নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একদা এসেছিলাম তোমাদের সান্নিধ্যে। ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটেছে বেলা। বিদায় বেলায় শুধু এটাই জানিয়ে যাওয়া বড় ব্যথা জাগে মনে পেলে অবহেলা।

ইসিয়াক

আমার লেখা কবিতা আপনার পছন্দ হলে হোয়াটসঅ্যাপ এই চ্যানেলটি ফলো করুন প্লিজ Follow the রফিকুল ইসলাম এর কবিতা সমগ্র। channel on WhatsApp: https://whatsapp.com/channel/0029VbBPuTzBA1epLIRBZX1x

ইসিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কালপ্রিট

০১ লা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৬


এক ঝুম বর্ষার দুপুরে সোহেলী আপু আমায় ডেকে নিয়েছিল।
ও কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী  ছিল বলে, তেমন কোন খেলার সঙ্গী ছিল না ওর।দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রায় সবার কাছে ও ছিল হাসি ঠাট্টা টিকা টিপ্পনীর উপকরণ মাত্র ।ওর মন খারাপ করে বসে থাকা দেখে  আমার কেন জানি না মন খারাপ হতো,মনে অশান্তি লাগতো।রাগও হতো।এত বোকা কেন মেয়েটি?  আমি প্রায় দেখতাম ও একাকী কাঁদতো।সেই কান্না ছিল কখনও ক্ষুধার কখনও অপমানের আবার কখনও অত্যাচারের।
এক সময় আমার সাথে ওর বেশ ভাব হয়ে গেল। একই বাসায় ভাড়া থাকার ফলে যোগাযোগ চলত অবাধে।
ওর আগ্রহে  মাঝে মাঝে আমি ওর সাথে লুডো খেলায় অংশ নিতাম। খেলার ব্যাপারে ভীষণ একগুয়ে আর হন্নিবাজ ছিল ও।নিজেরটুকু খুব বেশি বুঝতো।আমিও কম নই। ফলাফল, বেশিরভাগ সময় হাতাহাতি হয়ে যেত আমার সাথে। তারপর  আড়ি, কথা বন্ধ অবশ্য  কিছুদিন পর আবার ভাব।
বয়স হয়ে গেছিলো বলে বিয়ে নিয়ে রাত দিন খোটা দিত ওর সৎ মা সহ আরও অনেকে।কানা খোড়া লেংড়া কোন পাত্র তাকে দেখতেও আসতো না।নানাজনে নানা কথা শোনাতো সুযোগ পেলে।সোহেলী আপুর সে সবে কোন হেল দোল ছিল না । আমার ষোল বছর বয়সের ছোট্ট জীবনে  সোহেলী আপু ছিল আমার কাছে এক অপার রহস্যময় চরিত্র।
তো সেই ঝুম বর্ষার দুপুরে গুটি খেলতে খেলতে সোহেলী আপু বলল
- হ্যাঁরে অপূর্ব একটা নতুন খেলা খেলবি? 
- কি খেলা গো।আগে কখনও  খেলেছি?
- না না আগে খেলি নি।
- তাহলে থাক পারবো না বাদ দাও।
এরপর সোহেলী আপু  ফিসফিস করে বলল
- এই খেলায় কোন ঝগড়া,মারামারি  হবে না। আল্লাহ কসম।
- যাহ! সে আবার কি খেলা?
- চল খেলি দুজন হলেই চলবে। রসু ভাই আর তুলি চিলেকোঠার ঘরে খেলছিল কাল।আমি লুকিয়ে দেখে শিখে নিয়েছি।
নিস্তব্ধ দুপুরে সোহেলী আপু আর আমি সম্পূর্ণ নতুন সেই খেলাটি খেলতে শুরু করলাম। ষোলো বছর বয়স তখন আমার।মানব শরীর নিয়ে ধোঁয়াশা অভিজ্ঞতা এবং  আদিম খেলার জ্ঞান সম্পর্কে  তেমন কোন ধারণা  না থাকলেও।আগুন খড়ের সংস্পর্শে আসতেই   বিদ্যুৎ ঝলকের মত রোমাঞ্চ নেশা ধরে গেল অনতিবিলম্বে।
একসময় ঘোর কেটে গেলে কেমন যেন লজ্জা এসে ভীড় করলো আমার মধ্যে ।আমি সরে পড়লাম দ্রুত।ঝুম বৃষ্টি তখনও ঝরছিল । অত শত না বুঝলেও কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করলো আমার মনের মধ্যে ।সোহেলী আপুদের ঘর মুখো হলাম না অনেক দিন।
এর মধ্য কদিন পরে আমার বাবার বদলির সুবাদে আবার নতুন শহরে চলে এসেছি।সময়ের ব্যবধানে ভুলে গেছি সোহেলী আপু , ফেলে আসা শহর।
বেশ অনেক বছর  পরে কি একটা কাজে গেছি আবার সেই শহরে।খুঁজতে খুঁজতে  পুরানো এক বন্ধু মবিনের সাথে দেখা হয়ে গেল ।কথায় কথায়   এক সময়  সোহেলী আপুর খোঁজ খবর  নিলাম। কেমন আছে বেচারা কে জানে! বিয়ে হয়েছে নিশ্চয়!
মবিন  কিছুক্ষণ চুপ থেকে যা জানালো শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো।
সোহেলী আপু না-কি  মরে গেছে।
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, মরে গেছে মানে কি?
মবিন জানালো সোহেলী আপু  মা হতে চেয়েছিলো। বিয়ের আগে মা হওয়া পাপ।দিন দিন সোহেলী আপুর শরীর ভারি হতে লাগলো, রটনা গুঞ্জন এবং সেই সাথে শারীরিক অত্যাচার বেড়ে গেল ওর প্রতি।বিচার শালিস কত কিছু ওর বাবা মা অনেক অনেক মেরেছে আর জানতে চেয়েছে  পেটে যেটা এসেছে সেটা কিভাবে এসেছে ?  কার সন্তান?
সোহেলী  বারবার বলেছে "আল্লাহ দিয়েছে। আল্লাহ!" কিছুতেই স্বীকার করে নি কে তার সর্বনাশ করেছে। জানা যায়নি কালপ্রিটটার নাম।
তারপর এক কাক ডাকা ভোরে ওর লাশ পাওয়া গেল কপোতাক্ষের জলে।
সব শুনে শরীর ঝনঝন করে উঠলো আমার। নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হলো।কি করে স্বীকার করি যে কালপ্রিটটা আমিই।
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৫

