? একটু জানাবেন প্লিজ।

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গল্প খারাপ হয়নি। এভাবে আরো লিখতে থাকুন, আগামীতে আরও ভাল গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯

ইসিয়াক বলেছেন: পাঠে মন্তব্যে ও লাইকে অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় দাদা।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যাক। অবশেষে ভাল কাজেই যোগ দিল।

:)

+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.