নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একদা এসেছিলাম তোমাদের সান্নিধ্যে। ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটেছে বেলা। বিদায় বেলায় শুধু এটাই জানিয়ে যাওয়া বড় ব্যথা জাগে মনে পেলে অবহেলা।

ইসিয়াক

আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে (২য় পর্ব)

২৬ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৩০

১ম পর্ব

(২)
দক্ষিণ মাঠে শেয়ালের পাল ডাকাডাকি করছে।ছোট শিকদার ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠল।
চারদিক শুনশান,তার মানে লোকজন যার যার বাড়ি চলে গেছে এখন একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আর কি। সকাল হলেই সব ঝাঁক বেধে জুটে যাবে,ফ্রিতে মজা দেখার সুযোগ প্রতিদিন আসে না। রাতুল আর জব্বার অবশ্য যাবে না বলেছিল,ওরা কোথায় কে জানে? এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল ছোট শিকদার।কয়টা বাজে বোঝা যাচ্ছে না,আলো না জ্বালিয়ে অন্ধকারে ভেতর ঘড়ি দেখার চেষ্টা করলো সে।এতক্ষণ ছোট শিকদার জেগেই ছিল।টেনশন নিয়ে কি আর ঘুমানো যায়! শত্রুর বংশ আজ ধ্বংস করেই ছাড়বে,এমন মওকা সব সময় পাওয়া যায় না।পাখি নিজ থেকে ফাঁদে এসে ধরা দিয়েছে। নানা ভাবনা ভাবতে ভাবতে অভ্যাসের বশে খানিক তন্দ্রা মত এসে গিয়েছিল হঠাৎই। রাত জাগার অভ্যাস তার মোটেও নেই।
আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছাড়লো খুবই সন্তপর্ণে। রাকিব অঘোরে ঘুমোচ্ছে,সেদিকে একটু তাকালো। ঘুমাক।রাকিবের মা পাশ ফিরতেই সে ঝটপট গামছা দিয়ে মুখটা আড়াল করলো।মুখটা আড়াল করা জরুরি। এই বিষ ঝাড়টা বহুদিন জ্বালাচ্ছে। হেস্তনেস্ত একটা না করলেই নয়।
ঘর থেকে বেরিয়ে হাতের টর্চ আড়াল করে ধানের গোলা ছাড়িয়ে সে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলল বাড়ির পিছনে গোয়াল ঘরের দিকে। বুকের ভিতরটা মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে।তবে ভয়ে কি অন্য কারণে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কাজটা হয়েছে কিনা কে জানে? না হলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।শিকার সুযোগমত যথাস্থানে রাখা হয়েছে।শিকারীও প্রস্তুত।মেজাজ মর্জি মত কাজ হলেই হলো। বুদ্ধিটা অবশ্য অনেক পুরানো আমলের। তার বাবা গণি শিকদার এভাবে অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন।
ছোট শিকদার গোয়ালের সামনে পৌঁছাতেই দেখতে পেল কুটু মিয়ার পাহারায় বেশ একটু দুরে দুজন দুদিকে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে।তিনি একটু মুচকি হাসলেন।চরম বিশ্বস্ত লোক ওরা, ওদেরকে ভয় পাবার কিছু নেই। ওরা দুজন অবশ্য অঘোরে ঘুমাচ্ছে। তবু সাবধানের মার নেই। আস্তে আস্তে সে গোয়ালের পেছনে ভাঙা অংশ দিয়ে নিঃশব্দে গোয়াল ঘরের ভিতর ঢুকলো।তার আগে সে বিড়বিড় করে দোয়া দরুদ পড়ে নিলো খানিক। কাজটা যথেষ্ট ঝুকিপূর্ণ। সে ভালো করে জানে বিষধর সাপগুলো কোথায় রাখা হয়েছে তবে এখন ছাড়া আছে। সেজন্য যত ভয়।তার আব্বাদের আমলে এই সব কাজের জন্য আলাদা লোক ছিল। আজকাল দিনকাল খারাপ আইন আদালতও বেশ কড়া।আর তাই কারও উপর ভরসা করতে পারেনি ছোট শিকদার।
সাধারণত এই জায়গাটা খড়ি ঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে সাপেদের যত আড্ডা বলে কথিত আছে ! কায়দা মত পেলে এক কামড়ে যখন তখন ভবলীলা সাঙ্গ হবে নিমেষে ।গত বছরও একজনের মৃত্যু হয়েছে এখান থেকে! ঠিক তখনই একটা কালো সাদা ছোপ ছোপ তেল চকচকে গোখরা সাপ সড়সড় করে ছোট শিকদারের পায়ের কাছ দিয়ে চলে গেল।যদিও বিশেষ ব্যবস্থা করা আছে তবুও টর্চের মৃদু আলোয় এই দৃশ্য দেখে কাঁপুনি উঠলো শিকদারের।এরকম তেল চকচকে ভয়ংকর সাপ দেখলে চরম সাহসী মানুষের আত্নাও কেঁপে যাওয়ার কথা।কথা জড়িয়ে যাওয়ার কথা নিমেষে।
সাপটা সরে গেলে হঠাৎ তার সম্বিৎ ফিরলো তাই তো সব কাজ ঠিক ঠাক সমাধা হলো তো?
সে দৌড়ে এসে দ্রুত হাতে কুটু মিয়ার দড়ির বাঁধন খুলতে লাগলো। প্রায় অচেতন কুটু মিয়া মাথা তুলবার চেষ্টা করলো।মাথাটা এত ভারি কেন কে জানে ?পায়ে জ্বালা করছে।কিছু কামড়ালো নাকি?
সাপে কেটেছে সে হুস তার নেই ।বাঁধন খুলতে দেখে অবাক হয়ে সে জানতে চাইলো
- কেডা?
- মুখ বন্ধ রাখ।
- কেন মুখ বন্ধ রাখুম ক্যান আমি কি চোর?
-চুপ থাক,কথা কম ক।
