নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা মানবতা বিরোধী তাই পরিত্যাজ্য মানবের সাধনা হোক মনুষ্যত্ব লাভ।
ঘড়িতে এলার্ম দেওয়াই ছিল।এখন রাত সাড়ে তিনটা বাজে। আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লেন তপনবাবু।বয়সের কারণে শরীরটা আজকাল আর কথা শুনতে চায় না।প্রায় বিদ্রোহ করে। জরুরী বাসি কাজগুলো সারতে সারতে প্রায় চারটা বেজে গেল।
বহুকালের অভ্যাস মহালয়ার ভোর মানে অন্য রকম একটা ঘোর কাজ করে সব সময়। শিউলি গন্ধ, ঘাসের ডগায় স্বচ্ছ শিশির বিন্দু,বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট গলায় চন্ডী পাঠ, কান ফাটানো চমকে ওঠা বাঁশির শব্দ। স্বর্গীয় আমেজ।
কাঁপা হাতে গ্যাস জ্বালিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে রেডিও নব ঘোরাতে গিয়ে দেখলেন রেডিওতে কোন সাড়া শব্দ নেই।
কি আশ্চর্য! গত রাতেও তো সব ঠিক ছিল। হঠাৎ কি হলো আবার। বার কয়েক চড় থাপ্পড় মারার পরও ফাইভ ফোর থ্রি সেটটি মুখ খুলল না।এত ভোরে মেকানিক পাওয়া যাবে না। কি যন্ত্রণা! এমন শুভক্ষণে মনটা খারাপ হয়ে গেল তপনবাবুর।
মন খারাপ হলেই আজকাল অনেক কথা মনে আসে এক বুক অভিমান ভীড় করে।ছেলে মেয়েরা নিজের মত যার যার পথ দেখে নিয়েছে।মাসে দুমাসে এক আধবার খোঁজ নেয় দায়িত্ববোধ থেকে। ওটুকু শেষ
তার নিঃসঙ্গ জীবনের কষ্ট কেউ বুঝতে চায় না। ভালোবাসা সে তো দুর কি বাত।
নির্দিষ্ট সময়ে ভেসে আসে মহালয়ার সুর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ভরাট কন্ঠে চণ্ডীপাঠ। মন্ত্র মুগ্ধের মত কান পাতেন তপন চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া আর উপায় কি!
আগেকার দিনের মত এখন কেউ কারো খোঁজ রাখে না। একান্নবর্তী পরিবারগুলো একে অন্যের মায়ার বাঁশঝাড়ের মত জড়াজড়ি করে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো সে সময় আর এখন সবটাতেই ব্যক্তি স্বার্থ। ভাইবোনের সম্পর্কটাই এখন টেকে না নানা টানাপোড়েনে। বাবা মা থাকে অবহেলিত।
ছেলে মেয়েরা বহুবার বলেছে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে। তপন বাবু জানেন মুল উদ্দেশ্য কি।এই বাড়ি বেঁচে টাকা ভাগ করে নেওয়া। তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। চৈতালীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি তিনি বেঁচে থাকাকালীন কিছুতেই বেঁচবেন না।তিনি মরে গেলে সব তো পড়েই থাকবে তখন যার যা ভালো মনে হয় সে তাই করবে বাধা কেউ দিবে না।
এরপর থেকে ছেলেমেয়েদের যাওয়া আসা কমে যায়। ছোট মেয়েটা বছরে একবার আসে বাকিরা ফোনে কাজ সারে।
জীবন সায়াহ্নে এসে মৃত্যু চিন্তা ফিরে ফিরে আসে। মনে আফসোস বাড়ে।সামনের দিনগুলোতে তিনি হয়তো আর থাকবেন না কে জানে এটাই হয়তো তার জীবনের শেষ মহালয়া। আর শোনা হলো না চন্ডী পাঠ। নেওয়া হবে না শিউলির সুবাস।দেখা হবে ঘাসের ডগায় তিরতির করে কাঁপা শিশির বিন্দু।
তপনবাবুর চোখে জল আসে।হয়তো শেষ পুজো। পুজোর শুরুটা কেমন যেন পানসে হয়ে গেল। ভগবান হয়তো এমনটাই চেয়েছেন।
সদর দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে। এত ভোরে কে এলো আবার। যে মেয়েটি রান্নার কাজ করে সে তো এসময়ে আসবার কথা নয়।তপন বাবু ভিতর বাড়ি থেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসেন সদর দরজার দিকে।
শরীরটা আজকাল বড্ড বেশি অসহযোগীত করছে। বাতের ব্যথাটাও বেড়েছে খুব বেশি।
তপন বাবু দরজা খুলতেই একঝলক আলোর রেখা যেন ছড়িয়ে পড়লো সারা ঘর জুড়ে।
এই ভোরে রন্টি তরু,সুদীপ্ত, অমল,রতন,পিয়া এসে হাজির।
- তোরা এত ভোরে।কি ব্যাপার?
সুদীপ্ত চনমনিয়ে বলল
-তোমায় নিতে এলাম দাদু।চল চল বাবা তোমায় ডাকছে।
- কেন রে?
- বাবা বলল, " যা দেখ তো বাবাই সোনা তোর দাদু একলা রয়েছে ডেকে নিয়ে আয় সবাই মিলে চন্ডীপাঠ শুনবো৷ তাই তো এলাম তোমায় নিয়ে যেতে।চলো চলো আমাদের বাড়ি চল।
ছেলে মেয়েদের দলটি সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো
- চল চল দাদু চল।
এতক্ষণ জীবনটা কেমন যেন পানসে লাগছিল। হঠাৎ আলোক ছটায় রঙিন হয়ে উঠলো সব কিছু। সত্যি বেঁচে থাকা দারুণ ব্যাপার।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৫
ইসিয়াক বলেছেন: যত যাই হোক। ভালোটাই ভাবতে ভালো লাগে। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
শুভকামনা রইলো প্রিয় ব্লগার। ভালো থাকুন সবসময়।
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
জোয়ার ভাটার মতোই জীবনের গল্প।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৬
ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।
শুভকামনা রইলো।
৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০৪
নজসু বলেছেন:
প্রিয়জনরা পাশে না থাকলে জীবনটা আর জীবন মনে হয়না।
তপনবাবুর বয়সকালে একাকীত্ব আরও দূর্বিষহ।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৬
ইসিয়াক বলেছেন: এমনটাই আজকাল চল হয়েছে। হয়তো এমন দিন সামনে অপেক্ষা করছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে না-কি দুঃখ বোধ কম হয় তাই বলা।
শুভেচ্ছা নিন প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন সবসময়।
৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫১
অপ্সরা বলেছেন: বাহ !!! আনন্দের গল্প!
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
ইসিয়াক বলেছেন: শুভকামনা রইলো আপু। ভালো থাকুন সবসময়।
৫| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৮
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভালো লিখেছেন অপরাহ্নের আলো আর কি।
পোস্টে লাইক।
শুভকামনা প্রিয় ইসিয়াক ভাইকে।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
ইসিয়াক বলেছেন: আহা! মন্তব্য পেয়ে দারুণ ভালো লাগলো। সত্যি বলতে কি পোস্টে আপনার মন্তব্য না পেলে কেমন যেন লাগে।
শুভকামনা রইলো প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০০
নীল আকাশ বলেছেন: বাস্তব জীবন বড় নির্মম হয়। গল্প গল্পের জায়গায় থেকে যায়।