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ভয়ঙ্কর সুন্দর

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:১৪

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার।
শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকুন সবসময়।

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১২

শেরজা তপন বলেছেন: কষ্টের ভীষণ!!

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:১৮

ইসিয়াক বলেছেন: জীবনে কত কিছুই তো হয়ে যায়। সত্য অপ্রকাশিত থাকে অথবা অর্ধসত্য জানা যায়।
মন্তব্য ও লাইকের জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার।

শুভেচ্ছা রইলো।

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৫৩

আখেনাটেন বলেছেন: বেশ লেখা......কিছুদিন আগে কামরাঙ্গির চরে মনে এরকমই এক পাগলীর ঘটনা শুনেছিলাম....


*'মরে গেছে'র পরিবর্তে 'মারা গেছে' শব্দবন্ধ মনে হয় ভালো যায়...

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৪১

ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় ব্লগার আপনার মন্তব্য পেয়ে সত্যি ভীষণ অনুপ্রাণিত হলাম।
আপনার পরামর্শ মেনে নিলাম।
পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
শুভেচ্ছা রইলো।

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:৪৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: ইসিয়াক,




চমৎকার গল্প।
মানুষের মনে এরকম কতো যে "কালপ্রিট" মন লুকিয়ে থাকে! ক'জন তা স্বীকার করে ?