- আমারে দয়া দেখাইতে আইছোস? বাইর হ অন তন।
- নিজের ক্ষতি না চাইলে আল্লাহর ওয়াস্তে মুখ বন্ধ রাখ।
বাঁধন খোলা হয়ে গেলে।হঠাৎ চোখে পড়লো ক্ষতস্থানটি। এতো নির্ঘাত সাপে কাটার দাগ।মনটা খুশিতে ভরে উঠলো কাজ প্রায় শেষ। শত্রু খতম।মনের খুশি ভাব গোপন করে ছোট শিকদার শুধালো।
- পায়ে কিসের দাগ? হায় আল্লাহ সাপে কাটছে তো? শিকদার কাছে পড়ে থাকা দড়ি দিয়ে পায়ে বাঁধন দেয়া দেখে কুটু মিয়া হিসহিসিয়ে হেসে উঠলো।
- নাটক করস? মুখ ঢাকছোস আমি মনে লয় তোরে চিনি নাই।
সিকদারও কম যায় না সে চাপা স্বরে বলল
- পিশাচ একটা! তারপর গলাটা আরেকটু খাদে নামিয়ে বলল
- আস্তে আস্তে ওড। বাইর হইয়া যা।তাড়াতাড়ি পালাইয়া যা এই হান তন। আযান পড়লে লোকজন জাইগা যাইবো।
- বহুত বুদ্ধি তোর।
- হের লাইগা তো সবকিছু আমার দখলে।
- খুব অহংকার না?
- দয়া কইরা আর কথা না বাড়াইয়া গঞ্জে চইলা যা।জীবনের মায়া নাই তর? জীবনডারে বাঁচা। গঞ্জের হাসপাতালে সাপে কাটা রুগি চিকিৎসা করে। পাঁচ ছয় মাইল পথ।তাড়াতাড়ি হাইট্যা যা।বাঁইচ্যা গেলেও যাইতে পারোস। সাবধান পায়ের বাঁধন যেন না খোলে। কি সাপ কইলে কইবি জাত গোখরা।
- তুই কি মানুষ!
- বাজে কথা কইয়া সময় নষ্ট না কইরা সোজা হাঁট ।ফালতু লোক একটা।সময় কিন্তু বেশি নাই। আর একখান কথা কান খাড়া কইরা হুইন্যা রাখ।খবরদার! আমি যেন তোরে এইহানে আর না দেহি। শেষ কথাটায় আনমনে মাথা নাড়লো কুটু মিয়া তারপর বেদনাভারাক্রান্ত মন নিয়ে টেনে টেনে পা ফেলে এগিয়ে গেল।
ততক্ষণে পাহারাদার ছোকরা দুজন মতি আর সুজন জেগে উঠেছে। ছোট শিকদার চাপা গলায় হিসহিসিয়ে বলল
- কিছু দেখছোস?
- না।
- কিছু শুনছোস?
- না।
ভালা। কাজ ঠিকঠাক হইলে পুরষ্কার আছে। বুঝছোস? চিন্তা করিস না কেউ কিছু কইলে আমি দেখুমনে।আমি কিন্তু মাইর ও দিতে পারি তোগো। চুপচাপ মাইর খাবি।আবার কই, পুরষ্কার আছে তোগো ল্যাইগ্যা।
- জ্বে
কুটু মিয়ার ততক্ষণে অনেকটা পথ হেঁটে গেছে তাকে পালাতে হবে।এখান থেকে না এই পৃথিবী থেকে সেটা সে বুঝতে পারছে না। তবে পালাতে হবে।কি একটা কাজ মনে হয় বাকি আছে।
পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে শুধু পায়ে না সারা শরীরে যন্ত্রণা। ঘুম আসতেছে।এত মাইর কেউ কাউরে মারে? কিছুদুর হাঁটতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল সে।
চলবে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:০৩

জুল ভার্ন বলেছেন: গল্পটা ভালোই হয়েছে। তবে এমন গল্পের প্রেক্ষাপট আরও অর্ধশতাব্দী আগের।

২৬ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:১৭

ইসিয়াক বলেছেন: কখনও কখনও অতীত ঘুরে ফিরে আসে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৪৯

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল কবি ইসিয়াক দা ভাল থাকবেন

২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৪৯

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ লিটন ভাই।
শুভকামনা রইলো।

৩| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:১৪

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ভালো হচ্ছে । সাথে আছি , চলুক ......

২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫০

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভকামনা রইলো।

৪| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৫৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সময় নিয়ে আবার আসছি...

২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫১

ইসিয়াক বলেছেন: আপনার সাথে আড়ি!

৫| ২৬ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৩০

ফয়সাল রকি বলেছেন: ঠিক আছে চলুক। তবে পর্বগুলো আরেকটু বড় হলে ভাল হতো।

২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভকামনা রইলো।

৬| ২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:১১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপাতত কুটু মিয়া পালাচ্ছে...
অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের....

২৯ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:০২

ইসিয়াক বলেছেন: ওকে আর অপেক্ষায় রাখবো না। খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব পোস্ট দেবো।
শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.