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৪৩

ইসিয়াক বলেছেন: প্রিয় ব্লগার গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার গল্প লেখা স্বার্থক।
মন্তব্যে মন ভরে গেল। অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো।
ভালো থাকুন সবসময়।

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:০৬

অপ্‌সরা বলেছেন: লাস্টের লাইন উহ্য রেখেই বুঝিয়ে দিলে গল্পটা আরও বেশি সুন্দর হত মনে হয় ভাইয়া।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৪৬

ইসিয়াক বলেছেন: ঠিক বলেছেন আপু। কম্পিউটারে বসলে গল্পের শেষ অংশটুকু এডিট করে দেবো।
পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা রইলো।
ভালো থাকুন সবসময়।

৬| ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:০৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অপ্‌সরা বলেছেন: লাস্টের লাইন উহ্য রেখেই বুঝিয়ে দিলে গল্পটা আরও বেশি সুন্দর হত মনে হয় ভাইয়া। আমারও তাই মনে হয়।
দারুণ হয়েছে।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৪৭

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় ব্লগার।
মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পেলাম।
ভালো থাকুন সবসময়।

৭| ০২ রা অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:১৩

কাছের-মানুষ বলেছেন: কষ্টের গল্প। ভাল লাগল!

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৪৭

ইসিয়াক বলেছেন: কৃতজ্ঞতা রইলো প্রিয় ব্লগার । ভালো থাকুন।
শুভকামনা।

৮| ০২ রা অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কয়েক বছর আগে আমি প্রায় এক কিমি দূরে একটা বাড়িতে দুধের সন্ধান পেয়ে প্রতিদিন সকালে দুধ আনতে যেতাম। কয়েক বছর আগের ঘটনা। তখন আমি একটা যে বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতাম। খাঁটি দুধের সন্ধান করে অবশেষে একটা জায়গায় খোঁজ মেলে ভাড়া বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে। বেশ দুই তিন দিন দুধ আনা নেওয়ার পর এলাকায় একটি মেয়ে এক সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আমার পাশে এসে দাঁড়ায় এবং আমাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়। উপস্থিত কুচোকাচা বাচ্চারা দেখে হো হো হো করে হাসতে থাকে। ওদের হাসি দেখে আমিও একসময় হেসে ফেলি। মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করি তোমার কি বিয়ে করা খুব সাধ?
ও এক মুখে এক গাল হাসি নিয়ে আত্মহারা হয়ে জানিয়ে দেয় ঠিক তাই। কেও ওকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না তাই ও খুব কষ্টে আছে। কিন্তু খুব করে বিয়ে করতে আগ্রহী।
আমি জানালাম,
- কিন্তু আমি তো বিবাহিত আমার তো বাচ্চা আছে।
শুনে ও বললো,
- সবাই এই কথা বলে বিয়েতে রাজি হয় না।

আমি আর কি বলবো, ওর দুঃখটা বুঝতে পারি কিন্তু অসহায় হয়ে তা জানাতেই কিছুক্ষণ পর ও হতাশ হয়ে অন্যত্র চলে যায়। বাচ্চাকাচ্চারা ওর পেছনে হৈ হৈ করতে করতে সেদিকে চলে যায়।


আপনার আজকের গল্পটা বেশ ভালো হয়েছে। তবে অপ্সরাপু ঠিকই বলেছেন। শেষ কথাটা না বললেই বেশি ভালো হতো।

গতকালই পড়েছিলাম। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো বলেই সে সময় কমেন্ট করিনি।

ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছা আপনাকে।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: ওরে বাবা এতো বড় মন্তব্য!

আসলে এই ধরনের প্রতিবন্ধী বাচ্চারা ভীষণ অসহায় হয়। আমাদের আশেপাশে এরকম বাচ্চা প্রচুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এরা সব সময় তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হয়।সেই সুযোগে অনেক দূর্ঘটনা ঘটে। পরিনতিও করুন। যা ভীষণ দুঃখজনক।

শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা আপনার জন্যও প্রিয় ব্লগার।
ভালো থাকুন সবসময়।

৯| ০২ রা অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩১

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: প্রোটেকশন নেওয়া দরকার ছিল।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: ধন্যবাদ।

১০| ০২ রা অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: এই গল্পের একটা হ্যাপি ভার্শন লেখা যায় ! দাড়ান লিখে ফেলা যাক !

০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৫৪

ইসিয়াক বলেছেন: বাহ! দারুণ ব্যপার হবে তাহলে। আমি কিন্তু গল্প পড়বার অপেক্ষায় থাকলাম।

১১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পের ধরনটা অন্য রকম হলেও মুল থিম আসলে আপনার এই গল্প থেকেই নেওয়া । এই রইলো গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.